১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশালে মৎস্য কর্মকর্তাসহ নৌপুলিশের ওপর ফাঁড়ি পুলিশের হামলা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:১১ অপরাহ্ণ, ০৪ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশালের হিজলা উপজেলায় অভিযানে গিয়ে ফাঁড়ি পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তরের নেতৃত্বাধীন অভিযানিক দল ও নৌপুলিশের সদস্যরা। হরিনাথপুর ফাঁড়ি পুলিশের সদস্যরা এ হামলা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) হামলার ঘটনাটি ঘটে। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ঘটনাটি অস্বীকার করেছেন হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম। মৎস্য অধিদপ্তর ও নৌপুলিশের সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হিজলার হরিনাথপুরে অবৈধ জাল উদ্ধারের জন্য অভিযানে যায়। এটিকে কেন্দ্র করেই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের বিরোধ থেকে বিকেলে হামলার ঘটনাটি ঘটে।

হিজলা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বরিশালটাইমসকে জানান, বিপুল পরিমাণে অবৈধ জাল রয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে নৌপুলিশের সদস্যদের সহযোগিতায় মৎস্য অধিদপ্তরের লোকজন হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযানে যায়। সেখানে গিয়ে কোনো পুরুষ মানুষ পাওয়া যায়নি। পরে বাড়ির নারী সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এক বস্তা অবৈধ জাল পায় অভিযানিক দল।

ওই বাড়ির নারীরা জানান, প্রায় এক সপ্তাহ আগে হিজলা ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জসহ সদস্যরা অবৈধ জাল ও টাকা পয়সা নিয়ে গেছে। সম্প্রতি হরিনাথপুর ফাঁড়ি পুলিশ কোনো অভিযান চালিয়ে অবৈধ জাল পুড়িয়েছে বা ধ্বংস করেছে এমন তথ্যও মৎস্য বিভাগের কারও কাছে ছিল না।

মোহাম্মদ আলম বরিশালটাইমসকে বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিমকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলি। কাছাকাছি হওয়ায় তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই আসেন। এ সময় তার সামনেই জাল নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আবারও উপস্থাপন করেন স্থানীয়রা। সেই সঙ্গে অভিযানিক দলের সদস্যরাও তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। এতে ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম ক্ষিপ্ত হয়ে যান এবং আমাদের অভিযানিক দলের সঙ্গে থাকা মাঝিদের গালাগাল শুরু করেন। সবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।

তিনি আরও বলেন, এরপর ঘটনাস্থল থেকে হিজলা সদরে চলে আসার পথে হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিমসহ একাধিক পুলিশ সদস্য সিভিল ড্রেসে আমাদের যানবাহনের গতিরোধ করে। যার মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য নেমেই থ্রি-হুইলারের সামনে থাকা মাঝি সাইফুল ইসলামকে গালাগাল ও মারধর করে। একপর্যায়ে এক পুলিশ সদস্য লাঠি নিয়ে তেড়ে গেলে অন্যরা তাতে বাধা দেয়। তখন মাঠকর্মী হানিফ, মাঝি ইয়াসিনসহ বেশ কয়েকজন তাদের হামলার শিকার হন। একই সময়ে মোটরসাইকেল থেকে নেমে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম আমাকে গালাগাল করেন এবং দেখে নেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। পরে বিষয়টি হিজলা থানা পুলিশ ও নৌপুলিশের ওসিকে বিষয়টি জানিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।

এ বিষয়ে হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আব্দুর রহিম বরিশালটাইমসকে বলেন, মৎস্য অধিদপ্তর ও নৌপুলিশের সদস্যদের অভিযানের বিষয়টি আমার জানা নেই। তখন আমি অফিসে ছিলাম। বিকেল ৪টার দিকে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা আমাকে ফোন দিয়ে সেখানে যেতে বলেন। আমি গেলে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানায়, আমি নাকি ওই বাড়িতে কয়েকদিন আগে অভিযান চালিয়েছি। তখন আমি বলেছি, জাল ও মাছের বিষয় মৎস্য বিভাগ দেখে বলে এ ধরনের কোনো বিষয় আমরা অগ্রিম কিছু করি না। এরপর ওই বাড়ির মহিলারাও আমার সামনে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, এরপর সেখান থেকে ফাঁড়িতে চলে আসার পথে অভিযানিক দলের সঙ্গে আবারও দেখা হয় এবং কথা হয়। তখন মৎস্য বিভাগের মাঝি ওই এলাকার লোকদের ডাক দিয়ে আমাদের মারতে বলে। সে সময় আমি মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাকে বিষয়টি শান্ত করতে বলি এবং আমার ফোর্সরাও পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। বিষয়টি আমি আমার থানার ওসিকেও জানিয়েছি।

প্রকাশ্যে এভাবে কাউকে মারধর পুলিশ সদস্যরা করতে পারে কি না জানতে চাইলে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম বলেন, মারধর নয় পরিস্থিতি শান্ত করেছে পুলিশ সদস্য এনাম ও শাকিল। আমরা সবাইকে সরিয়ে দিয়েছি, আপনি পুরো ভিডিও ভালোভাবে দেখেন।

হিজলা নৌপুলিশের ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম বরিশালটাইমসকে জানিয়েছেন, অভিযানে গিয়ে থানা পুলিশের সঙ্গে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ঝামেলা ও হাতাহাতি হয়েছে। ঘটনাস্থলে নৌ পুলিশের সদস্যরা ছিল, তবে পুরো বিষয়টি এখনও বিস্তারিত জানি না। আর যেহেতু থানা পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে হয়েছে তাই আমরা এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কাউকে জানাইনি।

হিজলা থানা পুলিশের ওসি জুবাইর আহমেদ কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। তবে প্রকাশ্যে কোনো পুলিশ সদস্য কাউকে মারধর করলে কিংবা সরকারি কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করলে সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

239 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন