২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

সড়ক সংস্কারে সীমাহীন দুর্নীতি: ক্ষুব্ধ জনতা হাত দিয়ে টেনে তুলেছে ঢালাই পিচ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:১৩ অপরাহ্ণ, ১৯ জুন ২০২১

সড়ক সংস্কারে সীমাহীন দুর্নীতি: ক্ষুব্ধ জনতা হাত দিয়ে টেনে তুলেছে ঢালাই পিচ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল >> বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ব্যস্ততম সানুহার-ধামুড়া সড়কের সংস্কারকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় সংস্কারকাজ শেষ না হতেই ইতোমধ্যে সড়কের কয়েকটি অংশের পিচ ঢালাই (কার্পেটিং) উঠে গেছে। চলমান সংস্কারকাজে পিচ, পাথর ও বিটুমিনসহ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। যা নিয়ে এলাকাবাসী, পথচারী ও রাস্তা ব্যবহার করে যানবাহন চালকদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ। তবে ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রকৌশলীরা বলছেন, সংস্কারকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি, কাজের গুণগতমান এখনো পর্যন্ত ঠিক রয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার সানুহার বাসস্ট্যান্ড থেকে ধামুরা বন্দর পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে সাড়ে চার কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে। রাস্তাটির সেনেরহাট বাজারসংলগ্ন এলাকায় ঠিকাদারের লোকজন ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নিয়ম অনুসারে কম্প্রেশার মেশিন দিয়ে সড়ক পরিষ্কার করে প্রাইমকোর্ট দিয়ে পিচ ঢালাইয়ের কাজ করতে হবে। কিন্তু তা না করে ময়লার ওপরই চলছে কার্পেটিংয়ের কাজ। ঠিকাদারের লোকজন বালু পাথর বিটুমিনসহ নিম্নমানের সব উপকরণ দিয়ে কাজ করছেন এবং প্রয়োজনের তুলনায় পুরুত্ব কম দিচ্ছেন। এমনকি সংস্কারকাজের ব্যবহৃত মিক্সিংয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রীসহ পরিমাণ মতো বালু, পাথর ও বিটুমিন ব্যবহার না করার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, উপজেলার সানুহার বাসস্ট্যান্ড থেকে ধামুরা বন্দর পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ দিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়েছিল। এতে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারীদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। দুর্ঘটনার শিকারও হয়েছেন অনেকে। একপর্যায়ে চলতি বছরের শুরুর দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে পল্লী সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্ট মেরামতকরণ জিওবি মেইনটেন্যান্স প্রকল্পের আওতায় বেহাল দশার ওই সাড়ে চার কিলোমিটার রাস্তাটির সংস্কারের জন্য অনুমোদন হয়।

উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সানুহার-ধামুরার ওই রাস্তাটির কচুয়া নামকস্থান থেকে ধামুরা বন্দর পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ অংশের সংস্কারের জন্য চলতি বছরের শুরুর দিকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি ৩৬ লক্ষাধিক টাকা। তবে ১৮ শতাংশ লেসে এক কোটি ৯৩ লাখ টাকায় কাজটির কার্যাদেশ পায় মেসার্স মিজান মীম আলিফ ট্রেডার্স (জেবি) নামের একটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের শুরু থেকে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে না পারায় শেষ সময়ে এসে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে কাজটি শেষ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন ঠিকাদার মাহাবুবুর রহমান মিরন।

কচুয়া গ্রামের নিবির বাড়ৈ ও ইমন হাওলাদারসহ একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, রাস্তাটি সংস্কারে এতটা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে যে কাজ শেষ না হতেই রাস্তার অনেক অংশের পিচ ঢালাই উঠে গেছে। হাত দিয়ে টান দিলেই পিচ ঢালাই উঠে যাচ্ছে। তাদের দাবি, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সংস্কার করা এই রাস্তা চলতি বর্ষা মৌসুমেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। স্থানীয় কাংশি গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম সরদার, মতিউর রহমান, সেনেরহাট এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হাওলাদার ও বামরাইল ইউনিয়নের হস্তিশুণ্ড গ্রামের সফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় চার মাস আগে সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত চলমান।

এ দিকে নিম্নমানের কাজ করার অভিযোগ অস্বীকার সংস্কারের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার মাহবুবুর রহমান মিরন বলেন, কাজটি বরিশাল জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় মেইনটেন্যান্সের কাজ। কাজটি স্বয়ং এলজিইডি বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী দেখভাল করেন। প্রতিনিয়ত কাজের মান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। তার পরও নির্মাণকাজে কোনো ত্রুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা নেবে আমরা সেটা মানতে রাজি। আমরা সংস্কার কাজটি শতভাগ ভালো করার চেষ্টা করছি।

সংস্কার কাজ শেষ না হতেই রাস্তার কার্পেটিং উঠে যাওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদার জানান, গত ৯ জুন বিকেলে কচুয়া পল্লী বিদ্যুতের সাব সেন্টার সংলগ্ন এলাকা থেকে কাশিং ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার পিচ ঢালাইয়ের কাজ করা হয়। কিন্তু বুধবার রাতের আঁধারে রাস্তাটির কয়েকটি স্থান থেকে দুর্বৃত্তরা সেই পিচ ঢালাই রড কিংবা শাবল দিয়ে উঠিয়ে ফেলে।

সংস্কার কাজে কোনো প্রকার অনিয়ম হচ্ছে না জানিয়ে উজিরপুর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মীর মাহিদুল ইসলাম বরিশালটাইমসকে জানান, রাস্তাটির পুরুত্ব হবে ২৫ মিলিমিটার। সেই অনুযায়ী সংস্কার কাজ চলছে এবং গুণগত মান এখন পর্যন্ত ঠিক রয়েছে। এরই মধ্যে ক’দিন আগে রাতের আঁধারে কিছু লোক রাস্তাটির কয়েকটি স্থান খোঁড়াখুঁড়ি করে। এরপরই আমরা ঠিকাদারকে বলা হয়েছে রাস্তার কাজ আপাতত বন্ধ থাকবে। যারা রাস্তা খুঁড়েছে তাদের বিরুদ্ধে আগে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। ঘটনা তদন্তের পরই আবার কাজ চলবে।’

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন