২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশালবাসীর স্বপ্নের পদ্মাসেতুর রেল সংযোগে অনিশ্চয়তা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৩৫ অপরাহ্ণ, ২৯ জুলাই ২০১৭

সরকারের মেগা প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতু চালুর দিন থেকে সেতুর ওপর দিয়ে রেল যোগাযোগ চালুর নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে এ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু এতদিন পরেও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ চালুর বিষয়টি অনিশ্চিত রয়ে গেছে।

জানা গেছে, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার মধ্যে চীন সরকারের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার কথা রয়েছে ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। বাকি ১০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়ার কথা। চীন সরকারের পক্ষে এই টাকা দেয়ার কথা রয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংকের।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, চার শর্তে আটকে আছে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের অর্থায়ন। কিন্তু শর্তগুলোর চূড়ান্ত তালিকা এখনো চীন থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হয়নি। তাই পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে এখনো অনিশ্চয়তা কাটছে না। এরই মধ্যে প্রকল্প এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে গত সপ্তাহে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের (ইআরইসি) ১৫ সদস্যের একটি দল ঢাকায় আসে। ইতিমধ্যে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে বলে প্রকল্প সূত্র জানায়। ঢাকা থেকে পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ঢাকাসহ ছয় জেলার জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জমি অধিগ্রহণ করা হলেও বাকি চার জেলার জমি অধিগ্রহণের কাজ এখনো শুরুই হয়নি।

জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের অর্থায়নে চায়না এক্সিম ব্যাংক প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো চূড়ান্ত চুক্তি করেনি দেশটি। এমনকি এ সংক্রান্ত ঋণ চীনের এক্সিম ব্যাংকের ২০১৭ সালের বাজেটেও রাখা হয়নি। এতে অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে চীনের ঋণপ্রাপ্তি। পদ্মা রেলসেতু নির্মাণে পাঁচ বছরে এক্সিম ব্যাংকের ৩১৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার ঋণ দেয়ার কথা। ২০১৭ সালে এ প্রকল্পে ৮০ কোটি ডলার প্রয়োজন। এ জন্য দ্রুত ঋণচুক্তি সম্পন্ন করতে জোর তৎপরতা চালায় রেলপথ মন্ত্রণালয়। ফেব্রুয়ারিতে চীনে প্রতিনিধিদল পাঠায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক
বিভাগ (ইআরডি)। সে সময় প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা হলেও আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

জানা গেছে, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার মধ্যে চীন সরকারের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার কথা রয়েছে ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। বাকি ১০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়ার কথা। চীন সরকারের পক্ষে এই টাকা দেয়ার কথা রয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংকের।

রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চায়না এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে এই প্রকল্পের অর্থ ছাড় তো দূরের কথা, এখনো পর্যন্ত চুক্তিটি পর্যন্ত হয়নি। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, যেখানে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৪১ শতাংশ, সেখানে জমি অধিগ্রহণ ছাড়া পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরুই হয়নি। জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে সরকারের নিজস্ব টাকায়। ফলে পদ্মা বহুমুখী সেতু চালুর দিন থেকে রেল সংযোগ চালুর বিষয়টি অনেকটাই অনিশ্চিত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এটি পদ্মা সেতু প্রকল্পের তুলনায় বড় প্রকল্প হলেও এখনো কাজ শুরু করতে পারেনি রেল মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করতে সম্প্রতি প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল চীন সফর করে এসেছে। প্রতিনিধিদলে ইআরডি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দুজন প্রতিনিধি ছিলেন। জানা গেছে, এর আগেও বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিনিধিদল চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে এসেছে। আর চায়না এক্সিম ব্যাংকের একটি প্রতিনিধিদলও বাংলাদেশ সফরে এসে ইআরডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে গেছে। কিন্তু দফায় দফায় চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেও অর্থপ্রাপ্তির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইআরডির পক্ষ থেকে চলতি বছরের ১৫ জুনের মধ্যে অর্থপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য অনুরোধ করা হলেও চায়না এক্সিম ব্যাংক তাতে সাড়া দেয়নি।

রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিকে এ প্রকল্পে শতভাগ অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল চায়না এক্সিম ব্যাংক। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ৮৫ শতাংশ এক্সিম ব্যাংক ও ১৫ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারকে অর্থায়নের শর্ত দেয়া হয়। এই শর্তে সম্মতি জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হলেও চায়না এক্সিম ব্যাংক টাকা দেয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ৪ হাজার ১০২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। কিন্তু অর্থ ব্যয় করতে ব্যর্থ হওয়ায় তা ফেরত দিতে হয়েছে। যে কারণে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যদিও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই প্রকল্পে নতুন করে আরো ৭ হাজার ৯০৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের সহায়তায় অর্থপ্রাপ্তির বিষয়ে কাজ করছে সরকার। আশা করছি, শিগগিরই চুক্তিটি সম্পাদিত হবে। অবিলম্বে প্রকল্পের নির্মাণ কাজও শুরু হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, নির্ধারিত সময়েই পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মা রেল সংযাগ প্রকল্পের ঋণচুক্তির জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। ৮৫ শতাংশ ঋণের বিষয়ে চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরে ঋণের খসড়া চুক্তিপত্র চীনের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পরামর্শক বিস্তারিত নকশা পর্যালোচনা শুরু করেছে। সেতু বিভাগের সঙ্গে এ জন্য কয়েক দফা বৈঠক করা হয়েছে। এ বিষয়ে সর্বশেষ পর্যবেক্ষণের জন্য চীনের একটি প্রতিনিধিদল শিগগিরই ঢাকায় আসবে বলে জানান তিনি।

পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার গোলাম ফখরুদ্দীন এ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের একটি মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতিমধ্যেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। তবে অর্থায়নের বিষয়ে চীনের সঙ্গে এখনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। তবে আশা করি শিগগিরই এ বিষয়ে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে। চীনের শর্তের বিষয়ে ইআরডি কাজ করছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব অর্থায়নের বিষয়ে চীনের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি করা হবে বলে জানান তিনি।”

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন