২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশালে নারী ক্রিকেটার গড়ে তোলার উদ্যোগ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৪৯ অপরাহ্ণ, ১৮ মার্চ ২০১৯

সাঈদ পান্থ :: ক্রিকেটে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বরিশালে এই প্রথম আয়োজন করা হয়েছে নারীদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের। সাবেক নারী ক্রিকেটার শারমিন আক্তার লাভলী এ উদ্যোগ নিয়েছেন। নিজেই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলছেন এই গৃহবধূ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালে রয়েছে নারীদের বিভাগীয় ক্রিকেট দল, যা নিয়ন্ত্রণ করে বিভাগীয় নারী ক্রীড়া সংস্থা। তবে টিম থাকলেও নেই নির্দিষ্ট সংখ্যক নারী ক্রিকেটার। প্রতিযোগিতা এলে বিভাগের বাইরে থেকে খেলোয়াড় ভাড়া করে আনা হয় টিম গঠনের জন্য। সর্বশেষ কবে বরিশাল থেকে নারী ক্রিকেটাররা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তা জানা নেই ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদেরও। বরিশালের নারী ক্রিকেটাঙ্গনের দুর্দশার জন্য নারী ক্রীড়া সংস্থার নিষ্ক্রিয়তার পাশাপাশি নিয়মিত অনুশীলন না হওয়াটাকে দায়ী করেছেন খেলোয়াড়রা। শারমিন আক্তার লাভলী নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। বরিশাল শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামে মেয়েদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করেছেন। সপ্তাহের তিনদিন বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন তিনি।

বরিশাল নগরীর কাউনিয়া মনষাবাড়ির গলি এলাকার গৃহবধূ শারমিন ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ঢাকার ধানমণ্ডি লেডিস ক্লাবের নারী ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় ছিলেন। ওই ক্লাবের হয়ে ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত লেগ-স্পিনার হিসেবে খেলেছেন। ধানমণ্ডি ক্লাবের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে খেলেছেন তিনি। শারমিন বলেন, ‘ক্রিকেট আমার ধ্যান-জ্ঞান। তাই বিয়ের পরও ক্রিকেট নিয়ে ভেবেছি। সেই ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে বরিশালে নারী ক্রিকেট একাডেমি করার উদ্যোগ নিয়েছি। মেয়েদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। বর্তমানে ১৪ জন মেয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। সবাই চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রী। সপ্তাহের তিনদিন ওদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কোনো পারিশ্রমিক নেয়া হচ্ছে না। ব্যাট, বল, প্যাড, গার্ড, স্টাম্পসহ অন্যান্য ক্রিকেট সামগ্রী দিয়ে প্রশিক্ষণে সহায়তা করা হচ্ছে। এ কাজে আমাকে সহযোগিতা করছেন ট্যালেন্ট হান্ট ক্রিকেট একাডেমির কোচ তানিম।’ তিনি বলেন, ‘বরিশালে নারী ক্রিকেট দল রয়েছে। কিন্তু ক্রিকেটারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। যে কারণে দক্ষ খেলোয়াড় তৈরি হয়নি। তাই দেশের ক্রিকেটে বরিশালের নারীদের অবস্থান নেই। নিজ উদ্যোগে মেয়েদের ক্রিকেট একাডেমি খোলার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে মেয়েদের ক্রিকেটে আসতে উৎসাহিত করছি। সাড়াও পেয়েছি। পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে একটি শক্তিশালী টিম গঠন করা হবে।’ শারমিন আরও বলেন, ‘প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের প্রসার ঘটাতে সরকারি এবং বেসরকারি পৃষ্ঠপোষক ও সুযোগ-সুবিধা দরকার। স্টেডিয়ামে প্রশিক্ষণের জন্য

আমাদের নির্দিষ্ট জায়গা নেই। স্টেডিয়ামে মেয়েদের ড্রেসআপের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেই। যারা আসছে তারা তৃণমূলের মেয়ে। ওদের পক্ষে ক্রিকেট সামগ্রী কেনা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পেলে এই কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

বরিশাল বিভাগীয় নারী ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব সৈয়দা মনিরুন্নাহার মেরী বলেন, ‘মেয়েদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। যখন টিম হয় তখন বাইরে থেকে লোক এনে মেয়েদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। নিয়মিত অনুশীলন না থাকায় খেলার মান বাড়ছে না। শারমিন প্রশিক্ষণের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। তবে আমাদের জানালে আমরা তাকে সহযোগিতা করতে পারতাম।’

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও বরিশাল বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব আলমগীর খন আলো বলেন, ‘আমাদের বিভাগীয় নারী ক্রিকেট টিম থাকলেও খেলোয়াড়ের অভাব। যখন টিম হয় তখন খেলোয়াড় খুঁজে পাই না। জেলায় জেলায় চিঠি দিয়ে খেলোয়াড় খুঁজতে হয়। তাতেও পূর্ণাঙ্গ দল হয় না। তাই বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে খেলোয়াড় আনতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

জাতীয় পর্যায়েও আমাদের মেয়েরা ভূমিকা রাখছে। শুধু বরিশালে ফুটবল ও ক্রিকেটে মেয়েদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। কারণ প্রশিক্ষণের অভাব। নিয়মিত অনুশীলনের প্রয়োজন। যার ব্যবস্থা বরিশালে নেই। তাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আমাদের বরিশালের মেয়েদের জন্য কল্যাণকর।’ তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বিসিবির এই পরিচালক।’

বরিশাল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়ার রহমান বলেন, ‘নারীদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণকে স্বাগত জানাই। তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন