বার্তা পরিবেশক, অনলাইন:: পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা কমছেই না। এই কমছে তো এই বাড়ছে। ভারতের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর বাড়তে থাকে দাম। বাড়তে বাড়তে কেজিপ্রতি দাম আড়াইশ ছাড়িয়ে যায়। সম্প্রতি মিসর, তুরস্ক ও পাকিস্তান থেকে বড় চালান পৌঁছলে তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দাম কমে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু শুক্রবার আবার দাম বেড়ে দুইশর কোটা ছাড়িয়েছে।

শনিবার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। এদিকে পেঁয়াজের কারসাজি করে অর্থ লুটেরাদের ধরতে মাঠে নামবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে সংস্থাটির গোয়েন্দা শাখা বেশ কয়েক পেঁয়াজ ব্যবসায়ীর ওপর নজরদারি শুরু করেছে।

অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি রাজধানীর দ্য হোটেল ওয়েস্টিনে সাংবাদিকদের জানান, আগামী ১০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।

পেঁয়াজের দাম কয়েকদিন কমার পর গতকাল আবার বেড়েছে। কারওয়ানবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগরসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আমদানি করা পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে বাজারভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। গত বৃহস্পতিবারও যা ছিল ১৭০ টাকা।

তবে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৬০ থেকে ১৭০, মিসরের পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১৩০ এবং চীনের পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি। এ ছাড়া নতুন দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা এবং পাতাসহ পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি।

রাজধানীর শ্যামবাজার, কারওয়ানবাজারের পাইকারি বাজারেও বেড়েছে দাম। শ্যামবাজারে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৩০ থেকে ১৫০, মিসরের ১০০ থেকে ১০৪, চায়নার ১০০ টাকায়, পাকিস্তানি ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ানবাজারের পাইকারি বাজারে দাম তুলনামূলক বেশি। কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৪৫ থেকে ১৫৫, মিসরের ১১০ থেকে ১১৬, চায়নার ১০০ থেকে ১০৫ টাকা কেজি।

কারওয়ানবাজারের বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ের পাইকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ফয়েজ বলেন, ‘দাম বাড়ার তো অনেক কারণ। তবে বর্তমানে বাজারে সত্যিই দেশি পেঁয়াজ শেষ। তাই দাম বেড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি ধর্মঘটের কারণে পেয়াজ সরবরাহেও ব্যাঘাত ঘটেছে অনেক সড়কে।’

কারওয়ানবাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা আবদুল হাই নামে এক ক্রেতা বলেন, বিপুল পেঁয়াজ এসেছে শুনলাম। ভাবলাম আজ কম দামে পেঁয়াজ পাব। কিন্তু এসে দেখি দেশি পেঁয়াজ আবার ২১০ টাকা। তার ওপর মিয়ানমারের পেঁয়াজকে দেশি বলে চালিয়ে দিচ্ছে। এমনিতেই দাম নিয়ে দিশেহারা আমরা, তার ওপর এমন প্রতারণা হলে যাব কোথায়।

আগামী ১০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার ‘সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আসবে’ বলে আশা করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। শনিবার রাজধানীর দ্য হোটেল ওয়েস্টিনে এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।

এ আশা করার কারণ ব্যাখ্যা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ১০ দিনের মধ্যে দেশি পেঁয়াজ ওঠা শুরু হবে। তখন বাজার নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করবে। এ ছাড়া আশা করছি, ২৯ তারিখের মধ্যে কম করে হলেও ১২ হাজার টন পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে।’

পেঁয়াজের দাম কমার পর আবারও বাড়ার কথা স্বীকার করে টিপু মুনশি বলেন, সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম কমে এলেও পরিবহন ধর্মঘটের কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে। তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম ওইভাবে নিয়ন্ত্রণে আসছে না, শুক্রবার আবার দাম বেড়েছে। গতকাল (শুক্রবার) উত্তরার বাজার থেকে আমি নিজে কিনেছি ১৪০ টাকা করে দেশি পেঁয়াজ। এটি তো বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম।

কোথাও অস্বাভাবিক দাম রাখা হলে সেটি সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা উচিত নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, যদি কোনো একজন মানুষ কোথাও থেকে ২০০ বা ১৮০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কেনার কথা বলে তা হলে সেটি অবশ্যই নিউজ হতে পারে না।

পেঁয়াজ নিয়ে একটি সংবাদের সমালোচনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের কোনো একটা চ্যানেলে নিউজ আসছে। সেখানে এক রিকশাওয়ালা বলছে, আমি ৫০০ টাকা রোজগার করি ২০০ টাকা দিয়ে যদি পেঁয়াজ কিনি তা হলে তো আমার ৩০০ টাকা হাতে থাকবে। পরিসংখ্যান বলে, একজন মানুষ ৩৫ গ্রাম পেঁয়াজ খায়। সেই রিকশাওয়ালার পরিবার যদি চারজনের পরিবার হয় তা হলে তার লাগে ১৪০ গ্রাম। ২০০ টাকা কেজি করে ধরলেও ১৪০ গ্রামের দাম ৩০ টাকার বেশি না। কিন্তু কথাটা এভাবে বলা হয়েছে, আমি ২০০ টাকা দিয়ে এক কেজি পেঁয়াজ কিনলে পরে ৩০০ টাকা দিয়ে আমার সংসার চলবে কীভাবে? দ্যাট ইজ নট রিয়েলিটি।

পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে যারা অর্থ লুটে নিয়েছেন তাদের ধরতে মাঠে নামবে দুদক। ইতোমধ্যে দুদকের গোয়েন্দা শাখা বেশ কয়েক পেঁয়াজ ব্যবসায়ীর ওপর নজরদারি শুরু করেছে। দুদক থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর দেশে কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে মজুদের মাধ্যমে বেশি দামে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এ কারসাজিতে জড়িত আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীর তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে দুদক। একই সঙ্গে ব্যবসায়িক তথ্য ও তাদের নামে-বেনামে থাকা সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

দুদক কর্মকর্তারা বলেছেন, পেঁয়াজের বেআইনি মজুদ দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। তবে কর ফাঁকি দিয়ে ও মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি করে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করবে দুদক। কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে যারা বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন তাদের ওপর দুদকের গোয়েন্দা শাখার নজরদারি রয়েছে।

সিটি গ্রুপের পেঁয়াজের দ্বিতীয় চালান আসবে সোমবার

সিটি গ্রুপের আমদানি করা পেঁয়াজের দ্বিতীয় চালান কার্গো বিমানে করে আগামীকাল সোমবার দেশে পৌঁছবে। দেশের চলমান পেঁয়াজের সংকট নিরসনের লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ২ হাজার ৫২০ টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই শিল্পগোষ্ঠী।

উল্লেখ্য, দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণে এবং উচ্চমূল্য রোধে এস আলম ও মেঘনা গ্রুপের পাশাপাশি সিটি গ্রুপও তুরস্ক থেকে আকাশ ও সমুদ্রপথে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। শনিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।