১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বাউফলে আ’লীগের সম্পাদককে কুপিয়ে জখম, দায় কার?

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:০২ অপরাহ্ণ, ১৯ মার্চ ২০২৩

বাউফলে আ’লীগের সম্পাদককে কুপিয়ে জখম, দায় কার?

মো. জসীম উদ্দিন, বাউফল:: পটুয়াখালীর বাউফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব হাওলাদারকে কুপিয়ে জখম করেছে স্থানীয় এমপি আ স ম ফিরোজের সমর্থকরা। বর্তমানে আব্দুল মোতালেব হাওলাদার রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে চিকিৎসক।

আব্দুল মোতালেব হাওলাদারের ওপর হামলার সময় স্থানীয় এমপি আ স ম ফিরোজ, উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসন ঘটনাস্থলের অদূরেই উপস্থিত ছিলেন। এই হামলার দায় কে নিবে, এমন প্রশ্ন এখন সর্বমহলে। সকলের উপস্থিতিতে এমন ঘটনা ঘটায় জন নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজনৈতিক ও সচেতন মহলের লোকজন।

সচেতন সমাজের ব্যক্তিবর্গ প্রশ্ন তুলেছেন, রাষ্ট্রের এতো গোয়েন্দা সংস্থা আছে, তারা কি করেছে। যেখানে সংবাদমাধ্যম আগেই এরকম সংঘর্ষের আশঙ্কা তুলে ধরেছে, সেখানে গোয়েন্দা সংস্থা কি কিছুই জানতে পারেনি আগে? যদি জেনে থাকে তাহলে কি তারা উপজেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে অবহিত করেনি। নাকি সকলেই চেয়েছিলো সংঘাত-রক্তপাত হোক।

অন্যদিকে আব্দুল মোতালেব হাওলাদারকে কুপিয়ে জখম করার প্রতিবাদে শনিবার (১৮ মার্চ) সকাল ১০ টায় বগা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন বিকেল ৪ টায় বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে বিক্ষুব্ধ আওয়ামী নেতা-কর্মীরা।

সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে আ স ম ফিরোজ এমপি’র সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বগা ইউপির চেয়ারম্যান মাহামুদ হাসান।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বাউফলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ১৭ মার্চ তিনটি পক্ষই একই সময়ে কর্মসূচির ডাক দেয়। এর মধ্যে আ স ম ফিরোজ এবং আবদুল মোতালেব হাওলাদারের পক্ষের কর্মসূচি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে (জনতা ভবন) হওয়ার কথা ছিলো। বাউফল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউল হক জুয়েল পক্ষের কর্মসূচি বাউফল প্রেসক্লাব সড়কে পৌর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আব্দুল মোতালেবের নেতৃত্বে বেলা ১১টার দিকে বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে আনন্দর‌্যালি নিয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের (জনতা ভবন) দিকে যাচ্ছিলেন নেতাকর্মীরা। বেলা সোয়া ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে মেইন রোডে পৌঁছালে সংঘর্ষ এড়াতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল আমিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল এতে বাধা দেয়। তখন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে আব্দুল মোতালেব হাওলাদারের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। অপর পাশেই লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছিলেন আ স ম ফিরোজের সমর্থকেরা। তখন আ স ম ফিরোজ ছাদখোলা একটি গাড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের সমর্থকেরা দলীয় ও নিজ নিজ নেতার নামে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর আবদুল মোতালেবের সমর্থকেরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে দলীয় কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। আব্দুল মোতালেবের নেতা-কর্মীরা বিচ্ছিন্ন হলে অল্পসংখ্যক সমর্থক নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেন। তখন তার ওপর হামলা চালান সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের ধারালো অস্ত্রধারী সমর্থকেরা। তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। মোতালেব হাওলাদারকে রক্ষা করতে গিয়ে প্রায় ২৫ জন নেতা কর্মী আহত হন ।
এ সময় ইট-পাটকেলের আঘাতে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুনসহ পুলিশের ৬ সদস্য আহত হয়েছেন।

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন ফরাজী বলেন, থানার ওসি’র সামনে এমপির লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থানে প্রমাণিত হয়, এমপি’র লোকজন পূর্ব পরিকল্পিত ভাবেই এঘটনা ঘটিয়েছে। যদি এরকম না হয় তাহলে জাতির জনকের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আসবে কেনো?

আবদুল মোতালেব হাওলাদারের ছেলে ও বগা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহামুদ হাসান বলেন, এর আগে সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের উপস্থিতিতে আমার ওপর হামলা চালিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। এবার পুলিশের সামনে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে তার বাবাকে মেরে ফেলার উদ্দেশে হামলা চালানো হয়েছে। অদূরেই ছিলেন সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ। মহড়ার সময় অস্ত্রসহ শফি হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করলে হয়তো তার বাবার এমন ক্ষতি হতো না।

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর বলেন, আমরা এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন আমরা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠাবো, পরবর্তীতে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

10 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন