বার্তা পরিবেশক, অনলাইন::: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস, জুয়াসহ সব সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে জেলা, উপজেলা ও পৌরসভাসহ সব সেক্টরে এবং স্থানে সরকারের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। সরকারি কর্মচারিসহ অপরাধী যেই হোক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে অনুসন্ধানপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমাজের সব স্তর থেকে অপরাধ নির্মুল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।
বুধবার জাতীয় সংসদে সাংসদদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের কারা সিঙ্গাপুরে ক্যাসিনো খেলেছে তার তথ্য দেওয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন সে দেশের সরকারকে অনুরোধ করেছে।
সরকারি দলের সাংসদ মীর মোস্তাক আহমেদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তির সম্পদের তথ্য চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছে। এ ছাড়া কারা কারা অভিজাত গাড়ি কিনেছে, সেই সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। সকল দুর্নীতিবাজকে আইনের আওতায় আনতে দুদক কাজ করে যাচ্ছে।
জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে দেশে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন কাজ করছে। দুদক ইতিমধ্যে দুর্নীতিবাজদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত শুরু করেছে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী ইতোমধ্যে কঠোর অভিযান পরিচালনা করে ক্যাসিনোর আস্তানাগুলো উচ্ছেদ করেছে। সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে আদালতে সোপর্দ করেছে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এ ধরনের অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনা করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি অব্যাহত আছে।
প্রধানমন্ত্রী সংসদকে অবহিত করেন, গত ১০ বছরে দুর্নীতি দমন কমিশন ১৩ হাজার ২৩৮টি অভিযোগের অনুসন্ধান, ৩ হাজার ৬১৭টি মামলা দায়ের এবং ৫ হাজার ১৭৯টি চার্জশিট দাখিল করেছে।
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্যাসিনো ও দুর্নীতির সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানের পাশাপাশি কঠোর গোয়েন্দা নজরদারিও অব্যাহত রয়েছে।
সংসদ নেতা বলেন, সব দুর্নীতিবাজকে আইনের আওতায় আনতে দুদক কাজ করে যাচ্ছে। দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের রাজনৈতিক ব্যক্তি ছাড়াও সরকারি কর্মচারীসহ অন্য যেসব ব্যক্তি জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের পাশাপাশি ক্যাসিনো, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে সরকার।
জাতীয় পার্টির সাংসদ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতির বিষবৃক্ষ সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলে দেশের প্রকৃত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য একটি সুশাসনভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বন্দর ব্যবহার করতে চাইলে চীনকেও স্বাগত
তারকা চিহ্নিত প্রশ্নে জাতীয় পার্টির সাংসদ মসিউর রহমান জানতে চান, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ভারত ব্যবহার করবে, বিষয়টি কতটুকু সমীচীন বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারে ভারতের সঙ্গে এসওপি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর ফলে ভারত আমদানি-রপ্তানির জন্য এ বন্দর দুটি ব্যবহার করতে পারবে। এটি উভয় দেশের জন্যই লাভজনক। ভারতের পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতে নেপাল ও ভুটান আমাদের বন্দর ব্যবহারের সুযোগ গ্রহন করবে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমনকি চীনের দক্ষিণ-পঞ্চিমাঞ্চলের রাজ্যসমূহও এ বন্দর দুটি ব্যবহার করতে চাইলে আমরা তাদেরকেও স্বাগত জানাবো। এর ফলে বাংলাদেশ আঞ্চলিক বাণিজ্য ও যোগাযের কেন্দ্রস্থল হিসেবে গড়ে ওঠবে।’
মসিউর রহমান ভারতে প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানীর বিষয়েও জানতে চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনায় দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশ থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানির কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। বাংলাদেশ থেকে ভারতের ত্রিপুরায় বাল্ক এলপিজি রপ্তানির কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বেসরকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে আমদানী করা এলজিপি গ্যাস সিলিন্ডারে ভরে ভারতে রপ্তানি করে মুনাফা অর্জন করতে পারবে। এতে বাংলাদেশে কোন ধরনের জ্বালানি সমস্যার সৃষ্টি হবে না। বরং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আরও একটি নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হলো।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ
তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাউজভান্ডারীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর আলোে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পরে রোহিঙ্গা সমস্যাটা শুরু হয়। রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টির পেছনে জিয়াউর রহমানের যে হাত ছিলো তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
অতীতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সন্ত্রাসীদের এ দেশের মাটিকে ব্যবহার করে তাদের দেশে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার সুযোগ দিয়েছিল—এমন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী। বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে কেউ বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতে পারবে না।
সরকারি দলের শহীদুজ্জামান সরকারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবিলায় ভারত ও চীনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে তাদের সক্রিয় ভূমিকা আশা করা হচ্ছে। কেবল ভারত আর চীন নয়—বাংলাদেশসহ মিয়ানমারের সঙ্গে যে কয়টি দেশের সীমান্ত আছে সেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ আলোচনা করছে। চীনের রাষ্ট্রপতি কথা দিয়েছেন এ সমস্যা সমাধানে যথাযথ ভূমিকা রাখবেন। ইতোমধ্যে তারা প্রতিনিধিও পাঠিয়েছেন। তারাও আলোচনা করছেন। চাপ দিচ্ছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি। বিষয়টির সমাধান দরকার এটা সকলেই অনুধাবন করেন। তবে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো দেশগুলো মিয়ানমারের সাথে যে সম্পর্ক তা রেখেই তারা চান রোহিঙ্গারা নিরাপদে নিজের দেশের ফিরে যেতে পারে। আলোচনা অব্যাহত আছে।’