২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশাল সড়ক ও নৌ পরিবহনে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:২১ অপরাহ্ণ, ৩০ জুন ২০১৭

ঈদকে পুঁজি করে অতিরিক্ত লাভের আশায় ভাড়া বাড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে পরিবহন মালিকরা বিরুদ্ধে। ভাড়া বাড়ানোর দৌড়ে পিছিয়ে নেই রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআরটিসিও। ফলে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যাওয়া মানুষগুলোকে কর্মস্থলে ফিরতে গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।

বাস ও লঞ্চ মালিকরা বলছেন, আসা যাওয়ায় এখন শুধু একদিকে যাত্রী হচ্ছে। এজন্য তারা ভাড়া বাড়িয়েছেন, তবে তা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নয়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু বলেন, ‘লঞ্চে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। শুক্রবার (৩০ জুন) বিকেল থেকে চলবে বিশেষ অভিযান।’

নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, বরিশাল থেকে কাঠালবাড়ি (কাওড়াকান্দি) পর্যন্ত বছরের অন্যান্য সময়ে ভাড়া থাকে ১৮০ টাকা। এখন সেই এই ভাড়া বেড়ে দাড়িয়েছে ২৫০ টাকায়। হানিফ, সাকুরা, গোল্ডেন লাইন পরিবহনের কাউন্টারে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের সময় ছাড়া বরিশাল ঢাকা রুটে ৪৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও এখন ৫১০ টাকা করে টিকেট কাটা হচ্ছে। সাকুরা পরিবহনের এসি বাসে টিকেট প্রতি ৩৫০ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার রানা তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঈদে আসা এবং যাওয়ার সময় এক পাশ থেকে যাত্রী হয় আরেক পাশ থেকে গাড়ি যাত্রীবিহীন চালিয়ে আসতে হয়। আমরা বিআরটিএ’র (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) নির্ধারণ করে দেওয়া ভাড়া ৫১২ টাকার চেয়ে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছি না।’

সাকুরা পরিবহনের ম্যানেজার মো. শওকত সাংবাদিকদের জানান, স্বাভাবিক সময়ে উভয় পাশ থেকে যাত্রী হয়। তখন ৪০ সিটের গাড়ীতে ত্রিশ জন করে যাত্রী হলেই চলে। এছাড়া তখন প্রতিযোগিতা থাকায় ভাড়া কমিয়ে ৪৫০ টাকা করে নেওয়া হয়। এখন এক দিক থেকে যাত্রী হওয়াতে সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে কথা হয় মেহেন্দিগঞ্জে বাবার বাড়ি ঈদ করে স্বামীর কর্মস্থল বেনাপোলে যাওয়ার জন্য পরিবার নিয়ে অপেক্ষমান যাত্রী পলি বেগমের সাথে। তিনি বলেন, ‘চাকলাদার পরিবহনে আগে ৩৫০ টাকা ভাড়া নিতো বেনাপোল পর্যন্ত। এখন যশোর পর্যন্ত ভাড়া নিচ্ছে ৩৮০ টাকা করে। এই বাস বেনাপোল যাবে না, তাই যশোর গিয়ে ফের আরেক বাসে উঠতে হবে।’

শুধু বাস নয়, ঈদ উপলক্ষে নথুল্লাবাদ থেকে কাওড়াকান্দির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া মাইক্রেবাসগুলো যাত্রী প্রতি দেড়শ’ থেকে ২০০ টাকা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে। এখন যাত্রী প্রতি আড়াই থেকে ৩০০ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা করে।

বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আফতাব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তারা বাড়তি ভাড়া রোধে প্রতিটি কাউন্টারে বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া টানিয়ে দিয়েছেন।

এরমধ্যেও অনিয়ম হয় বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এসব রোধে যাত্রীদের সচেতন হতে হবে।’

অপরদিকেবাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) এসি বাসে কাঠালবাড়ি রুটে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। বরিশাল ডিপো থেকে দূপুর পৌঁনে একটায় ছেড়ে যাওয়া ৬৭৬৫ নম্বর গাড়ির যাত্রী বাবুগঞ্জের মামুন হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এসি গাড়ি বলে ৩০০ টাকা ভাড়া রেখেছে কিন্তু গাড়ির এসি চলে না।’

মমতাজউদ্দিন নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘অভিযোগ করায় কন্ডাক্টর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, এসি চলে না ঠিক আছে, ৩০০ টাকায় এই গাড়িতে যার যাওয়ার ইচ্ছা হয় যাবেন, নতুবা নেমে যান।’

এ বিষয়ে বিআরটিসির ডিপো ম্যানেজার জেড এম কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘হয়তো দু’একটা গাড়ির এসিতে একটু কম কাজ করতে পারে।’ অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এসি গাড়িতে এই রুটে নির্ধারিত ভাড়া ৩৩৩ টাকা করে।’

নদী পথেও ভাড়া বৃদ্ধির একই চিত্র দেখা গেছে। বরিশাল-ঢাকা রুটে সরকার নির্ধারিত জন প্রতি ডেকের ভাড়া ২৫৮ টাকা। এর চারগুণ হবে কেবিন ভাড়া। এই হিসেবে এক হাজার ৩২ টাকা সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া হলেও নেওয়া হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকা করে। ডবল কেবিন ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকা করে।

এ বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু ঈদ উপলক্ষে আসা-যাওয়ায় একদিকে যাত্রী পরিবহনের দোহাই দিলেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে ছেড়ে শুক্রবার সকালে বরিশালে পৌঁছানো সুন্দরবন-১০ লঞ্চে কেবল ২৪৭ জন যাত্রী হয়েছে। আজ ঢাকা থেকে ছেড়ে আসবে সুন্দরবন-৮ লঞ্চ তাতেও তিনশ’র বেশি যাত্রী হবে না।’

এবার নদী পথে যাত্রী কম এসেছে দাবি করে সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘লঞ্চের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করার পর তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু ভাড়া সমন্বয় করা হয়নি।’

লঞ্চে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে বরিশাল নদী বন্দরের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটি লঞ্চের বিষয়ে প্রমাণ পেয়েছি ডেকে ২৫৮ টাকার বিপরীতে ৩০০ টাকা করে নিয়েছে। ওই লঞ্চ মালিককে সতর্ক করেছি। আর শুক্রবার বিকেল থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে টিম থাকবে। যদি কোন লঞ্চে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নেয়, তাহলে জেল ও জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’’

15 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন