১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

বিনাভোটের এমপি আউয়ালের চাই শুধু টাকা!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:০৭ অপরাহ্ণ, ১১ জুন ২০১৭

জাতীয় সংসদের পিরোজপুর-১ (সদর-নেছারাবাদ-নাজিরপুর) আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল। তিনি একটি আসনে এমপি হলেও পিরোজপুর জেলা সদরসহ ৭ উপজেলার একচ্ছত্র অধিপতি। মোগল সাম্রাজ্যের মতো পিরোজপুর জেলার মানুষকে নিজস্ব আইনে শাসন-শোষণ করতেন তিনি। তার সম্মতি ছাড়া আউয়াল সাম্রাজ্যে কোনো কিছুই করার সুযোগ ছিল না কারও।

এভাবেই চলছিল গত ৮ বছর। কিন্তু আকস্মিক ঝড় উঠেছে সেই সাম্রাজ্যে। লণ্ডভণ্ড হতে শুরু করেছে তার একচ্ছত্র সাম্রাজ্যে। প্রকৃতিই যেন বিরূপ হয়ে প্রবল আক্রোশ নিয়ে হামলে পড়েছে তার ওপর। আপন ভাইদের সঙ্গে সাম্প্রতিক বিরোধে প্রায় এলাকাছাড়া তিনি। পিরোজপুরের অধিপতির এ অবস্থা বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উদদৌলার সপরিবারে নৌকায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার কথা মনে করিয়ে দেয়।

‘এমপি সাব সব কামড়াইয়া এল্লাই (একাই) খায়।’ পিরোজপুর সদর আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল সম্পর্কে এ মন্তব্য শহরেরে এক রিকশাচালক। সাংসদের আপন ভাই পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তিনি (আউয়াল) টাকা ছাড়া কিচ্ছু বোঝেন না।’

গত বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) রাতে মেয়র হাবিবুর রহমানের (মালেক) সঙ্গে কথা হয় পিরোজপুর শহরে তাঁর পাড়েরহাট সড়কের বাসায়। সেখান থেকে বেরিয়ে রিকশায় হোটেলে যাওয়ার পথেই সাংসদের ব্যাপারে ওই মন্তব্য করেন মো. রাজীব।

সাংসদ যে টাকা ছাড়া কিচ্ছু বোঝেন না, এর একটি দৃষ্টান্ত চাইলে নিজের একটি ঘটনা বলেন মেয়র। বলেন, ‘আমি জিয়ানগর (বর্তমানে ইন্দুরকানি) ও মঠবাড়িয়া উপজেলায় চারটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছি। সাড়ে ১৩ কোটি টাকার কাজটির জন্য তিনি আমার কাছ থেকে ৮০ লাখ টাকা ও ২ হাজার ডলার নিয়েছেন।’

পিরোজপুর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন, পর পর দুই দফায় সংসদ সদস্য হয়ে, বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হওয়ার পর এ কে এম এ আউয়ালের মধ্যে বড়ে ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়। টাকার নেশায় পড়েন তিনি, তাঁর আপনজন, দলের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও। এ নিয়ে সাংসদের সঙ্গে আপন তিন ভাই হাবিবুর রহমান, মজিবুর রহমান ও মশিউর রহমানের সম্পর্কও নষ্ট হয়।

টাকার বিনিময়ে কাজ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে একটি প্রত্রিকার সাক্ষাৎকারে সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল বলেন, ‘আমার ভাই মেয়রের কোনো আইডেনটিটি (পরিচিতি) ছিল? তাকে কে চিনত। যখন নিজের স্বার্থ রক্ষা হয় না, তখন অনেকে কথা বলে। এসব আগে বলেনি। ঘাট হাতছাড়া হওয়ার পর বলছে কেন?’
পারিবারিক সূত্র ও দলীয় লোকজন জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দুই মেয়াদে এলাকার সব উন্নয়নকাজে ১০ শতাংশ কমিশন নেন সাংসদ। প্রতিষ্ঠানের এক হিসাবে দেখা গেছে, গত সাড়ে আট বছরে শুধু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ পিরোজপুরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার কাজ করেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, একইভাবে গণপূর্ত, শিক্ষা, প্রকৌশল অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগে শত শত কোটি টাকার কাজ হয়েছে। সব কাজেই সাংসদের জন্য ১০ শতাংশ কমিশন রেখে দরপত্র হয়। এটি এখন নিয়ম হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ আউয়াল ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি, কেউ প্রমাণ করতে পারলে আমার জিহ্বা কেটে তার হাতে দিয়ে দেব। আপনিও বড় অক্ষরে লিখেন।’

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, আউয়াল সাংসদ হওয়ার পর স্ত্রী লায়লা পারভীন ঠিকাদারিতে জড়ান। সাংসদের স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, আওয়ামী লীগের সদস্য। শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত লায়লার মেসার্স বুশরা এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স সুভাষ এন্টারপ্রাইজ নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে। গত বছর সড়ক ও জনপথের বেকুটিয়া ফেরিঘাট ও বলেশ্বর সেতুর ইজারা নিয়ে লায়লা নিজে এবং তাঁর প্রতিষ্ঠান দুটি আলোচনায় আসে।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে- পিরোজপুরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ছিল সাংসদের স্ত্রীর হাতে। নিজেও কোটি কোটি টাকার কাজ নিয়েছেন।

জানতে চাইলে সাংসদ স্বীকার করে বলেন, ‘আমি ১৯৭২ সাল থেকে ঠিকাদার। ২০০৮ সালে এমপি হওয়ার আগে আমার দুটি ঠিকাদারি লাইসেন্স স্ত্রীর নামে হস্তান্তর করি। সেই থেকেই তিনি ঠিকাদারি ডিল করেন।’

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দুই মেয়াদে জেলায় শিক্ষা, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগে কয়েক হাজার নিয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশে ৭৬৪ জন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। এ ছাডড়া প্রাথমিকে ৩২৪ জন দপ্তরি-কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগ হয় দুই দফায়। এসব নিয়োগে অনেকের কাছ থেকে সাংসদ উৎকোচ নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

অবশ্য এমন অভিযোগকে ‘গোয়েবলসীয় প্রোপাগান্ডা’ বলে দাবি করেন সাংসদ। তিনি বলেন, ‘কে টাকা দিয়েছে, সুনির্দিষ্ট করে বলুক। একজন লোক আমার সামনে দাঁড় করান। যদি বলতে পারে, আমি যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেব।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু পুলিশেই সাংসদ অন্তত আড়াই শ জনকে চাকরি দিয়েছেন। আবার টাকা দিয়েও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি পাননি এ রকম অন্তত তিনজনের নাম-পরিচয় প্রতিবেদকের কাছে আছে।

স্কুলের দফতরি, পুলিশ কনস্টেবল থেকে শুরু করে জেলার সব সরকারি দফতরের নিয়োগ পর্যন্ত সবই হতো এমপি পরিবারের প্রেসক্রিপশনে। এ ক্ষেত্রে লেনদেন হতো লাখ লাখ টাকা। টিআর-কাবিখাসহ সরকারের সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচির চাল-গম বরাদ্দেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এমপির বিরুদ্ধে। এমনকি খেয়াঘাটের ইজারা পর্যন্ত ছাড়েনি তার পরিবার। এসব বিষয়ে তাদের প্ররোচিত করতেন এমপির আশপাশে থাকা লোকজন।

অবশ্য সাংসদের ভাই হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলবে না। এমপি বিনা পয়সায় কাউকে চাকরি দেননি, কাজ দেননি। বিনিময় ছাড়া, টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেননি।’

সাংসদ বলেন, ‘ভয়ে যদি কেউ কথা না বলে, সে বলছে কোন সাহসে। এসব আমার বিরুদ্ধে স্বার্থান্বেষী মহলের অপপ্রচার। এর পেছনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মদদ, বুদ্ধি, অর্থ সব আছে।’

দলীয় ঘরনার দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সাংসদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ ওঠে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। একেকটি ইউনিয়নে দুই থেকে পাঁচ-সাত লাখ টাকা নিয়ে অন্তত ১৫টি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে থাকা সাংসদ আউয়াল। ইউপির পর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ শাহ আলমকে হারাতে ভূমিকা রাখেন।

সাংসদ আউয়াল বলেন, ‘শাহ আলমকে আমি সমর্থন করিনি। এ জন্য সে তো গো-হারা হেরেছে। আমি এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। অথচ প্রশাসক হয়ে সে (শাহ আলম) আমার সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেনি। আপনি চিন্তা করতে পারেন?’

যদিও ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন সাংসদ। তিনি বলেন, ‘একজনকেও বিদ্রোহী প্রার্থী করিনি। তবে দু-একজন প্রার্থী ছিলেন, যাঁরা দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান ছিলেন। অথচ তাঁরা বাদ পড়েছেন। আমি তাঁদের মনে মনে সমর্থন দিয়েছি, কিন্তু মাঠে নামিনি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় দুজন নেতা বলেন, দল ও অঙ্গসংগঠনের জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠনেও অনৈতিক হস্তক্ষেপ করেন সাংসদ। এমন দুটি ঘটনার উল্লেখ করে দুই নেতা জানান, জেলার অধিকাংশ নেতার অমতে জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকে আসা মহিউদ্দিন মহারাজকে জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে তাঁকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করেন সাংসদ। এ ছাড়া দেলোয়ার হোসেন নামে সৌদি আরবপ্রবাসী একজনকে মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ দেওয়া হয়। এসবের পেছনে মোটা অঙ্কের লেনদেন আছে বলে মনে করছেন দলের নেতাদের কেউ কেউ।

সাংসদ আউয়ালকে ঘিরে জেলায় মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যাচাই-বাছাই ও চূড়ান্তকরণের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

মুক্তিযোদ্ধার তালিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে একটি মামলার অন্যতম সাক্ষী জলিল শেখ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এমপি সুবিধার লোক না। নাম দেবেন কি না, জানি না।’

আর পিরোজপুর আওয়ামী লীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক পিপি সরদার ফারুক আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, টাকা না দেওয়ায় তাঁকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ জেলার ১২৫ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তাঁর নাম ছিল ৬৪ নম্বরে। সাংসদের দুর্নীতি-অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাঁকে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে রাখা হয়নি।

স্থানীয় নাগরিক ও দলীয় সূত্রগুলো বলছে- দলের কমিটি, স্থানীয় সরকারের নির্বাচন, সরকারি চাকরিতে সাংসদের নিয়োগ বাণিজ্য সবকিছু চলছিল রুটিন মাফিক। কিন্তু গত বছরের জুনে বেকুটিয়া ফেরিঘাট ও বলেশ্বর সেতুর টোল আদায়ের ইজারা নিয়ে মেজ ভাই পৌর মেয়র হাবিবুর রহমানের সঙ্গে বিরোধ বাধলে সাংসদের টেন্ডার বাণিজ্যসহ অনিয়ম-দুর্নীতির কিছু কিছু জনসমক্ষে আসে। ভাইদের মধ্যে এখন মেয়রের প্রভাব-প্রতিপত্তি বেশি।

আগে মেয়রের প্রতিষ্ঠান মেসার্স রাজ এন্ড ব্রাদার্স ও জনৈক আজমীর হোসেন মাঝির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আজমীর এন্টারপ্রাইজ বেকুটিয়া ফেরিঘাট ও বলেশ্বর সেতুর ইজারাদার ছিল। সাংসদ কারসাজি করে স্ত্রীর প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে ভাই হাবিবুর রহমান সাংসদকে বিবাদী করে মামলা দিলে ইজারা স্থগিত করেন আদালত। মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন।

হাবিবুর রহমান অভিযোগ করেন, সুভাষ এন্টারপ্রাইজ ও বুশরা এন্টারপ্রাইজের মালিক সাংসদ এ কে এম এ আউয়ালের স্ত্রী লায়লা পারভীন। আউয়াল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি প্রভাব খাটিয়ে স্ত্রীর মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা পাইয়ে দিতে সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষকে চাপ দেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম হাওলাদার বলেন, ‘আমি তো কোনো দিন পাঁচজন কর্মীকেও একটা কাজ দিতে পারিনি। আমাদের কেউ কেউ, যেমন আমার সভাপতি সারা বছর টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন।’

জানতে চাইলে সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল বলেন, ‘আমি হাট-ঘাট দখল করি না। টেন্ডারবাজি হোক, চাই না। আমার কথা হচ্ছে, তোমার লাইসেন্স থাকলে কাজ নাও, আপত্তি নেই। কিন্তু অন্যের লাইসেন্সে কাজ নিয়ে তা বিক্রি করে দিবা, আমি এর পক্ষে না।’

মেয়র কি অন্যের লাইসেন্সে কাজ নিয়ে বিক্রি করে দেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সাংসদ বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই।’ স্থানীয় অধিবাসীদের অনেকের অভিমত, তিন ভাইয়ের বিরোধের জেরে সাংসদের স্বেচ্ছাচার ও দুর্নীতির কিছুটা প্রকাশ পাচ্ছে সম্প্রতি। এ সুযোগে দীর্ঘদিন সাংসদের চাপে কোণঠাসা হয়ে থাকা দলে নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ ভাইদের পক্ষ নেয়।

ভাইয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সেজ ভাই মজিবুর রহমান প্রতিবেদকে বলেন, ‘তাঁর (আউয়াল) সমস্যা হচ্ছে, সে টাকা দিতে চায় না। আমরা দুই ভাই দেই।’

আর মেজ ভাই মেয়র হাবিবুর রহমান বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় তো তাঁর টাকা ছিল না। আপনি নির্বাচনী ব্যয়ের ফাইল দেখেন। আমি ও খালেক (সেজ ভাই) মিলে সাড়ে আট লাখ দিয়েছি। এখন কাজ নিতে ভাইকে টাকা দিতে হয়।’

সাংসদ কোণঠাসা
স্ত্রী-পুত্রের অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং অন্যান্য কারণে তিন সহোদরের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় আউয়ালের। ওই দূরত্ব বর্তমানে সংঘাতের পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমনকি মালেক ও আউয়াল একে অপরকে শটগান, পিস্তল নিয়ে হামলা করতে উদ্যত হন। সম্প্রতি ঢাকায় পারিবারিক সমঝোতা বৈঠকে এমপি আউয়াল এবং ছোটভাই মহারাজ বাদানুবাদে লিপ্ত হয়েছিলেন। যা হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছে। এ অবস্থায় দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী তিন ভাইয়ের পক্ষে অবস্থান নেন। এমনকি আউয়ালের ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীও তার পাশ থেকে সরে ভাইদের কাতারে শামিল হন। তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া তিন ভাইয়ের পক্ষে দিন দিন ভিড় বাড়তে থাকে দলের বঞ্চিত, বিতাড়িত ও নির্যাতিত নেতা-কর্মীর। ওই পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক।

দলীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি তিন ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে সাংসদ এতটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন যে, এখন পিরোজপুরে যাওয়া-আসা কমিয়ে দিয়েছেন। দলীয় সভা-কর্মসূচি গুলোতেও প্রায় গরহাজির থাকছেন। সর্বশেষ শহরে মে দিবসে জেলা প্রশাসকের একটি কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার এক মাস পর ৩ জুন পিরোজপুর আসেন তিনি। ওই দিনই জেলা আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে শহরে মিছিল ও সমাবেশ করে। কিন্তু অংশ নেননি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ আউয়াল। এর আগে জেলা কমিটির পরপর চারটি সভায়ও অনুপস্থিত থাকেন। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম হাওলাদারসহ নেতাদের একটি অংশ দলীয় সভা-সমাবেশ ও কর্মসূচি পালন করছেন। এতে সাংসদের ভাই মেয়র অগ্রভাগে থাকছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ বলেন, ‘এমন কোনো মাস আছে যে, মাসে অন্তত দুবার আসিনি। মে মাসেও তিনবার এসেছি।’ দলের সভায় অনুপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে তিনি প্রশ্ন করেন, সভাপতির অনুমতি ছাড়া কারও সভা ডাকার এখতিয়ার আছে?

নেতা-কর্মীরা বলছেন, দ্বন্দ্বের কারণে সাংসদের বাড়িতে নেতা-কর্মীদের আনাগোনা কম। মেয়রের বাড়ি তার চেয়ে সরগরম। একটা সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রায়ই সাংসদকে সংবর্ধনা দিত। সম্প্রতি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও মোটরসাইকেল বহর নিয়ে সাংসদকে অভ্যর্থনা জানানোর আনুষ্ঠানিকতায় ভাটা পড়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ বিষয়ে বলেন, ‘আগে এমপি ঘনঘন সংবর্ধনা নিত। এখন সংবর্ধনা নেবেন কি, পাবলিক তো অনুষ্ঠানে যায় না।’’

19 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন