২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশালে পুলিশ পরিচয়ে আনসার সদস্যের প্রতারণা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৩৬ পূর্বাহ্ণ, ২৪ জুলাই ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল :: বরিশালে কলেজছাত্রীর সাথে প্রেম প্রতারণা করে স্বর্ণালঙ্কার লুটে নিয়েছেন পলাশ হাওলাদার (২৫) নামে এক আনসার সদস্য। তিনি নিজের পুলিশ পরিচয় দিয়ে কলেজছাত্রী সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বরিশাল সদরে কর্মরত আনসার সদস্য পলাশ বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পার্কে ডেকে ওই কলেজছাত্রীর স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেন। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে- এই ঘটনায় শহরের জমজম নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মামলা করলেও দুই সপ্তাহেও অভিযুক্ত আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

বরিশাল কোতয়ালি পুলিশের দাবি- ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত আনসার সদস্য পলাশ পলাতক রয়েছেন। এই কারণে তাকে গ্রেপ্তারে সফলতা আসছে না।

তবে আনসারের ভেতরকার একটি সূত্র জানিয়েছে- পলাশ হাওলাদার বরিশালেই নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন। এমনকি তাকে মঙ্গলবারও কাশিপুর কৃষি ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে কর্মরত অবস্থায় দেখা গেছে।

এদিকে পুরো ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিয়ে আনসার সদস্য পলাশ হাওলাদারকে মামলা থেকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন আনসার অফিসের একাধিক কর্মকর্তা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে- নার্সিং শিক্ষার্থীর মুঠোফোনে কল দিয়ে আনসার সদস্য পলাশ হাওলাদার নিজেকে পুলিশের পাশাপাশি মুসলিম পরিচয় দেন। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ৩০ জুন কলেজছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের স্বাধীনতা পার্কে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে আলাপচারিতার একপর্যায়ে পলাশ কলেজছাত্রীর গলায় থাকা চেইন, হাতের আংটি ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যান। এবং তার ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ করে রাখেন পলাশ হাওলাদার। অথচ পলাশ একজন আনসার সদস্য। কিন্তু তার সাথে পুলিশ ও মুসলিম পরিচয় দিয়ে প্রেম প্রতারণা করে স্বর্ণালঙ্কার লুটে নিয়েছেন।

এই বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ১২ জুলাই বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানা একটি মামলা মামলা করেন কলেজছাত্রী। মামলাটির তদন্তভার পান থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সবুর খান। কিন্তু মামলার দায়েরের পরে বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি তিনি।

তবে এই পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করছেন- প্রতারক আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তারে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু মামলার পরপরই পলাশ গাঢাকা দেওয়ায় একটু সময় লাগছে।

এদিকে কলেজছাত্রী জানিয়েছেন- মামলা করার খবর পেয়ে গত সপ্তাহে বরিশাল সদর আনসারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (প্রশিক্ষিকা) আয়েশা সুলতানা তাকে কাশিপুরস্থ কার্যালয়ে ডেকে নেন। সেখানে পুরো ঘটনাটি মুখ থেকে শোনার পরে একই অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট মামুন হাওলাদারের কাছে পাঠানো হয়। তিনিও বিষয়টি শুনে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে মীমাংসার প্রস্তাব দেন। এতে অসম্মতি জানানো হলে তিনি মামলা তুলে নিতে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখান।

এই বিষয়টিও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোন আইনী সহযোগিতা না পাওয়ায় নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন কলেজছাত্রী।

তবে এসব অভিযোগ সমূলে অস্বীকার করে আনসার কর্মকর্তা মামুন হাওলাদার ও আয়েশা সুলতানা বলছেন- উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলেছেন। এই কারণে মামলা বাদী কলেজছাত্রীকে ডেকে এনে পুরো ঘটনাটি শুনেছেন মাত্র। তবে তাকে কোন ভয়ভীতি বা অর্থসমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হয়নি।’

কলেজছাত্রীকে ডেকে নিয়ে হয়রানির করার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন জানিয়ে বরিশাল জেলা আনসার কমান্ড্যান্ট মো. ইফতেখার বলেন- এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। এবং এতে সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ।’

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন