২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ডিআইজি শফিকুল ইসলামের কারিশমায় বরিশাল রেঞ্জ পুলিশ উজ্জীবিত

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:৫৫ অপরাহ্ণ, ০৪ জুলাই ২০১৮

পুলিশ বিভাগের সাহসী ও মেধাবী হিসেবে সবমহলে প্রশংসিত কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম-বিপিএম, পিপিএম। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি আদর্শবান, শতভাগ পেশাদার ও ন্যায়পরায়ণ। তার কর্মদক্ষতার ছোয়া সমৃদ্ধ করেছে পুলিশ বাহিনীকেও। বরিশাল রেঞ্জে তার যোগদানের পর ১১ মাসেই পাল্টে গেছে পুলিশের চিত্র। সম্প্রতি বরিশালটাইমসের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অনেক কথাই বলেছেন ডিআইজি শফিকুল ইসলাম।

পুলিশ শাসক নয়, শোষক নয়, পুলিশ জনগণের সেবক। এই মন্ত্রে উজ্জীবিত এখন পুরো বরিশাল রেঞ্জের পুলিশের সকল সদস্য। এ কারণে হ্রাস পেয়েছে পুলিশ কর্তৃক মানুষের হয়রানি। শক্তি বা বল প্রয়োগে নয় বরং ভালোবাসার বার্তা দিয়ে সমাজ থেকে অপরাধের অন্ধকার দূরে করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। পুলিশ কর্মকর্তা হয়েও ভালোবাসা আর সেবায় প্রত্যেকের হৃদয়ে উজ্জল আসন পেতেছেন ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম। ইতিমধ্যে তিনি সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জয় করে নিয়েছেন অভিভাবক মহলেরও মন। এলাকার যুবসমাজ যখন মাদকের ছোবলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তখন মাদকের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছেন তিনি। তার দক্ষ তদারকিতে মাঠপর্যায়ে সদস্যদের মাঝেও পেশাদারিত্ব এসেছে। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ লাঘবে ডিআইজির বিচক্ষণতা অনেকাংশেই প্রশংসার দাবি রাখে।

গত ২৬ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশের মাধ্যমে বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি পদে দায়িত্ব পান মো. শফিকুল ইসলাম। এর আগে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বেশ সুনাম অর্জন কুড়িয়েছেন। শতভাগ সেবা নিশ্চিত করতে ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়েছেন বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের নবাগত ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, অপরাধ কমানো ও পুলিশি সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে বরিশাল রেঞ্জে জাপানি পুলিশের ‘কোবান’ পদ্ধতি অনুসরণ করে চালু করা হয়েছে ‘বিট পুলিশিং কার্যক্রম’।

প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরশহরকে একাধিক ইউনিটে ভাগ করে প্রতিটি ইউনিটের জন্য একজন উপ-পরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে ৫ পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব প্রদান, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তথ্য/অভিযোগ বক্স স্থাপন এবং রেঞ্জ পুলিশের অ্যাপ চালু। পুলিশের নেয়া উদ্যোগে সাড়া দিয়ে ডিআইজির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে মাদক ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন অনেকে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং আর মাদকের ভয়াবহতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে বিভাগজুড়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাধারণ জনগণ যাতে সহজে পুলিশের সেবা পেতে পারে সেজন্য এ পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিআইজি।

বরিশাল রেঞ্জে যোগদানের পর আগুনঝরা দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন- ‘বরিশাল বিভাগে আমি থাকব, না হয় মাদক ব্যবসায়িরা থাকবে।’ তার এই বক্তব্যটি ফেসবুক, অনলাইন, প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে পুরো বিভাগজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ডিআইজির এমন ঘোষণার পর বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে প্রায় ৬ শতাধিক মাদকসেবী ও ব্যবসায়ি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করে। চিহ্নিত অনেক মাদক ব্যবসায়ি গা ঢাকা দিয়েছে।

গ্রেফতার হয়েছেন সংশ্লিষ্টদের অধিকাংশই। একইসাথে বন্ধ হয়ে গেছে চিহ্নিত মাদকের স্পটগুলো। স্থানীয় সচেতন মহল মাদকের বিরুদ্ধে ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলামের এমন কঠোর অবস্থান ও জিরো টলারেন্সকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

এছাড়াও সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত ও সচ্ছল ছয় সন্তানের মায়া-মমতা, ভালোবাসা ও আদরবঞ্চিত ভিক্ষুক মা মনোয়ারা বেগমের (৭০) প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন এই নিরহংকার মানুষটি। হাসপাতালে ওই ভিক্ষুক মাকে দেখতে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার জন্য ১৫ হাজার টাকা দেন এবং পুলিশের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসা ব্যয় বহন করার কথা জানান ডিআইজি।

মাদকবিরোধী কার্যক্রমের ব্যাপারে ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন- নানাবিধ উদ্যোগের মধ্যে মাদকমুক্ত বরিশাল গড়ার লক্ষ্যে পুলিশের মাদক বিরোধী কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। আইনের ভেতর থেকে মাদকাসক্ত ও ব্যবসায়ীদের ভালো হওয়ার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। অপরাধীরা ভয় পাক কিন্তু জনগণ যেন পুলিশকে ভয় না পায়, তারা যেন সব কাজেই পুলিশকে বন্ধু হিসেবে মনে করে।

বিট পুলিশিংয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন- আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের মূল অস্ত্র হল, সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য পাওয়া। সাধারণ জনগণ যাতে সহজে পুলিশের কাছে তথ্য পৌছাতে পারে সেজন্য পাড়া-মহল্লায় অভিযোগ বক্স স্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন- পুলিশিং একটি টিম ওয়ার্ক। সবাই মিলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এক সঙ্গে কাজ করলে দেশের আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হবে, দেশ এগিয়ে যাবে।পুলিশকে জনগণের কাছাকাছি যেতে হবে, জনগণের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।

স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ব্যাপারে ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন- শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ মাদকের মত মরণ নেশায় জড়িত। এসব মেধাবী শিক্ষার্থীদের ধ্বংসের পথ থেকে টেনে তুলতেই বরিশালের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং’ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে ছাত্রসমাজে অপরাধ প্রবণতা কমবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব কমে যাবে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক অপরাধও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। এ জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নিজ নিজ পরিবারের এ্যাম্বাসেডরের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান ডিআইজি।’

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন