২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

মনপুরার ‘দখিনা হাওয়া সী-বিচ’ যেন আরেক কক্সবাজার

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৪৭ অপরাহ্ণ, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

সীমান্ত হেলাল, মনপুরা:: ‘দখিনা হাওয়া সী-বিচ’ নাকি ‘মনপুরা সমুদ্র সৈকত’! নামকরণের টানাপোড়নে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। যে যেই নামেই ডাকুক ব্যক্তিগত ও গ্রুপ করে প্রচারণা আর মন্তব্যের সুবাদে ‘মনপুরা দখিনা হাওয়া সী-বিচ’র নাম পৌছে যায় ভ্রমণপিপাসু মানুষের মনে।

তাইতো বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রকোপ আর লকডাউনের একঘেয়েমি উপেক্ষা করে মন ছুটে যায় পর্যটনে। কক্সবাজার, কুয়াকাটার মতোই দেশি বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত এখন ভোলার ‘মনপুরা দখিনা হাওয়া সী-বিচ’। সবুজ শ্যামল প্রকৃতি, মায়াবী হরিণ, সোনালী ধান আর ম্যানগ্রোভ বনানী ঘেরা মনপুরায় পর্যটকদের আকর্ষণে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে এই বালুকাময় সমুদ্র সৈকতটি।

মেঘনা বেষ্টিত দ্বীপ উপজেলার দক্ষিণ ভাগে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ে বালি জমে গড়ে উঠেছে এক কিলোমিটার লম্বা সমুদ্র সৈকত। এটি উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের সর্বদক্ষিণে রহমানপুর গ্রামে অবস্থিত।

সৈকতটি প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠলেও গত ৫/৬ বছর যাবত কারও নজরে আসেনি সেভাবে। স্থানীয় দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলহাজ¦ অলিউল্লাহ কাজল ও তার সহধর্মিনী সাথী কাজলের উদ্যোগে শুরু হয় এই সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে স্থানীয় যুবকদের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী কমিটি গঠন করে শুরু পদযাত্রা।

প্রথমে চারটি বেঞ্চি, চারটি ছাতা বসিয়ে পর্যটকদেরকে আহবান করা হয় সৈকতে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পর্যায়ক্রমে প্রায় অর্ধশতাধিক ছাতা ও বেঞ্চির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেইসাথে ছনের তৈরি একাধিক গোলঘর, বৈঠকখানা, দোলনা, হ্যামোক, স্থাপন করা হয়েছে সৈকতে। পাশাপাশি পর্যটকদের সুরক্ষায় লাইফজ্যাকেটের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এই সৈকটির নাম দেওয়া হয় ‘মনপুরা দখিনা হাওয়া সী বিচ’। নাম নিয়ে শুরু হয় নানা সমীকরণ। ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। কারও এটা পছন্দ আবার কারও অন্যটা। অবশেষে সকল বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের মুখে শ্রুতিমধুরতা পায় ‘মনপুরা দখিনা হাওয়া সী বিচ’।

এতসব আলোচনা সমালোচনা ‘দখিনা হাওয়া সী বিচ’কে পৌছে দেয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর প্রচারের ফলে বৈশি^ক মহামারী করোনা উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসতে শুরু করেন ভ্রমণবিলাসী মানুষ।

সেই থেকে সৈকতটিকে সাজাতে আরও বেশি তৎপরতা বেড়ে যায় উদ্যোক্তাদের। আনুষ্ঠানিকভাবে সমুদ্র সৈকতটি উদ্বোধন করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেলিনা আক্তার চৌধুরী। তারপর থেকে এই সুমদ্র সৈকত পরিদর্শনে আশা শুরু করেন প্রশাসনের উপরস্ত কর্তাব্যক্তিগণ।

একে একে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, হাইকোর্টের বিচারক, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা জজ, জেলা পুলিশ কমিশনার, ইউএনওসহ দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ সৈকতটি পরিদর্শনে আসেন।

প্রতিনিয়ত শত শত দর্শনার্থী ভীড় জমালেও সৈকতটির উন্নয়নে সরকারীভাবে তেমন কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। তবে সমুদ্র সৈকতটিকে সরকারীভাবে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণা করে মন্ত্রণালয়ের অধীনে দৃশ্যমান উন্নয়নের দাবি এলাকাবাসীর।

এ ব্যাপারে মূল উদ্যোক্তা দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলহাজ¦ অলিউল্লাহ কাজল বরিশালটাইমসকে জানান, ‘মনপুরা দখিনা হাওয়া সী-বিচ’র সৌন্দর্যবর্ধনে স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সরকারী অনুদানে সী-বিচের পাকা গেইট নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়াও পর্যটন সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। সী-বিচটিকে সরকারীভাবে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করে দ্রুত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেলিনা আক্তার চৌধুরী জানান, দখিনা হাওয়া সী-বিচে বর্তমানে ব্যক্তিগতভাবে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে। আমরা চাই সরকারীভাবে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণা করে সরকারীভাবে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজকে এগিয়ে নেওয়া হোক। সরকার নজর দিলে এটি কক্সবাজার, কুয়াকাটার মতো পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে।’

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন