নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশাল মহানগর ১০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক শেখর চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। স্থানীয় ভাটারখাল কলোনীর বাসিন্দা ও বরিশাল-ভোলা নৌরুটে স্পিডবোর্ট পরিচালনার দায়িত্ব নিয়োজিত তারেক শাহ বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার আদালতে মামলাটি করেন। আদালতের বিচারক মামলাটি সংশ্লিষ্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ওসিকে এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন।

এই তথ্য একদিন বাদে বুধবার দুপুরে তারেক শাহের আইনজীবী বরিশালটাইমসকে নিশ্চিত করেন। এবং বাদী তারেক শাহ বলছেন, আদালতের আদেশ মঙ্গলবারই থানায় পৌছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু থানা পুলিশ এজাহার করতে বিলম্ব করছে। অবশ্য কোতয়ালি থানার ওসি মো. আরিচুল হক বলছেন, এখনও আদালতের আদেশের কপি হাতে আসেনি।

আরও পড়ুন…

কর্নেল-খোকনের ‘নতুন বরিশাল’ হোক, রাজনৈতিক সন্ত্রাসমুক্ত!, এটাই শহরবাসীর প্রত্যাশা

আদালতের এই মামলার আগে একই ঘটনায় কোতয়ালি মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেছিলেন বরিশাল জেলা স্পীডবোর্ট মালিক ও ড্রাইভার সমবায় সমিতির লাইন ইনচার্জ তারেক শাহ। অভিযোগটি থানা পুলিশের এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তা মাজেদ তদন্ত করছেন। সেই তদন্ত চলাকালীন অনুরুপ অভিযোগে আদালতে মামলা করে বসলেন ত্রিশোর্ধ্ব যুবক।

তারেক জানান, শেখর চন্দ্রের ধারাবাহিক চাঁদাবাজিতে তিনিসহ সমিতির প্রতিটি সদস্য ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছেন। কিছুদিন পূর্বে রাজনৈতিক আয়োজনের কথা বলে ৬২ জন সদস্যের কাছ থেকে ৬২ হাজার টাকা নিয়েছেন তিনি। এখন আবার একই অজুহাতে দুই লক্ষ টাকা চাইছেন, যা দেওয়া তাদের পক্ষ অসম্ভব জানালে শেখর তাকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন। এমনকি খুন-জখমের হুমকি-ধামকি পর্যন্ত দেন। শেখরের সাথে জোটবদ্ধ হয়েছেন পার্শ্ববর্তী জডন রোডের বাদশা মিয়ার ছেলে খোকনসহ ১০/১২ জন।

অবশ্য শেখর চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এইবারই প্রথম নয়, সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ সিটি মেয়র থাকাকালীনও তিনি একই অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সম্মুখে ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে তিনি নির্ধারিত হারে চাঁদা উত্তোলন করতেন এমন অভিযোগ তৎকালীন মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ ফেসবুক লাইভেও করেছিলেন। সেই ভিডিওটি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনায় সর্বশেষ শেখর চন্দ্রর ১০ নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংগঠনিক পদ স্থগিত করা হয়।

জানা গেছে, নেতা সাদিকের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ শেখর চন্দ্র নয়া সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ এবং বরিশাল সদর আসনের এমপি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বলয়ে প্রবেশ করলেও ওয়ার্ডে আধিপত্য ধরে রাখতে পূর্বের কৌশল প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। এনিয়ে ওয়ার্ডে সাদিকপন্থী নেতাদের সাথে তার বেশ দূরত্ব তৈরি হলেও তিনি নতুন একটি জোট তৈরি করে অতীতের ন্যায় চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন, যার সর্বশেষ শিকার হতে যাচ্ছিলেন তারেক শাহ। কিন্তু সমিতির অধিকাংশই সদস্য শেখরের এই অনৈতিক মানতে নারাজ থাকায় তারেক শাহ বেকে বসেছেন এবং জানাচ্ছেন বহিস্কৃত আ’লীগ নেতার চাঁদাবাজির প্রতিবাদ।

আরও পড়ুন…

রাজনৈতিক সন্ত্রাসে প্রতিমন্ত্রী-মেয়রের বদনাম, ব্যবস্থা নিতে দীর্ঘসূত্রিতা কেন?

এসব ঘটনাবলীতে তারেক শাহের কয়েকটি ভিডিওচিত্র বরিশালের বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনলাইন ভার্সনে প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, সাদিক আব্দুল্লাহ সিটি মেয়র থাকাকালীনও শেখর চন্দ্রকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের কথা বলে চাপপ্রয়োগ করে অর্থ নিয়েছেন। তৎকালীন সময়ে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হলেও তিনি ক্ষমতা হারিয়ে কিছুদিন নিশ্চুপ থাকলেও গত বছরের ১২ জুন সিটি নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক নেতা পাল্টে ফেলেন, রীতিমত শুরু করে দেন চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম।

তারেক জানান, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে শেখর চন্দ্র এবং মো. খোকন ২৫ মার্চ তাদের সংগঠনের ৬২ জন সদস্যর কাছ থেকে হাজার টাকা করে উত্তোলন করেন। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এই সময়ে অনেক কষ্ট করে সদস্যরা তাকে টাকাগুলো দিয়েছিল। এবং এর ৫ দিনের মাথায় ফের তিনি সদস্যদের কাছে আরও দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এই অর্থ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি ওই দিন খোকনসহ ১০/১২ জনের একটি দল নিয়ে আসেন, যাদের প্রত্যেকের হাতে লোহার রড ও ধারালো অস্ত্র ছিল। তখন শেখর দাস প্রকাশ্যে হুমকি দেন উল্লেখিত টাকা না পেলে স্পীডবোর্ট চলাচল বন্ধ করে দেওয়াসহ খুন-জখম করবেন।

তারেক শাহের আইনজীবী বরিশালটাইমসকে জানান, শেখরসহ আসামিদের বিরুদ্ধে ১৪৩, ৩৮৫, ৩৮৭ এবং ১০৯ ধারার নালিশী অভিযোগটি বিচারক আমলে নিয়েছেন। এবং আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ওসিকে এজাহার করার নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা গেছে, এই মামলার পর শেখর চন্দ্র নিজেকে রক্ষায় রাজনৈতিক বিভিন্ন মহল থেকে বাদী তারেক শাহের ওপর চাপপ্রয়োগ অব্যাহত রেখেছেন, যা তারেক শাহ নিজেই শিকার করেছেন।

আরও আসছে…

# সুবিধাবাদী শেখর চন্দ্র আসলে কার? মন্ত্রী, মেয়র না কী সাদিকের!