২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশাল কোতয়ালি পুলিশের এএসআই মামুনের অর্থ বাণিজ্য ফাঁস!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:০৪ অপরাহ্ণ, ২০ মে ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: ইয়াবাসহ আটক দুইজনের সাথে জব্দ হওয়া একটি মোটরসাইকেল বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতয়ালি মডেল থানার এক সহকারী উপ পরিদর্শকের (এএসআই) বিরুদ্ধে। বিষয়টি পুরো থানায় জানাজানি হয়ে যাওয়ায় বেশ বিপাকে পড়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে রিপোর্ট পুলিশ কমিশনার বরাবর দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম। তবে বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত এএসআই মামুন।

তিনি জানিয়েছেন- ইয়াবাসহ ওই দুই যুবককে আটকের সময় মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়নি। সেটা পরে জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া মোটরসাইকেলটি থানাতেই রয়েছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে- শুক্রবার (১৭ই মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ১০পিস ইয়াবাসহ দুই যুবককে নগরীর বিএম কলেজ ১ম গেট এলাকা থেকে আটক করে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের এএসআই মামুন। এসময় যে মোটরসাইকেলে করে ইয়াবা বহন করা হয় সেই মোটরসাইকেলটিও জব্দ বা আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ কর্মকর্তা মামুন। এক রাত মোটরসাইকেলটি সেখানে থাকলেও, শুক্রবার রাত থেকেই এই যান ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন মোটরসাইকেলের মালিক বাপ্পি। তবে রাতে গাড়িটি না ছাড়া হলেও শনিবার দুপুরের পর মোটরসাইকেলটি থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়।

মোটরসাইকেলটি আটক হওয়া স্থানের লোকজন শনিবার রাতে যানটি দেখে অবাক হওয়ার কথাও জানান। লাল রঙের হোন্ডা কোম্পানীর সিবিআর (যার আনুমানিক মূল্য- ৪ লক্ষ ৫০ হাজার এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর:- পটুয়াখালী ল ১১-০৭১৫) মোটরসাইকেলটি নিয়ে শনিবার রাতে বিএম কলেজ এলাকায় অনেকবার ঘোরাঘুরি করেন এই যানের মালিক বাপ্পি।

পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, মোটরসাইকেলের মালিক বাপ্পি এএসআই মামুনকে প্রায় ৫২ হাজার টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। আর এই অর্থের বিনিময়ে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন দামী মোটরসাইকেলটি ছেড়ে দিয়েছে।
বিএম কলেজ এলাকার একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, যে মোটরসাইকেলটি আটক বা জব্দ করা হয়েছে সেটা ইয়াবা বহনের জন্য চিহ্নিত। আর এই মোটরসাইকেলটির জন্যই এএসআই মামুন ওই দুই যুবককে ইয়াবা সহ আটক করতে সক্ষম হয়।

তবে বিধিবাম আটক হওয়া মোটরসাইকেলটি অনেক টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। কলেজের সামনে শত লোকের সামনে থেকে যে মোটরসাইকেল আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই মোটরসাইকেল কিভাবে পড়ের দিন ছেড়ে দেওয়া যায় সেটা নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝেও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া এগুলো শুধু মুখের কথা নয়। বিএম কলেজ ও নতুন বাজার এলাকার মধ্যে থাকা পেট্রোল পাম্প, চায়ের দোকান ও একটি কেক এর দোকানের সিসি ক্যামেরায় জব্দ হওয়ার পরের দিন অর্থাৎ শনিবার মোটরাসাইকেলটি নিয়ে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার ফুটেজও রয়েছে। শুধু তাই নয়, কোতয়ালী থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খুঁজলেও এর সত্যতা ভালো ভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এই সকল অভিযোগের বিষয়ে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের এএসআই মামুন এ প্রতিবেদককে জানান, ‘১০ পিস ইয়াবাসহ ওই দুই যুবককে আটকের সময় মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়নি। মোটরসাইকেলটি পরে জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া মোটরসাইকেলটি থানাতেই রয়েছে। ভুল ইনফরমেশন পেয়েছেন আপনি।’

কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ওসি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। এএসআই মামুনের বিরুদ্ধে পুলিশ কমিশনার বরাবর রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।’

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘যদি আমাদের কোনো সদস্য এই কাজ করে থাকে, তাহলে সে গুরুতর অপরাধ করেছে। আমার কর্মকর্তাদের বিষয়টি তদন্ত করতে বলব এবং তদন্ত সাপেক্ষে ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন