২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ঢাবি ‘দখলের’ আশঙ্কা, কড়া পাহারায় ছাত্রলীগ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:২১ অপরাহ্ণ, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮

সরকারের শেষ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ঢুকতে পারে-এই আশঙ্কায় ক্যাম্পাসে কড়া পাহারা বসাল ছাত্রলীগ। তবে ক্যাম্পাস দখলের চেষ্টার কথা অস্বীকার করেছে ছাত্রদল।

রোববার ভোর থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রাহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি মোড়ে অবস্থান নিয়েছিল সংগঠনটির কেন্দ্রীয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা কর্মীরা।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ জানান, যাতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা কর্মীরা কোন ধরনের সহিংস ঘটনা ক্যাম্পাসে ঘটাতে না পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দ সর্তক অবস্থানে ছিল্।

সোহাগ বলেন, ‘আমি এর আগেও দেখেছি তারা আন্দোলনের নামে সহিংসতা করে যা মানুষের দুর্ভোগ বাড়ায়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের পিটুনির প্রতিবাদে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছিল ছাত্রদল।

আর তাদের প্রবেশ ঠেকাতে ভোর ছয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোড়গুলাতে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। এ মহড়ায় নেতৃত্ব দেন প্রতিটি হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সাথে ছিলেন বিভিন্ন হলের বিভিন্ন পদপ্রাপ্ত সম্পাদকরা।

নেতাকর্মীরা বলছেন, ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা যাতে ক্যাম্পাসে ঢুকে যেন কোন ধরনের সহিংসতা করতে না পারে সেজন্য তাদের এই অবস্থান।

ভোর ছয়টার দিকে পলাশী মোড়ে অবস্থান নিয়েছিল এস এম হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

মুক্তি ও গণতন্ত্র তোড়ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল এফ রহমান হল, জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

নীলক্ষেত এলাকায় মহড়া দিয়েছে, শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল জিয়া হল, বঙ্গবন্ধু হল এবং জসিম উদ্দীন হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

চানখারপুল এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল অমর একুশে হল, ফজলুল হক হল, শহিদুল্লাহ হলের ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা।

এই বিষয়ে কথা হয় পলাশী মোড়ে অবস্থান নেওয়া সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল ক্যাম্পাসে আসুক তাতে আমাদের কোন বাধা নেই। কারণ ছাত্র হিসেবে সেই অধিকার তাদের আছে। কিন্তু আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি তাদের ব্যানারে অছাত্র ও বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে এবং ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করে।’

‘ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা সর্তক ‍ছিল যাতে অছাত্র, বহিরাগতরা কোন ঝামেলা করতে না পারে।’

কোন সহিংসতা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তাপস বলেন, ‘আমাদের খুব সর্তক অবস্থানের কারণে তারা (ছাত্রদল) কিছু করতে পারেনি।’

এদিকে ছাত্রলীগের কড়া পাহারায় ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পেরে ছাত্রদল শাহাবাগ মোড় থেকে ঢাকা ক্লাবের সামনে দিয়ে রমনা পার্কের গেট পর্যন্ত মিছিল করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, ‘ছাত্রলীগ আমাদের ভয় পায়, তাই আমরা যাতে ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারি সেজন্য ভোর সাড়ে পাচটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়েছিল।’

ক্যাম্পাস দখলের চেষ্টা অস্বীকার করে এই ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘আমরা কোন ক্যাম্পাস দখল বা কারো সাথে মারামারি করতে সেখানে যাইনি। আমরা ছাত্রলীগ কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যে নিপীড়ন হয়েছিল তার বিচারের দাবি নিয়ে মিছিল করেছিলাম।’

গত ২৩ জানুয়ারি উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করতে যাওয়া বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরকে ছাত্রলীগের পিটুনির দুই দিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত মিছিল করে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।

গত পাঁচ বছরে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ঢুকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। এর মধ্যে সংগঠনটির এই মিছিল নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ। সরকারের শেষ বছরে ছাত্রদল ক্যাম্পাসের দখল নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তারা।

ছাত্রলীগ অভিযোগ তুলেছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে ছাত্রদলের আঁতাত হয়েছে। আর তারা ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।

১৯৯০ সাল থেকে দেখা গেছে প্রতিটি সরকারের আমলে তাদের সহযোগী ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাস দখলে রাখে এবং প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র সংগঠনকে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করতে দেয় না। আবার সরকারের শেষ বছরে ক্যাম্পাসের দখল নেয়ার চেষ্টা করে আসছে আগের বছরগুলোতে ঢুকতে না পারা ছাত্র সংগঠন।

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন