৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে প্রস্তাবিত বাজেটে পাঁচ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ণ, ০৮ জুন ২০১৮

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। তাই এর আগে আগে বড় বড় প্রকল্পের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে চায় সরকার। তাই গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্পগুলোতে বাজেটে বড় অঙ্কের টাকা রাখা হচ্ছে। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র, মেট্রো রেলসহ সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত (ফার্স্ট ট্র্যাকভুক্ত) ১০ প্রকল্পে প্রস্তাবিত বাজেটে ৩০ হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (০৭ জুন) সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ১০টি প্রকল্পকে ‘মেগা প্রকল্প’ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরদারিতে আনা হয়েছে। প্রকল্পগুলোকে ‘প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক’ অভিহিত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, দ্রুত এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে।

অর্থমন্ত্রী এ কথা বললেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। পদ্মা সেতু ছাড়া বাকি প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। নির্ধারিত সময়ে এগুলোর কাজ শেষ করা প্রায় অসম্ভব।

আসন্ন বাজেটে ১০টি মেগা প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রে, ১১ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। দেরিতে শুরু হওয়ায় কাজ পুষিয়ে নিতে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে প্রস্তাবিত বাজেটে পাঁচ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন রেল সংযোগ চালু করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে সরকারের। মেট্রো রেল প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে তিন হাজার ৯০২ কোটি টাকা। এ ছাড়া মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্রে দুই হাজার ১৭১ কোটি টাকা, দোহাজারী থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে এক হাজার ৪৫০ কোটি, রামপাল বিদ্যুেকন্দ্রে এক হাজার কোটি এবং পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আগে প্রাথমিক কাজ শেষ করতে ৫০০ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। সব মিলিয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোতে ৩০ হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ১০ মেগা প্রকল্পের মধ্যে একমাত্র পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। প্রকল্পগুলোর নজরদারির দায়িত্বে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এর পরও কাজের মন্থর গতিতে বিস্ময় প্রকাশ করে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পগুলো উচ্চ প্রবৃদ্ধির নিয়ামক। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হচ্ছে না, প্রবৃদ্ধি অর্জনেও ভূমিকা রাখতে পারছে না। ওদিকে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ দুটিই বাড়ছে। সাধারণ মানুষ সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত তো হচ্ছেই।

ইআরডির তথ্য বলছে- পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৫৮ শতাংশ; যদিও প্রকল্পের ব্যয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা থেকে আরো দেড় হাজার কোটি টাকা বাড়ছে। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ রাখার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মূল কাজ এখনো শুরু হয়নি। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করা চীনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে গত ২৭ এপ্রিল। এখন চলছে প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ।

রামপাল বিদ্যুেকন্দ্রের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সুন্দরবনের মারাত্মক ক্ষতি হবে—এ আশঙ্কা থেকে দেশে-বিদেশে প্রকল্পটি নিয়ে রয়েছে সমালোচনা। কাতার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) নিয়ে বিশেষ জাহাজ ‘এক্সিলেন্স’ কক্সবাজারের মহেশখালীতে এসে পৌঁছলেও এখনো গ্যাস সরবরাহে যেতে পারেনি। কবে নাগাদ গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে, তা কেউ বলতে পারেনি। সমুদ্রের তলদেশে পাইপলাইন ফুটো হয়ে যাওয়াসহ নানা কারিগরি জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত তিনবার সময় বাড়ানো হয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক কারণে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি এখন অন্ধকারে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহ দেখানোর কারণে সরকার কারো বিরাগভাজন হতে চায় না। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে প্রাথমিক কাজ চললেও মূল কাজ কবে শুরু হবে, তা বলতে পারেনি পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর দোহাজারী থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পটি জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এগোতে পারছে না। এ পর্যন্ত দুইবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে এ প্রকল্পের। যদিও গতকাল বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে বড় বড় প্রকল্পের দিকে সরকারের নজর থাকলেও অপেক্ষাকৃত ছোট হলেও মানুষের জন্য ভীষণ উপকারী এমন সব প্রকল্প থেকে যাচ্ছে উপেক্ষিত। সেতু, কালভার্টসহ অন্যান্য ছোট অবকাঠামোর দিকে সরকারের নজর না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন