৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৪:০৩ অপরাহ্ণ, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: জাতিসঙ্ঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং ভূমি ও মৃত্তিকার গুণগত মানের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি সাধন করার লক্ষ্য অর্জনে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তেলজাতীয় ফসলের ক্রমবর্ধমান আবাদ বৃদ্ধি অর্থনীতিতে আশার আলো দেখছেন।

এ লক্ষ্যে পায়রা ও শ্রীমন্ত বিধৌত পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় রবি মৌসুমে ৩৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। ক্ষেত দেখে মনে হয়, যেন হলুদের সাজানো বাগান। বিস্তীর্ণ মাঠে সূর্যমুখী ফুলের সমারোহ। ফুলগুলো বাতাসে দোল খেয়ে যেন ভালোবেসে সকলকে কাছে টানছে তাদের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। সূর্যমুখীর চাষ করে অধিক ফলনের সম্ভাবনা দেখতে পেয়ে খুশি উপজেলার চাষীরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় রবি মৌসুমে ২ হাজার হেক্টর জমি মৌসুমি পতিত থাকে। এসব মৌসুমি পতিত জমিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রবি মৌসুমে ৩৫ হেক্টর জমিতে হাইসান-৩৩, হাইসান-৩৬, বারি সূর্যমুখী-২, বারি সূর্যমুখী-৩ ও ইউনিসান জাতের সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। মাটি ও আবহাওয়ায় অনুকূলে থাকায় এ মৌসুমে সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন ও বাজারে দাম বেশি হওয়ায় এবারে খুশি সূর্যমুখী চাষীরা। এছাড়াও এ বছর এ উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে সরিষা ও ৪০ হেক্টর জমিতে ভূট্টা চাষ করা হয়।

এসএসিপি ও বরিশাল-পটুয়াখালী-ভোলা-মাদারীপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ সকল ফসলসহ ব্যক্তি উদ্যোগে আবাদ করা হয়েছে। সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয় যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। সে হিসেবে তেল উৎপাদন হবে প্রতি বিঘায় ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত।

উপজেলার চরখালীর গ্রামের আদর্শ কৃষক রেজা আকন বলেন, এবারে ৫০ শতক জমিতে ইউনিসান জাতের সূর্যমুখী চাষ করেছি এবং পরিবারের সাত সদস্যের এ বছরের তেলের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ১৫ হাজার টাকার সূর্যমুখীর বীজ বিক্রির আশা করছি।

উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধিতে কৃষকগণকে পরামর্শ ও সেবা দিয়েছেন। ফলে সূর্যমুখীসহ রবি মৌসুমে ফলন দ্বীগুন হয়েছে। প্রতি একর জমিতে সূর্যমুখীর ফলন হয় ২০ থেকে ২৪ মণ। এর থেকে তেল পাওয়া যায় প্রায় ১২ মণ। প্রতিকেজি তেল বাজারে ২৬০-২৮০ টাকা দামে বিক্রি করা যায়।

দক্ষিন মজিদবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মোতালেব গাজী ও মামুন হাওলাদার বলেন, গত বছর সূর্যমুখীর চাষ করে সফল হয়েছি। তাই এ বছরও চার একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। ফলন অনেক ভালো। আশা করছি, গত বছরের মতো এ বছরও লাভবান হতে পারব।

উপজেলার পূর্ব সুবিদখালির কৃষক পলাশ সূত্রধর বলেন, এ বছর ৩৩ শতক জমিতে বারি সরিষা ১৪ চাষ করে উৎপাদন খরচ বাদে ২৪ হাজার টাকা লাভ করেন। উপজেলায় পূর্বের বছরের তুলনায় এ বছর সূর্যমুখী ও সরিষার আবাদ বেড়েছে ১৫ হেক্টর। যা সরকারের আগামী ৩ বছরের মধ্যে তেল ফসলের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ১০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রাখছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো: নাহিদ হাসান জানান, চলতি অর্থবছরে এ উপজেলায় সূর্যমুখির আবাদ বেড়েছে ৯ হেক্টর ও সরিষার আবাদ বেড়েছে ৬ হেক্টর। যা সরকারের তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও আমদানি ব্যয় কমাতে ভূমিকা রাখছে। সূর্যমুখীর বীজ ভাঙ্গানোর তৈল দুই মাসের বেশি রাখলে গন্ধ হতে পারে। তাই অল্প অল্প করে বীজ ভেঙ্গে তৈল বের করে খেলে খাবারের স্বাদও ভালো পাওয়া যায়া।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ চাষাবাদে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে এবং কৃষকেরা দামও ভালো পাচ্ছে। সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য ভোজ্যতেলের তুলনায় অধিক স্বাস্থ্যকর হওয়ায় উপজেলায় এর চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৫০-৬০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। তাই দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে সূর্যমুখীসহ রবি ফসল আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

64 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন