বরিশালের বানারীপাড়ায় স্বামীকে ফিরে পেতে চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এস এম সফিউর রহমানের স্ত্রী প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে গত ১৬ দিন ধরে কলেজে অবস্থান করছেন। এই ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সফিউর রহমানের নাজমা সুলতানা ঢাকার তেজগাঁও থানার ভাটারা ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত।
অন্যদিকে নাজমা সুলতানা স্ত্রীর অধিকার চাইলেও অধ্যক্ষ দাবি করেছেন, তিনি পুরুষ নির্যাতনের শিকার।
নাজমা সুলতানা বরিশালটাইমসকে জানান, গত ৩৩ বছর ধরে ঢাকার পূর্ব বাড্ডায় তারা নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে ৩১ বছর বয়সী একটি মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে ও ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে রয়েছে। ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে তার স্বামী এস এম সফিউর রহমান গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় সরকারি শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ কলেজে যোগদান করেন। পরে সেখানে এক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
এক পর্যায়ে পরিবারের প্রতি তিনি উদাসীন হয়ে পড়েন। টের পেয়ে নাজমা সুলতানা ছুটি নিয়ে কোটালীপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেন। ওই সময় তিনি গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করে তার স্বামীকে ঢাকার নিকটবর্তী কোনো কলেজে বদলির দাবি জানালে জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে শিক্ষা সচিবের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রফেসর এস এম সফিউর রহমানকে সিরাজগঞ্জের রাশিদাজ্জোহা সরকারি মহিলা কলেজে বদলি করা হলে তিনি দীর্ঘদিন সেখানে যোগদান না করায় ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় আদেশ জারি করা হয়। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি সেই কলেজে যোগদান করেন।
২০১৬ সালের ২১ জুলাই এস এম সফিউর রহমান বরিশাল সরকারি বিএম কলেজে বদলি হয়ে চলে আসার পর থেকে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এ বিষয়ে নাজমা সুলতানা ঢাকায় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ করলে তা বিচারাধীন রয়েছে। পরে অধ্যক্ষ হিসেবে পদোন্নতি নিয়ে বিএম কলেজ থেকে তিনি বানারীপাড়ার চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজে যোগদান করেন।
গত ৩ ফেব্রুয়ারী স্বামীর খোঁজে নাজমা সুলতানা তার প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে চাখার কলেজে এলে অধ্যক্ষ এস এম সফিউর রহমান গা ঢাকা দেন। গত ১৬ দিন ধরে স্বামীর অপেক্ষায় কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনের একটি কক্ষে নাজমা সুলতানা মেয়ে নিয়ে মানবেতর অবস্থান করছেন।
চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজের অধ্যক্ষ এস এম সফিউর রহমান মুঠোফোনে বলেন, তিনি স্ত্রী কর্তৃক পুরুষ নির্যাতনের শিকার। সন্ত্রাসী দিয়ে তাকে হত্যা প্রচেষ্টাও চালানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মানবাধিকার কমিশনে বিষয়টি বিচারাধীন থাকার পরেও তার স্ত্রী তার সম্মানহানি করতে ও পেনশনের অর্থ পাওয়ার লোভে সুপরিকল্পিতভাবে চাখার কলেজে এসে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা পাঠালেও স্ত্রী তা গ্রহণ না করে ঢাকার বাসা ভাড়ার ৮০ হাজার টাকা ভোগ করছেন। তবে এ বিষয়ে নাজমা সুলতানা বলেন, তার স্বামী মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
শিরোনামOther