০৫ আগস্ট, ২০২৫ ১২:৫৮
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে পাতারহাট ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার এক ছাত্রের মাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে একই মাদ্রাসার শিক্ষক জুনিয়র মৌলভি হাসনাইন মৃধার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত জুনিয়র মৌলভি হাসনাইন মৃধাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (৪ আগস্ট) সকালে এ বিষয়টি জানাজানি হয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস শাকুর বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক হাসনাইন মৃধা উপজেলার সদর ইউনিয়নের রুকন্দি গ্রামের আব্দুল হামিদ মৃধার ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, প্রবাসীর স্ত্রীর টাকা ও স্বর্ণালংকারের লোভে পড়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন শিক্ষক হাসনাইন মৃধা (২৫)। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী স্বামী জিয়া উদ্দিন থানায় জিডি করেন এবং আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ভুক্তভোগী স্বামী জিয়া উদ্দিন বলেন, শিক্ষক হাসনাঈন মৃধা আমার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে জিহাদকে প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগে স্ত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সে শিক্ষকতার পাশাপাশি তাবিজের ব্যবসাও করেন।
কুফরি করে আমার স্ত্রীকে নিয়ে গেছেন। আমার স্ত্রী কোথায় আছেন আর কেমন আছেন জানি না। আমার দুই ছেলেসন্তান রেখে চলে গেছে। বড় ছেলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে আর ছোট ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে।
তিনি আরও বলেন, আমি থানায় ও আদালতে অভিযোগ দিয়েছি। স্ত্রী-সন্তানের সুখের জন্য ১৮ বছর বিদেশে শ্রমিকের কাজ করছি। আমার পাঁচ ভরি স্বর্ণ এবং নগদ ৭ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। আমার টাকা ও স্বর্ণ আত্মসাতের লক্ষ্যে স্ত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছে।
জিয়া উদ্দিনের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শাপলা বেগম বলেন, ওই শিক্ষক কবিরাজি জানেন। কুফরি করে আমার বড় জা’কে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিয়ে গেছেন। যার সঙ্গে গেছে সে একটা প্রতারক। আগেও একাধিক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক করেছেন। টাকা ও স্বর্ণ হাতিয়ে নিয়েছেন।
বিশ্বাস করে ভাশুর তার নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে টাকা পাঠিয়েছিলেন। স্বর্ণ দিয়ে পুতুলের মতো সাজিয়ে রেখেছিলেন। বিশ্বাসের ঘরে চুরি করে সবকিছু নিয়ে উধাও হলেন। একবারও ভাবলেন না স্বামী ও সন্তানের কথা।
প্রতিবেশী হাসিনা বেগম বলেন, ওই শিক্ষক তাবিজ করে এ মহিলারে নিয়ে গেছে। মহিলার ছোট ছেলেটা মা মা বলে দিনরাত কাঁদছে। আমরা তার ছেলের কান্না সহ্য করতে পারছি না। এভাবে সোনার সংসার ফেলে চলে গেল? অভিযুক্ত মৌলভির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি। এ ছাড়াও তার পরিবারের সবাই বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে আত্মগোপন রয়েছেন।
অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস শাকুর বলেন, আমাদের মাদ্রাসার শিক্ষক গত ১ জুন ২০২৫ থেকে স্বেচ্ছায় তার পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। সে মোতাবেক আমরা কমিটির মাধ্যমে তাকে অব্যাহতি দিয়েছি। তিনি আমাদের মাদ্রাসার এখন আর কেউ নন। তবে প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে উধাও হওয়ার বিষয়ে কেউ আমাকে লিখিত অভিযোগ করেননি।
মেহেন্দিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিল্লাল হোসাইন বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষকের সঙ্গে প্রবাসীর স্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করা হয়নি। প্রবাসীর বড় ছেলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন, তার মা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে, তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রিয়াজুর রহমান বলেন, প্রবাসীর স্ত্রী নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় জুনিয়র মৌলভি হাসনাঈন মৃধাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে পাতারহাট ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার এক ছাত্রের মাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে একই মাদ্রাসার শিক্ষক জুনিয়র মৌলভি হাসনাইন মৃধার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত জুনিয়র মৌলভি হাসনাইন মৃধাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (৪ আগস্ট) সকালে এ বিষয়টি জানাজানি হয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস শাকুর বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক হাসনাইন মৃধা উপজেলার সদর ইউনিয়নের রুকন্দি গ্রামের আব্দুল হামিদ মৃধার ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, প্রবাসীর স্ত্রীর টাকা ও স্বর্ণালংকারের লোভে পড়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন শিক্ষক হাসনাইন মৃধা (২৫)। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী স্বামী জিয়া উদ্দিন থানায় জিডি করেন এবং আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ভুক্তভোগী স্বামী জিয়া উদ্দিন বলেন, শিক্ষক হাসনাঈন মৃধা আমার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে জিহাদকে প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগে স্ত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সে শিক্ষকতার পাশাপাশি তাবিজের ব্যবসাও করেন।
কুফরি করে আমার স্ত্রীকে নিয়ে গেছেন। আমার স্ত্রী কোথায় আছেন আর কেমন আছেন জানি না। আমার দুই ছেলেসন্তান রেখে চলে গেছে। বড় ছেলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে আর ছোট ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে।
তিনি আরও বলেন, আমি থানায় ও আদালতে অভিযোগ দিয়েছি। স্ত্রী-সন্তানের সুখের জন্য ১৮ বছর বিদেশে শ্রমিকের কাজ করছি। আমার পাঁচ ভরি স্বর্ণ এবং নগদ ৭ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। আমার টাকা ও স্বর্ণ আত্মসাতের লক্ষ্যে স্ত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছে।
জিয়া উদ্দিনের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শাপলা বেগম বলেন, ওই শিক্ষক কবিরাজি জানেন। কুফরি করে আমার বড় জা’কে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিয়ে গেছেন। যার সঙ্গে গেছে সে একটা প্রতারক। আগেও একাধিক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক করেছেন। টাকা ও স্বর্ণ হাতিয়ে নিয়েছেন।
বিশ্বাস করে ভাশুর তার নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে টাকা পাঠিয়েছিলেন। স্বর্ণ দিয়ে পুতুলের মতো সাজিয়ে রেখেছিলেন। বিশ্বাসের ঘরে চুরি করে সবকিছু নিয়ে উধাও হলেন। একবারও ভাবলেন না স্বামী ও সন্তানের কথা।
প্রতিবেশী হাসিনা বেগম বলেন, ওই শিক্ষক তাবিজ করে এ মহিলারে নিয়ে গেছে। মহিলার ছোট ছেলেটা মা মা বলে দিনরাত কাঁদছে। আমরা তার ছেলের কান্না সহ্য করতে পারছি না। এভাবে সোনার সংসার ফেলে চলে গেল? অভিযুক্ত মৌলভির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি। এ ছাড়াও তার পরিবারের সবাই বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে আত্মগোপন রয়েছেন।
অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস শাকুর বলেন, আমাদের মাদ্রাসার শিক্ষক গত ১ জুন ২০২৫ থেকে স্বেচ্ছায় তার পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। সে মোতাবেক আমরা কমিটির মাধ্যমে তাকে অব্যাহতি দিয়েছি। তিনি আমাদের মাদ্রাসার এখন আর কেউ নন। তবে প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে উধাও হওয়ার বিষয়ে কেউ আমাকে লিখিত অভিযোগ করেননি।
মেহেন্দিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিল্লাল হোসাইন বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষকের সঙ্গে প্রবাসীর স্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করা হয়নি। প্রবাসীর বড় ছেলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন, তার মা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে, তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রিয়াজুর রহমান বলেন, প্রবাসীর স্ত্রী নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় জুনিয়র মৌলভি হাসনাঈন মৃধাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
৩১ আগস্ট, ২০২৫ ১৯:৪৫
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বরিশাল জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সহ সভাপতি,ডি ই এব, নুর উদ্দিন মাফির পক্ষ থেকে সকল স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি এই দিনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
মোঃ নুর উদ্দিন মাফি তার শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, “১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে গঠিত বিএনপি ৪৭ বছরে পদার্পণ করছে। এটি শুধু একটি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নয়, এটি বাংলাদেশের আপামর জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।”
তিনি আরও বলেন, “জিয়াউর রহমান শুধু একজন মহান স্বাধীনতার ঘোষকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। তার হাত ধরেই বাংলাদেশে কৃষি বিপ্লব, শিল্পায়ন, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছিল। স্বল্পসময়ের শাসনামলে তিনি দেশকে একটি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন।”
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে মোঃ নুর উদ্দিন মাফি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে আপোসহীন ভূমিকা পালন করেছেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তার নেতৃত্ব অবিস্মরণীয়। গণতন্ত্রের জন্য তিনি বারবার কারাবরণ করেছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কিন্তু জনগণের অধিকার আদায়ে তিনি কখনও পিছপা হননি। বর্তমানেও তিনি গুরুতর অসুস্থ তার জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
দলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তারেক রহমান দেশের মাটি ও মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করছেন। ফ্যাসিবাদী সরকারের রোষানলে পড়ে তিনি আজ নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন।
কিন্তু দূর থেকেও তিনি দলকে সুসংগঠিত রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে এবং দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”
তিনি আরও প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, “ স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে এবং এবার জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। জিয়াউর রহমানের আদর্শ, খালেদা জিয়ার আপোসহীনতা এবং তারেক রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিএনপি আবারও দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করবে এবং একটি সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।” পরিশেষে মোঃ নুর উদ্দিন মাফি বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের সকল নেতাকর্মীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন এবং দেশ ও জাতির অব্যাহত শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বরিশাল জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সহ সভাপতি,ডি ই এব, নুর উদ্দিন মাফির পক্ষ থেকে সকল স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি এই দিনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
মোঃ নুর উদ্দিন মাফি তার শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, “১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে গঠিত বিএনপি ৪৭ বছরে পদার্পণ করছে। এটি শুধু একটি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নয়, এটি বাংলাদেশের আপামর জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।”
তিনি আরও বলেন, “জিয়াউর রহমান শুধু একজন মহান স্বাধীনতার ঘোষকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। তার হাত ধরেই বাংলাদেশে কৃষি বিপ্লব, শিল্পায়ন, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছিল। স্বল্পসময়ের শাসনামলে তিনি দেশকে একটি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন।”
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে মোঃ নুর উদ্দিন মাফি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে আপোসহীন ভূমিকা পালন করেছেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তার নেতৃত্ব অবিস্মরণীয়। গণতন্ত্রের জন্য তিনি বারবার কারাবরণ করেছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কিন্তু জনগণের অধিকার আদায়ে তিনি কখনও পিছপা হননি। বর্তমানেও তিনি গুরুতর অসুস্থ তার জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
দলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তারেক রহমান দেশের মাটি ও মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করছেন। ফ্যাসিবাদী সরকারের রোষানলে পড়ে তিনি আজ নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন।
কিন্তু দূর থেকেও তিনি দলকে সুসংগঠিত রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে এবং দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”
তিনি আরও প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, “ স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে এবং এবার জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। জিয়াউর রহমানের আদর্শ, খালেদা জিয়ার আপোসহীনতা এবং তারেক রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিএনপি আবারও দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করবে এবং একটি সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।” পরিশেষে মোঃ নুর উদ্দিন মাফি বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের সকল নেতাকর্মীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন এবং দেশ ও জাতির অব্যাহত শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করেন।
৩১ আগস্ট, ২০২৫ ১৮:০২
বরিশাল থেকে ঢাকা আসেন লঞ্চে এক কাপড়ে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। চলার মতো অর্থ ছিল না। ছিল না খাবার টাকা। শেখ সেলিমের ‘বাংলার বাণী’ পত্রিকায় চাকরি নেন বিজ্ঞাপন ম্যানেজারের। রাতে ঘুমাতেন বাংলার বাণী অফিসেই নিউজ প্রিন্ট বিছিয়ে। বাংলার বাণীতে যে বেতন পেতেন, তা দিয়েই চলতেন কোনো রকমে। বেতনও ঠিকঠাক মতো হতো না। অভাব-অনটনে কাটত জীবন। কাগজে কলমে আইনের ডিগ্রি থাকলেও কোনো দিন আইন পেশায় যুক্ত থাকেননি। কিন্তু গত ৫০ বছরে গড়েছেন হাজার কোটি টাকার সম্পদ। স্ত্রী ব্যাংকে চাকরি করতেন। সেই চাকরি পান রাজনৈতিক বিবেচনায়। প্রয়াত আখতারুজ্জামান বাবুকে ধরে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে চাকরি নেন। সেই টাকায় চলত সংসার। নিজের কোনো বৈধ উপার্জন ছিল না। কিন্তু রাজনীতিই তার কাছে ছিল দুর্নীতি এবং অবৈধ অর্থ উপার্জনের প্রধান উপায়। রাজনীতি করেই অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। বর্তমানে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। লুটের টাকায় কাটাচ্ছেন বিলাসী জীবন। বৈধ কোনো উপার্জন ছাড়াই তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে দুর্নীতি, লুটপাট করেছেন ব্যাপকভাবে। দলের ভিতর কমিটি বাণিজ্য এবং মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন লাগামহীন। দুর্নীতির দাম কমিশনের প্রাথমিক হিসাব মতে, গত ১৫ বছরে জাহাঙ্গীর কবির নানকের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৩০ গুণ। তবে তার ঘনিষ্ঠজনরা মনে করেন যে, এই হিসাবটি খুবই তুচ্ছ এবং হাস্যকর। বাস্তবে তার সম্পদের পরিমাণ আরও কয়েকশ গুণ বেশি। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী নানক ও তার স্ত্রীর যৌথ সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৫১ টাকা। ২০২৪ সালের জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের সময় হলফনামায় নানক সম্পদের যে বৈধ হিসাব দিয়েছিলেন তার পরিমাণ ১৮ কোটি ৮৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৫১ টাকা। শুধু দেখানো হিসাবেই তার সম্পদ বেড়েছে ৩০ গুণ। আওয়ামী লীগের এই নেতার কোনো বৈধ আয় নেই। তাহলে সম্পদ বাড়ল কীভাবে? একমাত্র উপায় রাজনীতি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রথমে মন্ত্রী হতে পারেননি। কয়েক দিন পরে তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সৈয়দ আশরাফ মন্ত্রণালয়ে যেতেন না। মন্ত্রণালয়ের কাজেও তার মনোযোগ ছিল না। আর এই সুযোগ নেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। বিভিন্ন টেন্ডার এবং বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের পর নানক আরও ক্ষমতা কেন্দ্রের ঘনিষ্ঠ হয়ে যান, হয়ে পড়েন বেপরোয়া। অনেকেই অভিযোগ করেন যে, বিডিআর বিদ্রোহের পিছনে তার সম্পৃক্ততা ছিল। সেটি তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়। কিন্তু বিডিআর বিদ্রোহের পর জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগের অন্যতম নীতিনির্ধারকে পরিণত হন। এরপর থেকেই তিনি একের পর এক সম্পদ গড়তে থাকেন। নিঃস্ব রিক্ত থেকে তিনি হয়ে যান হাজার কোটি টাকার মালিক। ২০০৯ সালে প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রথম বড় দুর্নীতি আসে ডেসটিনির ঘটনায়। ডেসটিনির কাছ থেকে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা নেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাদেরকে কোনো সহায়তা করেননি নানক। ডেসটিনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, ডেসটিনি নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য নানককে প্রায় দুই শ কোটি টাকা উৎকোচ দিয়েছিল। সেই সময় জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং পল্লী উন্নয়ন সচিব মিহির কান্তি মজুমদার যৌথভাবে এই টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। ডেসটিনি ছাড়াও এই সময় নানক এরকম আরও কয়েকটি কোঅপারেটিভ সোসাইটির কাছ থেকে বিপুল অর্থ গ্রহণ করে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ‘যুবক’। ‘যুবক’ সমবায় সারা দেশে প্রচুর জমি-জমা এবং সম্পদ করেছিল। ঢাকা শহরেও তাদের বিপুল সম্পদ ছিল। যুবকের ধানমন্ডির জমিটি জাহাঙ্গীর কবির নানক দেন তার ঘনিষ্ঠ সহচর মির্জা আজমকে। নামমাত্র মূল্যে ধানমন্ডির এক বিঘা জমি মির্জা আজম গ্রহণ করেন। যেখানে তিনি এখন বহুতল ভবন করেছেন এবং একটি ফ্ল্যাটে নিজে থাকতেন। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর, বসিলা, কেরানীগঞ্জে যুবকের বিভিন্ন সম্পদ দখল করে নেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। যুবকের লাইসেন্স নবায়ন করে দেওয়া হবে, যুবককে নতুন করে কাজ করতে দেওয়া হবে- এরকম আশ্বাস দিয়েও নানক বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ সময় জাহাঙ্গীর কবির নানকের আরেকটা টার্গেট ছিল আর্থ ফাউন্ডেশন। আর্থ ফাউন্ডেশনেও কোঅপারেটিভ সোসাইটি ছিল, যারা জনগণকে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে টাকা গ্রহণ করত। আর্থ ফাউন্ডেশনের কাছ থেকেও মোটা অঙ্কের টাকা নেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যাদের কাছ থেকে তিনি অর্থ নিয়েছেন, তাদেরকেই তিনি ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। কারও কোনো উপকার করেননি। এটি ছিল নানকের অভিনব একটি কৌশল। এ সময় জাহাঙ্গীর কবির নানক ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ নামে সেই প্রকল্পটির দিকে নজর দেন। শেখ হাসিনার অন্যতম প্রিয় এই প্রকল্প ছিল, যেখানে গরিব মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য তাদেরকে একখণ্ড জমি এবং সেই জমির ওপর বাড়ি এবং একটি খামার করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই পুরো টাকাই লুটপাট করা হয়। ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে’র নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, জাহাঙ্গীর কবির নানকের পাঁচ বছরের মন্ত্রিত্বকালের সময় সেখানে মোট ৪ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। অথচ কোনো গরু বা বাড়িঘর দেওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। পুরো টাকাই প্রায় লুটপাট হয়ে গেছে। এ সময় ‘একটি বাড়ি একটি খামারে’র নাম হয় ‘অর্ধেক তোমার, অর্ধেক আমার’।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, প্রশান্ত কুমার হালদার নামে একজন প্রকল্প পরিচালকের যোগসাজশে জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আরও কতিপয় ব্যক্তি মিলে এই প্রকল্প লুণ্ঠন করেন। এ ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকা অবস্থায় মিল্কভিটা সমবায় সমিতি ছিল জাহাঙ্গীর কবির নানকের অর্থ উপার্জনের একটি অন্যতম জায়গা। মিল্কভিটাতে হস্তক্ষেপ করে, মিল্কভিটার বিভিন্ন বিষয় তদারকি করে বানিয়ে ফেলেন বিপুল পরিমাণ টাকা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অন্যতম বিভাগ স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর। স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরে সবচেয়ে বেশি অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক সহায়তা পায় প্রচুর। জাহাঙ্গীর কবির নানক এখানে নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেন। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি কে প্রধান প্রকৌশলী হবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে কারা প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন সে বিষয়ে তদারকি শুরু করেন। বিনিময়ে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।
২০০৯ থেকে ২০১৫ সালে নানকের অন্যতম বড় কেলেঙ্কারি ছিল যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার প্রকল্প। সৈয়দ আশরাফ এই প্রকল্প দুর্নীতিপূর্ণ এবং অযৌক্তিক হিসেবে ফাইল আটকে দেন। সৈয়দ আশরাফ এই প্রকল্পকে অনুমতি না দেওয়ার জন্য একটি দীর্ঘ নোট লিখেছিলেন। জাহাঙ্গীর কবির নানক এই প্রকল্পটি যেন পাস হয় সেজন্য শেখ হাসিনার কাছে যান এবং তার সঙ্গে এক দিন দেনদরবার করেন। জানা যায়, এই প্রকল্প পাস করানোর জন্য নানককে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়। এই টাকার বিনিময়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ হাসিনাকে প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে সৈয়দ আশরাফকে ডেকে নিয়ে যান শেখ হাসিনা এবং এই ফ্লাইওভারের ফাইলে স্বাক্ষর করেন। এটি ছিল বাংলাদেশের একটি বড় দুর্নীতির ঘটনা। যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার এখন একটি বিষফোঁড়া হিসেবে জাতির সামনে এসেছে। নানকের এসব দুর্নীতি, অনিয়ম এবং মন্ত্রণালয়ের স্বেচ্ছাচারিতার কথা সবাই জানত। এ কারণেই ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর জাহাঙ্গীর কবির নানককে মন্ত্রী হিসেবে রাখা হয়নি। কিন্তু মন্ত্রী না হলে কী হবে? জাহাঙ্গীর কবির নানক তার দুর্নীতি এবং লুটপাট অব্যাহত রাখেন। হিসাব করে দেখা গেছে যে, পাঁচ বছর প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় জাহাঙ্গীর কবির নানক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যে টাকা দিয়ে তিনি বেনামে দেশেবিদেশে সম্পদ করেছেন। এসব অধিকাংশ সম্পদের হিসাব তিনি গোপন করেছেন। তার ব্যক্তি চাকর-বাকর, দেহরক্ষীর নামে ফ্ল্যাট, জমি কিনে তিনি নিজেকে নিরাপদে রেখেছেন। এভাবেই আওয়ামী লীগ শাসনামলে প্রথম পাঁচ বছরেই নানক হয়ে যান অন্যতম ধনী। যিনি এক সময় দুবেলা খেতে পারতেন না, তিনি পাঁচ বছরের মধ্যেই হয়ে ওঠেন এক ধনাঢ্য হাজার কোটি টাকার মালিক।
সংবাদসূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।
বরিশাল থেকে ঢাকা আসেন লঞ্চে এক কাপড়ে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। চলার মতো অর্থ ছিল না। ছিল না খাবার টাকা। শেখ সেলিমের ‘বাংলার বাণী’ পত্রিকায় চাকরি নেন বিজ্ঞাপন ম্যানেজারের। রাতে ঘুমাতেন বাংলার বাণী অফিসেই নিউজ প্রিন্ট বিছিয়ে। বাংলার বাণীতে যে বেতন পেতেন, তা দিয়েই চলতেন কোনো রকমে। বেতনও ঠিকঠাক মতো হতো না। অভাব-অনটনে কাটত জীবন। কাগজে কলমে আইনের ডিগ্রি থাকলেও কোনো দিন আইন পেশায় যুক্ত থাকেননি। কিন্তু গত ৫০ বছরে গড়েছেন হাজার কোটি টাকার সম্পদ। স্ত্রী ব্যাংকে চাকরি করতেন। সেই চাকরি পান রাজনৈতিক বিবেচনায়। প্রয়াত আখতারুজ্জামান বাবুকে ধরে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে চাকরি নেন। সেই টাকায় চলত সংসার। নিজের কোনো বৈধ উপার্জন ছিল না। কিন্তু রাজনীতিই তার কাছে ছিল দুর্নীতি এবং অবৈধ অর্থ উপার্জনের প্রধান উপায়। রাজনীতি করেই অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। বর্তমানে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। লুটের টাকায় কাটাচ্ছেন বিলাসী জীবন। বৈধ কোনো উপার্জন ছাড়াই তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে দুর্নীতি, লুটপাট করেছেন ব্যাপকভাবে। দলের ভিতর কমিটি বাণিজ্য এবং মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন লাগামহীন। দুর্নীতির দাম কমিশনের প্রাথমিক হিসাব মতে, গত ১৫ বছরে জাহাঙ্গীর কবির নানকের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৩০ গুণ। তবে তার ঘনিষ্ঠজনরা মনে করেন যে, এই হিসাবটি খুবই তুচ্ছ এবং হাস্যকর। বাস্তবে তার সম্পদের পরিমাণ আরও কয়েকশ গুণ বেশি। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী নানক ও তার স্ত্রীর যৌথ সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৫১ টাকা। ২০২৪ সালের জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের সময় হলফনামায় নানক সম্পদের যে বৈধ হিসাব দিয়েছিলেন তার পরিমাণ ১৮ কোটি ৮৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৫১ টাকা। শুধু দেখানো হিসাবেই তার সম্পদ বেড়েছে ৩০ গুণ। আওয়ামী লীগের এই নেতার কোনো বৈধ আয় নেই। তাহলে সম্পদ বাড়ল কীভাবে? একমাত্র উপায় রাজনীতি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রথমে মন্ত্রী হতে পারেননি। কয়েক দিন পরে তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সৈয়দ আশরাফ মন্ত্রণালয়ে যেতেন না। মন্ত্রণালয়ের কাজেও তার মনোযোগ ছিল না। আর এই সুযোগ নেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। বিভিন্ন টেন্ডার এবং বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের পর নানক আরও ক্ষমতা কেন্দ্রের ঘনিষ্ঠ হয়ে যান, হয়ে পড়েন বেপরোয়া। অনেকেই অভিযোগ করেন যে, বিডিআর বিদ্রোহের পিছনে তার সম্পৃক্ততা ছিল। সেটি তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়। কিন্তু বিডিআর বিদ্রোহের পর জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগের অন্যতম নীতিনির্ধারকে পরিণত হন। এরপর থেকেই তিনি একের পর এক সম্পদ গড়তে থাকেন। নিঃস্ব রিক্ত থেকে তিনি হয়ে যান হাজার কোটি টাকার মালিক। ২০০৯ সালে প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রথম বড় দুর্নীতি আসে ডেসটিনির ঘটনায়। ডেসটিনির কাছ থেকে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা নেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাদেরকে কোনো সহায়তা করেননি নানক। ডেসটিনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, ডেসটিনি নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য নানককে প্রায় দুই শ কোটি টাকা উৎকোচ দিয়েছিল। সেই সময় জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং পল্লী উন্নয়ন সচিব মিহির কান্তি মজুমদার যৌথভাবে এই টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। ডেসটিনি ছাড়াও এই সময় নানক এরকম আরও কয়েকটি কোঅপারেটিভ সোসাইটির কাছ থেকে বিপুল অর্থ গ্রহণ করে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ‘যুবক’। ‘যুবক’ সমবায় সারা দেশে প্রচুর জমি-জমা এবং সম্পদ করেছিল। ঢাকা শহরেও তাদের বিপুল সম্পদ ছিল। যুবকের ধানমন্ডির জমিটি জাহাঙ্গীর কবির নানক দেন তার ঘনিষ্ঠ সহচর মির্জা আজমকে। নামমাত্র মূল্যে ধানমন্ডির এক বিঘা জমি মির্জা আজম গ্রহণ করেন। যেখানে তিনি এখন বহুতল ভবন করেছেন এবং একটি ফ্ল্যাটে নিজে থাকতেন। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর, বসিলা, কেরানীগঞ্জে যুবকের বিভিন্ন সম্পদ দখল করে নেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। যুবকের লাইসেন্স নবায়ন করে দেওয়া হবে, যুবককে নতুন করে কাজ করতে দেওয়া হবে- এরকম আশ্বাস দিয়েও নানক বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ সময় জাহাঙ্গীর কবির নানকের আরেকটা টার্গেট ছিল আর্থ ফাউন্ডেশন। আর্থ ফাউন্ডেশনেও কোঅপারেটিভ সোসাইটি ছিল, যারা জনগণকে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে টাকা গ্রহণ করত। আর্থ ফাউন্ডেশনের কাছ থেকেও মোটা অঙ্কের টাকা নেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যাদের কাছ থেকে তিনি অর্থ নিয়েছেন, তাদেরকেই তিনি ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। কারও কোনো উপকার করেননি। এটি ছিল নানকের অভিনব একটি কৌশল। এ সময় জাহাঙ্গীর কবির নানক ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ নামে সেই প্রকল্পটির দিকে নজর দেন। শেখ হাসিনার অন্যতম প্রিয় এই প্রকল্প ছিল, যেখানে গরিব মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য তাদেরকে একখণ্ড জমি এবং সেই জমির ওপর বাড়ি এবং একটি খামার করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই পুরো টাকাই লুটপাট করা হয়। ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে’র নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, জাহাঙ্গীর কবির নানকের পাঁচ বছরের মন্ত্রিত্বকালের সময় সেখানে মোট ৪ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। অথচ কোনো গরু বা বাড়িঘর দেওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। পুরো টাকাই প্রায় লুটপাট হয়ে গেছে। এ সময় ‘একটি বাড়ি একটি খামারে’র নাম হয় ‘অর্ধেক তোমার, অর্ধেক আমার’।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, প্রশান্ত কুমার হালদার নামে একজন প্রকল্প পরিচালকের যোগসাজশে জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আরও কতিপয় ব্যক্তি মিলে এই প্রকল্প লুণ্ঠন করেন। এ ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকা অবস্থায় মিল্কভিটা সমবায় সমিতি ছিল জাহাঙ্গীর কবির নানকের অর্থ উপার্জনের একটি অন্যতম জায়গা। মিল্কভিটাতে হস্তক্ষেপ করে, মিল্কভিটার বিভিন্ন বিষয় তদারকি করে বানিয়ে ফেলেন বিপুল পরিমাণ টাকা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অন্যতম বিভাগ স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর। স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরে সবচেয়ে বেশি অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক সহায়তা পায় প্রচুর। জাহাঙ্গীর কবির নানক এখানে নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেন। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি কে প্রধান প্রকৌশলী হবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে কারা প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন সে বিষয়ে তদারকি শুরু করেন। বিনিময়ে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।
২০০৯ থেকে ২০১৫ সালে নানকের অন্যতম বড় কেলেঙ্কারি ছিল যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার প্রকল্প। সৈয়দ আশরাফ এই প্রকল্প দুর্নীতিপূর্ণ এবং অযৌক্তিক হিসেবে ফাইল আটকে দেন। সৈয়দ আশরাফ এই প্রকল্পকে অনুমতি না দেওয়ার জন্য একটি দীর্ঘ নোট লিখেছিলেন। জাহাঙ্গীর কবির নানক এই প্রকল্পটি যেন পাস হয় সেজন্য শেখ হাসিনার কাছে যান এবং তার সঙ্গে এক দিন দেনদরবার করেন। জানা যায়, এই প্রকল্প পাস করানোর জন্য নানককে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়। এই টাকার বিনিময়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ হাসিনাকে প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে সৈয়দ আশরাফকে ডেকে নিয়ে যান শেখ হাসিনা এবং এই ফ্লাইওভারের ফাইলে স্বাক্ষর করেন। এটি ছিল বাংলাদেশের একটি বড় দুর্নীতির ঘটনা। যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার এখন একটি বিষফোঁড়া হিসেবে জাতির সামনে এসেছে। নানকের এসব দুর্নীতি, অনিয়ম এবং মন্ত্রণালয়ের স্বেচ্ছাচারিতার কথা সবাই জানত। এ কারণেই ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর জাহাঙ্গীর কবির নানককে মন্ত্রী হিসেবে রাখা হয়নি। কিন্তু মন্ত্রী না হলে কী হবে? জাহাঙ্গীর কবির নানক তার দুর্নীতি এবং লুটপাট অব্যাহত রাখেন। হিসাব করে দেখা গেছে যে, পাঁচ বছর প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় জাহাঙ্গীর কবির নানক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যে টাকা দিয়ে তিনি বেনামে দেশেবিদেশে সম্পদ করেছেন। এসব অধিকাংশ সম্পদের হিসাব তিনি গোপন করেছেন। তার ব্যক্তি চাকর-বাকর, দেহরক্ষীর নামে ফ্ল্যাট, জমি কিনে তিনি নিজেকে নিরাপদে রেখেছেন। এভাবেই আওয়ামী লীগ শাসনামলে প্রথম পাঁচ বছরেই নানক হয়ে যান অন্যতম ধনী। যিনি এক সময় দুবেলা খেতে পারতেন না, তিনি পাঁচ বছরের মধ্যেই হয়ে ওঠেন এক ধনাঢ্য হাজার কোটি টাকার মালিক।
সংবাদসূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।
৩১ আগস্ট, ২০২৫ ১৭:৫৪
গজারিয়া নদীর তলদেশের বিদ্যুতের কেব্ল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় টানা ছয় দিন ধরে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা। এতে উপজেলার প্রায় চার লাখ বাসিন্দা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা; ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা, পানি সরবরাহ, স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য ও মোবাইল যোগাযোগব্যবস্থা।
পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত সপ্তাহে মঙ্গলবার রাতে একটি মালবাহী জাহাজের নোঙরের আঘাতে কেব্লটি ছিঁড়ে যায়। এরপর থেকেই পুরো উপজেলা অন্ধকারে রয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সূত্র জানায়, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলাটি নদীবেষ্টিত ও মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ২০০৪ সালে নলবুনিয়া এলাকায় গজারিয়া নদীর তলদেশ দিয়ে কেব্লের মাধ্যমে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়।
বিদ্যুৎ না থাকায় উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন। ফ্রিজে রাখা খাবার নষ্ট হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে আছে ব্যাটারিচালিত যানবাহন। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। রেফ্রিজারেটর না চলায় ইনসুলিন, টিকা ও অ্যান্টিবায়োটিকের মতো জরুরি ওষুধপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা কার্যক্রমও প্রায় ভেঙে পড়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট যোগাযোগও প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাজার ও দোকানপাটে বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে।
সঞ্জীব কর্মকার নামের একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, 'ভেবেছিলাম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ চলে আসবে, কিন্তু পাঁচ দিন পেরিয়ে গেছে। জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে।'
মেহেন্দিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, 'গজারিয়া নদীর নিচের সাবমেরিন কেব্লটি সম্ভবত কোনো নৌযানের নোঙরের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত ২৬ আগস্ট থেকে ১৭টি ইউনিয়নের বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ আছে। ডুবুরিরা এরই মধ্যে ত্রুটি শনাক্ত করেছেন এবং মেরামতের কাজ চলছে। মেরামত সম্ভব না হলে নতুন কেব্ল স্থাপন করতে হবে।'
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী যোগ করেন, ডুবুরিরা টানা চার দিন ধরে কাজ করছেন, কিন্তু সাড়ে চার কিলোমিটের বেশি প্রশস্ত এই নদীতে প্রবল স্রোত থাকায় মেরামতকাজ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
গজারিয়া নদীর তলদেশের বিদ্যুতের কেব্ল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় টানা ছয় দিন ধরে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা। এতে উপজেলার প্রায় চার লাখ বাসিন্দা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা; ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা, পানি সরবরাহ, স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য ও মোবাইল যোগাযোগব্যবস্থা।
পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত সপ্তাহে মঙ্গলবার রাতে একটি মালবাহী জাহাজের নোঙরের আঘাতে কেব্লটি ছিঁড়ে যায়। এরপর থেকেই পুরো উপজেলা অন্ধকারে রয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সূত্র জানায়, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলাটি নদীবেষ্টিত ও মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ২০০৪ সালে নলবুনিয়া এলাকায় গজারিয়া নদীর তলদেশ দিয়ে কেব্লের মাধ্যমে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়।
বিদ্যুৎ না থাকায় উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন। ফ্রিজে রাখা খাবার নষ্ট হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে আছে ব্যাটারিচালিত যানবাহন। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। রেফ্রিজারেটর না চলায় ইনসুলিন, টিকা ও অ্যান্টিবায়োটিকের মতো জরুরি ওষুধপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা কার্যক্রমও প্রায় ভেঙে পড়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট যোগাযোগও প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাজার ও দোকানপাটে বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে।
সঞ্জীব কর্মকার নামের একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, 'ভেবেছিলাম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ চলে আসবে, কিন্তু পাঁচ দিন পেরিয়ে গেছে। জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে।'
মেহেন্দিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, 'গজারিয়া নদীর নিচের সাবমেরিন কেব্লটি সম্ভবত কোনো নৌযানের নোঙরের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত ২৬ আগস্ট থেকে ১৭টি ইউনিয়নের বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ আছে। ডুবুরিরা এরই মধ্যে ত্রুটি শনাক্ত করেছেন এবং মেরামতের কাজ চলছে। মেরামত সম্ভব না হলে নতুন কেব্ল স্থাপন করতে হবে।'
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী যোগ করেন, ডুবুরিরা টানা চার দিন ধরে কাজ করছেন, কিন্তু সাড়ে চার কিলোমিটের বেশি প্রশস্ত এই নদীতে প্রবল স্রোত থাকায় মেরামতকাজ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.
Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.