১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

‘খুনের সময় মাথা ঠিক ছিল না’

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৩৭ অপরাহ্ণ, ১৪ মার্চ ২০১৬

ঢাকা মহানগর হাকিম গোলাম নবীর খাস কামরায় রবিবার তিন ঘণ্টা ছিলেন মাহফুজা মালেক জেসমিন। এ সময় তিনি বিচারকের সামনে বর্ণনা করেন সন্তান হত্যার রোমহর্ষক ঘটনা। মানসিক চাপ সইতে না পেরে নিজের গর্ভের দুই সন্তানকে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেন এই মা। প্রথমে মেয়ে অরণীকে, তারপর আলভীকে। মেয়ের বয়স ১২, ছেলের ৭। বাঁচার জন্য মেয়ে ধ্বস্তাধস্তি করে। কিন্তু ঘুমন্ত ছেলেকে হত্যার সময় কোনো প্রতিরোধ গড়েনি আদরের সন্তানটি।

অশ্রুভেজা চোখে ভয়াবহ সেই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন এই মা। খাস কামরায় সেই সময় ছিল পিনপতন নিস্তব্ধতা।

মাহফুজা বলেন, খুনের সময় তার মাথা খারাপ ছিল। সন্তানের ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা তাকে বিকারগ্রস্ত করে ফেলে ছিল। প্রায়ই মাথায় ব্যথা থাকত। যন্ত্রণা সইতে পারতেন না।

জবানবন্দিতে তিনি আরো বলেন, মেয়ে নুসরাত আমান অরণী ও ছেলে আলভী আমানের রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় মানসিকভাবে দুশ্চিন্তায় থাকতেন তিনি। দুশ্চিন্তা দূর করতে ছেলে ও মেয়েকে মেরে ফেলারই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

জবানবন্দিতে মাহফুজা বলেন, ছেলে ও মেয়ের স্কুলের পড়ালেখার রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় মানসিকভাবে দুচিন্তায় ছিলেন তিনি। দুশ্চিন্তা নিয়ে তার মাথায় যন্ত্রণা হতো। যন্ত্রণার কারণে ছেলে ও মেয়েকে মেরে ফেলার সিন্ধান্ত নেন তিনি। তাই তিনি ক্রোধের বশে দুই সন্তানকে হত্যা করেন। হত্যা করার সময় তার মাথা ঠিক ছিল না।

তিন ঘণ্টা জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

এর আগে রবিবার সকালে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে মাহফুজাকে ঢাকা সিএমএম আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক লোকমান হেকিম।

দুই সন্তানের খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে মাহফুজাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ৯ মার্চ ৫ দিনের রিমান্ড দেন আদালত।

সেদিন মাহফুজা বিচারককে জানান, অন্য কারো সঙ্গে ‘খারাপ সম্পর্ক’ রয়েছে কি না―তা স্বীকার করাতে র‌্যাব চাপ সৃষ্টি করেছিল। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিচারকের প্রশ্নোত্তরে বলেন, ‘দুই সন্তানের জন্য আমার কষ্ট হয়।’

৪ মার্চ মাহফুজাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড দেন ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টার সময় মাহফুজা মালেক জেসমিন তার স্বামী আমানউল্লাহ আমানকে ফোন করে বলেন, আমাদের দুই সন্তান নুসরাত আমান অরণী (১২) ও আলভী আমান খুব অসুস্থ। তাদেরকে হাসপাতালে নিতে হবে। আমি দূরে থাকায় আমার বন্ধু জাহিদ, হ্যাপী ও শালিকা আফরোজাকে ফোন করে বিষয়টি বললে তারা সেখানে এসে দেখেন আমার মেয়ে অরণী আমার স্ত্রীর রুমের ফ্লোরে এবং ছেলে আমান ঐরুমের খাটের উপর নিথর হয়ে পড়ে আছে। তারা আমার দুই সন্তানকে আল রাজী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে আমি সেখানে উপস্থিত হই। আল রাজী হাসপাতালের ডাক্তার তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়ার জন্য রেফার্ড করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদেরকে নিয়ে পৌঁছলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের মৃত ঘোষণা করেন। আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, ২৮ মার্চের বিবাহের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর খাওয়ার খেয়ে তারা বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে কর্তব্যরত চিকিৎসক তদন্ত শেষে আমাকে জানান তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

মামলার এজাহার থেকে আরও জানা যায়, আসামি মাহফুজা মালেক জেসমিন ছেলে ও মেয়ের স্কুলের পড়া ও লেখার রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় মানসিকভাবে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। দুশ্চিন্তা নিয়ে তার মাথায় যন্ত্রণা হতো। যন্ত্রণার জন্য আসামি আমার ছেলে ও মেয়েকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। আসামি আমার সামনে র‌্যাবকে জানান, ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে মাহফুজা হঠাৎ করে আমার মেয়ে অরণীকে খাট থেকে টেনে-হিঁঁচড়ে ফ্লোরে নামিয়ে শ্বাসরোধ করলে তার শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়। এবং একইভাবে আলভীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এ ঘটনায় আমি আমানউল্লাহ আমান পরিবারের সাথে পরামর্শ করে ২০১৬ সালের ৩ মার্চ আমার স্ত্রীকে আসামি করে রামপুরা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করি।

34 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন