২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বাল্যবিবাহের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আসামে গ্রেফতার ২ হাজার

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২১ পূর্বাহ্ণ, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাল্যবিবাহের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আসামে গ্রেফতার ২ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের পুলিশ বাল্যবিবাহ ঠেকাতে এখনও পর্যন্ত দুই হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেফতার করেছে।বাল্য বিবাহ করেছে, এমন কম বয়সী ছেলেরা যেমন এর মধ্যে আছে, তেমনই ধরা হয়েছে তাদের পরিবার আর কাজী – পুরোহিত যারা ওইসব বিয়ে দিয়েছেন, তাদেরও।

যেসব জেলায় অভিযান চলছে, তার মধ্যে মুসলমান-প্রধান জেলাগুলিও আছে। রাজ্যের একটি মুসলিম সংগঠন বাল্যবিবাহ রোধে এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে, কিন্তু তারা বলছে শুধু পুলিশ দিয়ে নয়, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে।

তবে আসামের এক মুসলিম রাজনীতিবিদ ও সংসদসদস্য এসব গ্রেফতারের বিরোধিতা করছেন। অন্যদিকে যেসব পরিবারের পুরুষ বা কমবয়সী ছেলেদের পুলিশ নিয়ে গেছে, সেইসব পরিবারের নারীরা বা কমবয়সী স্ত্রীরা পড়েছেন বিপদে।

বাল্যবিবাহ রোধ আইনে অভিযুক্ত ৮ হাজার জন

আসামের মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি বিয়ের বয়স এবং কম বয়সে মাতৃত্বের বিপদ নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সেই সূত্রেই তিনি এই সফতাহের গোড়ার দিকে ঘোষণা করেন যে বাল্য বিবাহের অপরাধে যুক্তদের একটা তালিকা করা হয়েছে।

আসাম পুলিশ বলছে ৪০০৪ টি বাল্যবিবাহের মামলা রুজু হয়েছে। এইসব মামলায় অভিযুক্ত আট হাজারেরও বেশি মানুষ।

সেই সব মামলার ভিত্তিতে শুক্রবার থেকে পুলিশ ধরপাকড় শুরু করে। শনিবার দুপুরে টুইট করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, “আজ সকাল পর্যন্ত ২২১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই অভিযান ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত চলবে।

শনিবার সন্ধ্যায় আসাম পুলিশকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, মোট গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২৫৮।

যাদের ধরা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে বাল্যবিবাহ রোধ আইনে মামলা হয়েছে, কিন্তু যেসব ঘটনায় বিয়ে হওয়া কিশোরীর বয়স ১৪-এর কম, সেইসব ক্ষেত্রে শিশুদের ওপরে যৌন নির্যাতনরোধ আইনেও মামলা করা হচ্ছে।

আসাম পুলিশের মহা নির্দেশক জি পি সিং বলছেন, “ধৃতদের মধ্যে ৫২ জন হলেন কাজী এবং পুরোহিত, যারা বাল্যবিবাহ দিয়েছিলেন। যত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার মধ্যে সবথেকে বেশি সংখ্যক ধরা পড়েছে বিশ্বনাথ, বাকসা, বরপেটা, ধুবরি, হোজাই আর কোকরাঝাড় জেলাগুলি থেকে।“

বরপেটা জেলার হাউলি শহর লাগোয়া নগরজার গ্রামের এক বাবা আর ছেলেকে শুক্রবার ভোররাতে পুলিশ গ্রেফতার করে। বাবা নওশের আলি আর তার ছেলে লালচাঁদ বাদশার বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক একটি মেয়েকে পুত্রবধূ করে সংসারে নিয়ে এসেছে। লালচাঁদ বাদশার মা কোহিনূর বেগম বিবিসি

বাংলাকে টেলিফোনে জানাচ্ছিলেন, “ছেলের বয়স ২১ হয়ে গেছে, আর বউয়ের বয়স এখন ১৯। ১৬ মাস আগে ছেলের বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু বউয়ের বয়স কম বলে তাকে এখনও ঘরে আনি নি। এটা পুলিশ এসেও দেখেছে যে ঘরে বউ নাই। কিন্তু তাও স্বামী আর ছেলেকে থানায় নিয়ে গেল।“

“স্বামী বিকলাঙ্গ, কোনও রোজগারপাতি নাই। ছেলে হাজিরা দিয়ে কামাত আর আমি সুপারি কাটার কাজ করে কিছু পয়সা পাই। এখন আমাদের সংসার কী করে চলবে তাই বুঝছি না। ঘরে কোনও গার্জেন নাই,” বলছিলেন কোহিনূর বেগম।

এখন কেন অভিযান?

ভারতে বাল্যবিবাহ রোধ আইনটি ১৯২৯ সালের। তা সংশোধন করা হয় ২০০৬ সালে। সর্বশেষ আইন অনুযায়ী ছেলেরা ২১ বছরের আগে আর মেয়েরা ১৮ বছরের আগে বিয়ে করতে পারে না।

তবে ইউনিসেফের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় দেড় লক্ষ বাল্যবিবাহ হয়ে থাকে ভারতে।

জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষাতে, ২০২২ সালের যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে দেখা গেছে যে সদ্যজাত মৃত্যুহারের দিক থেকে আসাম তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এক হাজার শিশু জন্মালে ওই রাজ্যে ৩২টি সদ্যজাত মারা যায়।

আসামের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী রঞ্জিত দাস বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “শুধু যে সদ্যজাত শিশু মৃত্যুর হার আসামে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার, তা নয়।

প্রসূতিকালীন জটিলতার কারণেও বাল্যবিবাহ হওয়া মায়েরা বিপুল সংখ্যায় মারা যাচ্ছেন আসামে। মূলত অশিক্ষা, সচেতনতার অভাবেই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা এগুলো বন্ধ করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছি।“

“এছাড়াও জন বিস্ফোরণ কমাতেই হবে আমাদের। কমবয়সে বিয়ে হলেই সন্তান সন্ততির সংখ্যাও বেশি হবে, আর সেটা তো ভবিষ্যতে ভারতের জনসংখ্যাই বাড়াবে। সেটা তো নিয়ন্ত্রণ করা আশু প্রয়োজন,” বলছিলেন দাস।

12 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন