২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

মুজিববর্ষে বাবুগঞ্জকে মডেল উপজেলায় রূপান্তর করতে চান কাজী দুলাল

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:১১ অপরাহ্ণ, ১১ মার্চ ২০২০

আরিফ আহমেদ মুন্না
কাজী ইমদাদুল হক দুলাল। মানুষ তাকে সংক্ষেপে কাজী দুলাল নামেই ডাকে। দীর্ঘ ৪ দশকের বেশি সময় ধরে তিনি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। এরমধ্যে গত ২ দশক ধরে আওয়ামী লীগের পরিশুদ্ধ রাজনীতির একজন আদর্শিক নেতা ও সংগঠক হিসেবে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ৩ মেয়াদে টানা দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগেরও বেশি সফলভাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এর পাশাপাশি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রায় ২৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ও সম্ভ্রান্ত মুসলিম কাজী বাড়িতে ১৯৬৪ সালে জন্মগ্রহন করেন কাজী ইমদাদুল হক দুলাল। বরিশাল জেলা পোস্ট মাস্টার কাজী আবদুর রশিদ ও গৃহবধূ আখতার জাহান বেগম দম্পতির মোট ৮ সন্তানের মধ্যে কাজী দুলালের অবস্থান ৬ষ্ঠ এবং ৩ ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বাল্যকাল থেকেই তুখোড় মেধাবী কাজী দুলাল বরিশাল সরকারি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল (বর্তমান বরিশাল ক্যাডেট কলেজে) থেকে ১৯৭৯ সালে মাধ্যমিক পাস করে বরিশাল সরকারি বিএম কলেজে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন।

আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে জন্ম হওয়ার কারণে শৈশব থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধুকে ভীষণ ভালোবাসতেন এবং বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শ বুকে লালন করতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শোনার জন্য শিশুকালে তিনি তার বাবার রেডিওটা নিজের গলায় বেঁধে ঝুলিয়ে সারাবাড়ি হেঁটে বেড়াতেন। তিনি বরিশাল সরকারি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় তৎকালীন বরিশালের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের হাত ধরে সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

১৯৮১ সালে বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের বাণিজ্য বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে আবার সেখানেই ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হন। স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের আগেই তিনি ছাত্রলীগের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্বদান এবং ছাত্রদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করার কারণে বিএম কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (বাকসু) শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর তিনি বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মনোনীত হন। বরিশাল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক পাস করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের জন্য ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন কাজী দুলাল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে তিনি ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। মহানগর ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে ওই বছরই বাবুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাবুগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতিতে পর্দাপণ করেন কাজী দুলাল। সেই সম্মেলনে বর্তমান বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক ও যুবলীগ সভাপতি মোস্তফা কামাল চিশতি তৎকালীন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাবুগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অভিষেকের আগে কাজী দুলাল ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য ছাড়াও মহানগর যুবলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলে বাবুগঞ্জে আওয়ামী লীগে চরম নেতৃত্ব সংকট দেখা দেয়। বিরোধী দলে থাকায় মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। দলের সেই দুর্যোগ চলাকালীন সময়ে ১৯৯২ সালে ঢাকা থেকে এসে বাবুগঞ্জে আওয়ামী লীগের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন কাজী দুলাল। তাকে বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত করে তার হাতে দলের হাল তুলে দেন তারই রাজনৈতিক অভিভাবক জননেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।

এরপর নিজের মেধা, সততা, পরিশ্রম ও কষ্টার্জিত অর্থ ঢেলে দিয়ে বাবুগঞ্জে বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগকে পুনরায় সংগঠিত করেন তিনি। সেই অসামান্য কাজের স্বীকৃতিসরূপ ২০০২ সালে তাকে বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার অর্পণ করেন তার রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। বিগত ২০০২ সাল থেকে ৩ মেয়াদে সভাপতি হিসেবে বাবুগঞ্জে আওয়ামী লীগকে দুঃসময়ে বাঁচিয়ে রাখা ও সংগঠিত করার এক দীর্ঘ অনন্য ইতিহাসের জন্মদাতা তিনি। ২০০২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের চরম দুর্দিনে দল চালাতে নিজের জমি এবং তোয়ালে কারখানাও বিক্রি করতে হয়েছিল তাকে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। তবে নিজ দলের সাধারণ সম্পাদকই তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে সেই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর কাছে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি। প্রথম নির্বাচনে দুর্ভাগ্যজনকভাবে হেরে গেলেও ভেঙে পড়েননি। নতুন উদ্যমে তিনি দলকে সংগঠিত করার কাজে মনোনিবেশ করেন। এর পাশাপাশি তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ মাস্টার্স ডিগ্রী অজর্নের পরেও আবার লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে এলএলবি পাস করেন।

উচ্চশিক্ষিত, ভদ্র, মার্জিত, সৎ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে সমাদৃত কাজী দুলাল ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে অভিভাবক নেতার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্য দেখিয়ে সেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে ২০১৯ সালে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেন তার রাজনৈতিক অভিভাবক ও দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী রাজনীতির নিয়ন্ত্রক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। গতবছর ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীর চেয়ে প্রায় ২৫ হাজার ভোট বেশি পেয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন কাজী দুলাল।

বাবুগঞ্জ উপজেলাকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ার স্বপ্ন নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ও ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ‘নিজে অন্যায় করবো না এবং কাউকে অন্যায় কাজে প্রশ্রয়ও দেবো না’-এ স্লোগানকে সামনে রেখে উপজেলা পরিষদের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনেন কাজী দুলাল। নির্বাচিত হয়ে প্রথমেই তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ও লুটপাট বন্ধে বিভিন্ন কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি ৪০ দিনের অতিদরিদ্র ও কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিক বাছাই ও তাদের ব্যাংক হিসাবে বিল পরিশোধের মাধ্যমে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরেন।

এছাড়াও মাদক, জঙ্গিবাদ ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে তার সোচ্চার অবস্থান এবং অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বনের কারণে দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র একবছরের মাথায় তিনি উপজেলাবাসীর আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হন। সর্বশেষ চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে উপজেলার সর্বত্র মাইকিং করে প্রকাশ্য জনসম্মুখে উন্মুক্তভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তিনি সরকারি বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করায় সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেন।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল টাইমসকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলাল বলেন, ‘দুর্নীতিমুক্ত একটি মডেল উপজেলা গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছি। যদিও দায়িত্ব গ্রহনের পরে এখনো একবছর পূর্ণ হয়নি তবুও উপজেলার রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দুর্নীতি রোধ ও দারিদ্রমুক্ত করার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। এছাড়াও অসহায়-দুঃস্থ মানুষের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন অনুদান ও ভাতা যাতে প্রকৃত হকদারদের হাতে পৌঁছানো যায় সেই লক্ষ্যে সততার সঙ্গে কাজ করছি। মুজিব শতবর্ষেই বাবুগঞ্জ উপজেলাকে দুর্নীতিমুক্ত একটি মডেল উপজেলায় রূপান্তর করতে চাই। মুজিববর্ষের চেতনা ও অনুপ্রেরণাই আমার এই দুঃসাধ্য সাধনের শক্তির মূল উৎস। সবার একটু সহযোগিতা পেলে এই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন আরও সহজ হবে বলে বিশ্বাস করি।’ #

14 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন