৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

বরিশালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলগুলোতে পুলিশের তল্লাশি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:১৭ অপরাহ্ণ, ১৮ অক্টোবর ২০১৯

শেবাচিম হাসপাতাল কলেজের ডক্টরস হোস্টেল থেকে ইয়াবাসহ

মাদককারবারী গ্রেপ্তার, নেশাদ্রব্য সেবনের উপকরণ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা আলোকে বরিশালের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলগুলোতে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে আইনঙ্খলা বাহিনী। বৃহস্পতিবার কোতয়ালি পুলিশের একটি টিম বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ডক্টরস হোস্টেলে অভিযান চালিয়েছে। এসময় এফ.এম নূর-উর-রফী হোস্টেলের সামনের ব্লকের তৃতীয় তলার ৩০৩ নম্বর কক্ষ থেকে ইয়াবাসহ রিফাতুল ইসলাম খান রন্টি নামে এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয় মাদক সেবনের উপকরণসহ ধারালো অস্ত্রও। এর আগে বুধবার রাত থেকে শহরের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলগুলোতে তল্লাশি অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পুলিশ সূত্র জানায়- সাম্প্রতিকালে রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ করে আবাসিক হলগুলোতে কঠোর অভিযোন চালানোর নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনার আলোকেই কোতয়ালি পুলিশ বুধবার রাত থেকে হলগুলোতে তল্লাশি অভিযান শুরু করে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিয়ে হোস্টেলগুলোতে অভিযানের প্রাক্কালে এফ.এম নূর-উর-রফী হোস্টেলের সামনের ব্লকের তৃতীয় তলার ৩০৩ নম্বর কক্ষে হানা দিয়ে রিফাতুল ইসলাম খান রন্টি নামে এক ওই ব্যক্তিকে ৫২০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে। এবং কক্ষটিতে তল্লাশি চালিয়ে ইয়াবা সেবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী, মদের বোতল, চুরিসহ বেশ কিছু সিগারেটের প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। এই অভিযোনে নেতৃত্ব দেন কোতয়ালি পুলিশের সহকারি কমিশনার (এসি) মো. রাসেল।

পুলিশ জানায়- গ্রেপ্তার রিফাতুল ইসলাম খান রন্টি বহিরাগত এবং চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ি। কিন্তু সে দীর্ঘদিন ধরে কক্ষটিতে অবস্থান নিয়ে মাদক সেবন এবং ক্রয়-বিক্রয় করে আসছিলেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেলসহ একাধিক থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বিভিন্ন থানায় মামলাও রয়েছে। তাছাড়া শহরের দক্ষিণ আলেকান্দার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এই রন্টির স্ত্রী আসমা আক্তার রুবিনাও মাদক ক্রয়-বিক্রিতে জড়িত। বর্তমানে কারান্তরীণ আসমা আক্তার রুবিনাকে সাম্প্রতিকালে আড়াই হাজার পিস ইয়াবাসহ নগরীর গোরস্থান রোড এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

শেবাচিমের একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানিয়েছে- শেবাচিম হাসপাতাল কলেজের কতিপয় শিক্ষার্থী স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ শেল্টারে এফ.এম নূর-উর-রফী হোস্টেলের বেশ কয়েকটি কক্ষ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মাদকের আখড়া গতে তোলার পাশাপাশি একটি অঘোষিত টর্চার সেলে পরিণত করে। ওইসব কক্ষে বিরোধী মতের শিক্ষার্থীদের আটকে মারধর করাসহ নানাভাবে নির্যাতনের একাধিক অতীত উদাহরণ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিগত সময়ে বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলেও সেখানে অভিযান চালানোর কথা শোনা যায়নি।

অনুরুপভাবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বেশ কয়েকটি আবাসিক হলের কক্ষ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ক্ষমতাসীন দলীয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের টর্চাসেল গড়ে তোলার বিষয়টি সম্প্রতি আলোচনা আসে।

এরই মধ্যে রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ নির্দেশনা দেন। মুলত সেই নির্দেশনার আলোকেই বুধবার রাত থেকে বিশেষ তল্লাশি অভিযান শুরু করে মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসন। অবশ্য গতকাল শেবাচিমের ওই সফল অভিযানের পরে পুলিশও নিশ্চিত হয়েছে হলগুলোতে মাদকের আখড়ার পাশাপাশি টর্চারসেল গড়ে তোলার বিষয়ে।

সঙ্গত কারণে এই অভিযানের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে হলগুলোতে শৃঙ্খলা এবং কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়তে অনড় থাকার বিষয়টি জানিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বরিশালটাইমসকে বলেন- শেবাচিমের হোস্টেল থেকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার যুবকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এবং সেখানে মাদকের একটি আখড়া গতে তোলা সাথে কে বা কারা জড়িত সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখার সাথে সাথে শেল্টারদাতাদের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন