অনলাইন ডেস্ক:: রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম নিরাপদ, আরামদায়ক ও বিলাশবহুল মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ ও নৌযান (লঞ্চ-স্টিমার)। প্রতিবছর ঈদ-কোরবানিতে নৌপথে বেড়ে যায় দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের চাপ। এজন্য যাত্রী চাপ সামাল দিতে বিশেষ সার্ভিস দিয়ে থাকে সরকারি-বেসরকারি নৌযান কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বিশেষ সার্ভিস শুরুর সময় এখনও নির্ধারণ না হলেও বরিশাল-ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের দূরপাল্লার রুটে কতগুলো যাত্রীবাহী নৌযান চলবে সে বিষয়ে সম্ভাবতা যাচাই করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষ।

বিআইডব্লিউটিএ’র দেওয়া অনুযায়ী ঈদের আগে ও পরে ঢাকা থেকে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে ৫২টির মতো নৌযানে থাকবে ঈদ সার্ভিস। এর মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল-ঢাকা নৌরুটেই সরাসরি বিশেষ সার্ভিস দেবে বিলাশবহুল ২৩টি বেসরকারি লঞ্চ। এছাড়া এই রুটে বিশেষ সার্ভিসে থাকবে বিআইডব্লিউটিসির আরও ৫টি স্টিমার।

বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে- দেশের নদী পথে সব থেকে বড় নৌপথ হচ্ছে বরিশাল-ঢাকা। যে কারণে এ রুটে দিনে দিনে বেসরকারি লঞ্চের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সবশেষ এ রুটে গত মাসেও যাত্রী সেবায় যুক্ত হয় বিলাশবহুল নতুন নৌযান এমভি মানামী। এনিয়ে বর্তমানে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে নিয়মিত যাত্রীসেবায় যুক্ত রয়েছে ২১টি লঞ্চ।

বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) কবির হোসেন বলেন, বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে বর্তমানে দিবা সার্ভিসসহ মোট ২১টি বেসরকারি লঞ্চ চলাচল করছে। এর মধ্যে রোটেশন অনুযায়ী প্রতিদিন ঢাকা ও বরিশাল থেকে ৮ থেকে ১০টি করে লঞ্চে যাত্রীসেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে ঈদ মৌসুমে রোটেশন পদ্ধতি থাকে না। মালিকরা সব ধরনের লঞ্চেই প্রতিদিন ডাবল ট্রিপ দিয়ে থাকে। যাকে বলা হয় ঈদ বিশেষ সার্ভিস।

তিনি বলেন, এবারের ঈদে সরাসরি বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে ২৩টি বেসরকারি লঞ্চ চলাচল করবে। এছাড়া দিবা সার্ভিসে আগামী ১৬ মে থেকে ক্যাটামেরান টাইপ নৌযান অ্যাডভেঞ্জার-৫ চলাচল শুরু করবে। এই জাহাজটি গত ঈদে উদ্বোধন করা হয়েছিল।

টিআই কবির হোসেন বলেন- ঈদ সার্ভিসে এমভি কীর্তনখোলা গ্রুপের দু’টি, অ্যাডভেঞ্চার গ্রুপের তিনটি, এমভি সুন্দরবন গ্রুপের তিনটি, এমভি সুরভী গ্রুপের তিনটি, এমভি পারাবত গ্রুপের পাঁচটি, গ্রিনলাইন কোম্পানির দু’টি, এমভি কামাল কোম্পানির দু’টি, এমভি মানামী, এমভি টিপু-৭ ও এমভি ফারহান-৮ সরাসরি বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে যাত্রী সেবা দেবে। এর মধ্যে গ্রিনলাইন কোম্পানির দু’টি ও অ্যাডভেঞ্চার কোম্পানির একটি দিবা সার্ভিসে থাকবে। ঝালকাঠি ও তুষখালী-ঢাকা নৌরুটে ভায়া বরিশাল হয়ে চলাচল করবে সাতটি লঞ্চ। এর মধ্যে সুন্দরবন কোম্পানির দু’টি, ফারহান কোম্পানির দু’টি, এমভি মানিক-১, রেডসান ও পূবালী। বরগুনা-ঢাকা ভায়া বরিশাল হয়ে চলাচল করবে তিনটি লঞ্চ। এগুলো-এমভি শাহরুখ-১, সুন্দরবন-২, প্রিন্স অব রাসেল-১ ও যুবরাজ। বরগুনা-ঢাকা ভায়া বরিশাল ও ঝালকাঠি হয়ে চলাচল করবে এমভি গ্রিন ওয়াটার-১০। এই লঞ্চটি শুধুমাত্র ঈদ মৌসুমেই চলাচল করে।

পটুয়াখালী নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের আলম চন্দ্র মিত্র বলেন, পটুয়াখালী-ঢাকা রুটে সরাসরি আটটি লঞ্চ বিশেষ সার্ভিস দেবে। এর মধ্যে সুন্দরবন কোম্পানির দু’টি, এমভি জামাল-৫ এমভি প্রিন্স অব রাসেল-৪সহ আটটি লঞ্চ চলাচল করবে।

ভোলা নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ইন্সপেক্টর (টিআই) নাসিম আহমেদ বলেন, ভোলা-ঢাকা রুটে সরাসরি আটটি লঞ্চ চলাচল করে। স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা ও ভোলা প্রান্ত থেকে দু’টি করে মোট চারটি লঞ্চ চলাচল করলেও ঈদের আগে পরে অন্তত ১০ দিন আটটি লঞ্চই একসঙ্গে চলাচল করে থাকে। ওই আটটি লঞ্চ এবারেও ঈদ সার্ভিসে থাকবে।

এদিকে বিআইডব্লিউটিসির বরিশাল অঞ্চলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগের মতো এবারও ঈদ সার্ভিসে তাদের সংস্থার পাঁচটি জাহাজ থাকছে। ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-হুলারহাট ভায় বরিশাল হয়ে চলবে এ পাঁচটি জাহাজ। জাহাজগুলো-এমভি বাঙালি, মধুমতি, পিএস লেপচা, পিএস টার্ন ও পিএস মাসুদ। ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে ঈদ পরবর্তী এক সপ্তাহ বিশেষ সার্ভিস দেবে।

বেসরকারি নৌযান মালিকদের সংগঠন জাপ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, এবার ঈদে যাত্রী সেবায় আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। কেননা এবার লঞ্চের সংখ্যা আগের বছরগুলোর তুলনায় বেশি। তবে কবে থেকে বিশেষ সার্ভিস শুরু হবে বিষয়টি এখনও ঠিক হয়নি। আগামী ১৮ মে ঢাকায় জাপ’র সাধারণ সভা হবে। ওই সভাতেই ঈদ সার্ভিসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন- লঞ্চগুলো অগ্রিম টিকিট বিক্রি কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। কিছু কোম্পানি বিশেষ স্লিপের মাধ্যমে আবার কিছু কোম্পানি সরাসরি টিকিট বিক্রি করছে। যারা স্লিপ পদ্ধতিতে টিকিট বিক্রি করছে তারা আবেদন আবেদনকারীদের আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় টিকিট বিক্রি শুরু করবে। এক্ষেত্রে যারা নিয়মিত যাত্রী তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।’