২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে বিধবা রাণীর বসবাস, পাচ্ছেন না কোনো সরকারি সুবিধা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:৫১ অপরাহ্ণ, ২০ জুন ২০২২

ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে বিধবা রাণীর বসবাস, পাচ্ছেন না কোনো সরকারি সুবিধা

মোঃ জসীম উদ্দিন, বাউফল:: বিয়ের ৫ (পাঁচ) বছরের মধ্যেই স্বামী হারা এক নারী কানন রাণী (৪৫)। ঝুপড়ি ঘরে যার জীবন বাঁধা ভিক্ষার দানে অন্নের জোগান। বাশেঁর কয়েকটি খুঁটির ওপর টিনের ছাউনি। আকাশ যেন উকি দিচ্ছে তার ছাউনির ফাঁকে। পলিথিন মোড়ানো নড়বড়ে ঘরে সামান্য ঝড় বৃষ্টি হলেই কেঁপে ওঠেন ভেঙে পড়ার ভয়ে। স্বামী হারিয়েছন বিয়ের ৫ বছরের মধ্যে। সংসার বলতে ভাইয়ের দেয়া আধা শতাংশ জমিতে স্বামী সন্তানহীন ভাঙাচোড়া একটি ঝুপড়ি ঘর। সাহায্যের হাত বাড়াননি কেউ। সরকারী কোন ভাতাও পাননা তিনি। একমাত্র মেয়ে বিয়ের সুবাদে থাকেন চট্টগ্রাম। ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছেন কানন রাণী। বাউফল উপজেলার নওমালা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পশ্চিম বটকাজল গ্রামে ব্যাপাড়ী বাড়ীতে এই সংখ্যালগঘু পরিবারটির বসবাস।

সরেজমিনে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে পার্শবর্তী বাকেরগঞ্জ উপজেলার রাখাল মিস্ত্রীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন কানন রাণী। বিবাহের মাত্র ৫ বছরের মধ্যে গর্ভে একটি সন্তান নিয়ে স্বামীকে হারান। স্বামীকে হারাবার কিছুদিন পরে একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দেন কানন রাণী। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে স্বামীর সংসারে ঠাঁই হয়নি তার। তাই বাধ্য হয়ে শিশু সন্তানকে নিয়ে নিজ বাপের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ভাইয়ের দেয়া আধা শতক জমিতে স্থানীয়দের সহায়তায় ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু অনেকদিনের পুরোনো ওই ঘরটি আর সংষ্কার করাতে পারেননি কানন। অনেক জায়গায় টিন ভেঙে গেছে। সামন্য বৃষ্টি হলে পানি পড়ে ঘর তলিয়ে যায়। ঘরের পানি নিষ্কাষণের জন্য ছোট ছোট ড্রেন তৈরি করেছেন ঘরের মেঝেতে। ভিক্ষার সংসারে খাবার যোগার করতেই যেখানে সন্ধ্যা হয়, ঘর সংষ্কার করা যেন বিলাসিতা তার কাছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্না ধরেও কাজ হয়নি। পান না কোন সরকারি ভাতা।

সংসার বলতে তার ঘরের মেঝেতে ছিটানো সামান্য কিছু হাড়ি পাতিল। একটি চৌকি রয়েছে ঘরের মেঝেতে। তাতে তোষক তো দূরের কথা, নেই বিছানোর মত একটুকরো কাপড়। ঘরের টিনের চালা খুলে খুলে পড়ে যাচ্ছে। থাকার অনুপযোগী হয়ে উঠেছে বসতঘরটি। যেকোন সময় ঝড় বৃষ্টি হলে বসতঘরটি ভেঙে পড়তে পারে নিজের ওপর। তাই ঝড় হলে ভয়ে পাশের ঘরে আশ্রয় নিতে হয় তাকে।

কানন রাণী বলেন, ‘মুই ভিক্ষা কইরা খাই। মোর কেহ নাই। কুড়ি বছর আগে মোর সোয়ামি (স্বামী) মইরা গেছে, হ্যারপর (তারপর) থেকে ছোড মাইয়া লইয়া বাহের (বাপের) বাড়ি চইল্লা আইছি। মোর বড় ভাই একটু জাগা দেছে। গ্রাইম্মা মাইনসে (লোকেরা) চান্দা দিয়া মোর ঘর উডাইয়া দেছে। ম্যালা বচ্ছর (বছর) অইছে ঘর উডাইছি এহন ভাইঙা ভাইঙা পড়ে। চেয়ারমানের ধারে গেছি মোরে ঘর দেয় না। আম্মেরা (অপনারা) আমার একটা ঘরের ব্যাবস্থা কইরা দেন।’ সরকার গরিব ও অসহায় লোকদের বসতঘর দেয় এসব বিষয় তিনি জানেন না কিছু।

স্থানীয় বাসিন্দা পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন জানান, সংখ্যালঘু একটি পরিবারের সদস্য কানন রাণী। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও এই পরিবারটি একটি সরকারি ঘর পাননি। এই ইউনিয়নে ওনার চেয়ে স্বাবলম্বী এমন অনেকে সরকারি ঘর পেয়েছে। কানন রাণীকে একটি সরকারি ঘর দেওয়ার জন্য চেয়রম্যানকে অবহিত করা হয়েছে। ওর মাথা গোজার একটু ঠাঁই হলেই তার কোন চাওয়া থাকবে না।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল আমিন বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে সারা বাংলাদেশের কেউ ভূমিহীন থাকবে না সে লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পরবর্তী কোন অনুদান এলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাকে একটি বসতঘরের ব্যবস্থা করা হবে।’

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন