৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

বাবুগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ: ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৮:৪৫ অপরাহ্ণ, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় একটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভের ঘটনায় ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে আলম বেপারী ও তার ভাড়াটিয়া লোকজনদের অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। এর আগে চেয়ারম্যান ও মেম্বর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মো. মুসা আলী, আব্দুস সালামসহ নয়জন ইউপি সদস্য অভিযোগ করেন, ইউপি চেয়ারম্যান নুরে আলম বেপারী সরকার থেকে বরাদ্দ ত্রাণের টিন, কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য), কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা), টিআর (টেস্ট রিলিফ), গ্রামীণ অবকাঠামোর চাল, গম ও অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

এছাড়াও দুস্থদের জন্য বরাদ্দ ভিজিডি চাল, ইউনিয়ন পরিষদ সংস্কারের ১০ লাখ টাকা কোনো কাজ না করে পুরোটাই আত্মসাৎ করেছেন। কার্ডধারী ৫শ ১২ জেলের জন্য ৪০ কেজি করে বরাদ্দ করা চাল কালোবাজারে বিক্রিও করেছেন।

তারা আরও অভিযোগ করেন, বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ইউপি চেয়ারম্যান নুরে আলম বেপারী প্রভাব বিস্তার করে একের পর এক অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইউপি চেয়ারম্যান অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

ইউপি সদস্যরা জানান, চেক জালিয়াতির মামলায় ইতোমধ্যে ইউপি চেয়ারম্যানকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ১৩ লাখ ১৫ হাজার ৩শ ৮৫ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া ভিজিডি ও জেলেদের চাল পাচারের সময় ৫ হাজার ১শ ৫২ বস্তা চাল উদ্ধারের ঘটনায় র‌্যাবের দায়ের করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলারও আসামি চেয়ারম্যান নুরে আলম। এ বাদে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে খাসজমির দলিল করে দখলের অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযোগের প্রমাণসহ তার (ইউপি চেয়ারম্যান) বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে নয়জন ইউপি সদস্য ইতোমধ্যে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ১০টি দফতর প্রধানের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।

কেদারপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, আবেদনের ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা পল্লীদারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে তদন্তে আসেন।

এসময় চেয়ারম্যান ও তার ‘ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী’রা মোটরসাইকেল বহর নিয়ে পরিষদে প্রবেশ করে আবেদনকারী ইউপি সদস্যদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এনিয়ে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে চেয়ারম্যানের ‘ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী’রা মেম্বরদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সরেজমিন মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে দেখা যায়, তদন্তকারী কর্মকর্তা চলে যাওয়ার পর পরই ইউপি চেয়ারম্যান নুরে আলম ও তার সহযোগীরা মোটরসাইকেল বহরযোগে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স এলাকা ত্যাগ করার চেষ্টা করেন। এ সময় সরকারের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের শত শত ভুক্তভোগী চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের অবরুদ্ধ করে নানান স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

তখন ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা উপস্থিত জনতার ওপর চড়াও হলে বিক্ষুব্ধরা তাদের ধাওয়া করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ বিক্ষুব্ধদের ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে চেয়ারম্যানকে রক্ষা করে।
তবে ইউপি সদস্যদের আনীত সব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে অভিযুক্ত কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে আলম বেপারী বলেন, ‘প্রতিপক্ষের লোকজন ইউপি সদস্যদের পুঁজি করে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে’।

119 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন