৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার মতো করে কেইবা ভালোবাসতে পারে?

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ, ১১ এপ্রিল ২০২৩

বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার মতো করে কেইবা ভালোবাসতে পারে?

সোহেল সানি, বিশেষ প্রতিবেদক:: “For the spirit of Mujib is there, though diminished, in the personality of his daughter, Sheikh Hasina, who leads the party (Awami League) now” (অর্থাৎ মুজিবের মানসিক ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং গুণাবলী,পরিমাণে কিছুটা কম হলেও, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার ব্যক্তিত্বে প্রতিভাত হয়)। ১৯৮১ সালের ১১ জুলাই বিশ্ববিখ্যাত দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান একটি নিবন্ধে উপর্যুক্ত মন্তব্যটি করেছিল।

সত্যিই তো শেখ হাসিনা একটা মূহূর্তের জন্য ভুলে যাননি, তাঁর জন্ম এমন একটি পরিবারে, যে পরিবারের কর্তাব্যক্তি বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পিতার স্নেহাবেশে সমকালীন রাজনৈতিক ধারা, আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল যৌবনের সংগ্রামমুখর কর্মকাণ্ড এবং পূর্বাপর জাতীয় নেতাদের রণনীতি ও রণকৌশল স্বচক্ষে দেখেছেন, হাতে-কলমে শিখেছেন এবং তিনি গড়ে উঠেছেন সেভাবেই। জাতির পিতার সর্বাধিক কাছে থাকার সুবাদে স্নেহধন্য হয়ে একধরনের “প্রচ্ছন্ন বড়ত্ব” অর্জন করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর শেখ হাসিনার মধ্যে থাকা সেই “প্রচ্ছন্ন বড়ত্ব” তাঁকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সমাসীন করে। যে পর্দার আড়ালে ঢেকে দেয়া হয়েছিল, আওয়ামী লীগের সুনাম ও ঐতিহ্যের একেকটি ধারা, সেই পর্দার একেকটি স্তর নিজের তীক্ষ্ণবুদ্ধির ছুরি দিয়ে একটা একটা করে কেটে ফেলে আবারও আওয়ামী লীগকে “জনগণের দল” হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার পুরো কৃতিত্বটি শেখ হাসিনার। অথচ আজ যে আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি শেখ হাসিনা সেই তিনি সেদিন পরিচয়ে ছিলেন শুধুই বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার মাত্র।

অবশ্য, জাতির পিতার জ্যেষ্ঠকন্যার পরিচয়টাই ছিলো তাঁর রাজনৈতিক উত্থানের মূলসূত্র। তাঁর অবর্তমানে ও অমতে ১৯৮১ সালের কাউন্সিল তাঁকে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত করে। ভারতের দিল্লিতে রাজনৈতিক নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের ২৯ জুলাই তাঁর ছোটবোন শেখ রেহানা ও দুই শিশুপুত্রকন্যা জয়-পুতুলকে নিয়ে পশ্চিম জার্মানীতে বেড়াতে গিয়েছিলেন- স্বামী ডঃ ওয়াজেদ মিয়ার কাছে। যাহোক, শেখ হাসিনা বিগত চল্লিশ বছরের রাজনৈতিক জীবনে দ্য গার্ডিয়ানের মন্তব্যকেই যথার্থ করে তুলেছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রকৃত উত্তরাধিকারিত্ব তাঁর নেতৃত্ব বহন করে চলছে। রাজনীতি ও রাজনীতির নানা বিষয়কে শেখ হাসিনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার ক্ষেত্রে পিতা শেখ মুজিবের প্রত্যক্ষ ভুমিকা ছিলো না। কিন্তু প্রচ্ছন্নভাবে তাঁর কন্যার চোখে স্বাধীনতা ও সক্রিয়তাবাদের আদর্শ নিহিত ছিলো। সেকারণেই শেখ হাসিনা তাঁর সাধারণ প্রবণতায় নিজেকে রূপান্তরিত করতেন স্বাধীনতা সংগ্রামের কর্মী হিসেবে। তাঁকে দেখা যেতো রাজপথের সাহসী মিছিলে পিতা মুজিবের মুক্তির দাবিতে। কখনও ছাত্রলীগের কর্মীরূপে, কখনও ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদের ভিপি হিসাবে। শেখ হাসিনার লক্ষ্যণীয় চারিত্রিক দৃঢ়তা বলে দেয় যে, তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীনঅন্তঃসত্ত্বা না হলে নারী মুক্তিযোদ্ধা দলে নিশ্চয়ই নাম লেখাতেন। পৃথিবীর গ্রেট ব্যক্তিদের জীবন বড় বিচিত্র। প্রকারন্তরে তাঁরা একা, ভীষণ একা, অপরাহ্নের খাঁখাঁ রোদেলা আকাশে উড়তে থাকা চিলের মতো একা। ইতিহাসে যেসব ব্যক্তিকে গ্রেট বলা হয়, তন্মধ্যে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের নাম সর্বাগ্রে। ইতিহাসের জনকও বলা হয় তাঁকে। সেই নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, “আমি হয়তো পুরো পৃথিবীকে পায়ের তলায় রাখতে পারি, কিন্তু শান্তিময় নিদ্রার জন্য তো সাতটি রাতও দু-চোখের পর্দাকে এক করতে পারিনি।”

পৃথিবীর গ্রেটদের তালিকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামটিও অগ্রগণ্য। হত্যার মাধ্যমে সেই বঙ্গবন্ধুকে যেখানটাতে থামিয়ে দেয়া হয়–সেখান থেকেই শুরু শেখ হাসিনার। তিনি রাজনীতিতে বহুমাত্রিক প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। নিজেকে পৌঁছে দিয়েছেন অনন্য সাধারণ এক উচ্চতায়। তিনি ক্ষমতা, যশ ও খ্যাতির চূড়ায় অবতীর্ণ । কিন্তু তিনিও কী পরম প্রশান্তিতে নিজের দুটি চোখের পাতাকে এক করতে পেরেছেন একটি রাতের জন্য? না, তিনি তা পারেননি। ২০০২ সালের ১৮ জুন একটি জাতীয় দৈনিকের জন্য আমাকে দেয়া একান্ত একটি সাক্ষাতকার প্রদানকালে বলেছিলেন, “আমার জন্য ‘রাত’ বড় বিভীষিকার, বড় বিষাদ-বেদনার এবং ঘোর অমানিশার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ‘রাত’ কেড়ে নিয়েছে আমারই অবর্তমানে বাবা-মা, ভাই-ভাবী, ছোট্ট আদুরে শেখ রাসেল ও আমার আত্মীয়-পরিজনদের। পনেরো আগস্টের রাত যে আমার জন্য এক কেয়ামতের রাত।”

শেখ হাসিনার জীবন বর্ণাঢ্য, কিন্তু বড় বিচিত্র! জীবনের সব শুভের অন্তরালে প্রচ্ছন্ন পিতার দৃশ্যমান শূন্যতা। ‘অশুভ’ বারবার তাঁকে তাড়া করে। অদৃশ্যবাদী করুণাময়ের কৃপায় বারবার সেই ‘অশুভ’ পরাভূত হয়! তাঁর জীবনের মাহেন্দ্রক্ষণগুলো ভীষণ বিস্ময়ের এবং সুগভীর শূণ্যতার। সেই শূণ্যতা, পিতৃত্বের-পিতৃসন্নিধানের! একটি মানুষের জন্ম-মৃত্যুর মাঝে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোর সম্মিলনই তো জীবনকে সাজিয়ে দেয়। জীবন যেমনি বর্ণাঢ্য হতে পারে, তেমনি হতে পারে সংক্ষিপ্ত। আবার প্রতিভার আমেজে, কিংবা মেধা-গুণের সংমিশ্রণে জীবন হয়ে উঠতে পারে সুখময় এবং সুসমৃদ্ধময় জীবনে
বেদনাবিধুর স্মৃতিও থাকে। কমবেশি উত্থান-পতনের স্রোতধারায় বয়ে চলা ঘটনাপ্রবাহের নামই হলো পরিপাটি বা পরিপূর্ণ জীবন, সুখ-দুঃখের জীবন। ঠিক সুখদুখমাখা একটি জীবনের নাম শেখ হাসিনা। পিতার ন্যায় শেখ হাসিনাও প্রকৃষ্ট-প্রকৃত জাতীয়তাবাদী নেতা। তাঁর বেড়ে ওঠা জীবনের বিচিত্র গল্পের শুরু ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সূর্যশোভিত রোদেলা দুপুর থেকে। ইতিহাসের কী অদ্ভুত প্রদর্শন! ভারতবর্ষে শাসনক্ষমতায় পালবংশের স্থপতি বুদ্ধিষ্ট রাজা গোপালের নাম অংকিত গোপালগঞ্জে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণকারী শেখ মুজিবও যে এক রাজা-মহারাজা। যাঁর নামে মুক্তা ঝরে, নীলাদ্রি আকাশে উড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা। শেখ হাসিনাও ভূমিষ্ট গোপালগঞ্জের নদীবিধৌত মধুমতী কোলআঁধারের ছায়াশান্ত পল্লীমঙ্গলারূপী টুঙ্গিপাড়াতে। শেখ মুজিব ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা শুভপরিণয়ও এক রূপকথার গল্প। তেরো বছরের ছিপছিপে রোগাসোগা কিশোর মুজিব। অধ্যয়নে সপ্তমী পার হয়নি, চোখপীড়া রোগের কারণে।

ফজিলাতুন্নেছার বয়স মোটে তিন। ডাক নাম তাঁর রেণু। মুজিব-রেণু চাচাতো ভাইবোন। রেণু বড় অবেলায় হারান পিতাকে। অনাথ শিশুকন্যা রেণুর বয়োবৃদ্ধ দাদামহ কিশোর মুজিবের পিতা মৌলভি শেখ লুৎফর রহমানকে বললেন, ‘লুৎফর, তোমার বড়পুত্রের সঙ্গে আমার নাতনি রেণুর বিয়ে দাও। কখন চলে যাওয়ার ডাক আসে, আমি এখনই দুই নাতনির নামে সমস্ত বিষয়সম্পত্তি লিখে দিবো।” প্রসঙ্গত রেণুর একমাত্র বোনটি হলেন ছাত্রলীগের এককালীন সভাপতি ও পরবর্তীতে জেনারেল এরশাদের মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলামের মাতা। যাহোক, মুরব্বি বলে কথা। চাচার আবদার ফেলেন কি করে? তিন বছরের রেণুর সঙ্গে তেরো বছরের মুজিবের ‘নিকাহনামা’ রেজিস্ট্রি হলো ১৯৩৩ সালে। দুই বছরের মাথায় রেণু হারালেন মাকে। শাশুড়ি তাঁর সান্নিধ্যে নিয়ে নিলেন পুত্রবধূকে। রেণু, মুজিবের মাতা সায়রা খাতুনের স্নেহ-মমতা পেতে থাকলো সাত বছর বয়স থেকে। বাল্যবিবাহ বলে তাঁদের ফুলশয্যায় বিলম্বন হলো। ১৯৪২ সালে হলো মুজিব-রেণু দম্পতির মধুরেণ সমাপয়েৎ- ফুলশয্যা। কলকাতায় ছাত্রনেতা হয়ে ওঠা বাড়ন্ত শেখ মুজিব নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের তখন মধ্যমণি। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রসংসদের জি.এস তিনি। বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ভাবশিষ্য শেখ মুজিবের পরিচিতি গড়ে উঠেছে বাংলার রাজধানী কোলকাতা জুড়ে। তাই কোলকাতাই মুজিবের প্রাণ। মাঝেমধ্যে গোপালগঞ্জে আসা। এবার এসে গেলো মুজিব-রেণুর দাম্পত্যের প্রথম সন্তান জন্মের মহামূহুর্তটি। মানুষ বেদনা ভিন্ন নয়। আবার বেদনার উর্ধ্বেও থাকে কিছু গৌরব। কিন্তু শেখ হাসিনার জীবনপ্রবাহের স্রোতধারা বিচ্ছিন্ন এবং বিষাদময়। মায়ের গর্ভ হতে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখা শিশুটি পিতার সান্নিধ্য পেলো না। কারণ পিতা মুজিব তখন সুদূর কোলকাতায়। তিনি দেশবিভাগের তন্দ্রাঘোরে, স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা সোহরাওয়ার্দীর সাহচর্যে। পুত্র মুজিবকে টেলিগ্রাম করলেন পিতা শেখ লুৎফর রহমান। জানালেন, নাতনি হবার খুশীর খবর। কিন্তু মুজিব ছুটে আসলেন না মেয়ের মুখদর্শন করতে। কোলকাতায় তখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। লাখো লাখো হিন্দু-মুসলমানের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। আর তাতেই সোহরাওয়ার্দীর অবিভক্ত স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন ধূলিস্যাত। ১৯০৫ সালের ন্যায় আবার বঙ্গভঙ্গ হলো। তাতে বাংলা দ্বিখণ্ডিত হলো। শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী ও হাশিমের শেষ চেষ্টায়ও পাকিস্তানের অধীন পূর্ববাংলার অংশ হলো না কোলকাতা। দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রবক্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নির্দেশে শেরেবাংলার লাহোর প্রস্তাব সংশোধন করে সোহরাওয়ার্দীকে দিল্লি কনভেনশনে উত্থাপন করতে হলো “পাকিস্তান প্রস্তাব।” এসব কারণে শেখ মুজিব আসছিলেন না, সন্তান হওয়ার খবরশুনেও। তিনি আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। তাঁর প্রিয় ‘লিডার’ সোহরাওয়ার্দী তখন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সোচ্চার স্বাধীন ভারতভুক্ত পশ্চিম বাংলার মুসলমানদের বাঁচাতে। স্বপ্নভঙ্গ হলে শেখ মুজিব কলকাতার পাঠ চুকিয়ে ঢাকায় এসে ঘাট বাঁধেন। আসলে মানুষের জীবন নামক যন্ত্রটা অকৃত্রিম। নিবুনিবু করে জ্বলে ওঠা প্রদীপশিখার আয়ুষ্কালের যোগবিয়োগে নেই পলকের ভরসা। তারপরও মানুষের ক্ষমতা ও ঐশ্বর্যলাভের বাসনা চির-অতৃপ্ত এবং অসীম। কেবল স্রষ্টার অসীমত্বে সমর্পণের মাধ্যমেই মানুষ তৃপ্তি পেতে পারে। তাঁর কৃপায় পেতে পারে রাজত্ব, ক্ষমতা, যশ ও খ্যাতি। আগেই বলেছি শেখ মুজিব ঢাকায় চলে এসেছেন কোলকাতা থেকে। ভালোদিন পথের বাঁকেই অপেক্ষা করছিলো, যেনো একটু এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিষ্ঠা করলেন একদল সহকর্মী নিয়ে মুসলিম ছাত্রলীগ। শোনা গেলো দ্রুত মুজিবীয় কন্ঠ- ভাষাসংগ্রামে। গণমুখে, আড্ডায়-আলাপে। মাঠে- ময়দানে। সেবক ও সহচরের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে মুজিব হয়ে উঠলেন এক অজেয় শক্তি। তাতে পারিবারিক অন্তরঙ্গ সম্প্রীতির মায়াজাল ছিন্ন হলো। একজন ছিপেছিপে, দীর্ঘদেহী, ঘনওল্টানো চুল মাথায়, খবরের কাগজ হাতে দাঁড়ানো শেখ মুজিবের জ্বালাময়ী ভাষণ এবং সংকল্পই একদিন স্বপ্ন দেখালো স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতার। তার গভীর প্রভাব পড়লো পরিবারের ওপর। যেমনটি সন্তান শেখ হাসিনার ওপর। শেখ হাসিনার জীবনও খুব ঘটনাবহুল।

১৯৫৩ সালে শেখ মুজিব ঢাকার আরমানিটোলাস্থ ৮/৩, রজনীবোস লেনস্থ এক আত্মীয় মমিনুল হকের বাসায় নিয়ে আসলেন নিজ পরিবারকে। তাঁর প্রিয়তম সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা ছিলেন সর্বংসহা, ধৈর্যের এক প্রতিমূর্তি। শত দুঃখকষ্টের মাঝেও এক মুহূর্তের জন্য হননি বিচলিত। সংগ্রামী স্বামীকে অহর্নিশ প্রেরণাদানকারী এক মহীয়সী নারী। মরণেও হয়েছেন স্বামীর সঙ্গী।
কবি সুফিয়া কামাল ছোট্টশিশু শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিলেন বই-খাতা-কলম। ভর্তি করালেন নারী শিক্ষা মন্দিরে (বর্তমান শেরেবাংলা বালিকা বিদ্যালয়)। সেদিনও শেখ হাসিনার পাশে থাকতে পারেননি পিতা শেখ মুজিব। তবুও রয়েছে তাঁর ঘটনা পরস্পরা ও অশ্রুতপূর্ব বিরল কতগুলো ঘটনা। ১৯৫৪ সালে শেখ মুজিব শিল্প বানিজ্য ও দুর্নীতিদমন মন্ত্রী। তাই পরিবারসহ রজনীবোস লেন ছেড়ে উঠলে মিন্টোরোডের সরকারি বাসায়। সে সুখ বেশীদিন সইলো না। আদমজী জুটমিলে বিহারী-বাঙালী সংঘর্ষে পতন ঘটলো শেরেবাংলার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার। ফলে ছাড়তে হলো মিন্টো রোডের বাসা। ১৯৫৬ সালে মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারে আসীন হলে আবারও মন্ত্রী হলেন শেখ মুজিব। তখন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারেও আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী। কিন্তু দল ও সরকার দুই পদে থাকা ছিলো আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। প্রাদেশিক সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মদদপুষ্ট সাংগঠনিক সম্পাদক অলি আহাদ পন্থীরা দলের মধ্যে বিতর্কের উদ্রেক করলো। লক্ষ্য ছিলো অলি আহাদকে সাধারণ সম্পাদক করা। কিন্তু মুজিব সবাইকে বিস্মিত করলেন দলের সাধারণ সম্পাদক পদ নয়, বরং মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে। কলহে নতুন মাত্রা দিলো সোহরাওয়ার্দী-ভাসানীর বৈদেশিক নীতির বিরোধ। ১৯৫৭ সালে ভাসানী পন্থী অলি আহাদরা কাগমারী সম্মেলনে প্রতিষ্ঠা করলেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি – ন্যাপ। মন্ত্রীত্ব ত্যাগের ফলে মিন্টো রোডের সরকারি বাসা ছাড়তে হলো শেখ মুজিবকে। তিনি উঠলেন ৫৮ সেগুনবাগিচার এক ভাড়া-বাসায়। ১৯৫৮ সালের ১০ অক্টোবর জারী হলো জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন। শেখ মুজিব ১৯৬৬ সালে দিলেন ৬ দফা। এর এক বছর আগে ১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হলেন। তিনি যখন ইডেন কলেজের ভিপি নির্বাচিত হলেন। যখন পিতা মুজিব আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে। ১৯৬৮ সালের ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা বিয়ের পিড়িতে, তখন পিতা মুজিব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের ভিপি এমএ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ের ঘটকালিটা করেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও মন্ত্রী রংপুরের মতিউর রহমান। আত্মীয়-পরিজনহীন বিয়ের আসরে ছিলো নাটকীয় পরিবেশ। যা কোনদিন মুছে যাবে না। উকিল শ্বশুর মতিউর রহমানের স্ত্রী শেখ হাসিনার বিয়ের শাড়িখানা উপহার দেন। যার মূল্য ৪৫০ টাকা। চট্টগ্রামে হয় বিবাহোত্তর সংবর্ধনা দেন আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ আজিজ।

১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান। শেখ হাসিনাও যার সারথি। গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক তোফায়েল আহমেদ ছাত্র-গণসমুদ্রে শেখ মুজিবুর রহমানকে দিলেন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি। তারপর ১৯৭০ সালের নির্বাচন। আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক বিজয়। এলো একাত্তর। শুরু হলো পশ্চিম পাকিস্তানীদের ষড়যন্ত্র। ক্ষমতা হস্তান্তরের বদলে পাকিস্তানের ভাবি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকেই গ্রেফতার করা হলো তাঁর ধানমন্ডীর ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবন থেকে। একই সঙ্গে চালানো হলো ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যা। বঙ্গবন্ধুর পরিবার বাসভবন ছেড়ে উঠল ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের এক বাসায়। শুরু হলো পাকবাহিনীর প্রহরায় অন্তরীণের দুঃসহ দিনগুলোর। তারপর ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল ডঃ এম এ ওয়াজেদ মিয়া স্ত্রীসহ শেখ হাসিনা, শাশুড়ী, রেহানা ও রাসেলকে নিয়ে চলে যান খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ায় আরেকটি বাসায়। সন্তানসম্ভবা শেখ হাসিনা এসময় অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রসব বেদনায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। ডাঃ ওয়াদুদের তত্ত্বাবধানে। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই রাত ৮ টায় পুত্র সন্তানের মা হলেন শেখ হাসিনা। সেদিন পাশে ছিলেন লিলি ফুপু। নানী বেগম মুজিব স্বামীর সঙ্গে মিলিয়ে নাতির নাম রাখলেন সজিব। মা শেখ হাসিনা যুক্ত করলেন জয় বাংলার ‘জয়’। সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয় পিতার নাম ওয়াজেদ। পূর্ণ নাম হয়ে গেলো সজীব ওয়াজেদ জয়।

১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনকারী শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ ক্লাসের বাংলা বিভাগের ছাত্রী। শেখ হাসিনাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ আব্দুল মতিন চৌধুরী ১৫ আগস্টের পরে জার্মানীতে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু স্বামী ডঃ এমএ ওয়াজেদ মিয়ার জেদাজেদীতে তাঁকে যেতে হলো ১৯৭৫ সালের ২৯ জুলাই। বিদেশে থাকার সুবাদে বেঁচে যান শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা। সঙ্গে পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। পরবর্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সহমর্মিতায় দিল্লিতে রাজনৈতিক আশ্রয়গ্রহণ করেন শেখ হাসিনার পরিবার। এরপর আওয়ামী লীগের হাল ধরতে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দিল্লি থেকে স্বদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর জীবন হয়ে ওঠে লড়াই সংগ্রামমুখর। ১৯ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হন। রাজনীতির চার দশকের মধ্যে ক্ষমতার দশকই দুটি হতে চলেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। বিচার হয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যারও। শেখ হাসিনার খাঁটি দেশপ্রেম ও বাঙালি জাতির মহত্ত্ব যেনো একই প্রস্রবণ হতে উৎসারিত। দেশের মহামারি, দূর্যোগ ও সংকটে সেটাই বারবার প্রমাণ করেছেন। আমরা দেখেছি মরণঘাতক করোনার নীল দংশন হতে মানুষকে বাঁচাতে তাঁর মানবীয় গুণাবলীর ফল্গুধারা। যা তখন একই স্রোতস্বিনীর শাশ্বত স্রোতধারায় প্রবাহিত হয়েছে। লীন হয়েছে একই মহামানবের সাগরে। ছিলো না তাতে কোনো ধর্মবর্ণ গোত্র। শেখ হাসিনা তাঁর মোহনীয় ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে সবার হৃদয় জয় করেছেন।

শেখ হাসিনা দেশকে এমন সুউচ্চ শিখরে অবতীর্ণ করেছেন যে, বিদেশ রাষ্ট্রনায়করাও তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন। মানুষ চায় শান্তি, শৃঙ্খলা,আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ। মানুষ হরতাল, রাহাজাহী, সংহিসতায় অগ্নিসংযোগে ফিরতে চায়না। করোনায় পরাশক্তির উপনিবেশিক শাসন ফাঁপা বেলুনের মতো ফেঁটে যায়।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল, চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। সব রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান যখন দিকবিদিকশুন্য, আকাশেপানে তাকিয়ে, তখন পবিত্র জায়নামাজে প্রার্থনারত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা দুর্দমনীয় অসীম সাহসে করোনায় মৃত্যুতে শোকবিহ্বল হলেও রাষ্ট্রনায়কের মনোবৃত্তিতে তিনি জাতির মনোবলকে চাঙ্গা রেখেছিলেন। চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক সবার পরিবারের প্রতি মানবিকতার হাত প্রসারিত করেন। জননেত্রী থেকে দেশরত্নের অভিধা তাঁর প্রাপ্য। তাঁর দীর্ঘসময়ের শাসনকর্মে প্রমাণ মিলেছে, কর্তব্য সম্পাদনের হিমাদ্রি সদৃশ্য এক অটল প্রতিজ্ঞা তাঁর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। দৃঢ়তা তাঁর দৃষ্টিতে বিরাজমান। একেকটি সংকটে তিনি উদ্যোমী আত্মবিশ্বাসী। আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতাও তিনি। শতসহস্র বিক্ষোভ, বিদ্রোহের ভ্রূকুটি, ইস্পাত-দৃঢ় বিরোধিতার হুঙ্কার, তেজস্ক্রিয় আন্দোলন ও অবিরাম অগ্নিস্ফুলিঙ্গের আশঙ্কিত দাবানলে সরকার টলকানোর জঙ্গি হেফাজতের তান্ডবী ধ্বংসযজ্ঞ কঠোর হাতে মোকাবিলা করেছেন। অস্থিরতা তাঁকে কর্তব্যকর্ম থেকে এতটুকু টলাতে পারেনা। এটাই তাঁর দূরদর্শী সুযোগ্য রাষ্ট্রনায়কের পরিচয়।

শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কারণ যদি হয় উন্নয়ন, তাহলে বলতেই হয় সরকার টানা ক্ষমতায় রয়েছে বলেই তা সম্ভব হয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার নেপথ্যে শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ কোনটি যদি বলা হয়, তাহলে আমি বলবো, গণতন্ত্রের চেহারা যাইহোক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাত থেকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি অবমুক্ত করাই হলো, সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ এবং এটাকে বড় উন্নয়নও বলা যেতে পারে। কেননা এই দখলমুক্তির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র নিরাপদ জীবনে ফিরে এসেছে। আরও একটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র মাঝেমধ্যে আহত হলেও অন্তত হত্যার শিকার হয়নি। শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করার একটা চেষ্টা করছি। যেমন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত যখন বাস, দোকানপাটে পেট্রোলবোমা মারায় লিপ্ত ছিলো তখন শেখ হাসিনা বিশ্বের সর্ববৃহৎ শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট (হাসপাতাল) প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে দেশ যখন দুনীতিতে হ্যাট্রিক করে শেখ হাসিনার নাম তখন বিশ্বের সৎ প্রধানমন্ত্রীর তালিকার শীর্ষে উঠে আসে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি জামায়াত যখন কল্পনায় যুদ্ধাপরাধী মওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে আকাশে দেখে, তখন শেখ হাসিনা মহাকাশে “বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট” পাঠায়। খালেদা জিয়ার সরকার যখন বিদ্যুতের খাম্বা তৈরি করে তখন শেখ হাসিনা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেন। খালেদা জিয়ার বিএনপি জামায়াত সরকার যখন সারের দাবিতে বিদ্রোহ করা কৃষকের মিছিলে গুলি করে হত্যা করে, তখন শেখ হাসিনা সরকার বিনামূল্যে সার বিতরণ করে। বিএনপি জামায়াত সরকার যখন বাংলা ভাই শায়খ আবদুর রহমানের আবিষ্কার করে শেখ হাসিনা সরকার তখন দেশকে জঙ্গিমুক্ত করে। খালেদ জিয়া সরকার যখন সন্ত্রাসীদের মদদ দেন, শেখ হাসিনা তখন সাকিব- মাশরাফিদের খোঁজেন। খালেদা জিয়া যখন বলেন, পদ্মাসেতু সম্ভব নয়, শেখ হাসিনা তখন তা দৃশ্যমান করে ইতিহাস রচনা করেন। বিএনপি যখন যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে এক হয়, শেখ হাসিনার সরকার তখন একেক করে ওদের ফাঁসির রায় কার্যকর করে। বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট যখন চিৎকার করে জনগণকে বলে মাগো তোমার একটি ভোটে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে, শেখ হাসিনা তখন বলেন, মাগো তোমার একটি ভোটে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে। প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র নয়, সাধারণ মানুষের কাছে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমূল বদলে যাওয়া দেশের চেহারা। জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা সেই দেশকে গড়ে তুলে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর ঘটাচ্ছেন।

দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠা তাঁর জীবনীশক্তি। তাই কোনো পরাশক্তি তাঁকে টলকাতে পারছেনা। পারছে না তাঁর স্বীয় আদর্শ ও উদ্দেশ্য থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে। বিরাট কর্ম-সম্পাদনের জন্যেই মহান স্রষ্টা তাঁকে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় আসনে আসীন করেছেন। তিনি ধ্যানগম্ভীর মৌনঋষির মতো নীরবে শুধু কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর জীবন-মৃত্যু নিয়েও গুজব রটিয়ে খুশির জোয়ারে গা ভাসাতে দেখেছি একটা মহলকে। আসলে ওরা বঙ্গবন্ধুর হত্যার সুফলভোগকারী।

তবে দেশের এই মূহুর্তে সবচেয়ে বড়বেশি প্রয়োজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেঁচে থাকা। কারণ চোখবুঝে কল্পনা করে দেখেছি- বর্তমান নেতৃত্বে শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনা। আমি কারো আয়ুকাল নিয়ে বলার ঔদ্ধত্য প্রদর্শন সমীচীন নয়। স্রষ্টা ব্যতীত কারো মৃত্যু সম্পর্কে আগাম বলাও সম্ভব নয়। তবে আমি এতটুকু উদার মনস্ক ভাববোধ হতে স্বেচ্ছায় বলতে দ্বিধা করছি না যে, চোখে বুঝে দেখছি প্রধানমন্ত্রীবিহীন বাংলাদেশ সে-তো ধ্বংসের। সে-তো অন্ধকারময় বিভীষিকার। আমরা যেনো ভুলে না যাই, পেশীশক্তির জোরে ধর্মান্ধ, জঙ্গী উগ্রবাদী গোষ্ঠীদল রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে আমাদের সন্তানেরা একাত্তরের পরিণতি বরণ করবে। মাঝেমধ্যে স্বপ্নে ঘুমঘোরে আৎকে উঠি। দেখি আমার ছেলেমেয়ে শিক্ষাঙ্গন থেকে উধাও হয়ে গেছে। আবার ভরসা পাই যখন শেখ হাসিনাকে দেখতে পাই।

নিশ্চয়ই স্রষ্টা শেখ হাসিনাকে রক্ষা করছেন দেশমাতৃকার জন্য। তাইতো বারবার মৃত্যু দূয়ার থেকে ফিরে আসেন। তিনি তার মহান পিতার স্বপ্নের সোনারবাংলাকে ডিজিটাল রূপে সাজিয়েছেন নিরলস শ্রম দিয়ে। এখন লক্ষ্য তাঁর স্মার্ট বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনা সদাহাস্যোচ্ছ্বল এক প্রাণময়ী নারী। পুরুষোত্তম পিতার সংগ্রামী আদর্শ ও সর্বংসহা মায়ের অসীম ধৈর্যই বুঝি তাঁর জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যাবার পুঁজি।

তিনি সফল হবেন আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানেও। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এ দেশকে তাঁর পিতার মতো এবং তাঁর মতো করে কেইবা ভালোবাসতে পারে?

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাসবেত্তা।

87 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন