১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরগুনায় বিয়ে ছাড়াই পরিবারের সিদ্ধান্তে ৩ মাস সংসার, অতঃপর…

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:০২ অপরাহ্ণ, ০২ মে ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বরগুনার বেতাগীতে শর্তানুযায়ী বিয়ে ছাড়াই তিন মাস সংসার করার পর মোসা. মরিয়ম আক্তার নামে এক স্কুলছাত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ওই শিক্ষার্থী সদর ইউনিয়নের ঝোপখালী গ্রামের বাসিন্দা কাইয়ুম হাওলাদারের মেয়ে ও বেতাগী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

সোমবার বেলা ১১টায় স্কুলছাত্রীর নিজ বাড়িতেই ঘটনাটি ঘটে। তবে আত্মত্যার তিন দিন পার হলেও বিষয়টি জানতেন না স্কুলের কোনো সহপাঠী কিংবা স্থানীয় থানা পুলিশ। ফলে আত্মহত্যার বিষয়টি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। তবে পরিবারের প্রাথমিক ভাষ্য— খালাতো ভাইকে বিয়ে করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে মরিয়ম। তবে এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে নারাজ দুই পরিবার। সরেজমিন গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে উন্মোচন হয় আত্মহত্যার রহস্য।

স্থানীয়রা জানান, দুই বছর আগে মরিয়মের খালাতো ভাই পার্শ্ববর্তী গ্রেদ লক্ষ্মীপুরা গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহাজানের ছেলে ইমরান হোসেনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয়। সম্পর্কের একপর্যায়ে মেয়ে ও তার পরিবার বিয়ের কথা বললে ইমরানের পরিবার শর্তজুড়ে দেন মরিয়মের পরিবারকে। যেহেতু মরিয়ম প্রাপ্তবয়স্ক না, তাই বিয়ের আগে তিন মাস সংসার করতে হবে ছেলের সঙ্গে। বিষয়টি সামাজিকভাবে একদমই বেমানান হলেও আপন খালার সংসারে থাকবে বলে রাজি হয় মরিয়মের পরিবার।

পরে গত জানুয়ারি মাসে খালার বাড়িতে বিয়ে ছাড়াই সাংসারিক জীবনে পা রাখে দশম শ্রেণির ছাত্রী মরিয়ম। শর্তানুযায়ী সাংসারিক সময় তিন মাস পার হলে বিয়ের কথা বলেন মরিয়ম ও তার পরিবার। কিন্তু কোনোভাবেই বিয়েতে রাজি হয়নি খালাতো ভাই ইমরান ও তার পরিবার। একপর্যায়ে খালার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় মরিয়মকে। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জানান, বিয়ে ছাড়া তিন মাস ইমরানের বাড়িতে সংসার করায় মরিয়মকে প্রায় সময়ই আশপাশের লোকজনের নোংরা কথা শুনতে হতো। সামাজিকভাবে প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে যায় মেয়েটি। ফলে লোকলজ্জা থেকে মুক্তি পেতে বাধ্য হয়েই বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।

তারা আরও বলেন, সোমবার বেলা ১১টার দিকে আমরা জানতে পারি মরিয়ম খুবই অসুস্থ, তাকে বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বরিশাল শেরেবাংলা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পরে বরিশাল থেকে মৃত অবস্থায় নিয়ে এলে তাড়াহুড়ো করেই মরিয়মের লাশ দাফন সম্পন্ন করে পরিবার।

তখন পরিবার জানায়, বিষপানে আত্মহত্যা করেছে মরিয়ম এবং ময়নাতদন্ত হওয়ায় দাফনে বিলম্ব করেননি তারা। তার একাধিক সহপাঠী বলে, আমরাও জানতাম মরিয়মের খালাতো ভাইয়ের সঙ্গেই বিয়ে হবে ওর। তাই খালাতো ভাইয়ের বাড়িতে আগে থেকেই থাকত মরিয়ম।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মনির সিকদার বলেন, বিষয়টি সত্য যে খালাতো ভাইয়ের বাড়িতে বিয়ের আগে থেকেই থাকত মরিয়ম। পরে ছেলের পরিবার বিয়েতে রাজি না হলে এ ঘটনায় একাধিকবার সালিশবৈঠকও হয়েছে। যেহেতু তারা দুই পরিবারই আত্মীয়। তাই আমরা স্থানীয়রাও সালিশিতে কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। ফলে সামাজিক লজ্জা এড়াতেই মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে।

এ ঘটনায় নানাভাবে চেষ্টা করা হলেও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি দুই পরিবারের কেউ। বেতাগী থানার ওসি মো. মাহাবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে আমরা অবগত না, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

93 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন