বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভার মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন আকনের উপস্তিতিতেই এক হিন্দু পরিবারের ওপর হামলার খবর পাওয়া গেছে। এমনকি ওই সময় তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলাও হয়েছে।
এতে ওই পরিবারের নারীসহ ৭ জন গুরুতর আহত হন। তাদের ২ জনকে পাথরঘাটা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) বেলা ১ টার দিকে পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তুলে ধরেন হামলার শিকার কার্তিক চন্দ্র শীল।
ওই সংবাদ সম্মেলনে নির্যাতিত কার্তিক চন্দ্র শীল জানান, বুধবার বেলা দেড়টার দিকে পাথরঘাটা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড বড়ইতলা গ্রামে তার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় তার মা ৮৫ বছর বয়সের বৃদ্ধা রাধা রাণীও আহত হয়েছেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি আরও বলেন- দীর্ঘ দিন ধরে তার প্রতিবেশী এনায়েত হোসেনের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। এ ব্যাপারে কোর্টে মামলা চললে ৩টি মামলার রায় পান তিনি। পরে বুধবার দুপুরে বিরোধীয় সম্পত্তির ওপরে পুরাতন বসতঘর মেরামত করার সময় প্রতিপক্ষ এনায়েত হোসেনের লোকজনে বাধা প্রদান করেন। বাধা উপেক্ষা করে ঘর মেরামত করতে গেলে বিষয়টি পৌরসভার মেয়রকে জানানো হয়।
এ সময় মেয়র তার অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের নিয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে কার্তিক শীলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ঘর ভেঙে ফেলে ওই পরিবারের বৃদ্ধসহ যারাই বাধা দিয়েছে মেয়রের সাথে যাওয়া লোকজনের হাতে চড়-থাপ্পর ও মারধরের শিকার হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পরিবারের সদস্য, নির্যাতনের শিকার পাথরঘাটা কলেজে অর্নাস শ্রেণির ছাত্রী সীমা রাণী বলেন, আমার বাবা বিমল শীলকে রক্ষা করতে গিয়ে মার খেয়েছি।
কার্তিক চন্দ্র শীলের ভাই বিমল শীল বলেন, দিনের বেলা মেয়র আমাদের মারে আবার রাতে বাড়িতে ভোট প্রার্থনা করতে যায়।
হামলাকারীদের মধ্যে মেয়রসহ প্রতিবেশী এনায়েতের ভাগ্নে ছুটিতে থাকা পটুয়াখালীর পুলিশ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম তার ভাই মো. খোকন, পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক বিপ্লব রায়, পৌরসভার নৈশপ্রহরী বাদল ও রাখাল শীলের নাম উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে শেফালী রাণী বলেন, আমি আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য হয়েও আওয়ামী লীগের নেতার হাতেই নির্যাতিত হলাম।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা মো. খবীর আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বরিশালটাইমসকে বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তবে কেউ থানায় মামলা করেনি।
পাথরঘাটা পৌর সভার মেয়র মো. আনোয়ার হোসেন আকন বরিশালটাইমসকে জানান, বিষয়টি নিয়ে পৌরভবনে দুপরের দিকে বৈঠক হয়েছে । সেখানে সাত জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও উপজেলা হিন্দু, বৈদ্ধ ও খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের পাথরঘাটা উপজেলা সভাপতি অরুণ কর্মকার উপস্থিত ছিল। পরস্পরে কোলাকুলি করেছি। অচীরেই শালিস করে জমির বিরোধ মিমাংসা করা হবে।
এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা হিন্দু, বৈদ্ধ ও খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের পাথরঘাটা উপজেলা সভাপতি অরুণ কর্মকার বলেন, আজ(বৃহস্পতিবার) প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের পর দুপুরের দিকে পৌরসভা ভবনে বিষয়টি নিয়ে এক বৈঠকে দুঃখজনক ঘটনার মিমাংসা হয়েছে। মেয়র ও অভিযোগকারী কার্তিক শীল পরস্পরকে কোলাকুলি করেছেন।
মেয়র প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, ওই বিরোধীয় জমির শালিসি অতি শিগগিরই মিমাংসা করা হবে।’
Other