বরিশাল নগরীর বাজার রোডের একটি মসজিদের ইমাম লাঞ্ছিত করাকে কেন্দ্র করে বহিরাগতদের মারধরে রাতভর উত্তেজনা বিরাজ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সোমবার রাত সাড়ে ৯ টার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে উত্তেজনা বিরাজমান। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত শালিস বৈঠক করলেও সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেনি।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বেশকিছু দিন ধরে স্থানীয় মনির ও বাপ্পির সাথে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের একটা দ্বন্দ্ব অনুমান করা যাচ্ছিল। সেই দ্বন্দ্বের জেরেই মাদ্রাসার বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা মনির ও বাপ্পিকে একা পেয়ে পিটুনি দেয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতে বাজার রোডে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কোতয়ালি থানা পুলিশের অন্তত অর্ধশত সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

মাদ্রাসার একটি সূত্র জানিয়েছে- পার্শ্ববর্তী স্বরোডের বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার শহীদ সাম্প্রতিকালে নির্মানাধীন মসজিদে চারটি ফ্যান কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কর্তৃপক্ষের দাবি ছিলো ফ্যানগুলো যেন মাদ্রাসার ফ্যানের রঙয়ের দেওয়া হয়। ইঞ্জিনিয়ার শহীদ কাঙ্খিত ফ্যানের কালার শহরের মার্কেটে মিলাতে না পেরে গত শুক্রবার জুমার দিন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে মসজিদের ইমাম মাওলানা সামসুল আলম তাকে নির্ধারিত দোনাকে নিয়ে যাওর বিষয়টি অবহিত করেন। নতুবা ফ্যান ক্রয়ের টাকা দিলে ইমাম কিনে আনার প্রস্তাব দেন। কিন্তু এই বিষয়টিকে ভালভাবে না নিয়ে মনির ও বাপ্পি মসজিদে উপস্থিত মুসুল্লিদের মধ্যে বলে ওঠেন হুজুরদের কাছে টাকা দিলে তারা পারসেন্টিস নেন। ইমাম সামসুল আলম এমন উক্তির তাতক্ষণিক প্রতিবাদ জানালে মনির ও বাপ্পি ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে গালিগালাজ করে স্থান ত্যাগ করেন।

এই ঘটনা সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে জানাজানি হলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা মনির ও বাপ্পিকে কয়েকদিন ধরেই খুঁজছিলো। সোমবার রাতে তারা নামাজ শেষ করার সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা তাদেরকে মাঠে ডেকে নেয় এবং তাদের ইমামকে লাঞ্ছিত করার বিষটিতে কৈফিয়ত চায়। এতে তারা রেগে গেলে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে তাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে ঘরে বেধম পিটুনি দেয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কয়েক যুবক পাল্টা অবস্থান নিলে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা।

খবর পেয়ে কোতয়ালি থানা পুলিশের এসি ও ওসিসহ অন্তত অর্ধশত পুলিশ সদস্য গিয়ে উভয়গ্রুপকে নিবৃত করে পরিস্থিতি অনুকূলে নেয়। কিন্তু বিষয়টি মিমাংশায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের নিয়ে পুলিশ বৈঠকে বসলে সেখানেও দেখা দেয় উত্তেজনা। খোদ কোতয়ালি পুলিশের এসি রালের উপস্থিতিতেই মাদ্রাসার ভেতরেই স্থানীয়রা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের ওপর চড়াও হয়। এসময় পুলিশ তাদের শান্ত করতে গ্রেফতারের হুমকিও দেয়। যদিও শেষ পর্যন্ত এই সংঘর্ষের বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

তবে কোতয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম বলছেন- বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে মাদ্রাসায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এবং একটি ৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে তাদের মঙ্গলবার সকাল ১০টার মধ্যে মারধরের কারণ শনাক্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানান ওসি।’