বার্তা পরিবেশক, অনলাইন :: অপকর্মকারীদের স্থান আওয়ামী লীগে নেই জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, মাদকবিক্রেতা ও সন্ত্রাসীরা সাবধান। চলছে শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযান। এসব অপরাধীদের স্থান আওয়ামী লীগে নেই।

তিনি বলেন, দুঃসময়ের কর্মীদের বাদ দিয়ে পকেট কমিটি করা চলবে না। পকেট কমিটির লোকেরা সময় আছে সাবধান। শীতের মৌসুমী পাখি মৌসুমে আসে, মৌসুম চলে গেলে মৌসুমী পাখিদের হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই ত্যাগী-পরীক্ষিত কর্মী চাই। মানসিকভাবে প্রস্তুত হোন।

বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) বিকেলে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত বিদায়ের পর বাংলাদেশে গত ৪৪ বছরে সবচেয়ে সৎ রাজনীতিক, জনপ্রিয়, দক্ষ, সফল নেতার নাম শেখ হাসিনা। গত ৪৪ বছরে জনবান্ধব সরকারের নাম শেখ হাসিনা সরকার। এই মহান নেত্রীর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পতাকা তলে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, যদি আওয়ামী লীগ করেন, তবে দলের নিয়ম-কানুন, শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতা টাকার বিনিময়ে হওয়া যায় না। যোগ্যতা, ত্যাগ, তিতিক্ষা দিয়ে হতে হয়। সু সময়ের সুবিধাবাদীদের আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেওয়া যাবে না। জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হবে।

মনোনয়ন বাণিজ্য চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মনোনয়ন বাণিজ্য আওয়ামী লীগে শুনতে চাই না। মনোনয়ন বাণিজ্য যারা করেছেন, সাবধান হয়ে যান। মনে রাখবেন আওয়ামী লীগে কাউকে বাদ দেওয়া হয় না, দায়িত্বের পরিবর্তন হয়। দায়িত্বে পরিবর্তন মানে বাদ দেওয়া নয়, নবীনের সঙ্গে প্রবীণের মিলন ঘটানো, এনার্জির সঙ্গে এক্সপেরিয়েন্সের মিলন করে নতুন নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বর্তমান প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগের নেতার অভাব নেই। কর্মী কমে যাচ্ছে, নেতা বেড়ে যাচ্ছে। কত নেতা, নেতার শেষ নেই, বড় নেতা, পাতি নেতা, আধুলি নেতা, সিকি নেতা, শুধুই নেতা। এখন পোস্টার লাগাতে কর্মী পাওয়া যায় না। এই আওয়ামী লীগের দরকার নেই। কর্মীরা পোস্টার লাগাবে, কর্মীরা বিলবোর্ড লাগাবে। মাঠে কর্মে দেখিনা, আর বিলবোর্ডে কত চেহারা। সামনে দেখি এক চেহারা, বিল বোর্ডে আরেক চেহারা।

তিনি বলেন, বিলবোর্ডের ছবি দেখলে মনে হয় সব বিশাল নেতা, এত নেতার দরকার নেই। শেখ হাসিনার আসল, ত্যাগী, দুঃসময়ের কর্মী দরকার। নেতা আস্তে আস্তে হোন। বিলবোর্ড-পোস্টার লাগালে নেতা হওয়া যায় না।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আওয়ামী লীগ মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে জীবনের জয় গান গায়। আমরা আওয়ামী লীগ, ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে সৃষ্টির পতাকা উড়াই। আমরা দুর্যোগের বিরুদ্ধে, অন্ধকারের বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। তাই আওয়ামী লীগকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব গড়তে হবে। আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিশ্বের দুইজন সেরা প্রধানমন্ত্রীর একজন। বিশ্বের চারজন পরিশ্রমী প্রধানমন্ত্রীর একজন।

বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, অনেক সংগ্রাম-আন্দোলনের সুতিকাগার এই সিলেট। সিলেটের মাটিতে এসে শ্রদ্ধাভরে মরহুম নেতাদের স্মরণ করি।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিনের পরিচালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের নীতিনির্ধারণী কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন, কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সদস্য অধ্যাপক রফিকুর রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ, উপদেষ্টা ইনাম আহমদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী প্রমুখ।

সমাবেশের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগরের সভাপতি সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।

দ্বিতীয় অধিবেশনে জেলা ও মহানগরের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের। জেলার নতুন সভাপতি করা হয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে থাকা লুৎফুর রহমানকে। সাধারণ সম্পাদক করা হয় সংগঠনটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন খানকে।

এছাড়া মহানগরের নতুন সভাপতি করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদকে। আর অধ্যাপক জাকিরকে নতুন সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে।