২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

পাঁচ দিনে পাঁচজনের মৃত্যু, আক্রান্ত তিন শতাধিক

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:৪৩ অপরাহ্ণ, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন:: গাজীপুর মহানগরীর পূর্ব চান্দনা ও ছোট দেওড়া এলাকায় ডায়রিয়া মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ডায়রিয়ায় গত পাঁচ দিনে এক শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন তিন শতাধিক।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৯৪ জন ভর্তি আছেন বলে জানিয়েছেন আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস। প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্য বিভাগ ধারণা করছে পানি থেকে ওই এলাকায় ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোগ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল উপদ্রুত এলাকা পরির্শন করেছেন।

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃতরা হলেন- নগরীর ছোট দেওড়ার কাজী বাড়ি এলাকার মোস্তফা কামালের বাড়ির ভাড়াটে পেট্রোল পাস্প শ্রমিক মোজাম্মেল হোসেনের স্ত্রী কামরুন্নাহার (২১), একই এলাকার আবুল হোসেনের বাড়ির ভাড়াটে মাটিকাটা শ্রমিক আবদুল জব্বার (৬০), পূর্ব চান্দনার আলী আকবরের স্ত্রী সুমা আক্তার (৩০), একই এলাকার ছাত্তার বাবুর্চির বাড়ির ভাড়াটে রিকশাচালক আবদুস ছালাম (৫৫) ও আবদুল বাতেনের বাড়ির ভাড়াটে মঞ্জুর হোসেনের ৪ মাসের শিশুপুত্র নাহিদ।

মৃত কামরুন্নাহারের ভাড়া বাসায় গেলে অপর ভাড়াটে মরিয়ম বেগম জানান, ৮ ডিসেম্বর সকালে কামরুন্নাহার, তার স্বামী অটোচালক মতি মিয়া (৫০), নাতি ইভা (৩) ও প্রতিবেশী শিরিনা (২৪) বমি ও পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হন। দুর্বল হয়ে অবস্থার অবনতি হলে তাদের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডেক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ভোরে কামরুন্নাহারের মৃত্যু হয়। বাকিরা সুস্থ হয়ে একদিন আগে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি আরো জানান, ৭ মাস আগে কামরুন্নাহারের বিয়ে হয়েছিল।

স্থানীয়রা জানায়, পূর্ব চান্দনা ও ছোট দেওড়া এলাকার ৭-৮টি ছাড়া প্রায় সব ঘরেই কেউ না কেউ মারা গেছেন। কোনো পরিবারের সবাই আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আইসিডিডিআরবি ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা চার শতাধিক ছাড়িয়ে যাবে ধারণা তাদের।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস জানিয়েছেন, ৮ ডিসেম্বর থেকে হাসপাতালে ডায়রিয়ার রোগী আসতে থাকে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫ দিনে ৩০৬ জন ভর্তি হয়েছিলেন। অনেকেই সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর ৪ জনকে ঢাকায় কলেরা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে কামরুন্নাহার নামে একজন  নারী ৯ ডিসেম্বর ভোরে মারা গেছেন। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। আজ বিকেল পর্যন্ত নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৯৪ জন ভর্তি আছেন। রোগীর চাপ সামলাতে আলাদা ডায়রিয়া ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত স্যালাইন ও খাওয়ার স্যালাইন মজুদ আছে।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন খায়রুজ্জামান জানান, আক্রান্ত এলাকাটি সিটি করপোরেশন এলাকায়। তারপরও তারা সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে মিলে কাজ করছেন। তারা এলাকায় সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করছেন। তাছাড়া ৫ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করেছেন। ডা. দেবাশিষ সাহার নেতৃত্বে ঢাকার রোগ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তারা পানির ৮ ধরনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকার আইসিডিডিআরবিতে পাঠিয়েছেন। প্রতিনিধি দলের প্রধান তাকে জানিয়েছেন ‘পানি থেকেই ডায়রিয়া ছড়িয়েছে।’

সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. রহমতউল্লাহ জানান, ডায়রিয়ার খবর পেয়ে তারা আজ পূর্ব চান্দনা ও ছোট দেওড়া এলাকা পরির্দশন করেছেন। চারজনের মৃত্যুর খবর শুনেছেন। তবে তাদের বিস্তারিত নাম-ঠিকানা পাননি। তারা ডায়রিয়ার কারন জানার চেষ্টা করছেন।

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন