৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

উৎকণ্ঠার ভোট আজ, রক্তপাতের আশঙ্কা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:১১ পূর্বাহ্ণ, ২২ মার্চ ২০১৬

বরিশালে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বন্ধ করার পরেও গতকাল সোমবার ব্যাপক  সহিংস ঘটনা ঘটেছে। বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসছে একের পর এক সহিংসতার খবর। এমতাবস্থায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মীদের হামলা-ভাংচুরের শিকার বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা সুষ্ঠু ভোট নিয়ে রয়েছেন শঙ্কায়।

 

কারণ অনেক আগ থেকেই এ অঞ্চলের শাসকদলের প্রার্থীরা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের নির্বাচনী মাঠ ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন।’ তাছাড়া আ.লীগ প্রার্থীর কর্মীরা মাঠে নেমে বিরোধীদের বলেও বেড়াচ্ছেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কোন লাভ নেই (!) সুতরাং বলার আর রাখে না যে এবারের ইউনিয়ন নির্বাচনে কি ঘটতে যাচ্ছে। যদিও এসব বিষায়াদী তুলে ধরে অঞ্চলের বিএনপি এবং আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা অনেক আগেই মিডিয়ার দারস্থ হয়েছেন।’

 

অবশ্য তারা ঘোষণা দিয়েও আসছেন ২২মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে যে কোন ধরণের অনিয়ম রুখে দিতে সদা প্রস্তুত। আর এতে রক্তপাতের ঘটনা ঘটলে সব দায়িত্বভার সরকারকে নিতে হবে। নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আ.লীগ এবং বিরোধীদল বিএনপির পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। এমতাবস্থায় ভোটাররা রয়েছেন অজানা আতঙ্কে।

 

যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- ভোট সুষ্ঠু করতে এবং ভোটারদের আসতে তাদের পক্ষ থেকে প্রর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ২৭১টি ইউনিয়নে ২ হাজার ৫৬৪টি ভোট কেন্দ্র পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ৫ হাজার ১১৬ জনকে। এ ছাড়া ১৩ হাজার ৬৭টি ভোটকক্ষে সমপরিমাণ সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগও দেয়া হয়েছে।’ পাশাপাশি বিভাগের ৬ জেলায় ৫৫ হাজার ৯৭৯ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে আনসার ভিডিপির ৪০ হাজার ৬৫৪ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে। তাছাড় থাকছে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, গোয়েন্দা পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও।’

 

কিন্তু প্রশাসনের এধরণের যুক্তিসম্পন্ন আশ্বাসও স্বস্তি দিতে পারছেন প্রার্থী এবং ভোটারদের। এক্ষেত্রে অনেকের অভিব্যক্তি হচ্ছে- ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গত পৌরসভা নির্বাচনও সুষ্ঠু করেনি। এবার দলীয় প্রতীকের এই ইউনিয়ন নির্বাচনও নিরপেক্ষ করবে না। বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ভর করে আ.লীগ প্রার্থীরা জয় ছিনিয়ে নিতে চাইবে। এতে বাধা আসলে রক্তপাত বা পাণবিয়োগের মত ঘটনা ঘটলেও তারা পিছু পা নেবে না। উদাহরণস্বরূপ এবারের এই ইউনিয়ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বরিশাল অঞ্চলে ইতিমধ্যে চার ব্যক্তি নিহত হয়েছে।

 

 

এক্ষেত্রে বিষ্ময় হলো- এদের মধ্যে একজন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মীও রয়েছে। সে আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা প্রতীক) প্রার্থীর সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার শিকার হয়ে নিহত হন। তাছাড়া সর্বশেষ সোমবারও বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিদ্রোহী) আবুল কালাম আজাদের অন্তত ১০ কর্মী আহত হয়েছেন। এসময় ভাঙচুর করা হয়েছে ওই প্রার্থীর স্বজনদের ১১টি বসত ঘর এবং ৩টি দোকান। ইউনিয়নের আলতা গ্রামে ঘন্টাব্যাপী এ তান্ডব চালায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জলিল ঘরামীর ৪৫ থেকে ৫০ জনের ক্যাডার বাহিনী। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ এবং র‌্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে।

 

তবে ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জলিল ঘরামীর ৪৫ থেকে ৫০ জন সন্ত্রাসী আগ্নেয়াস্ত্র, দা, লাঠিসোটা নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কালামের বাসায় অর্তকিতে হামলা চালায়। এসময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের বাড়ির ৫ টি এবং চাচাতো ভাই মুন্না মাঝির বাড়ির ৬টি ঘর ভাঙচুর করে। হামলাকারীদের প্রতিরোধে এগিয়ে গেলে আবুল কালামের মা, স্ত্রী, ভাইয়ের মেয়েসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ভাইর মেয়ে পরশিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। বানারীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হাসান জানান, হামলার খবর পেয়ে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সেই সাথে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।’

 

এ ঘটনায় সংক্ষুব্ধ জনতা বিক্ষোভ করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সুষ্ঠু হবে প্রশাসনের এমন আশ্বাসে দিলে তারা শান্ত হন। এর আগে রোববারও বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলায় সরকারদলীয় প্রার্থীর হামলার শিকার হয়েছেন নিজ ঘরনার বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন।’ তাছাড়া সোমববার রাতেও বরিশালের বাকেরগঞ্জ, পিরোজপুর, বরগুনা পটুয়াখালি এবং ভোলা থেকেও বিচ্ছিন্নভাবে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। সবকিছু মিলিয়ে বলা চলে- আজকের (২২মার্চ) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে ক্ষণে ক্ষণে উত্তাপ বাড়ছে। বিশেষ করে শাসকদলীয় দলীয় প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা জয় ছিনিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠায় তা ক্রমশই বাড়ছে।

 

ফলশ্র“তিতে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশীম খাচ্ছে প্রশাসন।’ এক্ষেত্রে বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কমকর্তা মীর মো. শাজাহানের ভাষ্য হচ্ছে- কমিশনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রশাসনের কাছেও আইনশৃঙ্খরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহযোগিতায় চাওয়া হয়েছে।’ একই প্রসঙ্গে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি হুমায়ুন কবির বাংলামেইলকে জানান, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা রয়েছে। নির্বাচন চলাকালীন পুলিশ সদস্যদের যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে জিরো ট্রলারেন্সে থাকতে বলা হয়েছে।’

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন