৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

বাবুগঞ্জে সেচ নালা উদ্ধারে গিয়ে হামলার শিকার ইউএনও

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৩৪ অপরাহ্ণ, ২৩ জানুয়ারি ২০২৩

বাবুগঞ্জে সেচ নালা উদ্ধারে গিয়ে হামলার শিকার ইউএনও

আরিফ আহমেদ মুন্না সেচ নালা উদ্ধার নিয়ে বাবুগঞ্জে তুলকালাম হয়েছে। নালার বাঁধ অপসারণ করার সময় ইউএনওর ওপরে হামলা হয়েছে। এসময় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৯ জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করাসহ অভিযুক্ত ২ জনকে তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের আরজি কালিকাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, উপজেলার আরজি কালিকাপুর গ্রামের কৃষি ব্লকের জন্য খননকৃত খালের সংযোগ নালা পুনরুদ্ধারের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে আবেদন করেন স্থানীয় কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম সাত্তার ওই নালাটি বাঁধ দিয়ে আটকে দিয়ে সেখানে মুরগির খামার স্থাপন করেন। ঘটনার সত্যতা পেয়ে ইউএনও নুসরাত ফাতিমা শশী সোমবার পুলিশ নিয়ে ওই বাঁধ অপসারণ করে নালা পুনরুদ্ধার করতে গেলে তাতে বাঁধা দেন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম সাত্তারের বাড়ি থেকে বেলা ১২টার দিকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ১৪-১৫ জন বহিরাগত লোক বের হয়ে ইউএনও, পুলিশ এবং শ্রমিকদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। একই সময় মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির ছাদ থেকে ইউএনওকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এসময় বাঁধ অপসারণের পক্ষে অবস্থান নেওয়া স্থানীয় কৃষক ও গ্রামবাসীর সাথে হামলাকারীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়।

মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির ছাদ থেকে নিক্ষিপ্ত ইটের আঘাতে ইউএনওর ড্রাইভার মানিক হাওলাদার, সার্ভেয়ার জসিম উদ্দিন এবং দুই পুলিশ সদস্য কিছুটা আহত হলেও অক্ষত ছিলেন ইউএনও। এ ঘটনার পরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দা, কাস্তে, শাবল, রড, লাঠিসোটাসহ বেশকিছু দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার এবং ৯ জনকে আটক করে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ। এদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম সাত্তারের দুই ছেলে নাঈম হাসান (২৬) এবং মাইনুল ইসলামকে (২১) মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৩ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন মোবাইল কোর্টে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনও নুসরাত ফাতিমা শশী। আটককৃত অপর ৭ জনের বয়স এবং ছাত্রত্ব বিবেচনায় বিকেলে মুচলেকা রেখে চেয়ারম্যান ও তাদের অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

হামলা প্রসঙ্গে বাবুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নুসরাত ফাতিমা শশী জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় এবং জেলা সেচ কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে সরকারি রেকর্ডিয় খাল এবং নালা নিশ্চিত হওয়ার পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আব্দুল হালিম সাত্তারকে বাঁধ অপসারণ করে নালার জমির দখল ছেড়ে দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তিনি তাতে কর্নপাত না করে উল্টো দখলকৃত নালার জমি ভরাট করে মুরগির খামার স্থাপন করেন। এতে স্থানীয় কৃষকদের প্রায় ৬০ একর জমির সেচ এবং বর্ষা মৌসুমে পানি নিস্কাসনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। তাই কৃষকদের স্বার্থে এবং কৃষি দপ্তরের সুপারিশে সোমবার ওই সেচ নালা পুনরুদ্ধারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এসময় ঘটনাস্থল হামলা-সংঘর্ষ, গোলযোগ সৃষ্টি, বোমা বিস্ফোরণ ও সরকারি কাজে বাঁধা দেওয়ার ঘটনায় ৯ জনকে আটক করে তাদের মধ্যে ২ জনকে সাজা দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।

এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম সাত্তার বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি সদস্য মোসলেহ উদ্দিনের সাথে নির্বাচন নিয়ে পূর্ব বিরোধের জের ধরে আমার পৈত্রিক এবং ক্রয়কৃত সম্পত্তির ওপর দিয়ে জোরপূর্বক সেচ নালা খনন করতে চান মেম্বার। এজন্য তিনি স্থানীয় কৃষকদের ক্ষেপিয়ে তোলেন। তারাই পরিকল্পিতভাবে অভিযোগ দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’ তবে ইউএনওর ওপরে হামলা এবং তার বাড়ি থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ বহিরাগত লোক আটকের প্রশ্নে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। #

21 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন