২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বেতাগীতে প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষিত, হাট-বাজরে মানুষের মিলনমেলা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:৪২ অপরাহ্ণ, ৩০ মার্চ ২০২০

হৃদয় হোসেন মুন্না, বেতাগী:: প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনায় বেতাগী উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে নানা পদক্ষেপ নিলেও সংক্রমণ রোধে জনস্বার্থে নেয়া এসব সচেনতনতার কার্যক্রম মানছে না প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের মানুষজন। পৌরশহর সহ উপজেলার প্রধান প্রধান এলাকার রাস্তাঘাট জনশূন্য ও দোকানপাট বন্ধ থাকলেও ঠিক উল্টো চিত্র গ্রাম পর্যায়ের হাট-বাজারে। গোপনে বা প্রকাশ্যে চলছে চায়ের দোকানে আড্ডা। খাবারের হোটেলসহ অপ্রয়োজনীয় অনেক দোকানই খোলা রাখা হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে এক মিটার দূরত্ব রেখে চলাচলের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তা খুব কম মানুষই মানছেন। জটলা পাকিয়ে চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়াসহ কাঁচাবাজার, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানে জনসাধারণের রয়েছে অবাধ বিচরণ। এর ফলে বাড়ছে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি।

জানা যায়, টানা ১০ দিনের সাধারণ ছুটি থাকায় ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে স্থানীয়রা বাড়িতে আসায় এখানকার গ্রাম্য হাট-বাজারগুলোতে যেন ঈদের আমেজ শুরু হয়েছে! চায়ের দোকানে চলছে টিভি। বিকেল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত চায়ের দোকানে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষসহ শহরফেরত মানুষেরা। উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ করোনা ভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রচার-প্রচারনা চালালেও গ্রামের মানুষ তা কর্ণপাত করছেন না। সকালে স্থানীয় হাঁট-বাজারের এসব দোকানগুলোতে লোকজন কিছুটা কম হলেও বিকেলে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। কেউ কেউ প্রশাসন ও পুলিশের টহলের খবর রেখে, আবার কেউ দোকানের অর্ধেক শাটার খোলা রেখে কৌশলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন।

তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে করোনা ঠেকানোর। প্রায় প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানসহ চলছে পুলিশের কঠোর অভিযান। তারপরেও পুরোপুরি করা যাচ্ছে না নিয়ন্ত্রন। ইতোমধ্যে বেতাগী উপজেলা প্রশাসন গত বুধবার (২৪ মার্চ) বিকেল থেকে ফার্মেসি ও কাঁচাবাজার ব্যাতিত উপজেলার চা স্টল এবং দোকানপাট বন্ধ ও সব ধরণের আড্ডা দেয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু জনস্বার্থে সচেতনমূলক নির্দেশ অমান্য করে করোনা ভাইরাস আতঙ্ককে তোয়াক্কা না করেই উপজেলার গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন চা-স্টল ও হাট বাজারে জনসমাগম ঘটছে। উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ গত কয়েক দিন ধরে নিয়মিত মাইকিং করে সবাইকে সচেতন হওয়ার কথা জানান দিলেও এসবের কোনো তোয়াক্কা করছেন না অনেকেই। তা ছাড়া জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে ঘোরাফেরা না করার অনুরোধ জানানো হলেও বাস্তবে তা কোনো কাজে আসছে না। রাস্তাঘাটে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং একসঙ্গে দলবেঁধে চলাচলের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেক যুবক ও কিশোররা তা মানছে না।

সোমবার (৩০ মার্চ) সরেজমিনে হোসনাবাদ ইউনিয়নের জলিশা বাঁজারে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন দোকানগুলোর সামনে মানুষের ভিড়। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনামতে ফার্মেসী ও কাঁচাবাজার ছাড়া সকল দোকান বন্ধ থাকার কথা থাকলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী নিয়ে অনেকেই এসেছেন হাটে। সকাল থেকেই শুরু রয়েছে জনসমাগম। অনেকেই ব্যবহার করছেন না মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বড় ধরনের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। একই চিত্র অন্যান্য স্থানীয় বাজারগুলোতেও। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাজারে জনসমাগম ঘটছে প্রতিনিয়ত। আড্ডা চলছে চা-দোকানগুলোতেও। একটি চায়ের কাপে মুখ রাখছেন অনেকে। কার মুখ থেকে কার শরীরের করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পরছে তা টের পাচ্ছেন না কেউ! বাঁজারে আসা হোসনাবাদ ইউনিয়নের আব্দুল হালিম বরিশালটাইমসকে বলেন, ঘর থেকে বের হওয়ার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রয়োজনের তাগিদে হাট বাজারে আসতে হয়।

থানা সূত্রে জানা যায়, একের অধিক লোক সমাগম দেখলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদেরকে বাড়িতে পাঠাচ্ছে। এ ছাড়া সচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইকিং করা হচ্ছে। বেতাগী থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বরিশালটাইমসকে জানান, পুলিশ সব সময় বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জনসমাগমের খবর পাওয়া মাত্রই আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তেং মং বরিশালটাইমসকে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৪৬ জনের হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হয়েছে। এখনো ১০ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছে। তাদের ওপর পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালে ০৭টি শয্যা প্রস্তত রাখা হয়েছে। করোনা সন্দেহ হলে তাদেরকে প্রথমে এখানে রাখা হবে।

সচেতন স্থানীয়রা বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা প্রশংসনীয়। কিন্তু এসব জনকল্যাণমূলক নির্দেশগুলো গ্রাম অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ঠিকমতো মানছেন না। অসচেতন মানুষগুলোর সচেতন করে জনসমাগম বন্ধ করা না গেলে পুরো উপজেলায় করোনার সংক্রামন ছড়িয়ে পরতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা ।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাজীব আহসান বরিশালটাইমসকে জানান, প্রত্যেক দিন বিভিন্ন এলাকা মনিটরিং করা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পৌর শহরসহ প্রত্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। যদি কেউ নির্দেশনা অমান্য করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন