১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

কাগজে মোড়ানো খাবারে মৃত্যুর হাতছানি!

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৫৫ অপরাহ্ণ, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

কাগজে মোড়ানো খাবারে মৃত্যুর হাতছানি!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: যুগ যুগ ধরে মুখরোচক বিভিন্ন খাবার পরিবেশনে ব্যবহার করা হয় কাগজের ঠোঙা। বিশেষ করে স্কুল কলেজের সামনে ভ্রাম্যমান বিক্রেতাদের খাবার, এমনকি হোটেল-রেস্তোরাঁ কিংবা চায়ের দোকানেও বিভিন্ন খাবার পরিবেশনে ব্যবহার করা হয় পুরনো পত্রিকা, বই-খাতা।

কাগজে মোড়ানো বা ঠোঙায় করে সিঙ্গারা, পুরি, ঝালমুড়ি, ফুচকা, আচার ইত্যাদি খেয়ে আমরা অনেকেই অভ্যস্ত। বিক্রেতারাও অভ্যস্ত হয়ে গেছে পুরনো ছাপার (পত্রিকা, বই) কাগজে মুড়িয়ে বিভিন্ন খাবার বিক্রি করতে।তবে, যুগ যুগ ধরে কাগজে মুড়িয়ে খাবার পরিবেশন ও খাবার গ্রহণ করা কেউই হয়তো ভাবতেও পারেনি যে, কাগজে মোড়ানো ওই খাবারেই রয়েছে মৃত্যুর হাতছানি!

 

গতবছর ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা ও মান যাচাইয়ের সংস্থা ‘ফ্যাসাই’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিলো, কাগজে মোড়ানো খাবার মানব শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষও খবরের কাগজ, ছাপা কাগজ বা যে কোনো লিখিত কাগজে খাদ্য পরিবেশন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।

এক ‘সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি’তে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও পথ খাবার ব্যবসায়ীসহ অনেক খাদ্য ব্যবসায়ী খবরের কাগজ, ছাপা কাগজ বা লিখিত কাগজ এর মাধ্যমে ঝালমুড়ি, ফুচকা, সমুচা, রোল, সিঙ্গারা, পেঁয়াজু, জিলাপি, পরোটা ইত্যাদি পরিবেশন করছেন। যা নিরাপদ খাদ্য আইন- ২০১৩ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এমতাবস্থায়, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও পথ খাবার ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে খাদ্য স্পর্শক প্রবিধানমালা, ২০১৯ অনুসরণ করে পরিষ্কার ও নিরাপদ ফুডগ্রেড পাত্র ব্যবহারের নির্দেশ প্রদান করা যাচ্ছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, খবরের কাগজ/ছাপা কাগজ/লিখিত কাগজ এ ব্যবহৃত কালিতে ক্ষতিকর রং, পিগমেন্ট ও প্রিজারভেটিভস থাকে। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

 

এছাড়া পুরনো কাগজে রোগসৃষ্টিকারী অণুজীবও থাকে। খবরের কাগজ ছাপা কাগজ/লিখিত কাগজ এর ঠোঙায় বা উক্ত কাগজে মোড়ানো খাদ্য নিয়মিত খেলে- মানবদেহে ক্যানসার, হৃদরোগ ও কিডনীরোগসহ নানাবিধ রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

 

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক খবরের কাগজ, ছাপা কাগজ বা যে কোনো লিখিত কাগজে খাদ্য পরিবেশন বন্ধের নির্দেশের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. শারমিন রুমি আলিম বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ যদি এরকম নির্দেশনা দিয়ে থাকেন তাহলে এটি খুবই ভালো উদ্যোগ।

ছাপা বা লিখিত কাগজে খাবার পরিবেশন করলে কার্বন কন্টামিনেশন হয়। এতে ওই খাবারের মাধ্যমে আমাদের দেহে কার্বন প্রবেশ করে। এই কার্বন দূষণের কারণে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।’ এছাড়াও নিরাপদ খাদ্য নিয়ে গবেষণা করা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ছাপা বা লিখিত কাগজে পরিবেশন করা খাবার খেলে শেষ পর্যন্ত ক্যান্সারের মত মারাত্মক রোগও হতে পারে।

 

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কাগজ ছাপা হয় নানা রকম রাসায়নিক মিশ্রিত কালি দিয়ে। কাগজে খাবার পরিবেশন করার সময় সবার অলক্ষ্যেই খাবারে লেগে যায় সে কালি। আর ওই কালি মিশ্রিত খাবার সরাসরি পেটে গেলে বিভিন্ন অসুখের পাশাপাশি রয়েছে মৃত্যু ঝুঁকিও।

 

স্বাস্থ্যকর কোন খাবারও যদি কাগজে মোড়ানো হয়, তবে সেটিও দূষিত হয়ে পড়ে। সাধারণত খবরের কাগজ বা বই ছাপা হয় নানা রকম রঙ ও রাসায়নিক পদার্থে তৈরি করা কালি দিয়ে। মারাত্মক ক্ষতিকর সেই কালি খাবারের সাথে পেটে চলে গেলে শারীরিক ক্ষতি হওয়া নিশ্চিত।

 

কাগজে খাদ্য পরিবেশন বন্ধের বিষয়ে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (খাদ্যভোগ ও ভোক্তা অধিকার) মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আগে মানুষকে এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানাতে হবে। সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। কাগজে খাদ্য পরিবেশনের বিকল্প কি হতে পারে- সেটিও খুঁজতে হবে এবং মানুষকে জানাতে হবে।

মানুষকে অ্যালার্ট করতে হবে আগে তারপরে পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই আমরা গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে একটি নোটিফিকেশন দিয়েছি।’ মো. রেজাউল করিম আরো বলেন, সচেতনতা ছাড়া, সাইন্টিফিক স্ট্যাডি ছাড়া কোন সিস্টেম সাস্টেইনেবল হয় না।

 

ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ দিয়ে এগুলো বন্ধ করা সম্ভব না, আর কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করা গেলেও সেটি স্থায়ী হয় না। আমরা সেটি করতে চাচ্ছি না, আমরা একটি স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটতে চাই। তাই আমরা প্রথমে জনসচেতনতা তৈরি করছি।’ তিনি বলেন, আপনারা খুব শিগগিরই দেখতে পাবেন, খাবার পরিবেশনে ছাপা কাগজের বিকল্প কী হবে, সে বিষয়ে আমরা বিজ্ঞাপন দেবো।

 

তারপরের ধাপে আমরা সামাজিক মাধ্যমে ও গণমাধ্যমে সেগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরবো। এরপরে আমরা বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, সামাজিক সংগঠন এবং স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পাড়ায়-মহল্লায় ব্যাপকভাবে সচেতনতা তৈরির কার্যক্রম পরিচালনা করবো।

12 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন