২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

পদ্মা সেতুর প্রভাব নৌরুটে: ভাড়া কমিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না যাত্রী

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:১৭ অপরাহ্ণ, ২৯ জুন ২০২২

পদ্মা সেতুর প্রভাব নৌরুটে: ভাড়া কমিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না যাত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর সড়কপথে দক্ষিণাঞ্চল থেকে মানুষজন রাজধানীতে আসা-যাওয়া করায় নৌরুটে যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। বিশেষ করে স্বপ্নের সেতু হয়ে স্বল্পসময়ে ঢাকায় যাতায়াত সুযোগ তৈরি হওয়ায় এখন অধিকাংশ মানুষ এই সুবিধা গ্রহণ করায় প্রভাব পড়েছে নৌরুটে। বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে লঞ্চযাত্রা নিরাপদ এবং আরামদায়ক এনিয়ে জনশ্রুতি থাকলেও হাল সময়ে যাত্রীরা সড়কপথে পদ্মাসেতু হয়ে রাজধানীমুখী হওয়ায় কিছুটা চিন্তিত নৌযান মালিকেরা। যদিও নৌপরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন- সেতু চালু হওয়ার পরে বরিশাল-ঢাকা রুটে যাত্রী চাপ কিছুটা কমেছে। কিন্তু এনিয়ে টেনশনের কিছু নেই। এখন কিভাবে যাত্রী ধরে রাখা যায় সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের এই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে লঞ্চমালিকেরা নতুন কৌশলও অবলম্বন করেছেন। সেক্ষেত্রে যাত্রীদের কাছ থেকে গত কয়েকদিন ধরে ভাড়া কমিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ভাড়া কমিয়ে নেওয়ার বিষয়টি লঞ্চমালিকদের কেউ স্বীকার না করলেও সোমবার রাজধানী থেকে আসা একাধিক যাত্রী এবং বেশ কয়েকটি লঞ্চের কর্মচারী এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

নৌপরিবহন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মাধ্যম নিশ্চিত করে- উদ্বোধনের পর ২৬ জুন পদ্মাসেতুতে আনুষ্ঠানিক গাড়ি চলাচল শুরু হলে ক্রমাগতভাবে লঞ্চে যাত্রীদের চাপ কমতে থাকে। আগে ৮/১০টি লঞ্চ যাত্রীবোঝাই করে প্রতিদিন সন্ধ্যারাতে রাজধানীর উদ্দেশে ছেড়ে গেলেও সেই সংখ্যা অর্ধেকের নিচে চলে এসেছে। ফলে লোকশানের ভাবনায় মালিকেরা এখন বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে লঞ্চের সংখ্যার পাশাপাশি ভাড়াও কমিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও মিলছে না কাঙ্খিত যাত্রী, অধিকাংশ কেবিন যাচ্ছে খালি। এনিয়ে লঞ্চমালিকেরা বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

যাত্রীদের একটি সূত্র জানায়Ñ পদ্মাসেতু চালুর আগে লঞ্চযোগে যে সংখ্যক লোক রাজধানীতে আসা-যাওয়া করতো সেই সংখ্যা এখন অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। মঙ্গলবার সকালে বরিশালে আসা এবং রাজধানী ঢাকায় পৌছানো অধিকাংশ লঞ্চের কেবিন ছিল খালি। পাশাপাশি লঞ্চগুলোর ডেকের যাত্রীর সংখ্যাও কম পরিলক্ষিত হয়। বলা চলে বহুমুখী পদ্মাসেতুর দ্বার উন্মোচনের পরে নৌরুটে যাত্রীদের ভাটা পড়েছে।

লঞ্চমালিকদের একটি সূত্র জানায়- সেতু চালুতে নৌরুটে প্রভাব পড়ায় যাত্রী ধরে রাখতে মালিকেরা নয়া কৌশল হিসেবে অনানুষ্ঠানিক ভাবে ভাড়া কমিয়ে দিয়েছেন। সিঙ্গেল এসি কেবিন এতদিন ১৪০০ টাকা নেওয়া হলেও তা কমিয়ে ১০০০, এসি ডাবল কেবিন ২৮০০ টাকার পরিবর্তে ২০০০ এবং ডেকের ভাড়া ৩৫০ থেকে কমিয়ে ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নন এসি সিঙ্গেল ৮০০ এবং ডাবল ১৫০০ টাকা নিচ্ছে। গত দুদিন ধরে এই ভাড়া নেওয়া হলেও লঞ্চগুলোতে যাত্রী নেই বললেই চলে।

লঞ্চমালিকদের একজন নামপ্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভাড়া কমিয়ে লঞ্চ চালানোর পরেও গত দুদিনে তেমন যাত্রী আসা-যাওয়া করেনি। সামনে ঈদুল আজহা প্রতিবছর এই সময়ে লঞ্চের কেবিনের টিকিট সংগ্রহের জন্য মানুষ উদগ্রীব হয়ে থাকার পাশাপাশি মালিকদের থাকতো স্পেশাল সার্ভিসের নানামুখী প্রস্তুতি। কিন্তু এবার পদ্মাসেতু চালু হওয়ার কারণে টিকিটের চাহিদাতো নেই, মালিদেরও তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

তবে মালিকদের বড় একটি অংশের দাবি- নিরাপাদ এবং আরামদায়ক যাত্রার ক্ষেত্রে লঞ্চের কোনো বিকল্প নেই। এই যাত্রায় কর্মঘণ্টা বাচার পাশাপাশি পরিবার-পরিজনদের নিয়ে যাতায়াত স্বাচ্ছন্দ্যের হওয়ায় যাত্রীরা ঠিকই ফিরে আসবে। তবে মালিকদের কেউ কেউ স্বীকার করেছেন- পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় লঞ্চে পূর্বকার সেই যাত্রী চাপ আর দেখা যাবে না। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছেÑ মাত্র পৌনে ৩ ঘণ্টায় সেতু হয়ে রাজধানী যাওয়া আসা করা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সকালে রওনা দিয়ে সারাদিন কাজ সেরে রাতে আবার বরিশাল ফিরতে পারছেন।

তবে এই বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন- কেন্দ্রীয় লঞ্চমালিক সমিতির সহ-সভাপতি এবং সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির স্বত্ত্বাধিকারী সাইদুর রহমান রিন্টু। তিনি দাবি করেন- সেতু উদ্বোধন হয়েছে এক সপ্তাহ হয়নি, তাই অনেকেই আগ্রহ নিয়ে সেতু দেখতে গিয়ে সড়কপথে রাজধানীগমন করছেন। ফলে কিছুটা প্রভাব পড়েছে নৌরুটে, যাত্রীও কমেছে। কিন্তু এটা ক্ষণিকের জন্য, লঞ্চযাত্রা জনপ্রিয় হওয়ায় এর চাহিদা আছে এবং থাকবে। তবে যাত্রী ধরে রাখতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি মালিকদের আন্তরিক হতে হবে। পাশাপাশি বরিশাল-ঢাকা নৌরুটের বেশ কয়েকটি অংশে নাব্যতা রয়েছে, সেগুলো ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ ঠিক রাখলে লঞ্চযাত্রা কখনও জৌলুস হারাবে না, এমনকি থাকবে না যাত্রীসংকট।

পদ্মাসেতু চালুর পরে নৌরুটে যাত্রী কমে যাওয়া এবং মালিকেরা ভাড়া কমিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বরিশালটাইমসকে জানান, সোমবার রাতে বরিশাল থেকে রাজধানীর উদ্দেশে ৬ টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। কিন্তু এতে যাত্রীসংখ্যা ছিল খুবই কম। ফলে লঞ্চের কেবিনও খালি গেছে। তবে তিনি আশাবাদী মালিকেরা সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করলে এতদিন যারা লঞ্চে যাতায়াত করেছে, সেইসব যাত্রীদের ধরে রাখা সম্ভব।

নদীর নাব্যতাসংকটের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন- প্রতিবছরই নদীতে ড্রেজিং হচ্ছে, তারপরেও কোথাও কোথাও নাব্যতা দেখা দেয়। নদীর গতিপথ ধরে রাখতে সরকারসংশ্লিদের আন্তরিকতার কমতি নেই। ইতিমধ্যে এই অঞ্চলের নদীপথে যেখানে যেখানে নাব্যতা রয়েছে তা চিহ্নিত করে ড্রেজিং করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি সুপারিশ প্রস্তাব আকারে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায়Ñ নৌযান মালিকদের সাথে সমন্বয় করে নাব্যতাসংকট দূর করতে শিগগিরই উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

 

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন