১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

ববিতে লোকমানের ওপর হামলাকারী সবাই ছাত্রলীগ !

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:০৩ অপরাহ্ণ, ০৬ মে ২০১৯

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করা লোকমান হোসেনের উপর হামলাকারীরা সকলেই ছাত্রলীগের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে তারা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ছাত্রলীগের সাথে সংযুক্ত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মী আহম্মেদ সিফাতের নির্দেশে তার অনুসারী ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের ছাত্র রিফাত বিন নাফিস, অ্যাকাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের হাসিব, রাকিব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সালাহউদ্দিন শান্ত ও সোহেল লোকমান হোসেনের উপর হামলায় সরাসরি অংশ নেয়। যারা সকলেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তবে ছাত্রলীগের কর্মী আহম্মেদ সিফাত বর্তমানে বিষয়টি অস্বীকার করছেন।

তিনি জানিয়েছেন, লোকমানের উপর হামলা তিনি বা তার কোনো লোকজন করেননি। লোকমানের উপর যারা হামলা চালিয়েছে তাদের বিচার দাবী করেন তিনি। এদিকে লোকমান হোসেনের উপর হামলাকারীদের ছবি ছাত্রলীগ কর্মী আহম্মেদ সিফাতের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে। এরপরে আরো বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সিফাত ও তার সহচরীদের নিয়ে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড.এসএম ইমামুল হকের বিরুদ্ধে টানা ৩৫ দিন ধরে আন্দোলন চলার পর এর সাফল্য আসে। কিন্তু আন্দোলনের মাঝখান থেকে ছাত্রলীগের সিফাত এসে নেতৃত্ব নেয়ার চেষ্টা করে। এই নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তার উপর ক্ষুদ্ধ হয়। কেননা প্রথম থেকেই ভিসি বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলো লোকমান হোসেন, শফিকুল ইসলাম, তনুশ্রী ভট্রাচার্য্য, সামিহা তাসনিম লামিয়া, আল আমিন সহ আরো কয়েকজন। কিন্তু মাঝখান থেকে আহম্মেদ সিফাত ও তার লোকজন এসে আন্দোলনের সামনের সাড়িতে আসতে চায়। প্রভাবের কারণে তাদের ফ্লোর ছেড়ে দেয়া হলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যেগেই আন্দোলন অব্যাহত থাকে। কিন্তু প্রথম থেকেই আন্দোলনের নেতৃত্ব নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা সিফাত লোকমান হোসেন সহ বেশ কয়েকজনের উপর বেশ ক্ষিপ্ত ছিলো। যার বহি:প্রকাশে ৩০ এপ্রিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের তালা খোলার পর বিকালে শেরে বাংলা হলের ১০০২ নং কক্ষে লোকমান হোসেনের উপর অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগের সিফাতের অনুসারীরা। এরপর লোকমানকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও এই হামলার ঘটনায় এখনো কোনো সুষ্ঠু বিচার হয়নি।

আলিফ মাহামুদ নামে এক ছাত্র জানান, হামলাকারীরা এখনো ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কোনো এ্যাকশন নেয়া হয়নি। আর এরা ছাত্রলীগের কেউই নয়। কেননা ছাত্রলীগের কোনো কমিটিই নেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে ক্যাম্পাসে নানা অপকর্ম করে বেড়ায় এরা। এই ছাত্র আরো জানান, আহম্মেদ সিফাত ও অনুসারীরা এর আগেও নানা অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলো। মাদক সেবন থেকে শুরু করে ছিনতাই ও র‌্যাগিং করতো এরা। কিন্তু কেউ কোনো সময় মুখ খোলার সাহস পায়নি। সর্বশেষ লোকমান হোসেনের উপর হামলার পর সাধারণ শিক্ষার্থীরাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। ক্যাম্পাসে সিফাত ও তার অনুসারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।

এদিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীণ স্নাতকোত্তর ছাত্র ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লোকমান হোসেন। লোকমান আরো জানান, হামলাকারীরা সকলেই ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করতো। যদিও ছাত্রলীগের কমিটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এছাড়া হামলায় যারা অংশ নিয়েছেন তারা সিফাত আহম্মেদের সাথেই থাকতো এবং সিফাতের নির্দেশেই এই হামলা চালানো হয়েছে। আমার উপরে এই হামলার কর্মকান্ড প্রথম নয়, এর আগে আরো অনেককে তাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও এই ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ হাসপাতালে আমাকে দেখতে এসে এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে অপকর্মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়ার প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকে কল করা হলেও তারা এই সম্বন্ধে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

13 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন