
২৯ মে, ২০২৫ ১৬:৪৩
এক রাজ্যের এক রাজা, দ্বীপ উপজেলা মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলার আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ পঙ্কজ দেবনাথের বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। এবার সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে এখন পড়েছেন বিপাকে। অনুসারী সমর্থকরা হচ্ছেন বিব্রত। সেই সাথে তার নির্দেশ মানতে গিয়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশ এখন ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’ পরিস্থিতির মুখে ইউটার্ন দিতে চাইছে। সংসদ পঙ্কজ একজন বিধবা নারীকে বেইজ্জতি করায় সেই সংবাদ বরিশালের গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে তিনি এতটাই ক্ষুব্ধ ও বেসামাল হয়ে পড়েন যে- আত্মরক্ষার কৌশল এবং শায়েস্তা করতে গিয়ে বরিশালের সংবাদকর্মীদের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন। দিয়েছেন ২জন সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা।
গত ৭ সেপ্টেম্বর অনেকটা গোপনে মেহেন্দিগঞ্জ থানায় তার ইজ্জত হরণে একটি মহল দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বরিশালের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘বরিশালটাইমস’-এ সংসদ পঙ্কজের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদকে ইস্যু করে এই মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় নিউজপোর্টালটির সম্পাদক শাকিব বিপ্লব ও বার্তা সম্পাদক হাসিবুল ইলসামকে আসামী করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়- মনগড়া সংবাদ প্রকাশ করে তাকে হেয়প্রতিপন্ন এবং রাজনৈতিক ইমেজ ক্ষুণ্নে অপপ্রয়াস চালাতেই দুই মিডিয়াকর্মী কোন এক মহল দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। কিন্তু সেই মহলটি কারা বা পরিচয় কী সেই বিষয়ে পরিস্কার কোন ধারণা দিতে পারেননি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা মরিয়ম বেগম এই সাংসদের কাছে কয়েক দফা সহায়তা চেয়ে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় ডাকবাংলো সম্মুখে গত ২৭ আগস্ট দুপুরে তার প্রাইভেটকারের সামনে দাড়িয়ে পথ আগলে ধরে প্রতিবাদ জানান। এসময় পঙ্কজ একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য ব্যস্ততার মাঝে এই বিধবা নারীর বিদ্রোহী অবস্থানে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং পরে দেখা করার পরামর্শ দেন। একপর্যায়ে ওই নারী তার গাড়ির ওপর হাত চাপরাতে থাকেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সাংসদের অনুসারীরা মরিয়ম বেগমকে টেনে হিচড়ে এক ধরনের শারীরিক নির্যাতন করেন।
এই অভিযোগ নিয়ে বিধবা ওই নারী ০১ সেপ্টেম্বর সোমবার সকালে বরিশাল আদালতে আসেন সাংসদ ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে। ঘটনাচক্রে খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা আদালতে উপস্থিত হয়ে একজন আইনজীবীর চেম্বারে ওই নারী সাক্ষাতকার নেন। এসময় তিনি ডাকবাংলোর সম্মুখে কি ঘটেছিল সে সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা জানিয়ে ক্ষোভ থেকে বরিশালে আইনে আশ্রয় নিতে আসার উদ্দেশের কথা জানান।
সরকার দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে একজন বিধবা নারীর মামলা দায়ের করার প্রস্তুতির খবরে সঙ্গত কারণে মিডিয়াসহ বরিশালের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তার পিছু নেয়। এবং মামলাটি কখন দায়ের হবে তা নিয়ে অপেক্ষার পালা শুরু হয়। অগ্যতা ওই নারী অনেকটা গোপনে তার এজাহার দায়ের করে বাড়ি ফিরে যান। এরপর থেকে তিনি মিডিয়াকর্মীদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ রাখেন। কিন্তু একটি গোয়েন্দা সংস্থা ওই নারীর সাথে সেলফোনে যোগাযোগ করে মামলা দায়ের করেছেন কী না সেই বিষয়ে প্রশ্ন রাখলে এড়িয়ে গিয়ে পরদিন এই বিষয়ে জানতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন।
ওই গোয়েন্দা সংস্থার মাঠপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা ডাকবাংলোর ঘটনা নিশ্চিত হয়ে মিডিয়ার কাছেও এই বিষয়ে বেশকিছু তথ্য দেন। এমনকি ঘটনার সময়কালে সেখানে উপস্থিত মেহেন্দিগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার নাসির উদ্দিন অভিন্ন তথ্য স্বীকার করলেও শারীরিক লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সত্য নয় বলে জানান।
ওই নারীর অভিযোগ অনুসারে তাকে লাঞ্ছিতকারী পৌর সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আমু হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন- ঘটনা ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু তা ডাকবাংলো সম্মুখে নয়। সাংসদ একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় আরসি কলেজ সম্মুখে মরিয়ম বেগম তার পথ আগলে ধরলে তাকে সরে যেতে বলা সত্ত্বেও উশৃঙ্খল আচারণ করলে স্থান ত্যাগে বাধ্য করা হয়। এবং ওই নারীকে বিকারগ্রস্ত হিসেবে আখ্যায়িত করে তার অভিযোগ পাগলে প্রলোভ বলে ওই সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা দাবি করেন।
অবশ্য সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ এই ধরনের ঘটনা অর্থাৎ ডাকবাংলো কিংবা আরসি কলেজ সম্মুখে ঘটেনি বলে অস্বীকার করেন। সাংসদের এই বক্তব্য এবং তার অনুগত সেই সেচ্ছাসেবকলীগ নেতার ভাষ্য সাংঘর্ষিক হলে প্রতীয়মাণ হয় সেদিন কিছু একটি ঘটেছে। যা কী না গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত হয়ে মিডিয়ার কাছে তথ্য দিয়েছিল।
ওই নারী ঠিক ওইদিন সোমবার বরিশাল আদালতে ৫ জনকে আসামি এবং পঙ্কজকে হুকুমদাতা হিসেবে এজাহারে উল্লেখ একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বিচারক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে বলে আদালত সূত্রে জানা যায়। মামলা হয়েছে কী না, এনিয়ে সন্দেহ এবং সত্যতা নিশ্চিতে মিডিয়া ও গোয়েন্দা সংস্থা পরদিন আর ঘাটাঘাটি না করায় বিষয়টি গোপনীয় ছিল। অর্থাৎ বিধবা ওই সেদিন মামলা দায়ের করেই হয়তো কৌশলগত কারণে তা চেপে গিয়ে সবাইকে এড়িয়ে চলতে থাকেন। ধারণা, পঙ্কজ নাথ বা তার অনুসারীদের তোপের মুখে পড়তে পারেন, এমন আশঙ্কা থেকেই মামলা দায়েরের পদক্ষেপটি চুপিসারে সম্পাদন করে নিরব থাকেন।
এদিকে ওই বিবধা নারীর আর্তি এবং সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতির পেছনকার নেপথ্যের খবর নিয়ে ‘বরিশালটাইমস’সহ আঞ্চলিক কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হয়। যার শিরোনাম ছিল ‘সেদিন মেহেন্দিগঞ্জের ডাকবাংলোয় সাংসদের বিধবা নারী কী ঘটেছিল”। সূত্র জানায় এই সংবাদ প্রকাশের পর মেহেন্দিগঞ্জে অবস্থানরত ক্ষুব্ধ পঙ্কজ দেবনাথ তার অনুসারীদের নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক ডেকে অন্তত ‘বরিশালটাইমস’র বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেন। সেক্ষেত্রে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ভুলুকে এই মামলার বাদী করা হয়।
ওই সূত্রটি জানায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে প্রকাশিত সংবাদে সেধরনের কোন গ্রাউন্ড না থাকায় স্থানীয় থানা পুলিশ এই অভিযোগ নিতে প্রথমে গড়িমসি করে। সাংসদ পঙ্কজ পরে থানার ওসিকে চাপের মুখে মামলাটি গ্রহণে বাধ্য করেন। সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের একটি ধরায় মামলা দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলা পুলিশ সুপারকেও ওসি অবহিত করেননি। ওই সূত্রটি আভাস দেয় যে, মেহেন্দিগঞ্জের পরিস্থিতিগত কারণে থানার ওসি সাংসদ পঙ্কজের আঙ্গুলের ইশারায় চলতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার ওসির সাথে জেলা পুলিশ সুপারের এক ধরনের মানসিক দ্বন্দ্ব থাকায় নিজের অবস্থান ধরে রাখতেই সাংসদের সান্নিধ্যে থাকছেন। যে কারণেই ওই মামলাটি গ্রহণের ক্ষেত্রে জেলার উচ্চপদস্থ কোন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ নেওয়া হয়নি।
এমন তথ্য স্বীকার করে জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম মঙ্গলবার রাতে বরিশালটাইমসসহ অন্যান্য মিডিয়াকর্মীদেরকে জানান, এই মামলাটি দায়েরের ক্ষেত্রে তিনি অবগত নন। একপর্যায়ে তার কাছে প্রকাশিত সংবাদটি উপস্থাপন করলে তিনিও স্বীকার করেন, এ ধরনের খবর প্রকাশের প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা গ্রহণে আইনগত কোন নির্দেশনা নেই। সুতরাং প্রমাণিত হয়, জবরদস্তিমূলক থানা পুলিশকে ব্যবহার করে সরকার দলীয় এই সাংসদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
বিস্ময়কর বিষয় হলো, ওই মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রকাশিত যা বলা হয়েছে, তা উল্লেখ না করে তার ইজ্জত হরণে একদল আসামি সংবাদকর্মীদের তার বিরুদ্ধে প্রভাবিত করেছে। আসামি বা মহল বলতে সাংসদ কি বোঝাতে চেয়েছেন সে বিষয়ে থানার ওসি আবিদুর রহমানকে প্রশ্ন রাখা হলে তিনি খেই হারিয়ে ফেলে বারবার ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে টেলিফোন সংযোগ কেটে দেন। একপর্যায়ে তার এক সহকর্মীকে দিয়ে বরিশাল মিডিয়ার দুই সাংবাদিককে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, এই বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
জেলা পুলিশ সুপার যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে প্রকাশ পেয়েছে, শুধু সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে নয়, জেলা পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপরও ছড়ি ঘুরাতে চান। তিনি আশ্বস্ত করেন যে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি তিনি নিজেই তদন্তে তদারকি করবেন এবং কী ভাবে মামলাটি গ্রহণ করা হলো, সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে জেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দ বলছেন, পঙ্কজ দলীয় সাংসদ হলেও জেলার শীর্ষ নেতাদের সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। মূলত তিনি দ্বীপাঞ্চল মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলায় নিজের ক্ষমতা কায়েম করে প্রকৃত কর্মীদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে তার অনুগতদের মূল দল ও অঙ্গ সংগঠনসমূহের নেতৃত্বের শীর্ষ স্থানে বসিয়ে রাজার ন্যায় রাজত্ব চালাচ্ছেন। নির্যাতিত হচ্ছে, অনেক নিরহ মানুষ, এমনকি দলের ত্যাগী নেতাকর্মী-সমর্থকরাও।
স্থানীয় সূত্রমতে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ভাইস চেয়ারম্যান
মামলার বাদী খোরশেদ আলম ভুলু ক্ষমতাধর এই সাংসদের অনুগত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে মঙ্গলবার রাতে ভুলুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আলাপচারিতায় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে একপর্যায়ে অন্যের মামলায় নিজে বাদী হওয়ায়ার ক্ষেত্রে তার অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়। এমনকি মামলাটি দায়ের সিদ্ধান্ত যে সঠিক হয়নি, তারও আভাস দেন।
উল্লেখ করা যেতে পারে মরিয়ম বেগম বরিশাল আদালতে যে মামলটি দায়ের করেছেন, সেখানে ৫ আসামির মধ্যে খোরশেদ আলম ভুলুর এক ছেলেও রয়েছেন। এই নেতার সাথে আলাপ এবং বিভিন্ন সূত্র আভাস ইঙ্গিত দিয়ে বলছে, ‘বরিশালটাইম’র বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে বরিশালের একটি মহলের ইন্ধন রয়েছে। সাংসদ পঙ্কজকে বোঝানো হয়েছে, সাংবাদিক শাকিব বিপ্লব এবং হাসিবুল ইসলাম জেলা আ’লীগের শীর্ষ নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র পরিবার ঘনিষ্ট বা সমর্থক হিসেবে তার পুত্র বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র পক্ষালম্বনে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ প্রকাশ করে। আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র সাথে নেতৃত্ব নিয়ে পঙ্কজ দেবনাথের বিরোধও এই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে একটি ইস্যু হিসেবে বরিশালের ওই মহলটি উপস্থাপন করে মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলার অঘোষিত ওই রাজাকে ফুঁসলে দেয়, যুগিয়েছে সাহস।’
অথচ দেশে ক্যাসিনো কান্ডে যখন পঙ্কজ দেবনাথের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে গণমাধ্যম সোচ্চার, ঠিক তখন মেহেন্দিগঞ্জের এক যুবক তার ওপর নির্যাতনে অভিযোগ তুললে সরকার দলীয় এই সাংসদ সাংবাদিক শাকিব বিপ্লব ও হাসিবুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে তার রাজ্য সভায় আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে রাজকীয় আথিতেয়তায় মধ্যহ্নভোজনে তৃপ্ত করে স্বপক্ষে থেকে গীত গাওয়ার অনুরোধ রেখেছিলেন। অন্তত ওই মুহূর্তে জেলার শীর্ষ নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র পক্ষালম্বন করা করার একটি আবহ তৈরির কৌশল হিসেবে।’
এমপি পঙ্কজ দেবনাথ
এক রাজ্যের এক রাজা, দ্বীপ উপজেলা মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলার আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ পঙ্কজ দেবনাথের বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। এবার সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে এখন পড়েছেন বিপাকে। অনুসারী সমর্থকরা হচ্ছেন বিব্রত। সেই সাথে তার নির্দেশ মানতে গিয়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশ এখন ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’ পরিস্থিতির মুখে ইউটার্ন দিতে চাইছে। সংসদ পঙ্কজ একজন বিধবা নারীকে বেইজ্জতি করায় সেই সংবাদ বরিশালের গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে তিনি এতটাই ক্ষুব্ধ ও বেসামাল হয়ে পড়েন যে- আত্মরক্ষার কৌশল এবং শায়েস্তা করতে গিয়ে বরিশালের সংবাদকর্মীদের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন। দিয়েছেন ২জন সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা।
গত ৭ সেপ্টেম্বর অনেকটা গোপনে মেহেন্দিগঞ্জ থানায় তার ইজ্জত হরণে একটি মহল দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বরিশালের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘বরিশালটাইমস’-এ সংসদ পঙ্কজের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদকে ইস্যু করে এই মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় নিউজপোর্টালটির সম্পাদক শাকিব বিপ্লব ও বার্তা সম্পাদক হাসিবুল ইলসামকে আসামী করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়- মনগড়া সংবাদ প্রকাশ করে তাকে হেয়প্রতিপন্ন এবং রাজনৈতিক ইমেজ ক্ষুণ্নে অপপ্রয়াস চালাতেই দুই মিডিয়াকর্মী কোন এক মহল দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। কিন্তু সেই মহলটি কারা বা পরিচয় কী সেই বিষয়ে পরিস্কার কোন ধারণা দিতে পারেননি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা মরিয়ম বেগম এই সাংসদের কাছে কয়েক দফা সহায়তা চেয়ে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় ডাকবাংলো সম্মুখে গত ২৭ আগস্ট দুপুরে তার প্রাইভেটকারের সামনে দাড়িয়ে পথ আগলে ধরে প্রতিবাদ জানান। এসময় পঙ্কজ একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য ব্যস্ততার মাঝে এই বিধবা নারীর বিদ্রোহী অবস্থানে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং পরে দেখা করার পরামর্শ দেন। একপর্যায়ে ওই নারী তার গাড়ির ওপর হাত চাপরাতে থাকেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সাংসদের অনুসারীরা মরিয়ম বেগমকে টেনে হিচড়ে এক ধরনের শারীরিক নির্যাতন করেন।
এই অভিযোগ নিয়ে বিধবা ওই নারী ০১ সেপ্টেম্বর সোমবার সকালে বরিশাল আদালতে আসেন সাংসদ ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে। ঘটনাচক্রে খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা আদালতে উপস্থিত হয়ে একজন আইনজীবীর চেম্বারে ওই নারী সাক্ষাতকার নেন। এসময় তিনি ডাকবাংলোর সম্মুখে কি ঘটেছিল সে সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা জানিয়ে ক্ষোভ থেকে বরিশালে আইনে আশ্রয় নিতে আসার উদ্দেশের কথা জানান।
সরকার দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে একজন বিধবা নারীর মামলা দায়ের করার প্রস্তুতির খবরে সঙ্গত কারণে মিডিয়াসহ বরিশালের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তার পিছু নেয়। এবং মামলাটি কখন দায়ের হবে তা নিয়ে অপেক্ষার পালা শুরু হয়। অগ্যতা ওই নারী অনেকটা গোপনে তার এজাহার দায়ের করে বাড়ি ফিরে যান। এরপর থেকে তিনি মিডিয়াকর্মীদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ রাখেন। কিন্তু একটি গোয়েন্দা সংস্থা ওই নারীর সাথে সেলফোনে যোগাযোগ করে মামলা দায়ের করেছেন কী না সেই বিষয়ে প্রশ্ন রাখলে এড়িয়ে গিয়ে পরদিন এই বিষয়ে জানতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন।
ওই গোয়েন্দা সংস্থার মাঠপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা ডাকবাংলোর ঘটনা নিশ্চিত হয়ে মিডিয়ার কাছেও এই বিষয়ে বেশকিছু তথ্য দেন। এমনকি ঘটনার সময়কালে সেখানে উপস্থিত মেহেন্দিগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার নাসির উদ্দিন অভিন্ন তথ্য স্বীকার করলেও শারীরিক লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সত্য নয় বলে জানান।
ওই নারীর অভিযোগ অনুসারে তাকে লাঞ্ছিতকারী পৌর সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আমু হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন- ঘটনা ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু তা ডাকবাংলো সম্মুখে নয়। সাংসদ একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় আরসি কলেজ সম্মুখে মরিয়ম বেগম তার পথ আগলে ধরলে তাকে সরে যেতে বলা সত্ত্বেও উশৃঙ্খল আচারণ করলে স্থান ত্যাগে বাধ্য করা হয়। এবং ওই নারীকে বিকারগ্রস্ত হিসেবে আখ্যায়িত করে তার অভিযোগ পাগলে প্রলোভ বলে ওই সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা দাবি করেন।
অবশ্য সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ এই ধরনের ঘটনা অর্থাৎ ডাকবাংলো কিংবা আরসি কলেজ সম্মুখে ঘটেনি বলে অস্বীকার করেন। সাংসদের এই বক্তব্য এবং তার অনুগত সেই সেচ্ছাসেবকলীগ নেতার ভাষ্য সাংঘর্ষিক হলে প্রতীয়মাণ হয় সেদিন কিছু একটি ঘটেছে। যা কী না গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত হয়ে মিডিয়ার কাছে তথ্য দিয়েছিল।
ওই নারী ঠিক ওইদিন সোমবার বরিশাল আদালতে ৫ জনকে আসামি এবং পঙ্কজকে হুকুমদাতা হিসেবে এজাহারে উল্লেখ একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বিচারক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে বলে আদালত সূত্রে জানা যায়। মামলা হয়েছে কী না, এনিয়ে সন্দেহ এবং সত্যতা নিশ্চিতে মিডিয়া ও গোয়েন্দা সংস্থা পরদিন আর ঘাটাঘাটি না করায় বিষয়টি গোপনীয় ছিল। অর্থাৎ বিধবা ওই সেদিন মামলা দায়ের করেই হয়তো কৌশলগত কারণে তা চেপে গিয়ে সবাইকে এড়িয়ে চলতে থাকেন। ধারণা, পঙ্কজ নাথ বা তার অনুসারীদের তোপের মুখে পড়তে পারেন, এমন আশঙ্কা থেকেই মামলা দায়েরের পদক্ষেপটি চুপিসারে সম্পাদন করে নিরব থাকেন।
এদিকে ওই বিবধা নারীর আর্তি এবং সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতির পেছনকার নেপথ্যের খবর নিয়ে ‘বরিশালটাইমস’সহ আঞ্চলিক কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হয়। যার শিরোনাম ছিল ‘সেদিন মেহেন্দিগঞ্জের ডাকবাংলোয় সাংসদের বিধবা নারী কী ঘটেছিল”। সূত্র জানায় এই সংবাদ প্রকাশের পর মেহেন্দিগঞ্জে অবস্থানরত ক্ষুব্ধ পঙ্কজ দেবনাথ তার অনুসারীদের নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক ডেকে অন্তত ‘বরিশালটাইমস’র বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেন। সেক্ষেত্রে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ভুলুকে এই মামলার বাদী করা হয়।
ওই সূত্রটি জানায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে প্রকাশিত সংবাদে সেধরনের কোন গ্রাউন্ড না থাকায় স্থানীয় থানা পুলিশ এই অভিযোগ নিতে প্রথমে গড়িমসি করে। সাংসদ পঙ্কজ পরে থানার ওসিকে চাপের মুখে মামলাটি গ্রহণে বাধ্য করেন। সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের একটি ধরায় মামলা দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলা পুলিশ সুপারকেও ওসি অবহিত করেননি। ওই সূত্রটি আভাস দেয় যে, মেহেন্দিগঞ্জের পরিস্থিতিগত কারণে থানার ওসি সাংসদ পঙ্কজের আঙ্গুলের ইশারায় চলতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার ওসির সাথে জেলা পুলিশ সুপারের এক ধরনের মানসিক দ্বন্দ্ব থাকায় নিজের অবস্থান ধরে রাখতেই সাংসদের সান্নিধ্যে থাকছেন। যে কারণেই ওই মামলাটি গ্রহণের ক্ষেত্রে জেলার উচ্চপদস্থ কোন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ নেওয়া হয়নি।
এমন তথ্য স্বীকার করে জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম মঙ্গলবার রাতে বরিশালটাইমসসহ অন্যান্য মিডিয়াকর্মীদেরকে জানান, এই মামলাটি দায়েরের ক্ষেত্রে তিনি অবগত নন। একপর্যায়ে তার কাছে প্রকাশিত সংবাদটি উপস্থাপন করলে তিনিও স্বীকার করেন, এ ধরনের খবর প্রকাশের প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা গ্রহণে আইনগত কোন নির্দেশনা নেই। সুতরাং প্রমাণিত হয়, জবরদস্তিমূলক থানা পুলিশকে ব্যবহার করে সরকার দলীয় এই সাংসদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
বিস্ময়কর বিষয় হলো, ওই মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রকাশিত যা বলা হয়েছে, তা উল্লেখ না করে তার ইজ্জত হরণে একদল আসামি সংবাদকর্মীদের তার বিরুদ্ধে প্রভাবিত করেছে। আসামি বা মহল বলতে সাংসদ কি বোঝাতে চেয়েছেন সে বিষয়ে থানার ওসি আবিদুর রহমানকে প্রশ্ন রাখা হলে তিনি খেই হারিয়ে ফেলে বারবার ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে টেলিফোন সংযোগ কেটে দেন। একপর্যায়ে তার এক সহকর্মীকে দিয়ে বরিশাল মিডিয়ার দুই সাংবাদিককে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, এই বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
জেলা পুলিশ সুপার যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে প্রকাশ পেয়েছে, শুধু সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে নয়, জেলা পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপরও ছড়ি ঘুরাতে চান। তিনি আশ্বস্ত করেন যে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি তিনি নিজেই তদন্তে তদারকি করবেন এবং কী ভাবে মামলাটি গ্রহণ করা হলো, সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে জেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দ বলছেন, পঙ্কজ দলীয় সাংসদ হলেও জেলার শীর্ষ নেতাদের সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। মূলত তিনি দ্বীপাঞ্চল মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলায় নিজের ক্ষমতা কায়েম করে প্রকৃত কর্মীদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে তার অনুগতদের মূল দল ও অঙ্গ সংগঠনসমূহের নেতৃত্বের শীর্ষ স্থানে বসিয়ে রাজার ন্যায় রাজত্ব চালাচ্ছেন। নির্যাতিত হচ্ছে, অনেক নিরহ মানুষ, এমনকি দলের ত্যাগী নেতাকর্মী-সমর্থকরাও।
স্থানীয় সূত্রমতে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ভাইস চেয়ারম্যান
মামলার বাদী খোরশেদ আলম ভুলু ক্ষমতাধর এই সাংসদের অনুগত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে মঙ্গলবার রাতে ভুলুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আলাপচারিতায় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে একপর্যায়ে অন্যের মামলায় নিজে বাদী হওয়ায়ার ক্ষেত্রে তার অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়। এমনকি মামলাটি দায়ের সিদ্ধান্ত যে সঠিক হয়নি, তারও আভাস দেন।
উল্লেখ করা যেতে পারে মরিয়ম বেগম বরিশাল আদালতে যে মামলটি দায়ের করেছেন, সেখানে ৫ আসামির মধ্যে খোরশেদ আলম ভুলুর এক ছেলেও রয়েছেন। এই নেতার সাথে আলাপ এবং বিভিন্ন সূত্র আভাস ইঙ্গিত দিয়ে বলছে, ‘বরিশালটাইম’র বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে বরিশালের একটি মহলের ইন্ধন রয়েছে। সাংসদ পঙ্কজকে বোঝানো হয়েছে, সাংবাদিক শাকিব বিপ্লব এবং হাসিবুল ইসলাম জেলা আ’লীগের শীর্ষ নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র পরিবার ঘনিষ্ট বা সমর্থক হিসেবে তার পুত্র বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র পক্ষালম্বনে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ প্রকাশ করে। আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র সাথে নেতৃত্ব নিয়ে পঙ্কজ দেবনাথের বিরোধও এই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে একটি ইস্যু হিসেবে বরিশালের ওই মহলটি উপস্থাপন করে মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলার অঘোষিত ওই রাজাকে ফুঁসলে দেয়, যুগিয়েছে সাহস।’
অথচ দেশে ক্যাসিনো কান্ডে যখন পঙ্কজ দেবনাথের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে গণমাধ্যম সোচ্চার, ঠিক তখন মেহেন্দিগঞ্জের এক যুবক তার ওপর নির্যাতনে অভিযোগ তুললে সরকার দলীয় এই সাংসদ সাংবাদিক শাকিব বিপ্লব ও হাসিবুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে তার রাজ্য সভায় আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে রাজকীয় আথিতেয়তায় মধ্যহ্নভোজনে তৃপ্ত করে স্বপক্ষে থেকে গীত গাওয়ার অনুরোধ রেখেছিলেন। অন্তত ওই মুহূর্তে জেলার শীর্ষ নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র পক্ষালম্বন করা করার একটি আবহ তৈরির কৌশল হিসেবে।’

১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:৪১
কোরআনুল কারিমের অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা : আন-নাসর, আয়াত : ১-৩
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
اِذَا جَآءَ نَصۡرُ اللّٰهِ وَ الۡفَتۡحُ ۙ﴿۱﴾ وَ رَاَیۡتَ النَّاسَ یَدۡخُلُوۡنَ فِیۡ دِیۡنِ اللّٰهِ اَفۡوَاجًا ۙ﴿۲﴾ فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ وَ اسۡتَغۡفِرۡهُ ؕؔ اِنَّهٗ كَانَ تَوَّابًا ﴿۳﴾
সরল অনুবাদ
১. যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়।
২. আর আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহ্র দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন।
৩. তখন আপনি আপনার রবের প্রশংসাসহ তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন, নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা আন-নাসর মক্কা বিজয়ের পর নাজিল হয়।
বাহ্যিকভাবে এটি একটি সামরিক ও রাজনৈতিক বিজয়ের ঘোষণা হলেও, প্রকৃতপক্ষে এটি বিজয়ের পর মুমিনের করণীয়, ক্ষমতার নৈতিক ব্যবহার এবং অহংকার থেকে আত্মরক্ষার শিক্ষা দেয়।
সুরা আন-নাসরের আলোকে মহান বিজয় দিবস
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে গৌরব ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর অর্জিত এই বিজয় আমাদের এনে দিয়েছে স্বাধীনতা , তবে কোরআনের দৃষ্টিতে বিজয় কেবল উল্লাসের উপলক্ষ নয়; বরং এটি দায়িত্ব ও আত্মজিজ্ঞাসারও সময়।
পবিত্র কোরআনের সুরা আন-নাসরে আল্লাহ বলেন, ‘যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়।
’ এই আয়াত স্মরণ করিয়ে দেয়, সব বিজয়ের পেছনে চূড়ান্ত সহায়তা আসে আল্লাহর পক্ষ থেকেই। মানবিক ত্যাগ ও প্রচেষ্টার পাশাপাশি এই উপলব্ধি আমাদের অহংকার থেকে রক্ষা করে এবং কৃতজ্ঞতার পথে পরিচালিত করে।
সুরাটির পরবর্তী আয়াতে বিজয়ের সামাজিক ফল তুলে ধরে বলা হয়েছে- ‘আর আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহ্র দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন’ অর্থাৎ জুলুমের অবসান হলে মানুষ ন্যায় ও সত্যের দিকে ফিরে আসে। আর সুরার শেষ আয়াতে বিজয়ের পর করণীয় হিসেবে তাসবিহ, হামদ ও ইস্তিগফারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, বিজয় মানুষকে আরও বিনয়ী, আত্মসমালোচনামুখী ও দায়িত্বশীল করে তুলবে; এটাই কোরআনের শিক্ষা।
মহান বিজয় দিবসে আমাদের প্রশ্ন হওয়া উচিত; এই আমরা কি এই স্বাধীনতাকে ন্যায়, মানবিকতা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার কাজে যথাযথভাবে ব্যবহার করছি? শহীদদের আত্মত্যাগ কি আমাদের দৈনন্দিন আচরণ ও রাষ্ট্রচিন্তায় প্রতিফলিত হচ্ছে?
আমরা কি মানুষের জন্য ন্যায়, ইনসাফ, মানবিকতা আর বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষে কাজ করতে পারছি?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর যতক্ষণ হ্যা বাচক না হবে ততক্ষণ আমাদের এই বিজয়ের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। তাই সুরা আন-নাসরের আলোকে বলা যায়, প্রকৃত বিজয় সেই বিজয়; যা মানুষকে অহংকারে নয়, বরং কৃতজ্ঞতা ও আত্মশুদ্ধির পথে আরো দৃঢ়ভাবে দাঁড় করায়।
সুরা আন-নাসার আমাদের আহবান করে বলছে যে, ১৬ ডিসেম্বর শুধু উৎসবের দিন নয়; এটি জাতির আত্মপর্যালোচনার দিনও বটে।
কাজেই আসুন আমরা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেনো আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে একটি কল্যাণময় রাষ্ট্র হিসেবে কবুল করেন। সকলের মধ্যে শান্তি আর বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনের মানসিকতা সৃষ্টি করে দেন। আমীন।
কোরআনুল কারিমের অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা : আন-নাসর, আয়াত : ১-৩
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
اِذَا جَآءَ نَصۡرُ اللّٰهِ وَ الۡفَتۡحُ ۙ﴿۱﴾ وَ رَاَیۡتَ النَّاسَ یَدۡخُلُوۡنَ فِیۡ دِیۡنِ اللّٰهِ اَفۡوَاجًا ۙ﴿۲﴾ فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ وَ اسۡتَغۡفِرۡهُ ؕؔ اِنَّهٗ كَانَ تَوَّابًا ﴿۳﴾
সরল অনুবাদ
১. যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়।
২. আর আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহ্র দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন।
৩. তখন আপনি আপনার রবের প্রশংসাসহ তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন, নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা আন-নাসর মক্কা বিজয়ের পর নাজিল হয়।
বাহ্যিকভাবে এটি একটি সামরিক ও রাজনৈতিক বিজয়ের ঘোষণা হলেও, প্রকৃতপক্ষে এটি বিজয়ের পর মুমিনের করণীয়, ক্ষমতার নৈতিক ব্যবহার এবং অহংকার থেকে আত্মরক্ষার শিক্ষা দেয়।
সুরা আন-নাসরের আলোকে মহান বিজয় দিবস
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে গৌরব ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর অর্জিত এই বিজয় আমাদের এনে দিয়েছে স্বাধীনতা , তবে কোরআনের দৃষ্টিতে বিজয় কেবল উল্লাসের উপলক্ষ নয়; বরং এটি দায়িত্ব ও আত্মজিজ্ঞাসারও সময়।
পবিত্র কোরআনের সুরা আন-নাসরে আল্লাহ বলেন, ‘যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়।
’ এই আয়াত স্মরণ করিয়ে দেয়, সব বিজয়ের পেছনে চূড়ান্ত সহায়তা আসে আল্লাহর পক্ষ থেকেই। মানবিক ত্যাগ ও প্রচেষ্টার পাশাপাশি এই উপলব্ধি আমাদের অহংকার থেকে রক্ষা করে এবং কৃতজ্ঞতার পথে পরিচালিত করে।
সুরাটির পরবর্তী আয়াতে বিজয়ের সামাজিক ফল তুলে ধরে বলা হয়েছে- ‘আর আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহ্র দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন’ অর্থাৎ জুলুমের অবসান হলে মানুষ ন্যায় ও সত্যের দিকে ফিরে আসে। আর সুরার শেষ আয়াতে বিজয়ের পর করণীয় হিসেবে তাসবিহ, হামদ ও ইস্তিগফারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, বিজয় মানুষকে আরও বিনয়ী, আত্মসমালোচনামুখী ও দায়িত্বশীল করে তুলবে; এটাই কোরআনের শিক্ষা।
মহান বিজয় দিবসে আমাদের প্রশ্ন হওয়া উচিত; এই আমরা কি এই স্বাধীনতাকে ন্যায়, মানবিকতা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার কাজে যথাযথভাবে ব্যবহার করছি? শহীদদের আত্মত্যাগ কি আমাদের দৈনন্দিন আচরণ ও রাষ্ট্রচিন্তায় প্রতিফলিত হচ্ছে?
আমরা কি মানুষের জন্য ন্যায়, ইনসাফ, মানবিকতা আর বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষে কাজ করতে পারছি?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর যতক্ষণ হ্যা বাচক না হবে ততক্ষণ আমাদের এই বিজয়ের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। তাই সুরা আন-নাসরের আলোকে বলা যায়, প্রকৃত বিজয় সেই বিজয়; যা মানুষকে অহংকারে নয়, বরং কৃতজ্ঞতা ও আত্মশুদ্ধির পথে আরো দৃঢ়ভাবে দাঁড় করায়।
সুরা আন-নাসার আমাদের আহবান করে বলছে যে, ১৬ ডিসেম্বর শুধু উৎসবের দিন নয়; এটি জাতির আত্মপর্যালোচনার দিনও বটে।
কাজেই আসুন আমরা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেনো আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে একটি কল্যাণময় রাষ্ট্র হিসেবে কবুল করেন। সকলের মধ্যে শান্তি আর বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনের মানসিকতা সৃষ্টি করে দেন। আমীন।

১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০০:৫৫
হাতকড়ায় বাঁধা দুই হাত। এ অবস্থায় পুকুরে সাঁতার কাটাই কষ্টের। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ৪৯ বছর বয়সি বাসিন্দা মাইকেল মোরো অবিশ্বাস্য এক কাজ করেছেন। হাতকড়া নিয়ে প্রায় ২৯ মাইল সাঁতরেছেন তিনি। কোনো পুকুর নয়, গভীর আর প্রশস্ত নদীতে এ কাজটি করেছেন তিনি।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ম্যানহাটানের দক্ষিণাংশ থেকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মোরো পুরো দ্বীপটি চক্কর দিয়েছেন। দুই হাতে হাতকড়া পরে ইস্ট রিভার, হার্লেম আর হাডসন পেরিয়ে ২৮ দশমিক ৫ মাইলের সাঁতার শেষ করেন তিনি। এজন্য তাঁর সময় লেগেছে ৯ ঘণ্টা ৪১ মিনিট। শরীরের শক্তি বজায় রাখতে সাঁতার চলাকালে মাঝেমধ্যে পানীয় পান করেছেন মোরো।
এই কীর্তির মাধ্যমে মাইকেল মোরো দুটি রেকর্ড করেছেন। স্থান করে নিয়েছেন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। একটি হলোÑ হাতকড়া পরে নদীতে দীর্ঘতম সাঁতার এবং প্রথম ব্যক্তি হিসেবে হাতকড়ায় ম্যানহাটানের চারপাশ ঘোরা।
মোরোর এই সাঁতার ছিল একই সঙ্গে দুঃসাহসিক ও বিপজ্জনক। মোরো যখন সাঁতার কাটছিলেন, তখন প্রয়োজনে সহযোগিতা করার জন্য তার আশপাশে জরুরি সহায়তাকারী একটি দল ছিল। কিন্তু মোরো ছিলেন অন্য জাতের মানুষ। ছোটবেলা থেকে সাঁতার ছিল তার ধ্যানজ্ঞান। মোরো বলেন, ফ্রি স্টাইল সাঁতারের কিংবদন্তি ডায়ানা নিয়াড এবং রস এডজলির কীর্তি কয়েক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার চোখে পড়ে। তখন তিনি নতুন করে সাঁতার শুরুর তাড়না অনুভব করেন।
২০২২ সালে মিসরের শেহাব আল্লাম হাতকড়া পরে ১১ দশমিক ৬ কিলোমিটার সাঁতার কেটেছিলেন। এতদিন পর্যন্ত হাতকড়া পরে সাঁতারের এটাই ছিল সর্বোচ্চ রেকর্ড। মোরো এ রেকর্ড ভাঙলেন।
হাতকড়ায় বাঁধা দুই হাত। এ অবস্থায় পুকুরে সাঁতার কাটাই কষ্টের। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ৪৯ বছর বয়সি বাসিন্দা মাইকেল মোরো অবিশ্বাস্য এক কাজ করেছেন। হাতকড়া নিয়ে প্রায় ২৯ মাইল সাঁতরেছেন তিনি। কোনো পুকুর নয়, গভীর আর প্রশস্ত নদীতে এ কাজটি করেছেন তিনি।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ম্যানহাটানের দক্ষিণাংশ থেকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মোরো পুরো দ্বীপটি চক্কর দিয়েছেন। দুই হাতে হাতকড়া পরে ইস্ট রিভার, হার্লেম আর হাডসন পেরিয়ে ২৮ দশমিক ৫ মাইলের সাঁতার শেষ করেন তিনি। এজন্য তাঁর সময় লেগেছে ৯ ঘণ্টা ৪১ মিনিট। শরীরের শক্তি বজায় রাখতে সাঁতার চলাকালে মাঝেমধ্যে পানীয় পান করেছেন মোরো।
এই কীর্তির মাধ্যমে মাইকেল মোরো দুটি রেকর্ড করেছেন। স্থান করে নিয়েছেন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। একটি হলোÑ হাতকড়া পরে নদীতে দীর্ঘতম সাঁতার এবং প্রথম ব্যক্তি হিসেবে হাতকড়ায় ম্যানহাটানের চারপাশ ঘোরা।
মোরোর এই সাঁতার ছিল একই সঙ্গে দুঃসাহসিক ও বিপজ্জনক। মোরো যখন সাঁতার কাটছিলেন, তখন প্রয়োজনে সহযোগিতা করার জন্য তার আশপাশে জরুরি সহায়তাকারী একটি দল ছিল। কিন্তু মোরো ছিলেন অন্য জাতের মানুষ। ছোটবেলা থেকে সাঁতার ছিল তার ধ্যানজ্ঞান। মোরো বলেন, ফ্রি স্টাইল সাঁতারের কিংবদন্তি ডায়ানা নিয়াড এবং রস এডজলির কীর্তি কয়েক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার চোখে পড়ে। তখন তিনি নতুন করে সাঁতার শুরুর তাড়না অনুভব করেন।
২০২২ সালে মিসরের শেহাব আল্লাম হাতকড়া পরে ১১ দশমিক ৬ কিলোমিটার সাঁতার কেটেছিলেন। এতদিন পর্যন্ত হাতকড়া পরে সাঁতারের এটাই ছিল সর্বোচ্চ রেকর্ড। মোরো এ রেকর্ড ভাঙলেন।

২১ নভেম্বর, ২০২৫ ১৬:০৮
বাংলাদেশকে ঘিরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ভূকম্পবিদরা জানিয়েছেন, দেশটি তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে থাকায় এখানে যে কোনো সময় ৯.০ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। তাদের মতে, এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কম্পন ঘটলে রাজধানী ঢাকার অর্ধেক ভবন পর্যন্ত মাটিতে মিশে যেতে পারে, আর এতে বিপদে পড়বে লক্ষাধিক মানুষের জীবন।
বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে আসছেন। কিন্তু দেশে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি এখনো খুব সীমিত। বড় ভূমিকম্প সামলাতে সক্ষমতা বর্তমানে ২০ শতাংশেরও কম—যা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলছে।
এদিকে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সম্ভাব্য ক্ষতি কমাতে উদ্ধার ও প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে বলে জানানো হয়েছে। তবে ভূতাত্ত্বিকদের সতর্কবার্তা আরও স্পষ্ট—উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল, বিশেষ করে সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ঢাকার ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে।
তাদের মতে, এখনই সারা দেশে ভবনগুলোর নিরাপত্তা যাচাই, সঠিক নির্মাণবিধি প্রয়োগ এবং নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া চালু না করলে ভবিষ্যৎ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে ভয়াবহ। ফলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও নিরাপদ নির্মাণ নিশ্চিত করাকে সময়ের দাবি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশকে ঘিরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ভূকম্পবিদরা জানিয়েছেন, দেশটি তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে থাকায় এখানে যে কোনো সময় ৯.০ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। তাদের মতে, এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কম্পন ঘটলে রাজধানী ঢাকার অর্ধেক ভবন পর্যন্ত মাটিতে মিশে যেতে পারে, আর এতে বিপদে পড়বে লক্ষাধিক মানুষের জীবন।
বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে আসছেন। কিন্তু দেশে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি এখনো খুব সীমিত। বড় ভূমিকম্প সামলাতে সক্ষমতা বর্তমানে ২০ শতাংশেরও কম—যা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলছে।
এদিকে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সম্ভাব্য ক্ষতি কমাতে উদ্ধার ও প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে বলে জানানো হয়েছে। তবে ভূতাত্ত্বিকদের সতর্কবার্তা আরও স্পষ্ট—উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল, বিশেষ করে সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ঢাকার ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে।
তাদের মতে, এখনই সারা দেশে ভবনগুলোর নিরাপত্তা যাচাই, সঠিক নির্মাণবিধি প্রয়োগ এবং নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া চালু না করলে ভবিষ্যৎ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে ভয়াবহ। ফলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও নিরাপদ নির্মাণ নিশ্চিত করাকে সময়ের দাবি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.
Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.