২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

‘লিখতে না পারা’ মেয়েটি পেলেন জিপিএ-৫

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

‘লিখতে না পারা’ মেয়েটি পেলেন জিপিএ-৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: পা দিয়ে চলাফেরা করতে পারেন না। চলাফেরার একমাত্র অবলম্বন হুইল চেয়ার। এমনকি হাত দিয়েও কাজ করতে পারেন না।তবুও দমে যাননি জ্যোতি হোসেন। শ্রুতি লেখকের সাহায্যে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন যশোরের ঝিকরগাছা এই অদম্য শিক্ষার্থী। আজ বুধবার প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন জ্যোতি।

জ্যোতি ঝিকরগাছা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পারবাজারের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল কাদের ও রেপোনা হোসেন দম্পতির বড় মেয়ে। তবে হাত বা পা দিয়ে লিখতে পারেন না তিনি। ‘শ্রুতি লেখক’ নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি। ‘শ্রুতি লেখক’ ছিল তার ছোট বোন জেবা হোসেন।

এর আগে এসএসসি, জেএসসি ও পিইসিতে একই ফল করেন জ্যোতি। ঝিকরগাছা সরকারি শহীদ মশিউর রহমান কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। তার স্বপ্ন একজন আবহাওয়াবিদ হওয়ার।

জ্যোতির জন্ম ২০০২ সালে। জন্মের পর থেকে অন্য শিশুদের মতোই ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালের একটি দুর্ঘটনায় তাঁর জীবন ওলটপালট হয়ে যায়। নানাবাড়ি থেকে ভ্যানে করে ফিরছিলেন। পথে চাকার সঙ্গে ওড়না জড়িয়ে গলায় ফাঁস লেগে গুরুতর আহত হন।

এ ঘটনায় পুরো শরীর প্যারালাইজড হয়ে যায়। এরপর দেশ-বিদেশে চিকিৎসা করানো হলেও জ্যোতির স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারেননি চিকিৎসকরা।মেয়েটির মা রেপোনা হোসেন জানান, জ্যোতি ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় খুব আগ্রহী ছিল। অসুস্থ হওয়ার পরও সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেয়েছে।

পারবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে পিইসি পরীক্ষা দেয়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির সময় কয়েকটি স্কুল শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে ভর্তি নিতে চায়নি।

বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ঝিকরগাছা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। প্রতিদিন মেয়ের হুইলচেয়ার ঠেলে স্কুলে যাতায়াত করেছেন তিনি। পরীক্ষায় ভালো ফল করে বেজায় খুশি জ্যোতি।

তিনি বলেন, ‘জ্যোতির সাফল্য নিয়ে আমরা খুশি হয়েছি। এ খুশির আড়ালে হতাশা আর চিন্তায় সময় কাটছে আমাদের। মেয়েটির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

লেখাপাড়া শেষ করে বিসিএস দিয়ে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন মেয়েটির।’ তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন রোপোনো হোসেন।

জ্যোতি বলেন, ‘দুর্ঘটনা আমার জীবনের সুখ কেড়ে নিয়েছে। তারপরও সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। পড়ালেখা করে আবহাওয়াবিদ হতে চাই।যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আশা আছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করছি। সরকারের সহযোগিতা ও সবার কাছে দোয়া চাই।’

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন