২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

পাকিস্তানকে কড়া ভাষায় অপমান করেন এই পাক আমলা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:১৯ অপরাহ্ণ, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সাল৷ আমেরিকায় পাক সরকারের রাষ্ট্রদূত ছিলেন হুসেন হাক্কানি৷ প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী নাওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা এবং বেনজির ভুট্টোর মুখপাত্র হাক্কানি মনে করেন, পাকিস্তানে জন্মেছেন মন্দ নিয়তির কারণে৷ নিজের দেশকেই কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন৷

‘Pakistan Between Mosque and Military’ – বইয়ের লেখক হুসেনের মুখে তাঁর জন্মস্থান সম্পর্কে বারবার সাবধানবাণীও শোনা গিয়েছে৷ তিনি বলেছেন, এই অবস্থা চলছে থাকলে সারা বিশ্বে পাকিস্তান একঘরে হবে৷ পাকিস্তানিরা বিশ্বের কোনও দেশেই মুখ দেখাতে পারবেন না৷ হুসেন অবশ্য এও বলেছেন, পাকিস্তান উগ্রপন্থার আঁতুরঘরে পরিণত হোক – তা একজন সাধারণ পাকিস্তানি নাগরিক চায় না৷


কিছুদিন আগেই হুসেন হাক্কানি দুবাইতে ছিলেন৷ ওয়াশিংটনের হাডসন ইন্সটিটিউটের দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়ার ডাইরেক্টর হুসেন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে পুলওয়ামার ঘটনার পর তাঁর ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন৷ হুসেন হক্কানির বক্তব্য, ‘‘পাক সরকার সবসময় এই ধরণের ভুল করে৷ এই ধরণের ভুলের জন্য সারা বিশ্বে পাক সরকার প্রায় একঘরে৷ বছরের পর বছর ধরে পাক সরকার একই ভুল করে চলেছে৷ পুলওয়ামার ঘটনা তো ১৪ ফেব্রুয়ারি ঘটেছে৷

কিন্তু পাকিস্তানের এই কাজকর্ম ১৯৮৯ সাল থেকেই চলছে৷ পাকিস্তানবাসীদের বেশিরভাগই চায় না সারা বিশ্ব তাদের দেশকে উগ্রপন্থার নামে চিনুক৷ পুলওয়ামায় ৪০ জন সেনাকে খুন করার ফলে পাকিস্তানে কী একটাও স্কুল খুলবে? অর্ধেক পাক জনতা স্কুল শিক্ষার বাইরে৷ অর্থনীতির উন্নতি হবে, পাক জনতা দু-বেলা খেতে পারবে ? – না, এর কিছুই হবে না৷’’

হুসেনের বক্তব্য, ‘‘কিন্তু ব্যাপারটা অন্যদিক থেকে দেখলে বোঝা যাবে ৷ পাকিস্তানের সরকার ভারতের দিকে আঙ্গুল তুলে বলতে থাকবে, দেখ ভারত আমাদের যুদ্ধের জন্য ডাকছে৷ কিন্তু সরকার দেশের জনতাকে একবারও বলবে না, সারা বিশ্ব চাইছে পাকিস্তান নিজের মাটিতে জঙ্গি সংগঠনগুলিকে মদত দেওয়া বন্ধ করুক৷ আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইরান, আফগানিস্তান সরাসরি পাকিস্তানকে জঙ্গি মদত বন্ধ করতে বলছে৷ পাকিস্তানেরও ভাববার সময় এসেছে যে, আর কতদিন ভারতে জঙ্গি আক্রমণ ঘটিয়ে শান্তির বাণী আওড়াবে তারা৷ তিনি আরও জানিয়েছেন-ভারতে বিস্ফোরণ হবে, আর ভারত চুপ করে বসে থাকবে, তা তো চলতে পারে না৷ এই দ্বিচারিতা পাকিস্তানকে ছাড়তেই হবে৷’’

হুসেনের মন্তব্য, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে আমি চাইব না যে ভারত পাকিস্তানে আঘাত করুক৷ আমার নিয়তি! যে আমি পাকিস্তানে জন্মেছি৷ কিন্তু নিজেকে পাকিস্তানি হিসেবে অস্বীকার করতে পারি না৷ আমার প্রশ্ন পাকিস্তান এমন কাজ করবেই বা কেন যে কারণে ভারতকে আঘাত হানতে হবে? মৌলানা মাসুদ আজহার বা তার মতো জঙ্গিদের গ্রেফতার করে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া উচিত৷ সারা দুনিয়াকে দেখানো উচিত – জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তান৷ ভরসা জোগাড় করুক পাক সরকার৷ মুম্বই হামলার পর অভিযুক্তদের ছেড়ে দিয়েছিল পাকিস্তান৷ তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ দুনিয়া কীভাবে ভরসা করবে?’’

হুসেন সাফ জানিয়েছেন, ‘‘পাকিস্তানে সেনা এবং আইএসআই দেশের নীতি ঠিক করে৷ সরকারের সেখানে বেশি কিছু বলার নেই৷ আমার বই – Pakistan Between Mosque and Military-তে বিস্তারিত লেখা রয়েছে৷ সেনা এবং আইএসআই সমঝোতা করেই দেশ চালায় সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই৷ এখানে প্রধানমন্ত্রী বা শাসক দলের কোনও ভূমিকা নেই৷ পাক সরকার বারবার তিন-চারটি কথা বলে থাকে৷ দেশের মাটিতে কোনও জঙ্গি সংগঠনে মদত দেওয়া হবে না৷ জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ শেষে, ভারতে পাক মাটিতে থেকে জঙ্গি নাশকতার ঘটনা ঘটলে ভারতে প্রমাণ দিতে হবে৷ বারবার একই কথা বলা হয়৷

পুলওয়ামার ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই জইশ-ই-মহম্মদ ঘটনার দায় নিয়েছে৷ জইশ কমান্ডার মৌলানা মাসুদ আজহার বাহাওয়ালপুরের মসজিদে বসে রয়েছে৷ এরপরও কী প্রমাণ দরকার? মানছি যে হামলা করেছে সেই যুবক পাকিস্তানি নয়, বরং কাশ্মীরের বাসিন্দা৷ কিন্তু সামগ্রিক পরিকল্পনা জৈশের৷ হাফিজ সইদ বুক ঠুকে প্রতিবার বলে মুম্বইয়ে হামলা করেছি৷ তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷’’

হুসেনের মতে, ‘‘ভারত বলছে ইমরান খান, মসুদ আজহারের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন না৷ ইমরান দূর্বল৷ ও কী করে পদক্ষেপ করবে৷ পারভেজ মুশারফ সেনাশাসক ছিলেন৷ ২০০১ সালে দিল্লিতে সংসদ ভবনে আক্রমণের পর তিনিও মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেননি৷ এরপর এই সব লোকই ৯/১১ এর ঘটনার পর পর ইসলামাবাদে চার্চে হামলা করে মানুষ খুন করেছিল৷ পাকিস্তানের মানুষকেও চিন্তা করতে হবে যে এই সব জঙ্গিরা শুধু ভারতীয়দেরই নয়, পাক জনতাকেও খুন করছে৷ পাকিস্তান ভয়ঙ্কর দিকে যাচ্ছে৷ পাকিস্তানের সেনা এবং আইএসআই-কে বুঝতে হবে ভারতে ৪০-৫০ জন লোক মেরে আপনারা খুশি হয়ে বসে আছেন৷ কিন্তু এই জঙ্গি সংগঠনগুলি সারা বিশ্বে পাকিস্তানের নাম খারাপ করছে৷’’

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন