২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

নলছিটিতে কৃষি জমি দখল করে ক্ষমতাসীনদের মাছের ঘের

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:২৩ অপরাহ্ণ, ০৪ জুলাই ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: ঝালকাঠির নলছিটিতে কৃষি জমি জোরপূর্বক দখল করে মাছের ঘের করার পায়তারা চালাচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহল। স্থানীয় কুশংগল ইউনিয়নের ফয়রা গ্রামের ২৫ একর সম্পত্তিতে ঘের করা নিয়ে কয়েকদিন ধরে কৃষকদের মাঝে চরম অসন্তোস বিরাজ করছে। পরিস্থিতির আলোকে ভুক্তভোগী অন্তত ৩৫ কৃষক আদালতের দ্বারস্থ হলেও ক্ষমতাসীন মহলের নেপথ্যে ইন্ধনে ঘের তৈরিতে স্থানীয় রায়হান হাওলাদার নামের ব্যক্তিকে ব্যবহার করায় উত্তেজনাকর পরিবেশের অবতারণা হয়েছে। ফলে এনিয়ে যেকোন মূহূর্তে রক্তপাতের আশঙ্কায় সৃষ্টি করেছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। স্থানীয় থানা পুলিশ বিষয়টি নিয়ে নিরব-নিশ্চুপ থাকার সুযোগে যুবক রায়হান ঘের তৈরি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় সমূহসংঘাত আতঙ্ক সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে।

স্থানীয় একধিক সূত্র জানায়- ফয়রা গ্রামের অন্তত ২০০ কৃষকের চাষাবাদী ২৫ একর জমিতে একই এলাকার মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রাহায়ান হাওলাদার মৎস্য ঘের তৈরির লক্ষে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা শুরু করলে কৃষকদের মাঝে অসন্তোস দেখা দেয়। স্থানীয় মেম্বর ও ক্ষমতাসীন দলীয় নেতা পরিচয়দানকারী বাদলসহ কয়েকজনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহায়তায় কৃষি জমি দখলের বিষয়টি প্রকাশ পেলে সংক্ষুব্ধ কৃষকেরা গত জুন মাসের শেষে দিকে ঝালকাঠি আদালতে মামলা করে। বিপরিতে বিচারক জমিতে ওই কৃষি জমিতে মাছের ঘের তৈরির কারণ জানতে চান এবং মাটি কাটা কার্যক্রম বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও প্রভাবশালী মহলটিকে রোহিত করা যায়নি। বরং কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় এনিয়ে সংক্ষুব্ধ কৃষক ও দখলকারীদের মাঝে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করলেও নলছিটি থানা পুলিশ নিরব ভুমিকায় রয়েছে।

কৃষকেরা জানায়- রায়হান হাওলাদার তাদের জমির পাশে মাসুম নামের এক ব্যক্তির ৫০ শতাংশের মতো সম্পত্তি নাম মাত্র লিজ নিয়ে পুরো মাঠ দখলের পায়তারা শুরু করেছে। জুন মাসের শেষের দিকে সে দুটি ভেকু মেশিন ব্যবহার করে ২০০ কৃষকের অন্তত ২৫ একর জমির মাটি কেটে ঘের তৈরির উদ্যোগ নিলে দেখা দেয় বিপত্তি। স্থানীয় রুবেল মল্লিককে অগ্রভাগে রেখে ৩৫ কৃষক বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। ওই রুবেল মল্লিক এ ঘটনায় কৃষকদের পক্ষে আদালতে মামলা করলেও বিচারক ২৫ জুন জমিতে চলমান কাজ বন্ধ রেখে কারণ দর্শানোর নোটিস দেন।

একটি সূত্র জানায়- আদালতের সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে রায়হান হাওলাদার জমিতে মাটি কাটা অব্যাহত রাখায় বিক্ষুব্ধ কৃষকদের মাঝে ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে এনিয়ে কৃষক ও দখলকারী মুখোমুখি অবস্থায় নেওয়া সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে।

জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক কৃষক জানান, মাসুমের জমি লিজ নেওয়ার বিষয়টি অবহিত করে রায়হান আরও অন্তত ১০ কৃষকের সম্পত্তি নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু সেই জমি নিতে না পেরে সে সহযোগীদের নিয়ে জোরপুর্বক দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনের জমির মাটি কাটাও শুরু করে। মুলত এনিয়েই কৃষকেরা তার বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠে এবং আইনের আশ্রয় নেন। কিন্তু তার পরেও সে জমি দখল অব্যাহত রাখতে একের পর একে কৌশল চালিয়ে যাওয়ায় কৃষকের গত ১ জুন নলছটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুম্পা সিকদারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার চেয়েছে। ইউএনও অবশ্য কৃষি জমি রক্ষার্থে কৃষকদের পাশে থেকে সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

অপর এক কৃষক জানান, রায়হান যে জমিটি দখল করতে চাইছে, সেখানে সরকারি তিনটি কালভার্ট রয়েছে। মাছের ঘের করা হলে কালভার্ট তিনটি বন্ধ হয়ে পাশেপাশের বাসিন্দারা পানিবন্দি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও জমি দখলে নানান কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনকে ব্যবহার করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে।

তবে এই রায়হান কৃষি দখলের অভিযোগসমূহ অস্বীকার করলেও ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলছেন- আদালতে মামলার পরে সে কিছুটা পিছু হটলেও বিদ্রোহী কৃষকদের নানান ভাবে হুমকি-ধামকির ওপর রাখছে। বিদ্রোহীদের পাশে থাকায় কখনও কখনও ক্ষমতাসীন বিভিন্ন মহল থেকে তাকেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, জীবন থাকতে কৃষি জমিতে ব্যক্তি মালিকানাধীন কারও মাছের ঘের করতে দেওয়া হবে না।’

এ প্রসঙ্গে ইউএনও মুঠোফোনে বরিশালটাইমসকে বলেন- যেহেতু ওই জমিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেক্ষেত্রে সেখানে কোন কার্যক্রম চলতে পারে না। আজ রোববার সেখানে উপজেলা প্রশাসন হানা দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, জানান ইউএনও রুম্পা সিকদার।’

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন