জহির খান উজিরপুর :: দেশের কৃষকদের লোকসানের বোঝা লাঘবের লক্ষ্যে সারাদেশে প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ শুরু করেছে সরকার। সেই মোতাবেক গত ৩ মে থেকে দেশের প্রতিটি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের উদ্যোগে ধান ক্রয় শুরু হয়েছে। তবে এর ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা যাচ্ছে বরিশালের উজিরপুর উপজেলায়।

সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরুর প্রায় এক মাস অতিক্রম হলেও বিভিন্ন অজুহাতে এখনও ধান ক্রয় শুরু করেনি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস। ফলে ধানের ন্যায্য মূল্য নিয়ে হতাশায় ভুগছেন এখানকার কৃষকরা। মাত্র কয়েকদিন পরেই ঈদ। অথচ এ উপজেলার কৃষক পরিবারগুলোর মুখে নেই কোনো হাসি। শুধুই হতাশার ছায়া।

এ অঞ্চলে বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে হলেও সরকারিভাবে ধান ক্রয় এখনও পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। যে কারণে প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে কৃষকরা কম দামে ধান বাজারে বিক্রি করছেন। এতে করে কৃষকদের মোটা অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে সরকারি ক্রয়মূল্যের চেয়ে মান ও প্রকারভেদে প্রতিমণ ধান গড়ে ৫০০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে মধ্য স্বত্ব ভোগী ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় ধানের বাম্পার ফলন হলেও কম দামের কারণে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ধান উৎপাদনকারী প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজারোধিক। এদের নিকট থেকে প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা দরে মোট ৪১০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করবে স্থানীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস। কৃষকদের অভিযোগ চলতি মওসুমে বিদ্যুৎ, সার ও কীটনাশকের মূল্য চড়া থাকায় উৎপাদনের খরচ অনেক বাড়তি হয়েছে।

এরপরেও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এক প্রকার ধান ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ধান ক্রয় চালিয়ে লাভবান হতে গড়িমসি করছে। সময় শেষ হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারনে কৃষকদের নিকট থেকে এখনও ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরু করেনি।

শিকারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম জয়শ্রী গ্রামের কৃষক সেলিম সরদার অভিযোগ করে জানান, ‘সরকারের নির্ধারিত দাম পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে এখন বাধ্য হয়ে প্রতি মণ ধান মাত্র সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা দরে বিক্রি করছি। এসব ধানের মণ প্রতি উৎপাদন খরচ পড়েছে ৭শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা।

উৎপাদন খরচের চেয়ে ধানের মূল্য একেবারে নগণ্য যাতে ধান কাটার খরচও উঠেনি। এজন্য তিনি হতাশ হয়ে পড়েছেন।’ তিনি আরও জানান, ‘অনেক কৃষক ধান উৎপাদনে বিভিন্ন স্থান থেকে ঋণ গ্রহণ করে এখন ঋণের দায়ে জর্জড়িত কৃষকরা বাধ্য হয়ে অনেক কম দামে ধান বিক্রি করছেন।’

একটি সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে অনেকদিন আগেই প্রান্তিক কৃষকদের একটি তালিকা সংশ্লিষ্ট খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসকে দেওয়া হয়েছে। তালিকা পাওয়ার পরে খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের কর্মকর্তারা সেই তালিকা পুনরায় কৃষি অধিদপ্তরকে ফেরত পাঠায়।

কৃষি অফিস তাদের পাঠানো তালিকা ফেরত পেয়ে আবার একটি নতুন তালিকা প্রনয়ণ করে পাঠালে সেটি খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস গ্রহণ করে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে কয়েকদিন পরে ওই তালিকাও খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস পুন:রায় কৃষি অফিসে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, মূলত খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা ধান সংগ্রহ কার্যক্রম থেকে কালোবাজারির মাধ্যমে লাভবান হতে এভাবে সময় অতিক্রম করছেন। যাতে কৃষকরা বিপাকে পড়ে ধান মজুদ না করে সল্প মূলেই বাজারে বিক্রি করে এবং ওইসব অসাধু কর্মকর্তারা পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করে নিজেরা লাভবান হবেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে শিকারপুর খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, ‘মূলত উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাদের কাছে যেসব কৃষকদের তালিকা দিবে তাদের নিকট থেকেই ধান সংগ্রহ করা হবে। উপজেলা কৃষি অফিস যে তালিকা দিয়েছিলো সেই তালিকা সংশোধন করতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’

সরকারিভাবে সারাদেশে ধান সংগ্রহ শুরুর এক মাস অতিবাহিত হচ্ছে এখনও এখানকার কৃষকদের নিকট থেকে ধান সংগ্রহ শুরু হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে এই কমকর্তা জানান, ‘ধান সংগ্রহে কোনো ধীরগতি হচ্ছে না। আশপাশের উপজেলাগুলোতে শুধু নামমাত্র সংগ্রহ করেছে। আমরা চাইলে একদিনে এক শত মেট্রিক টন করতে পারবো। তবে ঈদের আগে ধান সংগ্রহ শুরু হওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জাকির হোসেন তালুকদার জানান, ‘কৃষি অফিস থেকে প্রান্তিক কৃষকদের ৬০৭ জনের নামের একটি তালিকা গত ১৯ মে খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে পাঠানো হলে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো: মশিউর রহমান গ্রহণ করেছেন। অথচ কি কারনে কৃষকদের নিকট থেকে খাদ্য অফিস ধান সংগ্রহ করছে না সেটা জানা নেই।’