২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মদ (সা.)

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৩০ অপরাহ্ণ, ০৮ নভেম্বর ২০১৯

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন:: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি নবীদের সর্দার। কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষ ও জিনের জন্য নবী। তিনি শেষ নবী। তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবেন না। তাঁর সম্মান ও মর্যাদার সাক্ষ্য পবিত্র কোরআনসহ সব আসমানি গ্রন্থে রয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সৃষ্টিজগতের জন্য কল্যাণস্বরূপ প্রেরণ করেছেন।

নবী-রাসুল কারা
আল্লাহ তাআলা ফেরেশতা ও মানবকুল থেকে রাসুল মনোনীত করেন। এ ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ফেরেশতা ও মানবকুল থেকে রাসুল মনোনীত করে থাকেন।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৭৫) মানবজাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষই নবী ও রাসুল হয়ে থাকেন। নবী-রাসুলরা আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত এবং তিনি তাঁদের সব ধরনের চারিত্রিক ও মানবিক দোষত্রুটি থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই তারা ছিল আমার মনোনীত উত্তম বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা : সোয়াদ, আয়াত : ৪৭)

আল্লাহ প্রতিটি জাতির জন্য স্বজাতি থেকে নবী ও রাসুল প্রেরণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর এমন কোনো জাতি নেই, যাদের কাছে সতর্ককারী বা ভীতি প্রদর্শক প্রেরিত হয়নি।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৪)

কোরআনের ভাষায় নবী-রাসুলদের কাজ

পবিত্র কোরআনে নবী-রাসুলদের (আ.) মৌলিক চারটি কাজের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে একজন রাসুল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদেরকে তাঁর আয়াতগুলো পড়ে শোনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। অথচ এর আগে তারা সুস্পষ্ট গোমরাহিতে নিমজ্জিত ছিল।’ (সুরা : জুমুআ, আয়াত : ২)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী রাসুল প্রেরণ করেছি, যাতে রাসুল আগমনের পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোনো অভিযোগ না থাকে। আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৬৫)

নবী-রাসুলদের (আ.) কর্মপদ্ধতি ছিল উচ্চতর প্রজ্ঞা ও কল্যাণকামিতায় ভরপুর। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর পথে মানুষকে হিকমত ও উত্তম উপদেশ সহকারে দাওয়াত দাও।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১২৫)

আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরে উম্মতের জন্য, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য অপরিসীম ভালোবাসা দান করেছিলেন। ফলে তাঁরা দ্বিনের দাওয়াত শুধু দায়িত্ব হিসেবে দিতেন না; বরং তাঁদের সত্তাগত তাড়নাও কাজ করত। আল্লাহ মহানবী (সা.)-কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমি আপনার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করিনি; কিন্তু এটা তাদেরই উপদেশের জন্য, যারা ভয় করে।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১-৩)

মুহাম্মদ (সা.) সবার রাসুল

পৃথিবীতে নবী-রাসুলদের আগমনের ধারাক্রম মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে শেষ হয়েছে। তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবেন না। ফলে তিনি সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত হয়েছেন। কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষ ও জিন তাঁর আনীত শরিয়ত (জীবনবিধান) মানতে বাধ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলুন, হে মানবজাতি! আমি তোমাদের সবার প্রতিই আল্লাহর রাসুল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৭৫)

আল্লাহ মহানবী (সা.)-কে মানবতার মুক্তির দূত ও সৃষ্টিজগতের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনাকে সমগ্র জগতের প্রতি শুধু রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)

আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ (সা.)-কেই শুধু সম্মানিত করেননি; বরং তাঁর উম্মতকেও সম্মানিত করেছেন। তাদের অন্য উম্মতের জন্য সাক্ষ্য ও আদর্শ বানিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘এভাবে আমরা তোমাদের একটি উত্তম জাতিরূপে গড়ে তুলেছি, যাতে তোমরা গোটা মানবজাতির জন্য সত্যের সাক্ষ্যদাতা হতে পারো এবং রাসুল যেন তোমাদের সাক্ষ্য বা নমুনা হন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৪৩)

মুহাম্মদ (সা.) উজ্জ্বল প্রদীপ

কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রশংসায় বলেন, ‘হে নবী! আমরা আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা, ভীতি প্রদর্শক ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪৫-৪৬)

অন্য আয়াতে রাসুলের দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যেমন আমি তোমাদের থেকেই তোমাদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছি। সে তোমাদের আমার আয়াত পড়ে শোনাবে, তোমাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ ও বিকশিত করে তুলবে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫১)

মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ঈমানের অংশ

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা ঈমানের অংশ। আর ভালোবাসার প্রকাশ হবে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী! আপনি বলে দিন যে যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো তাহলে আমার অনুকরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন আনুগত্যের জন্য সর্বোত্তম ব্যক্তি। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের জীবনেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ২১)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আপনি উত্তম চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’ (সুরা : কালাম, আয়াত : ৪)

মহানবী (সা.)-এর আনুগত্যের মাধ্যমেই মানুষ অন্ধকার থেকে আলোর পথ লাভ করতে পারবে। আল্লাহ বলেন, ‘এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাজিল করেছি, যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন, পরাক্রান্ত ও প্রশংসার যোগ্য রবের নির্দেশে তাঁরই পথের দিকে।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ১)

সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন রাসুলুল্লাহ (সা.)

সমগ্র মানব ও জিন জাতির মধ্যে মুহাম্মদ (সা.) সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন আমি বেহেশতের দরজায় এসে দরজা খুলতে বলব। তখন বেহেশতের প্রহরী এসে বলবে, আপনি কে? আমি বলব, মুহাম্মদ। তখন বেহেশতের প্রহরী বলবে, আপনার বিষয়ে আমাকে আদেশ দেওয়া হয়েছে, যেন আপনার আগে আর কারো জন্য দরজা না খুলি।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৫১১)

মুহাম্মদ (সা.)-এর অনন্য পাঁচ বৈশিষ্ট্য

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, আমাকে এমন পাঁচটি বৈশিষ্ট্য প্রদান করা হয়েছে, যা এর আগে কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি।

ক. এক মাসের পথের দূরত্ব পর্যন্ত শত্রুপক্ষের অন্তরে আমার ভীতি সঞ্চারিত করে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে।

খ. সমগ্র ভূখণ্ডকে আমার জন্য মসজিদ এবং পবিত্রকারী অর্থাৎ নামাজ ও তায়াম্মুমের উপযুক্ত বানানো হয়েছে।

গ. আমার জন্য গনিমতের মাল হালাল করা হয়েছে, যা এর আগে কোনো নবীর জন্য হালাল করা হয়নি।

ঘ. আমাকে মহান সুপারিশের দায়িত্ব দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে।

ঙ. পূর্বেকার সব নবী নিজ জাতির কাছেই প্রেরিত হতেন আর আমি পৃথিবীর সব মানুষের কাছে প্রেরিত হয়েছি। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৫১২)

নবীদের নেতা মুহাম্মদ (সা.)

মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর একটি উপাধি সাইয়্যিদুল আম্বিয়া বা নবীদের সর্দার। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সব নবী-রাসুলের ওপর নেতৃত্বের মর্যাদা দান করেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার সাহাবায়ে কেরাম পরস্পর বসে নবীদের সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় রাসুল (সা.) ঘর থেকে বাইরে এলেন এবং তাঁদের এই আলোচনা শুনতে পেলেন। একজন বললেন, আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-কে তাঁর বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করছেন। অন্যজন বললেন, মুসা (আ.)-এর সঙ্গে আল্লাহ কোনো মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি কথা বলেন। আরেকজন বললেন, ঈসা (আ.) তো আল্লাহর ‘কালিমা’ অর্থাৎ তিনি বাহ্যিক কোনো উপকরণ ছাড়াই আল্লাহর নির্দেশ ‘হয়ে যাও’-এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছেন। শৈশবে দোলনা থেকেই তিনি মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁকে আল্লাহ নিজের ‘রুহ’ বলে অভিহিত করেছেন। আরেকজন বললেন, আদম (আ.)-কে আল্লাহ বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন। অতঃপর রাসুল (সা.) তাঁদের সামনে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, আমি তোমাদের কথা এবং নবীদের সম্মানের ব্যাপারে বিস্মিত হতে দেখেছি। তোমরা বলছিলে, ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর বন্ধু। তিনি এ রকমই। মুসা (আ.) আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছেন। নিঃসন্দেহে তিনি এ রকমই। ঈসা (আ.) আল্লাহর বাণী ও তাঁর রুহ। নিশ্চয়ই তিনি তা-ই। আদম (আ.)-কে আল্লাহ সম্মানিত করেছেন। তিনিও বাস্তবে তা-ই ছিলেন। কিন্তু শুনে রাখো, আমি হলাম আল্লাহর হাবিব, অর্থাৎ প্রিয়তম। এটা আমার অহংকার নয়। কিয়ামতের দিন আমিই প্রশংসার ঝাণ্ডা উড্ডীন করব, যার নিচে থাকবেন আদম (আ.)-সহ অন্যরাও। কিয়ামতের দিন আমিই প্রথম সুপারিশকারী হব এবং আমার সুপারিশই সর্বপ্রথম কবুল হবে। এতে কোনো অহংকার নেই। আমিই প্রথম ব্যক্তি হিসেবে বেহেশতের দরজায় কড়া নাড়ব। অতঃপর আল্লাহ বেহেশতের দরজা খুলে আমাকে প্রবেশ করাবেন। সে সময় আমার সঙ্গে থাকবে দরিদ্র মুসলিমরা। এটাও আমি অহংকার করে বলছি না। পূর্বাপর সব মানুষের মধ্যে আল্লাহর কাছে আমিই সর্বাধিক সম্মানিত। এতেও অহংকার নেই। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৫২৩)

নবীদের মুখপাত্র মহানবী (সা.)

কিয়ামতের দিন মহানবী (সা.) নবী-রাসুলদের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন আমি নবীদের ইমাম ও খতিব (মুখপাত্র) হব, আমি সবার সুপারিশকারী হব। এ কথা আমি অহংকার ছাড়াই বলছি। (মিশকাত, হাদিস : ৫১৩)

দ্বিনের পূর্ণতার জন্য মহানবী (সা.)-এর আগমন

পৃথিবীতে নবী-রাসুলদের আনীত ধর্ম ও শিক্ষার পূর্ণতা দান করেছিলেন মুহাম্মদ (সা.)। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, আল্লাহ আমাকে সচ্চরিত্র এবং ভালো কাজগুলোর পূর্ণতা দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। (মিশকাত, হাদিস : ৫১৪)

মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে আগের ধর্মের ভবিষ্যদ্বাণী

মহানবী (সা.) সম্পর্কে ওল্ড টেস্টামেন্টে বলা হয়েছে, ‘আদি পুরুষ আদম (আ.) থেকে সপ্তম মহাপুরুষ ইনোচ ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, প্রভু (মহান নেতা অর্থে) তাঁর ১০ হাজার সাধকসহ আগমন করবেন সবার ওপর ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে এবং সব পাপ কাজ ও অন্যায় বাক্য মোচন করতে।’

(old testament General epistle of jude 1:14-15)

ধারণা করা হয়, এর দ্বারা রাসুল (সা.)-এর মক্কা বিজয়ের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কেননা তিনি ১০ হাজার সাহাবি নিয়ে মক্কা বিজয় করেন।

নবী সুলাইমান (আ.) একই রকম ভবিষ্যদ্বাণী করেন। তিনি বলেন, ‘আমার প্রিয় ব্যক্তি শুভ্র ও গোলাপি। তিনি ১০ হাজারের নেতা।’

(soloman 5:13) জন [ঈসা (আ.)-এর পর খ্রিস্টধর্মের প্রচার করেন। কেউ কেউ তাঁকে নবী দাবি করেছেন] স্বীকার করেন যে তিনি

Chirist নন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে আপনি কে? আপনি কি Elias? তিনি বলেন, না। তারপর তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কি সেই প্রতিশ্রুত নবী? তিনি বললেন, না। তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি যদি Chirist ev Elias বা সেই নবী না হন, তাহলে আপনি অভিষেক করেছেন কেন? তিনি বললেন, আমি অভিষেক করছি। কিন্তু এমন একজন আছেন, যাঁকে তোমরা জানো না। তিনি আমার পরে আসবেন, তাঁর জুতার ফিতা খুলে দেওয়ারও যোগ্য আমি নই | (John 1:20-27)

Cmv (আ.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী মহানবী (সা.)-এর আগমনের সুসংবাদ দিয়ে ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.) বলেন, ‘আর আমি তোমাদের সঙ্গে বেশি কথা বলব না। কারণ এই বিশ্বের সম্রাট আসছেন এবং আমার মধ্যে কিছুই নেই।’

(John 14:30) পার্সি ধর্মশাস্ত্রের ভবিষ্যদ্বাণী পার্সি বা জরথুস্ট্র ধর্মের প্রবর্তক জরথুস্ট্রের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘আমি ঘোষণা করছি, হে প্রিয় জরথুস্ট্র, পবিত্র আহমদ নিশ্চয় আসবেন, যাঁর কাছ থেকে তোমরা সিচন্তা, সত্বাক্য, সৎকাজ ও বিশুদ্ধ ধর্ম লাভ করবে।’

(Zend, Avesta, part 1, Translated by Max Muller p 260)

হিন্দুদের বেদে বলা হয়েছে, ‘ইদং জনা উপশ্রুত নরাশংস ভবিষ্যতে’, অর্থাৎ প্রশংসিত মানুষ পরবর্তী যুগের মানুষ হবে। নরাশংস অর্থ প্রশংসিত মানুষ। আর মুহাম্মদ অর্থও প্রশংসিত মানুষ। (অথর্ববেদ সংহতি ২০/১২৭/১; ২০ কাণ্ড-অনুবাদক-১৩ সুক্ত-১ শ্লোক)

বিখ্যাত মনীষীদের চোখে রাসুলুল্লাহ (সা.)

স্যার জর্জ বার্নার্ড শ ‘দ্য জেনুইন ইসলাম’ বইয়ের প্রথম খণ্ডে লিখেছেন, “মুহাম্মদের ধর্মের প্রতি আমি সব সময় সুউচ্চ ধারণা পোষণ করি। কারণ এটি চমৎকার প্রাণবন্ত। আমার মনে হয়, এটিই একমাত্র ধর্ম, যা সদা পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রার সঙ্গে অঙ্গীভূত হওয়ার ক্ষমতা রাখে, যা প্রতিটি যুগেই মানুষের হৃদয়ে আবেদন রাখতে সক্ষম। আমি তাঁর (মুহাম্মদ) সম্পর্কে পড়াশোনা করেছি। চমৎকার একজন মানুষ। আমার মতে, খ্রিস্টবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে অবশ্যই মানবতার ত্রাণকর্তা বলতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, তাঁর মতো ব্যক্তির কাছে যদি আধুনিক বিশ্বের একনায়কতন্ত্র অর্পণ করা হতো, তাহলে তার সমস্যাগুলো তিনি এমন সাফল্যের সঙ্গে সমাধান করতেন, যা বহুপ্রতীক্ষিত শান্তি ও সুখ প্রতিষ্ঠা করত। আমি ভবিষ্যদ্বাণী করছি, যে মুহাম্মদের ধর্মবিশ্বাস আগামী দিনের ইউরোপের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, যা এরই মধ্যে বর্তমান ইউরোপে গ্রহণযোগ্যতা পেতে শুরু করেছে।”

থমাস কার্লাইল ‘হিরোস, হিরো অ্যান্ড হিরো ওয়ার্কশপ অ্যান্ড হিরোইক ইন হিস্ট্রি’ বইতে লিখেছেন, ‘এই লোককে (মুহাম্মদ) ঘিরে যে মিথ্যা (পশ্চিমা অপবাদ) পুঞ্জীভূত হয়ে আছে, যার ভালো অর্থ হতে পারে ধর্মান্ধতা, তা আমাদের নিজেদের জন্যই লজ্জাজনক।’

মহাত্মা গান্ধী তাঁর ‘ইয়াং ইন্ডিয়া’ বইতে লেখেন, ‘আমি জীবনগুলোর মধ্যে সেরা একজনের জীবন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম, যিনি আজও লক্ষ-কোটি মানুষের হৃদয়ে অবিতর্কিতভাবে স্থান নিয়ে আছেন। যেকোনো সময়ের চেয়ে আমি বেশি নিশ্চিত যে ইসলাম তলোয়ারের মাধ্যমে সেই দিনগুলোতে মানুষের জীবনধারণ পদ্ধতিতে স্থান করে নেয়নি। ইসলামের প্রসারের কারণ হিসেবে কাজ করেছে নবীর দৃঢ় সরলতা, নিজের ব্যক্তিগত চাহিদা বিসর্জন দেওয়া, ভবিষ্যতের ব্যাপারে সতর্ক ভাবনা, বন্ধু ও অনুসারীদের জন্য নিজেকে চরমভাবে উৎসর্গ করা, তাঁর অটল সাহস, নির্ভয়তা, ঈশ্বর ও তাঁর (নবীর) ওপর অর্পিত দায়িত্বে অসীম বিশ্বাস। এসবই মুসলমানকে সব বাধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। যখন আমি মুহাম্মদের জীবনীর দ্বিতীয় খণ্ড বন্ধ করলাম, তখন আমি খুব দুঃখিত ছিলাম যে এই মহান মানুষ সম্পর্কে আমার পড়ার আর কিছুই বাকি থাকল না।’

ড. উইলিয়াম ড্রেপার তাঁর বই ‘হিস্ট্রি অব ইনটেলেকচুয়াল ডেভেলপমেন্ট ইন ইউরোপ’ বইয়ে লেখেন, ‘জাস্টিনিয়ানের মৃত্যুর চার বছর পর, ৫৬৯ খ্রিস্টাব্দে আরবে একজন মানুষ জন্মগ্রহণ করেন, যিনি সবার চেয়ে মানবজাতির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। অনেক সাম্রাজ্যের ধর্মীয় প্রধান হওয়া, মানবজাতির এক-তৃতীয়াংশের প্রাত্যহিক জীবনের পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করা—এ সব কিছুই সৃষ্টিকর্তার দূত হিসেবে তাঁর উপাধির যথার্থতা প্রমাণ করে।’

আলফানসো দ্য লে মার্টিনি তাঁর বই ‘দ্য হিস্ট্রি দ্য লে টেরকি’-তে লেখেন, ‘উদ্দেশ্যের মহত্ত্ব, লক্ষ্য অর্জনের উপায়গুলোর ক্ষুদ্রতা ও আশ্চর্যজনক প্রভাব যদি অসাধারণ মানুষের তিনটি বৈশিষ্ট্য হয়, তাহলে কে মুহাম্মদের সঙ্গে ইতিহাসের অন্য কোনো মহামানবের তুলনা করতে সাহস করবে? বেশির ভাগ বিখ্যাত ব্যক্তি শুধু সেনাবাহিনী, আইন ও সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন। তাঁরা যদি কিছু প্রতিষ্ঠা করে থাকেন সেটা কিছুতেই জাগতিক ক্ষমতার চেয়ে বেশি কিছু নয়, যা প্রায়ই তাঁদের চোখের সামনে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই মানুষটি শুধু সেনাবাহিনী, আইন, সাম্রাজ্য, শাসক, লোকবলই পরিচালনা করেননি; সেই সঙ্গে তৎকালীন বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের জীবনকে আন্দোলিত করেছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো তিনি দেব-দেবী, ধর্ম, ধারণা ও বিশ্বাসগুলো—এমনকি আত্মাগুলোকে পর্যন্ত আন্দোলিত করেছিলেন।’

তিনি আরো লেখেন, ‘দার্শনিক, বাগ্মী, বার্তাবাহক, আইন প্রণেতা, নতুন ধারণার উদ্ভাবনকারী, নিজের চিন্তার বাস্তব রূপদানকারী, সত্য বিশ্বাসের পুনরুদ্ধারকারীসহ ২০টি জাগতিক এবং একটি আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা—এই হলো মুহাম্মদ। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব পরিমাপের যত মাপকাঠি আছে, তার ভিত্তিতে বিবেচনা করলে আমরা নিজেদের প্রশ্ন করতে পারি, মুহাম্মদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কেউ আছে কি?’

পৃথিবী বিখ্যাত বই ‘বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি’র লেখক মাইকেল এইচ হার্ট তাঁর বইতে বলেন—

মুহাম্মদকে সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষস্থান দেওয়াটা অনেক পাঠককে আশ্চর্যান্বিত করতে পারে এবং অন্যদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে; কিন্তু ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি সেক্যুলার ও ধর্মীয় উভয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ সফল ছিলেন। সম্ভবত ইসলামের ওপর মুহাম্মদের তুলনামূলক প্রভাব খ্রিস্টধর্মের ওপর যিশু ও সেইন্ট পলের সম্মিলিত প্রভাবের চেয়ে বেশি। আমি মনে করি, ধর্মীয় ও সেক্যুলার উভয় ক্ষেত্রে প্রভাবের এই বিরল সমন্বয় যোগ্য ব্যক্তি হিসেবেই মুহাম্মদকে মানবেতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী একক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত করেছে।

মন্টেগোমারি ওয়েট তাঁর ‘মুহাম্মদ ইন মক্কা’ বইয়ে বলেছেন, ‘নিজ আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের কষ্ট সহ্য করা, তাঁকে যারা বিশ্বাস করত এবং নেতা হিসেবে অনুসরণ করত তাদের সুউচ্চ চারিত্রিক গুণাবলি এবং মুহাম্মদের অর্জনের বিশালত্ব—এ সব কিছুই তাঁর সততার সাক্ষ্য দেয়।’

ডি জে হোগার্থ তাঁর ‘আরব’ বইয়ে বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ অথবা তুচ্ছ, তাঁর দৈনন্দিন প্রতিটি আচার-আচরণ একটি অনুশাসনের সৃষ্টি করেছে, যা লাখো-কোটি মানুষ বর্তমান কালেও সচেতনতার সঙ্গে মেনে চলে। মানবজাতির কোনো অংশ কর্তৃক আদর্শ বলে বিবেচিত আর কোনো মানুষকেই মুহাম্মদের মতো এত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করা হয়নি। খ্রিস্টধর্মের প্রতিষ্ঠাতার আচার-আচরণ তাঁর অনুসারীদের জীবনযাপনকে নিয়ন্ত্রণ করেনি। অধিকন্তু কোনো ধর্মের প্রতিষ্ঠাতাই মুসলমানের নবীর মতো এ রকম অনুপম বৈশিষ্ট্য রেখে যাননি।

গিবন (১৮২৩) তাঁর ‘দ্য ডিক্লেইন ফেইল অব রোমান এম্পায়ার’ বইয়ে লিখেছেন, মুহাম্মদের মহত্ত্বের ধারণা ‘আড়ম্বড়পূর্ণ রাজকীয়তা’ অস্বীকার করেছে। স্রষ্টার বার্তাবাহক পারিবারিক গৃহকর্মে নিবেদিত ছিলেন; তিনি আগুন জ্বালাতেন, ঘর ঝাড়ু দিতেন, ভেড়ার দুধ দোয়াতেন এবং নিজ হাতে নিজের জুতা ও পোশাক মেরামত করতেন। পাপের প্রায়শ্চিত্তের ধারণা ও বৈরাগ্যবাদকে তিনি অস্বীকার করেছেন। তাঁকে কখনো অযথা দম্ভ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি, একজন আরবের সাধারণ খাদ্যই ছিল তাঁর আহার্য। (নিউজ থার্টিনাইন, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)

বিশ্বখ্যাত বক্তা অ্যাডমন্ড বার্ক ভারতের সাবেক গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের ইমপিচমেন্ট (অভিশংসন/অভিযোগ) সংশ্লিষ্ট ভাষণে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে প্রবর্তিত ইসলামী আইনের প্রতি ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন—

‘The Muhammadan Law is binding upon all, from the crowned head to the meanest subject. It is a law interwoven with a system of the wisest, the most learned and the most enlightened jurisprudence that has ever existed in the world.’

‘মুকুটধারী রাজা থেকে দীনতম প্রজা পর্যন্ত সবার ক্ষেত্রেই মুহাম্মদ প্রবর্তিত আইন সমানভাবে প্রযোজ্য। এ আইন হচ্ছে প্রাজ্ঞতম মনীষীদের চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে গ্রথিত পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানসমৃদ্ধ ও আলোকিত মানবিক আইনের ন্যায়শাস্ত্র, যা পৃথিবীতে এ পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি।’

মানবসভ্যতার ইতিহাসে নারীর মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে যে ব্যক্তি জোরালোভাবে প্রথম সোচ্চার হন, মানবজীবনে নারীর অধিকার পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে ব্যক্তি অপরিসীম অবদান রাখেন, সত্যিকার অর্থে নারী জাগরণ ও নারী মুক্তির প্রবক্তা যে ব্যক্তি, তিনি হচ্ছেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। মানব ইতিহাসে দেখা যায় তিনিই প্রকৃতপক্ষে প্রথম মহাপুরুষ, যিনি নারী জাতিকে প্রকৃত মর্যাদা ও অধিকার প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে মনীষী পিয়ের ক্রাবাইট (Pierre Crabite) বলেছেন—‘Muhammad was the greatest champion of women’s rights the world has ever seen.’

‘মুহাম্মদ নারী অধিকারের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রবক্তা ছিলেন, যা পৃথিবীতে আর কখনো দেখা যায়নি।’

আমেরিকার প্রখ্যাত মনসমীক্ষক জুলে মাসারম্যান তাঁর ‘হয়্যার আর দ্য লিডারস’ (Where are the leaders) নিবন্ধে বিভিন্ন মহৎ ব্যক্তির জীবনী বিশ্লেষণ করে নিবন্ধের উপসংহারে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন—‘Perhaps the greatest leader of all times was Muhammad.’ ‘সম্ভবত, সর্বকালের জন্য সবচেয়ে মহান নেতা হচ্ছেন মুহাম্মদ।’

এ নিবন্ধটি টাইমস ম্যাগাজিনে ১৯৭৪ সালের ১৫ জুলাই প্রকাশিত হয়। এখানে উল্লেখ্য, জুলে মাসারম্যান একজন ইহুদি হওয়া সত্ত্বেও প্রথম স্থান দিয়েছেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে। তবে তিনি তাঁর ধর্মের নবী হজরত মুসা (আ.)-কে দ্বিতীয় স্থান দিয়েছেন।

মহানবী (সা.) মহামানব, যিনি শত্রু-মিত্র সবার কাছে প্রশংসার যোগ্য। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, হে বৎস! তোমার অন্তরে কারো সম্পর্কে হিংসা-বিদ্বেষবিহীন অবস্থায় যদি তুমি সকাল-সন্ধ্যা কাটাতে পারো, তবে তুমি তা করো। অতঃপর রাসুল (সা.) বললেন, হে বৎস! এটা আমার সুন্নাত। আর যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসল নিঃসন্দেহে সে আমাকে ভালোবাসল। আর যে আমাকে ভালোবাসল, সে বেহেশতে আমার সঙ্গেই থাকবে। (মিশকাত, হাদিস : ৩০)

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন