নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝালকাঠি:: ঝালকাঠি সদর থানার সেই বিতর্কিত ওসি শোনিত কুমার গায়েনকে অবশেষে শাস্তিমুলক বদলি করা হয়েছে। মামলা গ্রহণের ক্ষেত্রে নানা দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগে গত ২ সেপ্টেম্বর তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়।

ওসি শোনিত কুমার গাইনের বিরুদ্ধে বিগত সময়েও মামলার বাদী বিবাদীদের কাছ থেকে ঘুষ বাণিজ্যসহ অসংখ্য অভিযোগ ওঠে। ওই সময় তার চেয়ারটি নড়বড়ে হয়ে গেলে ঝালকাঠির বাসিন্দা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা রক্ষায় প্রত্যক্ষ ভুমিকা রাখেন। ফলে সেই দফা তিনি রক্ষা পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার সাম্প্রতিকালের দুটি ডাকাতির ঘটনায় এড়িয়ে যাওয়ায় পড়েছেন বেকায়দায়।

একরাতে ঘটে যাওয়া দুটি ডাকাতির ঘটনাকে তিনি চুরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে মামলা গ্রহণ করেননি। বরং সাধারণ ডায়েরি হিসেবে গ্রহণের মধ্যদিয়ে ওসি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির বিষয়টি আড়াল করতে চেয়েছিলেন। এই বিষয়টি কমবেশি জানাজানি হয়ে গেছে ওসির ভুমিকা নিয়ে প্রশ্নের দেখা দেয়। এতে ঝালকাঠি জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারাও চরম বিতর্কের মুখে পড়েন।

এই ঘটনাটি বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পুলিশ একটি মাধ্যমে অবগত হয়ে গত ০২ সেপ্টেম্বর তাকে পুলিশ লাইনে সরিয়ে নেওয়ার আদেশ দেয়। পরবর্তীতে ওই থানার দায়িত্ব দেওয়া হয় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/তদন্ত) আবু তাহরকে। তিনিই এখন থানায় ওসি হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন।

যদিও ঝালকাঠি পুলিশের পক্ষ থেকে ওসি শোনিত কুমার গায়েনকে শাস্তিমুলক বদলি করার বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। তবে অনেকে প্রশাসনিক কারণে তাকে থানা থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি করলেও বিষয়টি বুঝতে বাকি নেই। এমনকি থানা পুলিশের ভেতর থেকেও শোনা গেছে- দুটি ডাকাতির পাশাপাশি নানা অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে তাকে শাস্তিমুলক বদলি করা হয়েছে।

থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়- শোনিত কুমার গায়েন ২০১৭ সালের ০৬ জুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে ঝালকাঠি সদর থানায় যোগদান করেন। কিন্তু সেই যোগদানের কয়েক মাসের মাথায়ই তিনি ঘুষ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। এই ঘুষ বাণিজ্যে ওসির সাথে তৎকালীন সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মিঠুন দাস এবং মিন্টু লালও সম্পৃক্ত ছিলেন।

তৎকালীন সময়ে তাদের নিয়ে বরিশালটাইমসকে একটি ‘ঘুষ কেলেঙ্কারির’ সংবাদ প্রকাশ পেলে দুই এএসআইকে বরখাস্ত করা হলেও ওসি ছিলেন বহাল তবিয়তে। এর পরে সেই আওয়ামী লীগকে পাশে পেয়ে ওসি শোনিত ঝালকাঠিতে দীর্ঘদিন কাটিয়ে দেন।

এমনকি এবারের দুটি ডাকাতির ঘটনাও আড়াল করতে তিনি সেই আওয়ামী লীগ নেতার দারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু এই বিষয়টি ঝালকাঠি পুলিশের কেউ ইতিবাচক হিসেবে না নেওয়ায় তিনি এখন খেসারত দিচ্ছেন।

যদিও ওসি শোনিত কুমার তাকে শাস্তিমূলক বদলির বিষয়টি অস্বীকার করে বরিশালটাইমসকে বলছেন- স্বাভাবিক নিয়মেই তাকে থানা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে শাস্তির কোন প্রশ্নই আসে না। সেই সাথে তিনি বিগত সময়ের সকল অনিয়মের অভিযোগও অস্বীকার করেছেন।’