১৩ জুন, ২০২৫ ১১:৪১
বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৯৩ জন রোগী। চলতি বছর জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। শুধু বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন ৫ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত বরগুনায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৬৩১ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৪৩৮ জন। অন্যদিকে বরিশাল বিভাগের মধ্যে বরগুনা জেলাতেই আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি ৬১ দশমিক ৮০ শতাংশ।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে ৫৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৯ জন। ১৫০ নার্সের স্থলে আছেন মাত্র ৬৬ জন। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৫৫টি বেডের বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য রোগে আক্রান্ত মিলিয়ে প্রতিদিন ভর্তি থাকছেন প্রায় ৫০০ জন রোগী। পাশাপাশি আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও প্রায় ৫০০ জন। ফলে চিকিৎসক ও নার্স সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।
গুরুতর অবস্থায় অনেক রোগীকে বরিশাল বা ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। সম্প্রতি কলেজ ব্রাঞ্চ রোড এলাকার পাপড়ি বেগমকে (৬৫) ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। এর আগে খামারবাড়ি এলাকার স্কুলছাত্র ওমর আল আরাবি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়। একইভাবে আজমেরী মোনালিসা জেরিন নামে এক নারী উদ্যোক্তাও মৃত্যুবরণ করেন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত দেড় বছরের শিশু আবদুল্লাহ নামে এক শিশুর মা শিল্পী বেগম বলেন, আমি ও আমার ছেলে দুনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা ও ওষুধ কিছুই পাইনি, সবকিছু বাইর থেকে কিনতে হচ্ছে। আমার স্বামী রিকশা চালায়, এত খরচ কিভাবে চালাবো?
অন্যদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মিজান রানা নামে এক রোগী অভিযোগ করে বলেন, ৪দিন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছি কিন্তু হাসপাতালে একটি নরমাল স্যালাইনও স্টকে নাই। এমনকি বাজারের কোনো ফার্মেসিতেও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়াও ডাক্তারও ঠিকমতো পাওয়া যায় না।
ডেঙ্গু আক্রান্তের তালিকায় এগিয়ে থাকা গৌরিচন্না এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন, আমাদের এলাকাটি বরগুনা পৌরসভার একদম কাছাকাছি হওয়ায় ঘনবসতি বেশি। তারপরও ইউনিয়নে কোনো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই।
এছাড়াও প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই এলাকার বিভিন্ন জায়গার ডোবা নালা ও নিচু জমিতে পানি জমে। আমার পরিবারের আমিসহ ৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হই। সবশেষ আমি ঢাকা পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরি।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ইশরাত জাহান বলেন, বর্তমানে আমাদের জনবল অনেক কম। প্রতিদিন যে হারে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে তা সামাল দেওয়া আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা এবার কুরবানির ঈদেও ছুটি পাইনি।
পরিবার রেখে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। এক রোগী দেখে আরেকজনের কাছে যেতে দেরি হলে অনেক সময় শুনতে হয় নার্সদের ব্যবহার ভালো না। বরগুনায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও ১০০ শয্যার নার্স দিয়ে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। এতে প্রায় প্রতিদিন পাঁচ শতাধিকেরও বেশি ভর্তি রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের।
সচেতনতার অভাব ও ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা বলে সচেতন নাগরিক কমিটির বরগুনা শাখার সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, বৃষ্টির পর শহরের অর্ধেক রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। জলাবদ্ধ পানি আর অপরিকল্পিত ড্রেন শহরকে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত করেছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, বরগুনাতে ডেঙ্গুর পিক সিজন চলছে। ৫৫ বেডের অনুকূলে ভর্তির রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসকসহ নার্স সংখ্যাও কম।
হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে, প্রতি ঘরেই ডেঙ্গু রোগী আছে। দিনকে দিন এটি মহামারি আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। আমরা বর্তমানে মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন, চিকিৎসা সেবা আমাদের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয় জানতে চাইলে বরগুনার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ্ বলেন, হঠাৎ করে কেন বরগুনায় এত ডেঙ্গু আক্রান্ত এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন।
তবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু বা এ ধরনের রোগের গবেষণামূলক কাজ করেন। তারা হয়তো এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারবেন। তবে শহরের পর্যাপ্ত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা না থাকা, রোগীদের অসচেতনতা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী না চলার কারণেও অনেকটা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি দাবি করেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মশারি ব্যবহার করতে বললেও তারা গুরুত্ব দেন না। ফলে একজনের থেকে অন্যজনের রোগের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া বরগুনা ডায়রিয়াপ্রবণ এলাকা হওয়ায় প্রচুর ডাবের খোসা যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়। যে কারণে বর্ষার মৌসুমে পানি জমে এডিস মশার জন্ম বৃদ্ধি পায়।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, গত দুই মাস ধরেই বরগুনায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এর প্রেক্ষিতে আমরা কয়েকটি সভা করেছি। মশক নিধনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অব্যাহত রেখেছে।
হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালে চিকিৎসক এবং নার্স সঙ্কটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৯৩ জন রোগী। চলতি বছর জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। শুধু বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন ৫ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত বরগুনায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৬৩১ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৪৩৮ জন। অন্যদিকে বরিশাল বিভাগের মধ্যে বরগুনা জেলাতেই আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি ৬১ দশমিক ৮০ শতাংশ।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে ৫৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৯ জন। ১৫০ নার্সের স্থলে আছেন মাত্র ৬৬ জন। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৫৫টি বেডের বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য রোগে আক্রান্ত মিলিয়ে প্রতিদিন ভর্তি থাকছেন প্রায় ৫০০ জন রোগী। পাশাপাশি আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও প্রায় ৫০০ জন। ফলে চিকিৎসক ও নার্স সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।
গুরুতর অবস্থায় অনেক রোগীকে বরিশাল বা ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। সম্প্রতি কলেজ ব্রাঞ্চ রোড এলাকার পাপড়ি বেগমকে (৬৫) ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। এর আগে খামারবাড়ি এলাকার স্কুলছাত্র ওমর আল আরাবি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়। একইভাবে আজমেরী মোনালিসা জেরিন নামে এক নারী উদ্যোক্তাও মৃত্যুবরণ করেন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত দেড় বছরের শিশু আবদুল্লাহ নামে এক শিশুর মা শিল্পী বেগম বলেন, আমি ও আমার ছেলে দুনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা ও ওষুধ কিছুই পাইনি, সবকিছু বাইর থেকে কিনতে হচ্ছে। আমার স্বামী রিকশা চালায়, এত খরচ কিভাবে চালাবো?
অন্যদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মিজান রানা নামে এক রোগী অভিযোগ করে বলেন, ৪দিন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছি কিন্তু হাসপাতালে একটি নরমাল স্যালাইনও স্টকে নাই। এমনকি বাজারের কোনো ফার্মেসিতেও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়াও ডাক্তারও ঠিকমতো পাওয়া যায় না।
ডেঙ্গু আক্রান্তের তালিকায় এগিয়ে থাকা গৌরিচন্না এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন, আমাদের এলাকাটি বরগুনা পৌরসভার একদম কাছাকাছি হওয়ায় ঘনবসতি বেশি। তারপরও ইউনিয়নে কোনো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই।
এছাড়াও প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই এলাকার বিভিন্ন জায়গার ডোবা নালা ও নিচু জমিতে পানি জমে। আমার পরিবারের আমিসহ ৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হই। সবশেষ আমি ঢাকা পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরি।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ইশরাত জাহান বলেন, বর্তমানে আমাদের জনবল অনেক কম। প্রতিদিন যে হারে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে তা সামাল দেওয়া আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা এবার কুরবানির ঈদেও ছুটি পাইনি।
পরিবার রেখে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। এক রোগী দেখে আরেকজনের কাছে যেতে দেরি হলে অনেক সময় শুনতে হয় নার্সদের ব্যবহার ভালো না। বরগুনায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও ১০০ শয্যার নার্স দিয়ে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। এতে প্রায় প্রতিদিন পাঁচ শতাধিকেরও বেশি ভর্তি রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের।
সচেতনতার অভাব ও ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা বলে সচেতন নাগরিক কমিটির বরগুনা শাখার সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, বৃষ্টির পর শহরের অর্ধেক রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। জলাবদ্ধ পানি আর অপরিকল্পিত ড্রেন শহরকে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত করেছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, বরগুনাতে ডেঙ্গুর পিক সিজন চলছে। ৫৫ বেডের অনুকূলে ভর্তির রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসকসহ নার্স সংখ্যাও কম।
হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে, প্রতি ঘরেই ডেঙ্গু রোগী আছে। দিনকে দিন এটি মহামারি আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। আমরা বর্তমানে মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন, চিকিৎসা সেবা আমাদের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয় জানতে চাইলে বরগুনার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ্ বলেন, হঠাৎ করে কেন বরগুনায় এত ডেঙ্গু আক্রান্ত এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন।
তবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু বা এ ধরনের রোগের গবেষণামূলক কাজ করেন। তারা হয়তো এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারবেন। তবে শহরের পর্যাপ্ত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা না থাকা, রোগীদের অসচেতনতা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী না চলার কারণেও অনেকটা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি দাবি করেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মশারি ব্যবহার করতে বললেও তারা গুরুত্ব দেন না। ফলে একজনের থেকে অন্যজনের রোগের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া বরগুনা ডায়রিয়াপ্রবণ এলাকা হওয়ায় প্রচুর ডাবের খোসা যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়। যে কারণে বর্ষার মৌসুমে পানি জমে এডিস মশার জন্ম বৃদ্ধি পায়।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, গত দুই মাস ধরেই বরগুনায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এর প্রেক্ষিতে আমরা কয়েকটি সভা করেছি। মশক নিধনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অব্যাহত রেখেছে।
হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালে চিকিৎসক এবং নার্স সঙ্কটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
১৩ জুন, ২০২৫ ০৯:৫৫
বরগুনায় মহামারী আকার ধারণ করতে শুরু করেছে ডেঙ্গু। প্রতিদিনই হাসপাতালে বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর প্রায় এক চতুর্থাংশই বরগুনায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে এ জেলায়। এ অবস্থায় ভর্তি হওয়া আক্রান্ত রোগীদের বিদ্যমান চিকিৎসা সেবা হাসপাতালের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলাম।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৭ জন। বর্তমানে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে ১৯৩ জন। এবছর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৬৩১ জন আক্রান্ত রোগী। এর মধ্যে বরগুনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে আক্রান্ত ৫ জনের।
বর্তমানে চিকিৎসা সেবা হাসপাতালের সক্ষমতার বাইরে
গতবছর জেলায় মোট ২ হাজার ৪৩৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ওই বছর বারগুনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৪ জন। তবে এ বছর মাঝামাঝি সময়েই ব্যাপক হারে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।
যা সারাদেশে আক্রান্ত রোগীর শতকরা হিসেবে ২৬ দশমিক ৫১ ভাগই বরগুনায়। অপরদিকে একই সময়ে বরিশাল বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ২৭৫ জন। সে হিসেবে শুধু বরগুনায় আক্রান্তের সংখ্যা শতকরা প্রায় ৬২ ভাগ।
জেলার প্রায় ১২ লাখ মানুষের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘ বছর ধরেই রয়েছে চিকিৎসক সঙ্কট। এছাড়া নার্স, বিভিন্ন জনবলসহ রয়েছে শয্যা সঙ্কটও। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ৫৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৯ জন চিকিৎসক।
অপরদিকে দেড় শতাধিক নার্স থাকার কথা থাকলেও কর্মরত নার্সের সংখ্যা মাত্র ৬৬ জন। ফলে হঠাৎ করে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৫৫টি বেডের বিপরীতে প্রতিদিন প্রায় ১৫০-২০০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে।
এছাড়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মিলিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন। এরপর আউটডোরেও প্রায় প্রতিদিন ৫ শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। ফলে চিকিৎসক ও নার্স সঙ্কটে হাসপাতালে আসা ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বর চিকিৎসক ও নার্সদের।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ইশরাত জাহান বলেন, বর্তমানে আমাদের জনবল অনেক কম। প্রতিদিন যে হারে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে তা সামাল দেয়া আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা এবার কোরবানির ঈদেও ছুটি পাইনি।
পরিবার রেখে আমরা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। একজন রোগীর কাছে গিয়ে আরেক জনের রোগীর কাছে যেতে দেরি হলে অনেক সময় শুনতে হয় নার্সদের ব্যবহার ভালো না। বরগুনায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও ১০০ শয্যার নার্স দিয়ে চলছে হাসপাতালে কার্যক্রম। এতে প্রায় প্রতিদিন পাঁচ শতাধিকেরও বেশি ভর্তি রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের।
চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা
সরেজমিনে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা বিভিন্ন এলাকার রোগীদের পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হলেই ভর্তি করা হচ্ছে হাসপাতালে। তবে এসব ভর্তি রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তির পর প্রতিদিন দেখা মিলছে না চিকিৎসকের।
এছাড়াও ভর্তি রোগী বেড়ে যাওয়ায় বেড সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এতে রোগীদের যায়গা হয়েছে হাসপাতালের বারান্দার ফ্লোর এবং লিফটের দরজার সামনে। ভর্তি রোগীদের আরও অভিযোগ বাইরের ক্লিনিকে করতে হয় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা এমনকি ওষুধও কিনতে হয় বাইরে থেকে।
হাসপাতালে ভর্তি শিল্পী নামে এক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বলেন, আমি এক সপ্তাহ ধরে ভর্তি আছি। হাসপাতালে কোনো পরীক্ষা হয় না। বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে হয়। প্রয়োজনীয় ওষুধও কিনতে হচ্ছে বাইরের দোকান থেকে।
মো. সাইদুল নামে ভর্তি রোগীর এক স্বজন বলেন, আমার খালা ডেঙ্গু পজিটিভ হওয়ায় তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। তবে এই মুহূর্তে হাসপাতালে অনেক বেশি রোগী ভর্তি থাকায় কোনো বেড পাইনি। বাধ্য হয়ে ফ্লোরেই বিছানা করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে আসার পর প্রায় চার ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেছে কোনো চিকিৎসক আমাদের কাছে আসেনি। বরগুনায় যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে চিকিৎসক বাড়ানোর পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবে এখন নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাসকিয়া সিদ্দিকাহ বলেন, গত বছর জুন মাসের তুলনায় এবছর রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। তবে রোগী ভর্তি হলে তাদেরকে আমাদের চিকিৎসা দিতে হবে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলেও ম্যানেজ করতে হবে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সকলে সচেতন থাকলে এবং যার যার বাসা বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে এত বেশি মানুষ আক্রান্ত হতো বলে মনে হয় না। সামাজিকভাবে সবার দায়িত্ব রয়েছে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ
বরগুনায় হঠাৎ করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, পৌরসভা কতৃপক্ষসহ, বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে একাধিক সভা করেছেন জেলা প্রশাসন।
এছাড়া চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল। পরিস্থিতি বিবেচনায় হাসপাতালে ইতিমধ্যে দুজন চিকিৎসক এবং দশজন সিনিয়র নার্স পদায়ন করা হয়েছে। জেলার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও কয়েকজন চিকিৎসককে পদায়নের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন বিভাগীয় পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল।
এ বিষয়ে বরগুনায় একটি মতবিনিময় সভা শেষে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, শুধু ডেঙ্গু নয় যেকোনো স্বাস্থ্যের যদি বিপর্যয় হয় স্বাস্থ্য বিভাগ মানুষের জন্য সবসময় পাশে থাকবে। তবে বরগুনার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা।
কারণ বিভাগের ৫ টি জেলায় ডেঙ্গুতে যা আক্রান্ত হয় তার থেকে বেশি আক্রান্ত হয় বরগুনায়। যেহেতু ডেঙ্গু রোগ মশার কারণে ছড়ায় সেক্ষেত্রে মশা নিধনের বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ উপদেশ-পরামর্শ দিতে পারে।
সরকারিভাবে মশা নিধনের কাজে যে সমস্ত দপ্তর নিয়োজিত রয়েছেন, আশা করি তারা স্থানীয় প্রশাসন,স্বাস্থ্য বিভাগসহ সকলের সঙ্গে সমন্বয় করে বরগুনায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বরগুনায় ডেঙ্গু হটস্পট
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সবশেষ ১ হাজার ৬৩১ জন আক্রান্ত রোগীর এলাকা ভিত্তিক একটি পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী ৪১৪ জন রোগী সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের বাসিন্দা। এর মধ্যে ওই ইউনিয়নের দক্ষিণ মনসাতলী নামক একটি এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২০ জন।
ওই এলাকার বাসিন্দা গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের এ এলাকাটি বরগুনা পৌরসভার একদম কাছাকাছি হওয়ায় ঘনবসতির সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাটি ইউনিয়নের আওতায় থাকায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কোনো কর্মী নেই। এছাড়াও প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই এলাকার বিভিন্ন জায়গার ডোবা নালা ও নিচু জমিতে পানি জমে থাকে।
বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, বরগুনাতে ডেঙ্গুর পিক সিজন চলছে। ৫৫ বেডের অনুকূলে ভর্তির রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসকসহ নার্স সংখ্যাও কম।
হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে প্রতি ঘরেই ডেঙ্গু রোগী আছে। দিনকে দিন এটি মহামারী আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। আমরা বর্তমানে মহা বিপর্যয়ের সম্মুখীন, চিকিৎসা সেবা আমাদের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয় জানতে চাইলে বরগুনার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ্ বলেন, বরগুনায় হঠাৎ করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কারণ বলা কঠিন। মূলত সরকারের রোগতত্ত, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনষ্টিটিউট (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু বা এ ধরনের রোগের গবেষণামূলক কাজ করেন। এ বিষয়ে তারাই হয়তো সুনির্দিষ্ট কারণ বলতে পারবেন।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, গত দুই মাস ধরেই বরগুনায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কয়েকটি সভা করেছি। মশক নিধনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অব্যাহত রেখেছেন।
হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালে চিকিৎসক এবং নার্স সঙ্কটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বরগুনায় মহামারী আকার ধারণ করতে শুরু করেছে ডেঙ্গু। প্রতিদিনই হাসপাতালে বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর প্রায় এক চতুর্থাংশই বরগুনায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে এ জেলায়। এ অবস্থায় ভর্তি হওয়া আক্রান্ত রোগীদের বিদ্যমান চিকিৎসা সেবা হাসপাতালের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলাম।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৭ জন। বর্তমানে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে ১৯৩ জন। এবছর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৬৩১ জন আক্রান্ত রোগী। এর মধ্যে বরগুনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে আক্রান্ত ৫ জনের।
বর্তমানে চিকিৎসা সেবা হাসপাতালের সক্ষমতার বাইরে
গতবছর জেলায় মোট ২ হাজার ৪৩৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ওই বছর বারগুনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৪ জন। তবে এ বছর মাঝামাঝি সময়েই ব্যাপক হারে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।
যা সারাদেশে আক্রান্ত রোগীর শতকরা হিসেবে ২৬ দশমিক ৫১ ভাগই বরগুনায়। অপরদিকে একই সময়ে বরিশাল বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ২৭৫ জন। সে হিসেবে শুধু বরগুনায় আক্রান্তের সংখ্যা শতকরা প্রায় ৬২ ভাগ।
জেলার প্রায় ১২ লাখ মানুষের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘ বছর ধরেই রয়েছে চিকিৎসক সঙ্কট। এছাড়া নার্স, বিভিন্ন জনবলসহ রয়েছে শয্যা সঙ্কটও। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ৫৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৯ জন চিকিৎসক।
অপরদিকে দেড় শতাধিক নার্স থাকার কথা থাকলেও কর্মরত নার্সের সংখ্যা মাত্র ৬৬ জন। ফলে হঠাৎ করে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৫৫টি বেডের বিপরীতে প্রতিদিন প্রায় ১৫০-২০০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে।
এছাড়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মিলিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন। এরপর আউটডোরেও প্রায় প্রতিদিন ৫ শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। ফলে চিকিৎসক ও নার্স সঙ্কটে হাসপাতালে আসা ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বর চিকিৎসক ও নার্সদের।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ইশরাত জাহান বলেন, বর্তমানে আমাদের জনবল অনেক কম। প্রতিদিন যে হারে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে তা সামাল দেয়া আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা এবার কোরবানির ঈদেও ছুটি পাইনি।
পরিবার রেখে আমরা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। একজন রোগীর কাছে গিয়ে আরেক জনের রোগীর কাছে যেতে দেরি হলে অনেক সময় শুনতে হয় নার্সদের ব্যবহার ভালো না। বরগুনায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও ১০০ শয্যার নার্স দিয়ে চলছে হাসপাতালে কার্যক্রম। এতে প্রায় প্রতিদিন পাঁচ শতাধিকেরও বেশি ভর্তি রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের।
চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা
সরেজমিনে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা বিভিন্ন এলাকার রোগীদের পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হলেই ভর্তি করা হচ্ছে হাসপাতালে। তবে এসব ভর্তি রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তির পর প্রতিদিন দেখা মিলছে না চিকিৎসকের।
এছাড়াও ভর্তি রোগী বেড়ে যাওয়ায় বেড সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এতে রোগীদের যায়গা হয়েছে হাসপাতালের বারান্দার ফ্লোর এবং লিফটের দরজার সামনে। ভর্তি রোগীদের আরও অভিযোগ বাইরের ক্লিনিকে করতে হয় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা এমনকি ওষুধও কিনতে হয় বাইরে থেকে।
হাসপাতালে ভর্তি শিল্পী নামে এক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বলেন, আমি এক সপ্তাহ ধরে ভর্তি আছি। হাসপাতালে কোনো পরীক্ষা হয় না। বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে হয়। প্রয়োজনীয় ওষুধও কিনতে হচ্ছে বাইরের দোকান থেকে।
মো. সাইদুল নামে ভর্তি রোগীর এক স্বজন বলেন, আমার খালা ডেঙ্গু পজিটিভ হওয়ায় তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। তবে এই মুহূর্তে হাসপাতালে অনেক বেশি রোগী ভর্তি থাকায় কোনো বেড পাইনি। বাধ্য হয়ে ফ্লোরেই বিছানা করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে আসার পর প্রায় চার ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেছে কোনো চিকিৎসক আমাদের কাছে আসেনি। বরগুনায় যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে চিকিৎসক বাড়ানোর পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবে এখন নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাসকিয়া সিদ্দিকাহ বলেন, গত বছর জুন মাসের তুলনায় এবছর রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। তবে রোগী ভর্তি হলে তাদেরকে আমাদের চিকিৎসা দিতে হবে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলেও ম্যানেজ করতে হবে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সকলে সচেতন থাকলে এবং যার যার বাসা বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে এত বেশি মানুষ আক্রান্ত হতো বলে মনে হয় না। সামাজিকভাবে সবার দায়িত্ব রয়েছে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ
বরগুনায় হঠাৎ করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, পৌরসভা কতৃপক্ষসহ, বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে একাধিক সভা করেছেন জেলা প্রশাসন।
এছাড়া চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল। পরিস্থিতি বিবেচনায় হাসপাতালে ইতিমধ্যে দুজন চিকিৎসক এবং দশজন সিনিয়র নার্স পদায়ন করা হয়েছে। জেলার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও কয়েকজন চিকিৎসককে পদায়নের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন বিভাগীয় পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল।
এ বিষয়ে বরগুনায় একটি মতবিনিময় সভা শেষে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, শুধু ডেঙ্গু নয় যেকোনো স্বাস্থ্যের যদি বিপর্যয় হয় স্বাস্থ্য বিভাগ মানুষের জন্য সবসময় পাশে থাকবে। তবে বরগুনার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা।
কারণ বিভাগের ৫ টি জেলায় ডেঙ্গুতে যা আক্রান্ত হয় তার থেকে বেশি আক্রান্ত হয় বরগুনায়। যেহেতু ডেঙ্গু রোগ মশার কারণে ছড়ায় সেক্ষেত্রে মশা নিধনের বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ উপদেশ-পরামর্শ দিতে পারে।
সরকারিভাবে মশা নিধনের কাজে যে সমস্ত দপ্তর নিয়োজিত রয়েছেন, আশা করি তারা স্থানীয় প্রশাসন,স্বাস্থ্য বিভাগসহ সকলের সঙ্গে সমন্বয় করে বরগুনায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বরগুনায় ডেঙ্গু হটস্পট
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সবশেষ ১ হাজার ৬৩১ জন আক্রান্ত রোগীর এলাকা ভিত্তিক একটি পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী ৪১৪ জন রোগী সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের বাসিন্দা। এর মধ্যে ওই ইউনিয়নের দক্ষিণ মনসাতলী নামক একটি এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২০ জন।
ওই এলাকার বাসিন্দা গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের এ এলাকাটি বরগুনা পৌরসভার একদম কাছাকাছি হওয়ায় ঘনবসতির সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাটি ইউনিয়নের আওতায় থাকায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কোনো কর্মী নেই। এছাড়াও প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই এলাকার বিভিন্ন জায়গার ডোবা নালা ও নিচু জমিতে পানি জমে থাকে।
বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, বরগুনাতে ডেঙ্গুর পিক সিজন চলছে। ৫৫ বেডের অনুকূলে ভর্তির রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসকসহ নার্স সংখ্যাও কম।
হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে প্রতি ঘরেই ডেঙ্গু রোগী আছে। দিনকে দিন এটি মহামারী আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। আমরা বর্তমানে মহা বিপর্যয়ের সম্মুখীন, চিকিৎসা সেবা আমাদের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয় জানতে চাইলে বরগুনার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ্ বলেন, বরগুনায় হঠাৎ করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কারণ বলা কঠিন। মূলত সরকারের রোগতত্ত, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনষ্টিটিউট (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু বা এ ধরনের রোগের গবেষণামূলক কাজ করেন। এ বিষয়ে তারাই হয়তো সুনির্দিষ্ট কারণ বলতে পারবেন।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, গত দুই মাস ধরেই বরগুনায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কয়েকটি সভা করেছি। মশক নিধনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অব্যাহত রেখেছেন।
হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালে চিকিৎসক এবং নার্স সঙ্কটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
১১ জুন, ২০২৫ ১৮:৪২
বরগুনায় একদিনে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আরও তিন নারীর মৃত্যু হয়। বুধবার (১১ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গোসাই দাস এবং দুপুরের দিকে চান মিয়ার মৃত্যু হয়। হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বিষয়টি বরিশালটাইমসকে নিশ্চিত করেন।
মৃত চান মিয়া (৭৫) সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকার এবং গোসাই দাস (৭০) বরগুনা পৌরসভার থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
জানা গেছে, গত সোমবার অসুস্থ অবস্থায় চান মিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু পজেটিভ হলে হাসপাতালের ভর্তি করা হয়। ভর্তির একদিন পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চান মিয়ার মৃত্যু হয়।
চান মিয়ার মেয়ে কুলসুম সাংবাদিকদের বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তিনদিন আগে বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্যালাইন ও ওষুধ দেওয়া হয়। সকালে নতুন করে বাবার রক্ত পরীক্ষা করলে ৬৪ হাজার প্লাটিলেট পাওয়া যায়।
এর আগে গত রোববার অসুস্থ অবস্থায় গোসাই দাসকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে সকালে প্লাটিলেট পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল থেকে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যায় স্বজনরা। এরপর দুপুরের দিকে আবারও হাসপাতালে নিয়ে এলে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে সন্ধায় তার মৃত্যু হয়।
গোসাই দাসের ছেলে সঞ্জয় চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের জানান, দুপুর পর্যন্ত বাবার শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল। ক্লিনিকে পরীক্ষার পর বাসায় গিয়ে খাবারও খেয়েছে। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হঠাৎ করেই তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে অক্সিজেন লাগানো হলেও মারা যান।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বরিশালটাইমসকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জানান, তারা বয়স্ক ছিলেন। তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসা জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল।
বরগুনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৪৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।’
বরগুনায় একদিনে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আরও তিন নারীর মৃত্যু হয়। বুধবার (১১ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গোসাই দাস এবং দুপুরের দিকে চান মিয়ার মৃত্যু হয়। হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বিষয়টি বরিশালটাইমসকে নিশ্চিত করেন।
মৃত চান মিয়া (৭৫) সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকার এবং গোসাই দাস (৭০) বরগুনা পৌরসভার থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
জানা গেছে, গত সোমবার অসুস্থ অবস্থায় চান মিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু পজেটিভ হলে হাসপাতালের ভর্তি করা হয়। ভর্তির একদিন পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চান মিয়ার মৃত্যু হয়।
চান মিয়ার মেয়ে কুলসুম সাংবাদিকদের বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তিনদিন আগে বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্যালাইন ও ওষুধ দেওয়া হয়। সকালে নতুন করে বাবার রক্ত পরীক্ষা করলে ৬৪ হাজার প্লাটিলেট পাওয়া যায়।
এর আগে গত রোববার অসুস্থ অবস্থায় গোসাই দাসকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে সকালে প্লাটিলেট পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল থেকে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যায় স্বজনরা। এরপর দুপুরের দিকে আবারও হাসপাতালে নিয়ে এলে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে সন্ধায় তার মৃত্যু হয়।
গোসাই দাসের ছেলে সঞ্জয় চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের জানান, দুপুর পর্যন্ত বাবার শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল। ক্লিনিকে পরীক্ষার পর বাসায় গিয়ে খাবারও খেয়েছে। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হঠাৎ করেই তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে অক্সিজেন লাগানো হলেও মারা যান।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বরিশালটাইমসকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জানান, তারা বয়স্ক ছিলেন। তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসা জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল।
বরগুনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৪৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।’
১১ জুন, ২০২৫ ১৩:৫০
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চান মিয়া (৭৫) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। বুধবার (১১ জুন) দুপুরে তিনি মারা যান। ফলে এখন পর্যন্ত এ জেলায় মশাবাহিত রোগটিতে ১১ জনের মৃত্যু হলো।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তাজকিয়া সিদ্দিকাহ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মারা যাওয়া চান মিয়া বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এর আগে, গত ৬ জুন বরগুনার থানাপাড়া এলাকার আজমেরী মোনালিসা জেরিন (৩০) নামে এক নারী উদ্যোক্তা ডেঙ্গুতে মারা যান।
চান মিয়ার পরিবার জানায়, গত সোমবার জ্বরে আক্রন্ত চান মিয়াকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি মারা যান। এসময় চান মিয়ার রক্তে প্লাটিলেট ছিল ৬৪ হাজার ।
চান মিয়ার মেয়ে কুলসুম বলেন, “তিনদিন আগে বাবাকে বরগুনা হাসপাতালে ভর্তি করাই। হাসপাতালের ডাক্তারা বাবাকে স্যালাইন দেন।আজ সকালে বাবার রক্ত পরীক্ষা করা হয়। তার প্লাটিলেট ছিল ৬৪ হাজার। দুপুরে বাবা মারা যান। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকালে বাবাকে দাফন করা হবে।”
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তাজকিয়া সিদ্দিকাহ বলেন, “তিনদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হন চান মিয়া। তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিলেন। আজ সকালে অবস্থা খারাপ হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। স্বজনরা তাকে বরিশাল নিয়ে না যাওয়ায় দুপুরের দিকে তিনি মারা যান।”
বরগুনা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পযন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৭৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৭২ জন। এরমধ্যে ৩১ জন শিশু রয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছর থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৪৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চান মিয়া (৭৫) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। বুধবার (১১ জুন) দুপুরে তিনি মারা যান। ফলে এখন পর্যন্ত এ জেলায় মশাবাহিত রোগটিতে ১১ জনের মৃত্যু হলো।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তাজকিয়া সিদ্দিকাহ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মারা যাওয়া চান মিয়া বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এর আগে, গত ৬ জুন বরগুনার থানাপাড়া এলাকার আজমেরী মোনালিসা জেরিন (৩০) নামে এক নারী উদ্যোক্তা ডেঙ্গুতে মারা যান।
চান মিয়ার পরিবার জানায়, গত সোমবার জ্বরে আক্রন্ত চান মিয়াকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি মারা যান। এসময় চান মিয়ার রক্তে প্লাটিলেট ছিল ৬৪ হাজার ।
চান মিয়ার মেয়ে কুলসুম বলেন, “তিনদিন আগে বাবাকে বরগুনা হাসপাতালে ভর্তি করাই। হাসপাতালের ডাক্তারা বাবাকে স্যালাইন দেন।আজ সকালে বাবার রক্ত পরীক্ষা করা হয়। তার প্লাটিলেট ছিল ৬৪ হাজার। দুপুরে বাবা মারা যান। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকালে বাবাকে দাফন করা হবে।”
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তাজকিয়া সিদ্দিকাহ বলেন, “তিনদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হন চান মিয়া। তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিলেন। আজ সকালে অবস্থা খারাপ হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। স্বজনরা তাকে বরিশাল নিয়ে না যাওয়ায় দুপুরের দিকে তিনি মারা যান।”
বরগুনা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পযন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৭৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৭২ জন। এরমধ্যে ৩১ জন শিশু রয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছর থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৪৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.
Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.