২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বড়দিন: ঈশ্বরপুত্রের মানবস্বরুপ সহভাগিতা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:৩৬ অপরাহ্ণ, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০

জেভিয়ার শিয়োন বল্লভ >> পৃথিবীর ও পার্থিব বিষয়-সম্পত্তির সঙ্গে মানুষের অন্তনির্হিত দাম্ভিকতা ও বিদ্বেষ জড়ানো মানুষের কর্মকাণ্ড এবং জীবন-যাপন। যেখানে জাগতিক স্বভাবে মানুষ মন্দশক্তির ক্ষমতার শক্তিমান হয়ে উঠছে। ফলে পৃথিবীর বুকে আজো অকপট ভ্রাতৃত্ব -বন্ধন সর্বত্র গড়ে ওঠেনি। ফলে মানবজাতির জীবন আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি বিষয়সমূহ আমাদের ত্বরান্বিত করছে। আমাদের কর্মকাণ্ডকে করে তুলছে পাপদুষ্ট। আধুনিক সময়ে আমাদের আত্মার নেই পরিত্রাণ এবং জীবনের নেই আশা। শুধু আছে, অশান্তির বিভীষিকা।

বিশ্ব সৃষ্টির এই মানব মাঝে সর্ম্পকে পড়ছে টানাটানি, আচার-আচরণে কাম-লালসা, কর্তৃত্ব-বাসনা, অহংকার-স্বার্থপরতা, বিষয়- সস্পত্তির প্রতি লোভ-বিলাসতা আসক্তি, জাগতিক গৌরবলাভের ও ভোগের আকাঙ্খা। ষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্র এবং অসহায় দু:স্থদের প্রতি শোষণ-শাসন নিযার্তন। এ অবস্থা আমাদের মনে নেই শান্তি, নেই আশা। শুধু মাত্র আছে হাফিয়ে ওঠার দীর্ঘশ্বাস ও হতাশা। তাই তে আজ প্রশ্ন শান্তির উৎস কে? এবং কোথায়?

মানুষ পরিত্রাণ ও মুক্তির নব আশায় বাঁচতে চায়, চায় পার্থিব জীবনের নবায়ন। ঐক্যবন্ধ ভাবে জাগতিক জীবনের বয়ে আনতে চায় শান্তি। এ পরম সুখ মানুষের যেন পেতে পারেন। তাই খ্রীষ্টের জন্ম হয়েছে। যিনি শান্তি উৎস। যিনি প্রকাশিত হয়েছে পরিত্রাণের মুক্তিবর হিসাবে এবং তিনিই ঐশ্বরিক পুত্র হয়ে মানবের সঙ্গে মানব হয়ে নিজেকে সহভাগিতা করলেন। মানুষকে প্রকৃত পরিত্রাণ-শান্তি-মুক্তির অপেক্ষার বাঁধ ভেঙে দিলেন। এনে দিলেন মহাপরিত্রাণের মুক্তি ও শান্তি-আশা।

যিশুর জন্মের পরিপূর্ণতা হলো:
ক. পূর্ণ সত্যের সাক্ষ্য
খ.ঐশপরিকল্পনার ইচ্ছা প্রকাশ
গ.স্বয়ং ঈশ্বর মানবের কাছে রিক্ত ভালোবাসার প্রকাশ
ঘ.এক নতুন জাতির কাছে মনোনীত যিশুই প্রথমও নতুন মানুষ
ঙ. মহারহস্যর প্রকাশ

এই খ্রিষ্ট যিশুর কাছেই আমরা পেতে পারে জীবনের শান্তি ও পরিত্রাণ পতে পারি নবআশার আলো। কেননা এই যিশু ঈশ্বর হারানো ও পতিত মানুষের কাছে প্রকাশিত হয়েছিলেন খ্রিষ্ট জন্মের এ মহাবারতা প্রকাশিত হয়েছিলেন রাখালদের নিকট। সেই সময় রাখালদের সুনাম ছিলো না, তাদের কে অসৎ ও অধার্মিক বলে গণ্য করা হত। যিশুর জন্মের সুখবর প্রথম তাদেরই কাছে ঘোষিত হয়েছিলো। যিশু এসেছিলেন গরীব ও অবহেলিত এবং পাপে পতিত মানুষের মুক্তি দিতে। তাদের জন্য একজন উদ্ধারকর্তা প্রয়োজন ছিল। তাই খ্রিষ্ট যিশু তাদের উদ্ধার কর্তা হয়ে জন্মগ্রহণ করলেন যত দীনদরিদ্র আর পাপী মানুষের জন্য। তিনি হয়ে উঠলেন পাপীদের ঈশ্বর।

এখানে রাখলরা সর্বযুগের পাপীতাপীও পতিত মানুষের প্রতিচ্ছবি অর্থাৎ এই সময়ে আমরা । নম্র সরলচিত্ত নিয়ে মন পরিবর্তন করে মানব স্বভাবে যিশুখ্রিষ্ট পরিত্রাণ রূপে আশার বাণী কে আনন্দ চিত্তে গ্রহণ করে। “যিশুর জন্ম ঈশ্বরের মহাপরিকল্পনা ফল। তাঁর জন্ম দ্বারা ঈশ্বরের গৌরব এবং মানুষের প্রতি তাঁর অসীম ভালবাসা ও সহানুভূতি প্রকাশ পায়”-( লূক ২ঃ১৪)।

আজ আমরা রাখালদের মত অসৎ ও অধার্মিক বলে শুধু মাত্র গণ্যই নয়, আমরা আজও আমাদের পাপময়তায় ডুবে রয়েছি। তাই দুহাজার বছর পরও এই মহাজন্ম উৎসব জীবনের পরিত্রাণ ও মুক্তির আশার। তাই যিশু খ্রিষ্ট আমাদের আহ্বান করেন সত্য ও ন্যাযতার পথ চলতে। কেননা এই বড়দিন হলো যিশু খ্রিষ্টের আগমনের পরিত্রাণের কেন্দ্র ও উৎসস্বরুপ চিহ্ন। আমাদের মনপরিবর্তনের জন্য যিশু খ্রিষ্টের জন্ম এবং ঈশ্বর মুক্তি কাজের পূর্ণতা বয়ে এনেছিলো। তেমনি পাপী-তাপীর জন্য আন পরিত্রাণের মহানন্দ। তাই বড়দিন আমাদের জীবনের ঐশ্ব ভালোবাসার বিশ্বাসপূর্ণ সহভাগিতা করেন স্বয়ং যিশু ঈশ্বর নিজেই। যিশু ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতির পূর্ণতা মানবের। কাছে বহন করে এনেছেন। পুত্র মানবরুপে সহভাগিতা করলেন ঈশ্বরের উপস্থিতি। মানবের নিকট ঈশ্বরের পূর্ণ আত্মদান হল। যিশু হলেন- বহু যুগ প্রতীক্ষিত মানুষের মুক্তিদাতা। খ্রিষ্টের জন্ম মানবের কাছে মহামুক্তির পরিকল্পনা।

এই বড়দিনে ঈশ্বর সহভাগিতা করতে চান ভ্রাতৃবোধের জন্য ভালাবাসা, শান্তির জন্য ন্যাযতা, একতার জন্য আত্মত্যাগ, মানব মর্যাদার জন্য শ্রদ্ধা, পরিত্রাণের জন্য মনপরির্তন, আশার জন্য বিশ্বাস, মুক্তির জন্য ঐশ্ববাণী শ্রবণ। যার মধ্য দিয়ে আমরা জীবনে পাপদুষ্ট জীবনের বন্দিদশা হতে মুক্তিতে পেতে পারি। হতাশাগ্রস্ত এ জীবনের অশান্তিকে দূর করে আমরা বড়দিনের পরিত্রাণ ও মুক্তির আশাকে আরও একবার জাগ্রত করতে পারি। ফের পেতে পারি শান্তি ও আনন্দ।
সবাইকে শুভ বড়দিন।

লেখক————–
জেভিয়ার শিয়োন বল্লভ
কবি, সাহিত্যিক, বরিশাল।

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন