২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বাংলাদেশি করোনা রোগীর জন্মদিন পালন করলো সেবিকারা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:৫৭ অপরাহ্ণ, ০৯ মে ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন :: দৈনন্দিন ব্যস্ততার কারণে অনেকেই মনে রাখতে পারি না নিজেদের জন্মদিন। প্রবাসজীবনে তো মোটেও সম্ভব হয় না। পরবাসীদের প্রতিটা দিনই একই রকম। আলাদাভাবে কোনো আয়োজন হয় না। সকালে মোবাইলে বন্ধুদের শুভেচ্ছাবার্তা দেখে মনে পড়ে নিজের জন্মদিনের কথা।

সিঙ্গাপুরে এনজি ‘টেং পোং’ জেনারেল হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশি কিরণ মাহমুদ মান্না করোনায় আক্রান্ত হয়ে সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের বিছানায় তার দিনরাত অতিবাহিত হচ্ছে। মে মাসের ১ তারিখ ছিল তার জন্মদিন।

সেদিন সকাল-বেলা হাসপাতাল থেকে প্রবাসী মান্নার ফোন আসে। রিসিভ করে হ্যালো বলার সঙ্গে সঙ্গে অপর প্রান্ত থেকে একজন নার্স মান্নাকে শুভ জন্মদিন বলে শুভেচ্ছা জানায়। মান্না ভুলেই গিয়েছিল তার জন্মদিন। ভাবতে লাগলেন তার জন্মদিন আজ নার্স কীভাবে জেনেছে! তখনই মনে পড়লো হাসপাতালে ভর্তির আগে যাবতীয় পরিচয়পত্র লিপিবদ্ধ করার কথা। সেই পরিচয়পত্র লিপিবদ্ধ থেকে হাসপাতালের নার্স মনে রেখেছে মান্নার জন্মদিন। নার্স জন্মদিনের প্রথম শুভেচ্ছা জানানোয় মান্না আনন্দিত আবেগ আপ্লত হয়ে উঠলেন।

মান্না ভাবতে লাগলেন কতটা আন্তরিক হলে এতবড় একটা হাসপাতালের নার্স মনে রাখতে পারে তার জন্মদিন। শতশত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন অথচ তার মতো একজন সাধারণ রোগীর ক্ষেত্রে তারা কতটা আন্তরিক।

অনেকের ধারণা হাসপাতালে রোগীদের প্রয়োজন মতো সেবা দেওয়া হয় না। তাদের খোঁজখবরও নেওয়া হয় খুবই কম। মান্না সেই ধারণাকে গুরুত্ব দিলেন না। নার্সের জন্মদিনের শুভেচ্ছায় নিজের মনের মধ্যে সাহস জোগালেন।
দুপুরের খাবার খেয়ে মান্না হাসপাতালে তার বিছানায় বসে আছেন। কিছুক্ষণ পর তার কেবিনের মাঝখানে রাখা হলো একটি টেবিল। মান্না ভাবতে লাগলেন টেবিলের ওপর হয়তো চিকিৎসা সরঞ্জামাদি রাখা হবে। তিনি আপন মনে কেবিনের মধ্যে ঘোরাঘুরি করছেন। হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে হতবাক হয়ে গেলেন।

দশজন নার্স হাতে একটি কেক নিয়ে শুভ জন্মদিন বলতে বলতে কেবিনের দিকে আসছে। কেবিনে ঢুকে টেবিলের ওপর কেক রাখলেন। নার্সরা সকলে একসাথে হাতে তালি দিয়ে মান্নাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। নার্সদের ব্যবহার দেখে মান্না হতবাক হয়ে গেলেন। নার্সদের গভীর আন্তরিকতা দেখে মান্নার চোখের কোণে জল জমে গেলো। চোখের কোণের জল মুছতে মুছতে আনন্দে কেক কাটলেন।

সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত দেশে একজন সাধারণ রোগীর প্রতি ভালোবাসা দেখে সত্যি মনটা আনন্দে ভরে উঠে। চিকিৎসা ব্যবস্থা, ডাক্তার এবং নার্সদের রোগীর প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা অতুলনীয়। তাদের কাছে প্রতিটা রোগী একই সে যে দেশের হোক। রোগীর প্রতি এতোট বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহারে রোগীরা মানসিক দিক দিয়ে অনেকটা সবল হয়ে ওঠে।

আমরা সবসময় জেনে আসছি সিঙ্গাপুরের চিকিৎসাসেবা উন্নত। আসলে বলে শেষ করা যাবে না এদের সেবার মান কতটা নিখুঁত ও উন্নত। মানবতার দিক দিয়ে রোগীদের সাথে শতভাগ আন্তরিকতা দেখিয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকে। রোগীদের প্রতি তারা খুব বেশি আন্তরিক এবং বন্ধুত্বসুলভ আবারও তার প্রমাণ দিলেন হাসপাতালে একজন সাধারণ করোনা রোগীর জন্মদিন পালন করে।

যুগের পর যুগ সিঙ্গাপুরের চিকিৎসা ব্যবস্থা এভাবে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেবে আমাদের বিশ্বাস। ডাক্তার এবং নার্সদের মানবিক ব্যবহারে কঠিন ব্যধিতে আক্রান্ত রোগীরা ফিরে পাবে সুস্থ হওয়ার সাহস। কিরণ মাহমুদ মান্নার মতো সাধারণ রোগীরা আনন্দে চোখের কোণের জল মুছতে মুছতে বলে উঠবে দীর্ঘজীবী হোক মানবিকতার। দীর্ঘজীবী হোক রোগীর প্রতি ডাক্তার এবং নার্সদের বন্ধুত্বসুলভ ব্যবহার ও আন্তরিকতা।

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন