১৯০৮ সালের ৩০ জুন একটি বিল্ডিংয়ের আকারের বিশালাকার বস্তু আকাশ থেকে এসে পড়ে সাইবেরিয়ার বায়ুমণ্ডলে। সেখানেই বিস্ফোরিত হয় এই বিশাল মহাজাগতিক বস্তু। এই ঘটনার নাম বিজ্ঞানীরা রেখেছিলেন তুঙ্গুস্কা ঘটনা। তুঙ্গুস্কা নদীর নাম অনুযায়ী এই মহাজাগতিক বস্তু পতনের ফলে ৮০০ বর্গ মাইল জুড়ে এলাকায় গাছ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

এটি এশিয়ার সর্বনিম্ন জনবহুল স্থানগুলির মধ্যে ঘটায় অবশ্য কেউ নিহত বা আহত হয় নি। কিন্তু তুঙ্গুস্কা মহাজাগতিক বিস্ফোরণ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরও রহস্যময় একারণেই যে বিজ্ঞানীরা বিশালাকার বস্তুটির উত্সই জানতে পারেননি। আদৌ এটি মহাজাগতিক বস্তু নাকি কোনও ধূমকেতু তা জানা যায়নি। অনুমান করা হয় যে, এটি একটি বিটা টাউরিড।

টাউরিড হল উল্কা বৃষ্টির মতোই বিষয় যা বছরে দু’বার ঘটে। প্রথমে জুন মাসের শেষের দিকে এবং অক্টোবরের শেষের দিকে বা নভেম্বরের শুরুর দিকে। জুন মাসের উল্কাগুলিকে বিটা বলা হয়। দিনের বেলায় দেখা যায় তাদের।

লস অ্যালামোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির পদার্থবিজ্ঞানী মার্ক বসলাফের নতুন সূত্র অনুযায়ী, সাইবেরিয়ায় গাছের পতনের যে ধরণটি দেখা গেছিল তা আকাশের একই এলাকার টাউরিড উল্কা প্রবাহের মতোই দেখতে। লন্ডনের ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানী পিটার ব্রাউন ও বসলাফ এই মাসেই ওয়াশিংটনে আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের সভায় একটি উপস্থাপনা দিয়েছেন যার মধ্যে তারা এই আগামী জুনে একটি বিশেষ পর্যবেক্ষণ অভিযানের আহ্বান জানিয়েছে। এই পর্যবেক্ষণে তুঙ্গুস্কা ক্লাস বা টাউরিড সহ বৃহত বস্তুগুলিকে খতিয়ে দেখা হবে ।

কিছু বছর ধরে, পৃথিবী টাউরিড প্রবাহের সবচেয়ে ঘন ক্লাস্টারের কাছাকাছি দিয়েই অতিক্রম করছে এবং ২০১৯ সালেও ঠিক এমনটাই হতে চলেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে ১৯৭৫ সালের পর থেকে এটিই সম্ভবত সেই বছর যা মহাজাগতিক বস্তুর ধেয়ে আসা লক্ষ্য করতে পারবে। বসলাফ ও বাউন বলেন, “যদি তুঙ্গুস্কার বস্তুটি বিটা টাউরিড প্রবাহের সদস্য হয় তবে ২০১৯ সালের জুনের শেষ সপ্তাহটিতে তুঙ্গুস্কার মতো সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে চরম।”

তাঁরা আরও জানান, আমরা আরেকটি তুঙ্গুস্কা বিস্ফোরণের পূর্বাভাস দিচ্ছি না, যদিও বিটা টাউরিডে ছোট NEO পৃথিবীর কাছাকাছি বস্তু] বৃদ্ধির ফলে পরের বছর তুঙ্গুস্কা বার্ষিকি হতে চলেছে কিনা তা বলা যাচ্ছে না এখনই।

স্পষ্ট ভাবে কিন্তু কেউই জানাননি যে গোটা ২০১৯ জুড়ে মাথায় উল্কা এসে পড়তে পারে কিনা। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন মহাবিশ্ব এতটাই বড় যে সহজেই এটি পৃথিবীকে আঘাত করবে এমন ভাবার কারণ নেই।

টাউরিড স্ট্রিমের জ্যামিতিক গঠন বোঝা অবশ্য একটু সমস্যারই। সূর্যের চারপাশে একটি আংটি হিসাবে একে কল্পনা করা যেতে পারে। এই আংটিটি কিন্তু পৃথিবীর কক্ষপথের সমান সমান নয়। অর্থাৎ পৃথিবী বছরে দুবার টাউরিড প্রবাহকে অতিক্রম করে। জুন মাসে সূর্য থেকে দূরে ভ্রমণ করা টাউরিড উপাদানকে ছেদ করে যায়, এবং অক্টোবর মাসে সূর্যের দিকে ভ্রমণ করা উপাদানগুলো ছেদ করে। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে আঘাত করার কারণে আমরা অক্টোবর টাউরিডগুলিকে দেখতে পাই। জুন টাউরিড রোদে ঝাপসা হয়ে যায়, যদিও রাডারে তা ধরা পড়ে।