বার্তা পরিবেশক, পটুয়াখালী:: দীর্ঘ ১৮ বছর পর নাতির হাত ধরে নিজ গৃহে ফিরেছেন ৭০ বছর বয়সী বকুলী বালা। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পাড়ডাকুয়ার তালবাড়িয়া গ্রামের কৃষক ঠাকুর কৃষ্ণ হালদারের মা বৃদ্ধা বকুলী বালা।

২০০২ সালে ছোট মেয়ে আলো রানীর খোঁজে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধা। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

২০১৫ সালে পটুয়াখালী পৌর শহরের তিতাসপাড়া এলাকায় বৃষ্টিভেজা জবুথবু অবস্থায় উদ্ধার করে খাবার হোটেল ব্যবসায়ী শারমিন আক্তার লাইজু। এর পর স্থানীয় সাংবাদিক ও কাউন্সিলর কাজল বরণ দাস ওই বৃদ্ধাকে আশ্রয় দেন। তবে তার আগে তিনি কোথায় ছিলেন তা জানা যায়নি।

বৃদ্ধার নাতি রিপন চন্দ্র হালদার জানান, পটুয়াখালী সরকারি কলেজে স্নাতকোত্তর পড়ছেন তিনি। শুক্রবার বিকালে সহপাঠীদের নিয়ে শহরের ঝাউবাগানে ঘুরতে যায়। এ সময় তিতাসপাড়া এলাকার বটতলার একটি ঝুপড়িঘরে তার ঠাকুরমায়ের মতো এক বৃদ্ধাকে দেখতে পেয়ে কাছে এগিয়ে যায়। এ সময় পরিচয় জানতে চাইলে কিছুই বলতে পারেনি ওই বৃদ্ধা। বৃদ্ধার গড়ন তার ঠাকুরমায়ের মতো মনে হলে রিপন তার বাবা ঠাকুর কৃষ্ণকে মোবাইল করে বিস্তারিত জানায়।

পরে বৃদ্ধার ডান হাতের মধ্য আঙুলের আঘাতের চিহ্ন দেখে পুরোপুরি শনাক্ত করা হয়।

নাতি রিপন আরও জানান, তার ঠাকুরমা যখন বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন, তখন রিপনের বয়স ৮-৯ বছর। তবু তার মনে রয়েছে ঠাকুরমায়ের আচার-আচরণ ও গড়ন। নিখোঁজের ১৮ বছর পর হঠাৎ দেখে তাকে চিনতে পারবে এটি ভাবার বাইরে।

বৃদ্ধ বকুল বালার ছেলে ঠাকুর কৃষ্ণ আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, আমার মা কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। ২০০২ সালে ছোট বোন আলো রানীকে খুঁজতে বের হয়ে মা নিখোঁজ হন। এর পর বিভিন্ন জায়গায় তাকে খুঁজেছি কিন্তু পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ ১৮ বছর পর বড় ছেলে রিপনের মাধ্যমে তার খোঁজ পেয়েছি। এ সময় তিনি আশ্রয়দাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এদিকে বৃদ্ধাকে তার পরিবার বাড়ি নিয়ে যাবে এমন খবরে উপচেপড়া ভিড় জমে তিতাসপাড়া এলাকায়। কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধাকে কুড়িয়ে পাওয়া সেই শারমিন আক্তার লাইজু।

এ প্রসঙ্গে শারমিন আক্তার লাইজু বলেন, গত পাঁচ বছর আগে রাতে বৃষ্টিতে ভেজা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। ছেঁড়া কাপড়ে জবুথবু অবস্থায় দেখতে পেয়ে পটুয়াখালী এনটিভির প্রতিনিধি কাজল বরণ দাসকে অবহিত করা হয়।

পরে সাংবাদিক কাজল বরণ দাস তার বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন। বৃদ্ধার অনেক যত্ন করেছেন এলাকাবাসীও। পাঁচ বছর পর্যন্ত যে যার সাধ্যমতো সহায়তা করে আসছেন বলে জানান লাইজু।

কাজল বরণ দাস বলেন, এই বৃদ্ধা এলাকায় সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। কথা কম বলতেন। মনে হতো মানসিক ভারসাম্যহীন তিনি। আশপাশের বাসায় গিয়ে খাবার খেতেন। আমরা সবাই মিলে একটি ঝুপড়িঘর তুলে দিয়ে সেখানে তার থাকার ব্যবস্থা করি।

তিনি তার আত্মীয়স্বজন ফিরে পাওয়ায় আমরা খুব খুশি। তবে কিছুটা খারাপও লাগছে। তবু ভালো লাগছে জেনে যে তিনি নিজ ঠিকানা পেয়েছেন।